ঢাকা ০৬:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
পরিবেশের জন্য হতে পারে নতুন সম্ভাবনা

প্রতিবন্ধী কিশোর বানাল কলম, ফেললেই হবে গাছ!

আব্দুল মতিন, বাগাতিপাড়া (নাটোর) প্রতিনিধি
  • Update Time : ০৬:১৫:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ জুলাই ২০২৩
  • / ৬৮ Time View

কিশোর বানাল কলম, মাটিতে ফেললেই হবে গাছ! বাঁয়ে প্রত্যয় দাস তীর্থ ও ডানে তার তৈরি পরিবেশবান্ধব গ্রিন পেন

কাগজ দিয়ে বিশেষ একধরনের পরিবেশবান্ধব কলম ‘গ্রিন পেন’ তৈরি করেছে নাটোরের বাগাতিপাড়ার জামনগর ইউনিয়নের মাঝিপাড়া এলাকার শারীরিক প্রতিবন্ধী প্রত্যয় দাস তীর্থ(১৭)। পরিবেশবান্ধব এ কলম লেখা শেষে মাটিতে ফেললেই হবে গাছ।

এটি লেখার কাজ করার পাশাপাশি সবুজ বনায়নে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে বলে জানিয়েছে প্রত্যয়।

কিশোর বানাল কলম, মাটিতে ফেললেই হবে গাছ! বাঁয়ে প্রত্যয় দাস তীর্থ ও ডানে তার তৈরি পরিবেশবান্ধব গ্রিন পেন

সরেজমিন দেখা গেছে, বর্তমানে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে রয়েছে। সে জায়গা থেকে পরিবেশের জন্য সবার কাজ করার জায়গা রয়েছে সে কথা চিন্তা করে ইন্টারনেটের সহযোগিতা নিয়ে এলাকার কয়েকজন শিশু-কিশোরকে সাথে নিয়ে গ্রিন পেনটি তৈরি করে প্রত্যয় দাস তীর্থ।

সে ওই এলাকার প্রশু প্রতি দাস নান্টুর ছেলে। চলতি বছরে জামনগর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে সে।

সে জন্মগতভাবে শারীরিক প্রতিবন্ধী। সে পরিবেশবান্ধব ও আকর্ষণীয় সবুজ কলম বাজারজাত করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। শিক্ষার্থী প্রত্যয় দাস তীর্থ জানায়, তার তৈরি গ্রিন পেন বা সবুজ কলমটি পরিবেশবান্ধব।

কলমটি জনসাধারণের ব্যবহারের মধ্য দিয়ে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো যাবে। কেননা কলমটি কাগজের তৈরি। কলমটি ব্যবহার শেষে মাটির সংস্পর্শে আসলেই কলমের কাগজের অংশটি জৈব প্রক্রিয়ায় মাটির সাথে মিশে যাবে।

এ ছাড়া মজার বিষয় হলো, কলমটির পেছনের অংশে নানা ধরনের বৃক্ষের বীজ সংযুক্ত করা আছে। ব্যবহার শেষে মাটিতে বা টবে দিলেই বীজ থেকে তৈরি হবে গাছের চারা।

সে আরও বলে, ‘গ্রিন পেন তৈরির ক্ষেত্রে প্লাস্টিকের ব্যবহার অনেক কমানো হয়েছে। এটি উৎপাদন বা তৈরির মাধ্যমে ৯৫ শতাংশ প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো সম্ভব হবে। অন্যদিকে প্রতিটি কলম থেকে একটি গাছের চারা অঙ্কুরিত হওয়ার সুযোগও রয়েছে।’

গ্রিন পেন যেহেতু হাতে তৈরি করতে হয় সেহেতু এটি উৎপাদনের মাধ্যমে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করা সম্ভব হবে বলে জানায় ওই শিক্ষার্থী।

যে সমস্ত মহিলা বাইরের কঠিন শ্রমের কাজ করতে পারেন না অথচ সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা তাদের সংসারের নিয়মিত কাজের পাশাপাশি এটি সহায়ক কাজ হিসেবে করতে পারবেন।

প্রতিবন্ধী ওই শিক্ষার্থীর তৈরি গ্রিন পেন দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি বাইরেও রপ্তানি করা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তিপর্যায়ের বিভিন্ন দপ্তরের পৃষ্ঠপোষকতা চেয়েছে ওই শিক্ষার্থী।

জামনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী সৌরভ দাস বলে, সবুজ বলপেনে সুন্দর লেখা হয়।

জামনগর উচ্চবিদ্যালয়ে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুদিপ্ত দাস বন্ধন বলে, গ্রিন পেন দিয়ে সাধারণ কলমের মতোই লেখা হয়। এ কলম ব্যাপকভাবে চালু হলে এলাকার কিছুসংখ্যক নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে।

প্রতিবেশী মানবাধীকার কর্মী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আরশাদ মাহ্মুদ ওই শিক্ষার্থীর উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘সবুজ কলম বা গ্রিন পেন অবশ্যই পরিবেশবান্ধব। এটি বেশি বেশি ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে পারি। এছাড়া এটি ব্যবহারের ফলে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বিরাট ভূমিকা পালন করবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নীলুফা সরকার প্রত্যয়কে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘সবুজ কলম বা গ্রিন পেন অবশ্যই পরিবেশবান্ধব। এটি বেশি বেশি ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে পারি। এছাড়া এটি ব্যবহারের ফলে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বিরাট ভূমিকা পালন করবে।’

Please Share This Post in Your Social Media

পরিবেশের জন্য হতে পারে নতুন সম্ভাবনা

প্রতিবন্ধী কিশোর বানাল কলম, ফেললেই হবে গাছ!

