ঢাকা ১০:০৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
জাতীয় কৃষি প্রশিক্ষণ একাডেমি (নাটা) তে “ইনোভেশন শোকেসিং” আয়োজন টঙ্গীতে বিনিয়োগকৃত অর্থ আদায়ের দাবীতে সংবাদ সম্মেলন পরিবেশ ও উন্নয়ন সাংবাদিকতায় হয়রানি হলে সুরক্ষা দেবে সরকার: তথ্য প্রতিমন্ত্রী আজ সেই ভয়াল ৩ মে! প্রবাসীদের সেবার মান বাড়াতে স্মার্ট কার্ড প্রদান করা হবে – ড. মোমেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের উপস্থিতি হার ৯০ শতাংশ ইবিতে ‘বি’ ইউনিটের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত অবিলম্বে ১০ম ওয়েজবোর্ড গঠন করুন: বিএফইউজে ও ডিইউজে নেতৃবৃন্দ অজ্ঞান করে স্বর্ণ ও টাকা চুরির রহস্য উদঘাটন ও চোরাই মালামালসহ গ্রেফতার ১ কয়েন প্রতারণার ফাঁদে ফেলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া চক্রের দুই সদস্য গ্রেফতার

অস্ত্র মামলায় গোল্ডেন মনির খালাস

অনলাইন ডেস্ক
  • Update Time : ১০:৪০:৩৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
  • / ২১ Time View

রাজধানীর ভাটারা থানার অস্ত্র আইনের মামলায় মনির হোসেন ওরফে গোল্ডেন মনিরকে খালাস দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) ঢাকার ১ নম্বর বিশেষ ট্রাইব্যুনালের অতিরিক্ত পিপি তাপস কুমার পাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, চলতি বছর ৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার ১ নম্বর বিশেষ ট্রাইব্যুনালের সাবেক বিচারক মো. আসাদুজ্জামান এই রায় দেন। পূর্ণাঙ্গ রায় হাতে পাওয়ার পর পর্যালোচনা সাপেক্ষে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছে- মনির ও তার স্ত্রীর নামে লাইসেন্স করা অস্ত্র ছিল। তাই নিজের ও স্ত্রীর নামে দুটি বৈধ অস্ত্র থাকা অবস্থায় আরেকটি অবৈধ অস্ত্র ঘরে রাখার ঘটনা স্বাভাবিক ও বিশ্বাসযোগ্য নয়।

আদালত আরও বলেছেন, ২০২০ সালের ২০ নভেম্বর সকাল সাড়ে ছয়টায় মনির হোসেনের বাড্ডার বাসার শয়নকক্ষে খাটের তোশকের নিচ থেকে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। তবে এতোদিন রায়ের বিষয়টি গোপন রাখা হয়।

মনিরের আইনজীবী দবির উদ্দিন বলেন, রায়ে প্রমাণিত হয়েছে, মনিরকে হয়রানির উদ্দেশ্যে তার বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলা করা হয়।

জানা যায়, রাজধানীর মেরুল বাড্ডার বাসায় ২০২০ সালের ২০ নভেম্বর অভিযান চালিয়ে মনিরকে গ্রেফতার করে র‍্যাব। এ সময় একটি বিদেশি পিস্তল, চার লিটার বিদেশি মদ, ৩২টি নকল সিল, ৮ লাখ টাকার বেশি মূল্যমানের বৈদেশিক মুদ্রা, ৬০০ ভরি স্বর্ণালংকার ও ১ কোটি ৯ লাখ টাকা জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় অস্ত্র আইনসহ বাড্ডা থানায় পৃথক তিনটি মামলা করেছিল র‍্যাব। ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি অস্ত্র ও মাদক মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির গুলশান বিভাগের পরিদর্শক আব্দুল মালেক। ওই বছর ২৫ এপ্রিল আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন একই আদালত।রাষ্ট্রপক্ষে ১৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত তাকে খালাস দেন।

অপরদিকে গোল্ডেন মনিরের অবৈধ সম্পদ ও অপরাধলব্ধ আয়ের তথ্য-প্রমাণ পেয়ে ২০২২ সালের ১১ মে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এ মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। এ ছাড়া বিশেষ ক্ষমতা আইন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলা সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে।

২০২০ সালের ২০ নভেম্বর মনিরের মেরুল বাড্ডার ১৩ নম্বর রোডের ৪১ নম্বর বাড়িতে অভিযান চালায় র‌্যাব।

