ঢাকা ০৯:৩০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
রংপুরে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ৩ সদস্যের সাজা প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর লাশ উদ্ধার হযরত শাহজালাল (রহ:) মাজারে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের উপর গ্রেনেড হামলায় আহত হওয়ার ঘটনা রাষ্ট্রপতির সাথে আইআইইউসি প্রতিনিধি দলের সৌজন্য সাক্ষাৎ গাজীপুরে জাল টাকাসহ গ্রেপ্তার দৌলতপুরে আটকের পর মাদক বহনকারীকে ছেড়ে দেওযার অভিযোগ! টঙ্গীতে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালিত সন্তানদের নতুন জামা পরিয়ে রাতে ঘর থেকে বের হয়ে আর ফিরলেন না বাবা প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স নীতির ফলে দেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মুল হয়েছেঃ সিলেটে আইজিপি বড় পরিসরে আর. কে. মিশন রোডে ব্র্যাক ব্যাংকের শাখা উদ্বোধন

শত কোটি টাকা আত্মসাৎ: দেশত্যাগের সময় বিমানবন্দরে বিশ্বাস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আটক

আবু তালহা (কুমারখালি) কুষ্টিয়া
  • Update Time : ০৪:২২:২৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১ মে ২০২৪
  • / ৪৫ Time View

প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহকদের থেকে শতকোটি টাকা আত্মসাৎ করে পালানোর সময় গ্রেপ্তার হয়েছেন আনিছুর রহমান নামের এক অর্থ আত্মসাৎকারী।

অভিযুক্ত আনিসুর রহমান আনিছ।

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) সকাল ১১ টায় বিদেশ যাওয়ার পথে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কুমারখালী থানা পুলিশের প্রচেষ্টায় বন্দরে কর্তব্যরত পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন তিনি।

আটক আনিছের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের করা প্রায় মামলা রয়েছে কোর্টে। একটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে তিনি গা ঢাকা দেন। গত পাঁচ মাস পালিয়ে থাকার পর তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে কুমারখালী থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

এর আগে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর আলাউদ্দিন নগরে অবস্থিত বিশ্বাস ফাউন্ডেশনের আওতায় বিশ্বাস সঞ্চয় ,ঋণদান ও সমবায় সমিতি লিমিটেডের চেয়ারম্যান পদে নিযুক্ত ছিলেন তিনি।

উল্লেখ্য,কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একসময় কর্মরত সামান্য অফিস সহায়ক মৃত ইব্রাহিম বিশ্বাসের ছেলে আনিছুর রহমান বিশ্বাস (আনিছ) ২০০৬ সালে বিশ্বাস সঞ্চয় ঋণদান ও সমবায়সমিতি লিমিটেড নামে একটি এনজিও চালু করেন।

এরপর বিভিন্ন আর্থিক সুবিধা দেবার আশ্বাসে সমিতির সদস্য সংগ্রহ শুরু করেন এই (আনিছ) প্রতারক।

এনজিওর সদস্যরা লাখে ১৫ শত থেকে ২ হাজার টাকা মাসিক লভ্যাংশের আশায় লাখ লাখ টাকা লগ্নি করতে থাকেন বিশ্বাস ফাউন্ডেশনে।

এভাবেই বাংলাদেশের ৯ টি জেলায় বিভিন্ন নামে ৫৮ টি এনজিওর শাখা তৈরি করা হয়। ৫৮ টি শাখায় প্রায় ১৫৩ জন কর্মী নিয়োগ দেয়া হয় এবং কর্মচারিদের নিকট থেকে একাধিক ফাঁকা চেক ও ষ্ট্যাম্প নেওয়া হয় প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার কথা বলে।

এসব কর্মীদের দিয়ে তাদের আত্মীয়- স্বজনদের বিভিন্ন ভাবে প্রলোভন দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা বিশ্বাস ফাউন্ডেশনে লগ্নি করানো হয়। প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান বিশ্বাস ও তার ভাই প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং ডিরেক্টর আবু সাঈদ বিশ্বাস দু’জনের ২ টি প্রাইভেট কার ছাড়াও অন্যান্য পদস্থ কর্মকর্তাদের জন্য আরো তিনটি প্রাইভেট কার কেনা হয়।

কুষ্টিয়ার কুমারখালীসহ বেশ কয়েকটি উপজেলায় মোট ৬ টি টিভি ফ্রিজ ও নিত্য ব্যবহার্যের শোরুম চালু করা হয় এবং এসব শোরুমে মালামাল পরিবহনের জন্য দুটি কাভার্ড ভ্যান কেনা হয়। গ্রামে পরিপাটি করে বাড়িঘর নির্মাণ ছাড়াও কুষ্টিয়া – ৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহাবুব উল আলম হানিফ এর বাড়ি সংলগ্ন ৭ তলা ভবন ছাড়াও ৪ শতাংশ জমি ক্রয়, কুমারখালী কাজীপাড়া মেইন রোডের সাথে ১৯ শতাংশ মুল্যবান জমি ক্রয় ও ঢাকা বিভিন্ন এলাকায় ৩/৪ টি ফ্ল্যাট কিনে বিলাসী জীবন যাপন করতে থাকেন আনিসুর রহমান ও তার ভাই এমন অভিযোগ রয়েছে গ্রাহকদের ।