Update Time : ০৬:১৫:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ জুলাই ২০২৩

কাগজ দিয়ে বিশেষ একধরনের পরিবেশবান্ধব কলম ‘গ্রিন পেন’ তৈরি করেছে নাটোরের বাগাতিপাড়ার জামনগর ইউনিয়নের মাঝিপাড়া এলাকার শারীরিক প্রতিবন্ধী প্রত্যয় দাস তীর্থ(১৭)। পরিবেশবান্ধব এ কলম লেখা শেষে মাটিতে ফেললেই হবে গাছ।

এটি লেখার কাজ করার পাশাপাশি সবুজ বনায়নে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে বলে জানিয়েছে প্রত্যয়।

কিশোর বানাল কলম, মাটিতে ফেললেই হবে গাছ! বাঁয়ে প্রত্যয় দাস তীর্থ ও ডানে তার তৈরি পরিবেশবান্ধব গ্রিন পেন

সরেজমিন দেখা গেছে, বর্তমানে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে রয়েছে। সে জায়গা থেকে পরিবেশের জন্য সবার কাজ করার জায়গা রয়েছে সে কথা চিন্তা করে ইন্টারনেটের সহযোগিতা নিয়ে এলাকার কয়েকজন শিশু-কিশোরকে সাথে নিয়ে গ্রিন পেনটি তৈরি করে প্রত্যয় দাস তীর্থ।

সে ওই এলাকার প্রশু প্রতি দাস নান্টুর ছেলে। চলতি বছরে জামনগর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে সে।

সে জন্মগতভাবে শারীরিক প্রতিবন্ধী। সে পরিবেশবান্ধব ও আকর্ষণীয় সবুজ কলম বাজারজাত করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। শিক্ষার্থী প্রত্যয় দাস তীর্থ জানায়, তার তৈরি গ্রিন পেন বা সবুজ কলমটি পরিবেশবান্ধব।

কলমটি জনসাধারণের ব্যবহারের মধ্য দিয়ে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো যাবে। কেননা কলমটি কাগজের তৈরি। কলমটি ব্যবহার শেষে মাটির সংস্পর্শে আসলেই কলমের কাগজের অংশটি জৈব প্রক্রিয়ায় মাটির সাথে মিশে যাবে।

এ ছাড়া মজার বিষয় হলো, কলমটির পেছনের অংশে নানা ধরনের বৃক্ষের বীজ সংযুক্ত করা আছে। ব্যবহার শেষে মাটিতে বা টবে দিলেই বীজ থেকে তৈরি হবে গাছের চারা।

সে আরও বলে, ‘গ্রিন পেন তৈরির ক্ষেত্রে প্লাস্টিকের ব্যবহার অনেক কমানো হয়েছে। এটি উৎপাদন বা তৈরির মাধ্যমে ৯৫ শতাংশ প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো সম্ভব হবে। অন্যদিকে প্রতিটি কলম থেকে একটি গাছের চারা অঙ্কুরিত হওয়ার সুযোগও রয়েছে।’

গ্রিন পেন যেহেতু হাতে তৈরি করতে হয় সেহেতু এটি উৎপাদনের মাধ্যমে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করা সম্ভব হবে বলে জানায় ওই শিক্ষার্থী।

যে সমস্ত মহিলা বাইরের কঠিন শ্রমের কাজ করতে পারেন না অথচ সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা তাদের সংসারের নিয়মিত কাজের পাশাপাশি এটি সহায়ক কাজ হিসেবে করতে পারবেন।

প্রতিবন্ধী ওই শিক্ষার্থীর তৈরি গ্রিন পেন দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি বাইরেও রপ্তানি করা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তিপর্যায়ের বিভিন্ন দপ্তরের পৃষ্ঠপোষকতা চেয়েছে ওই শিক্ষার্থী।

জামনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী সৌরভ দাস বলে, সবুজ বলপেনে সুন্দর লেখা হয়।

জামনগর উচ্চবিদ্যালয়ে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুদিপ্ত দাস বন্ধন বলে, গ্রিন পেন দিয়ে সাধারণ কলমের মতোই লেখা হয়। এ কলম ব্যাপকভাবে চালু হলে এলাকার কিছুসংখ্যক নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে।

প্রতিবেশী মানবাধীকার কর্মী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আরশাদ মাহ্মুদ ওই শিক্ষার্থীর উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘সবুজ কলম বা গ্রিন পেন অবশ্যই পরিবেশবান্ধব। এটি বেশি বেশি ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে পারি। এছাড়া এটি ব্যবহারের ফলে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বিরাট ভূমিকা পালন করবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নীলুফা সরকার প্রত্যয়কে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘সবুজ কলম বা গ্রিন পেন অবশ্যই পরিবেশবান্ধব। এটি বেশি বেশি ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে পারি। এছাড়া এটি ব্যবহারের ফলে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বিরাট ভূমিকা পালন করবে।’