অস্ত্র মামলায় যে কারণে খালাস
আদালতের রায়ের তথ্য অনুযায়ী, র‍্যাব মামলায় বলেছিল, ২০২০ সালের ২২ নভেম্বর মনির হোসেনের বাড্ডার বাসায় র‍্যাব অভিযান চালিয়েছিল সকাল ছয়টায়। বাসার তৃতীয় তলায় শয়নকক্ষের তোশকের নিচ থেকে ম্যাগাজিনভর্তি একটি পিস্তল উদ্ধার করে তারা। উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের লাইসেন্স ছিল না। অস্ত্র আইনে মামলার পর মনিরকে আদালতের অনুমতি নিয়ে সাত দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। পরে তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। অভিযোগ গঠনের পর রাষ্ট্রপক্ষ থেকে ১৬ জন সাক্ষীকে আদালতে হাজির করা হয়।

আদালত বলেছেন, রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আদালতে সাক্ষ্য দেওয়া ১৬ সাক্ষীর মধ্যে দুজন পাবলিক সাক্ষী। অন্যরা সবাই পুলিশ সদস্য। মামলার ১৩ নম্বর পাবলিক সাক্ষী এমাদ উদ্দিন আদালতকে বলেন, ২০২০ সালের ২০ নভেম্বর রাত সাড়ে ১০টার দিকে ওষুধের দোকানে কর্মরত থাকা অবস্থায় র‍্যাব সদস্যরা তাঁকে ডেকে নিয়ে যান। পরে মনিরের বাসার একটি কক্ষে সারা রাত বসিয়ে রাখা হয় তাঁকে। মধ্যরাতে (রাত ৩টা) র‍্যাব কর্মকর্তারা একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেন। পরদিন সকাল সাড়ে ১০টায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। মামলার ১৪তম সাক্ষী মোবারক হোসেন আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেন, তাঁকেও রাত সাড়ে ১০টার দিকে র‍্যাবের সদস্যরা ডেকে মনিরের বাসায় নিয়ে যান। তাঁর কাছ থেকেও সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেন র‍্যাবের সদস্যরা।

রায়ে বলা হয়েছে, পাবলিক সাক্ষী এমাদ ও মোবারকদের উপস্থিতিতে মনিরের বাসার শয়নকক্ষ থেকে অস্ত্র ও গুলি উদ্ধারের অভিযোগ সমর্থন করে না। রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের তথ্য বিশ্লেষণে প্রমাণিত হয়, মনিরের বাসায় সকাল সাড়ে ছয়টায় নয়; অভিযান চালানো হয় রাত সাড়ে ১০টায়। বিশেষ উদ্দেশ্যে মনিরের বাসায় অভিযান চালানো হয়। রাষ্ট্রপক্ষের মামলাটি সাজানো। অন্য সাক্ষীরা মনিরের শয়নকক্ষ থেকে অস্ত্র ও গুলি উদ্ধারে যে সাক্ষ্য দিয়েছেন, তা আদৌ বিশ্বাসযোগ্য নয়।

রায়ে বলা হয়েছে, মনিরের বাসা থেকে উদ্ধার অস্ত্রের ফরেনসিক পরীক্ষা করানো হয়েছে বলে কোনো তথ্য নথিতে উল্লেখ নেই। আবার মামলা করতে দেরি হয় ১৯ ঘণ্টা ১৫ মিনিট। এত বিলম্বের ব্যাখ্যা সন্তোষজনক নয়।

রায়ের তথ্য বলছে, মামলার সাক্ষী উপপরিদর্শক (এসআই) মানিক চন্দ্র রায় আদালতকে বলেন, মনির হোসেনকে তাঁর বাসার দোতলা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। আরেক সাক্ষী এসআই জামাল হোসেন ও এএসআই নাজিম উদ্দিন বলেন, মনির হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয় বাসার তৃতীয় তলা থেকে। অর্থাৎ সাক্ষীদের সাক্ষ্য পরস্পরবিরোধী।

আদালত আরও উল্লেখ করেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের পরিদর্শক আবদুল মালেক আদালতকে বলেছেন, তদন্তের সময় তিনি জানতে পারেন, মনির ও তাঁর স্ত্রীর নামে দুটি লাইসেন্স করা অস্ত্র ছিল। অর্থাৎ আবদুল মালেকের সাক্ষ্য থেকে স্পষ্ট যে মনির ও তাঁর স্ত্রীর নামে দুটি বৈধ অস্ত্র ছিল। বৈধ অস্ত্র থাকা অবস্থায় আরেকটি অবৈধ অস্ত্র ঘরে রাখার ঘটনা বিশ্বাসযোগ্য নয়।

মনিরের বাসা থেকে ৬০০ ভরি স্বর্ণালংকার ও ১ কোটি ৯ লাখ টাকা জব্দ করা হয়েছে বলে জানায় র‍্যাব।