২০২২ সালে সারা বাংলাদেশে ঋণ কার্যক্রম পরিচালনার উদ্দেশ্য মালঞ্চ ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ নামের এমআরএ সনদ ৪৫ লাখ টাকায় ক্রয় করেন প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়াও তার বিশেদ ভ্রমন, দুই ছেলের রাজকীয় ভাবে বিয়ে, উপহার, ব্যায়বহুল প্রতিষ্ঠানে সন্তানদের পড়াশোনাসহ বিভিন্ন ভাবে খরচ করেন গ্রাহকের লগ্নি করা টাকা

২০২৩ সালের শুরুতেই ধ্বস নামে বিশ্বাস ফাউন্ডেশনের। সদস্যরা বিষয়টি অনুমান করতে পেরে তাদের লগ্নিকৃত টাকা ফেরত চাইলে শুরু হয় নানা টাল বাহানা। একাধিকবার সময় দিয়েও টাকা ফেরত না দিলে সদস্যদের চাপে আলাউদ্দিন নগরের বিশ্বাস ফাউন্ডেশন এর মুল অফিসে তালা ঝুলিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায় এনজিও কর্তৃপক্ষ।

এরপর থেকেই দেশত্যাগের চেষ্টা করতে থাকে আনিছ। সেসময় স্থানীয়রা পার্সপোর্ট কেড়ে নিয়ে পরবর্তীতে ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে নতুন পাসপোর্ট এর আবেদন করেন। এছাড়াও পূর্বের পাসপোর্ট হারিয়ে গেছে বলে সাধারন ডায়েরী করে নতুন পাসপোর্ট সংগ্রহ করে যেকোনভাবে আনিছ বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন।

বিশ্বাস ফাউন্ডেশনের গ্রাহক লিয়াক আলী বিশ্বাস বলেন, আমার এবং আমার পরিবারের প্রায় এক কোটি টাকা নিয়েছে এই আনিছ। আমি দ্রুত এর বিচার চাই।

বিশ্বাস ফাউন্ডেশনের গ্রাহক সরোয়ার আলম জানান, নানা প্রলোভন দেখিয়ে আমার এবং আমার পরিবার থেকে ৫০ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করায় আনিছ ও তার ভাই আবু সাইদ। আমরা সবাই আমাদের কষ্টের জমানো টাকা ফেরত চাই।

কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকিবুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, বিমানবন্দর থেকে বিশ্বাস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান আনিছুরকে আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ছিল। অভিযুক্ত আনিচের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

Please Share This Post in Your Social Media

শত কোটি টাকা আত্মসাৎ: দেশত্যাগের সময় বিমানবন্দরে বিশ্বাস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আটক

Update Time : ০৪:২২:২৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১ মে ২০২৪

প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহকদের থেকে শতকোটি টাকা আত্মসাৎ করে পালানোর সময় গ্রেপ্তার হয়েছেন আনিছুর রহমান নামের এক অর্থ আত্মসাৎকারী।

অভিযুক্ত আনিসুর রহমান আনিছ।

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) সকাল ১১ টায় বিদেশ যাওয়ার পথে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কুমারখালী থানা পুলিশের প্রচেষ্টায় বন্দরে কর্তব্যরত পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন তিনি।

আটক আনিছের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের করা প্রায় মামলা রয়েছে কোর্টে। একটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে তিনি গা ঢাকা দেন। গত পাঁচ মাস পালিয়ে থাকার পর তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে কুমারখালী থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

এর আগে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর আলাউদ্দিন নগরে অবস্থিত বিশ্বাস ফাউন্ডেশনের আওতায় বিশ্বাস সঞ্চয় ,ঋণদান ও সমবায় সমিতি লিমিটেডের চেয়ারম্যান পদে নিযুক্ত ছিলেন তিনি।

উল্লেখ্য,কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একসময় কর্মরত সামান্য অফিস সহায়ক মৃত ইব্রাহিম বিশ্বাসের ছেলে আনিছুর রহমান বিশ্বাস (আনিছ) ২০০৬ সালে বিশ্বাস সঞ্চয় ঋণদান ও সমবায়সমিতি লিমিটেড নামে একটি এনজিও চালু করেন।

এরপর বিভিন্ন আর্থিক সুবিধা দেবার আশ্বাসে সমিতির সদস্য সংগ্রহ শুরু করেন এই (আনিছ) প্রতারক।

এনজিওর সদস্যরা লাখে ১৫ শত থেকে ২ হাজার টাকা মাসিক লভ্যাংশের আশায় লাখ লাখ টাকা লগ্নি করতে থাকেন বিশ্বাস ফাউন্ডেশনে।

এভাবেই বাংলাদেশের ৯ টি জেলায় বিভিন্ন নামে ৫৮ টি এনজিওর শাখা তৈরি করা হয়। ৫৮ টি শাখায় প্রায় ১৫৩ জন কর্মী নিয়োগ দেয়া হয় এবং কর্মচারিদের নিকট থেকে একাধিক ফাঁকা চেক ও ষ্ট্যাম্প নেওয়া হয় প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার কথা বলে।

এসব কর্মীদের দিয়ে তাদের আত্মীয়- স্বজনদের বিভিন্ন ভাবে প্রলোভন দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা বিশ্বাস ফাউন্ডেশনে লগ্নি করানো হয়। প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান বিশ্বাস ও তার ভাই প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং ডিরেক্টর আবু সাঈদ বিশ্বাস দু’জনের ২ টি প্রাইভেট কার ছাড়াও অন্যান্য পদস্থ কর্মকর্তাদের জন্য আরো তিনটি প্রাইভেট কার কেনা হয়।

কুষ্টিয়ার কুমারখালীসহ বেশ কয়েকটি উপজেলায় মোট ৬ টি টিভি ফ্রিজ ও নিত্য ব্যবহার্যের শোরুম চালু করা হয় এবং এসব শোরুমে মালামাল পরিবহনের জন্য দুটি কাভার্ড ভ্যান কেনা হয়। গ্রামে পরিপাটি করে বাড়িঘর নির্মাণ ছাড়াও কুষ্টিয়া – ৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহাবুব উল আলম হানিফ এর বাড়ি সংলগ্ন ৭ তলা ভবন ছাড়াও ৪ শতাংশ জমি ক্রয়, কুমারখালী কাজীপাড়া মেইন রোডের সাথে ১৯ শতাংশ মুল্যবান জমি ক্রয় ও ঢাকা বিভিন্ন এলাকায় ৩/৪ টি ফ্ল্যাট কিনে বিলাসী জীবন যাপন করতে থাকেন আনিসুর রহমান ও তার ভাই এমন অভিযোগ রয়েছে গ্রাহকদের ।

২০২২ সালে সারা বাংলাদেশে ঋণ কার্যক্রম পরিচালনার উদ্দেশ্য মালঞ্চ ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ নামের এমআরএ সনদ ৪৫ লাখ টাকায় ক্রয় করেন প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়াও তার বিশেদ ভ্রমন, দুই ছেলের রাজকীয় ভাবে বিয়ে, উপহার, ব্যায়বহুল প্রতিষ্ঠানে সন্তানদের পড়াশোনাসহ বিভিন্ন ভাবে খরচ করেন গ্রাহকের লগ্নি করা টাকা

২০২৩ সালের শুরুতেই ধ্বস নামে বিশ্বাস ফাউন্ডেশনের। সদস্যরা বিষয়টি অনুমান করতে পেরে তাদের লগ্নিকৃত টাকা ফেরত চাইলে শুরু হয় নানা টাল বাহানা। একাধিকবার সময় দিয়েও টাকা ফেরত না দিলে সদস্যদের চাপে আলাউদ্দিন নগরের বিশ্বাস ফাউন্ডেশন এর মুল অফিসে তালা ঝুলিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায় এনজিও কর্তৃপক্ষ।

এরপর থেকেই দেশত্যাগের চেষ্টা করতে থাকে আনিছ। সেসময় স্থানীয়রা পার্সপোর্ট কেড়ে নিয়ে পরবর্তীতে ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে নতুন পাসপোর্ট এর আবেদন করেন। এছাড়াও পূর্বের পাসপোর্ট হারিয়ে গেছে বলে সাধারন ডায়েরী করে নতুন পাসপোর্ট সংগ্রহ করে যেকোনভাবে আনিছ বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন।

বিশ্বাস ফাউন্ডেশনের গ্রাহক লিয়াক আলী বিশ্বাস বলেন, আমার এবং আমার পরিবারের প্রায় এক কোটি টাকা নিয়েছে এই আনিছ। আমি দ্রুত এর বিচার চাই।

বিশ্বাস ফাউন্ডেশনের গ্রাহক সরোয়ার আলম জানান, নানা প্রলোভন দেখিয়ে আমার এবং আমার পরিবার থেকে ৫০ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করায় আনিছ ও তার ভাই আবু সাইদ। আমরা সবাই আমাদের কষ্টের জমানো টাকা ফেরত চাই।

কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকিবুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, বিমানবন্দর থেকে বিশ্বাস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান আনিছুরকে আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ছিল। অভিযুক্ত আনিচের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।