দোকানকর্মী থেকে স্বর্ণ চোরাচালানি
মানি লন্ডারিং মামলার কাগজপত্রের তথ্য বলছে, গোল্ডেন মনির ও তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা ১২৯টি ব্যাংক হিসাবে ৭৯১ কোটি ৫ লাখ ৯৬ হাজার ৫২৩ টাকা জমা করা হয়। মনির এ আয়ের একটি অংশ সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের সদস্যদের যোগসাজশে যৌথ ও একক নামে ব্যবসায় বিনিয়োগ করে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তিতে রূপান্তর করেছেন।

মনিরকে গ্রেপ্তার করার পর র‍্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, নব্বইয়ের দশকে গাউছিয়া মার্কেটে কাপড়ের দোকানের বিক্রয়কর্মী ছিলেন মনির। পরে মৌচাক মার্কেটের ক্রোকারিজের দোকানে চাকরি নেন। এরপর তিনি বিমানবন্দরকেন্দ্রিক লাগেজ পার্টি ও সোনা চোরাচালানে জড়িয়ে পড়েন। পরিচিতি পান ‘গোল্ডেন মনির’ নামে। বিক্রয়কর্মী থেকে লাগেজ পার্টিতে যোগ দেওয়ার পর মনির শুরুতে কর ফাঁকি দিয়ে কাপড়, প্রসাধনী, ইলেকট্রনিক পণ্য, কম্পিউটার-সামগ্রীসহ বিভিন্ন মালামাল আনা-নেওয়া করতেন। একপর্যায়ে আকাশপথে সোনা চোরাচালানে জড়িয়ে পড়েন।

এদিকে সিআইডির তথ্য বলছে, অপরাধলব্ধ আয় দিয়ে গোল্ডেন মনির স্ত্রী, ছেলে ও নিজের নামে সরকারি ২০টিসহ ৩০টি প্লট, ১৫টি বাড়ি, একটি আবাসন প্রতিষ্ঠান ও দুটি গাড়ির শোরুম করেছেন। অথচ মনির ২০০৯ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে দাখিল করা সম্পদের হিসাব বিবরণীতে উল্লেখ করেছিলেন, তাঁর স্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৩ কোটি টাকা। আর অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৬৭ লাখ টাকা।

Please Share This Post in Your Social Media

অস্ত্র মামলায় গোল্ডেন মনির খালাস

Update Time : ১০:৪০:৩৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

রাজধানীর ভাটারা থানার অস্ত্র আইনের মামলায় মনির হোসেন ওরফে গোল্ডেন মনিরকে খালাস দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) ঢাকার ১ নম্বর বিশেষ ট্রাইব্যুনালের অতিরিক্ত পিপি তাপস কুমার পাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, চলতি বছর ৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার ১ নম্বর বিশেষ ট্রাইব্যুনালের সাবেক বিচারক মো. আসাদুজ্জামান এই রায় দেন। পূর্ণাঙ্গ রায় হাতে পাওয়ার পর পর্যালোচনা সাপেক্ষে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছে- মনির ও তার স্ত্রীর নামে লাইসেন্স করা অস্ত্র ছিল। তাই নিজের ও স্ত্রীর নামে দুটি বৈধ অস্ত্র থাকা অবস্থায় আরেকটি অবৈধ অস্ত্র ঘরে রাখার ঘটনা স্বাভাবিক ও বিশ্বাসযোগ্য নয়।

আদালত আরও বলেছেন, ২০২০ সালের ২০ নভেম্বর সকাল সাড়ে ছয়টায় মনির হোসেনের বাড্ডার বাসার শয়নকক্ষে খাটের তোশকের নিচ থেকে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। তবে এতোদিন রায়ের বিষয়টি গোপন রাখা হয়।

মনিরের আইনজীবী দবির উদ্দিন বলেন, রায়ে প্রমাণিত হয়েছে, মনিরকে হয়রানির উদ্দেশ্যে তার বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলা করা হয়।

জানা যায়, রাজধানীর মেরুল বাড্ডার বাসায় ২০২০ সালের ২০ নভেম্বর অভিযান চালিয়ে মনিরকে গ্রেফতার করে র‍্যাব। এ সময় একটি বিদেশি পিস্তল, চার লিটার বিদেশি মদ, ৩২টি নকল সিল, ৮ লাখ টাকার বেশি মূল্যমানের বৈদেশিক মুদ্রা, ৬০০ ভরি স্বর্ণালংকার ও ১ কোটি ৯ লাখ টাকা জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় অস্ত্র আইনসহ বাড্ডা থানায় পৃথক তিনটি মামলা করেছিল র‍্যাব। ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি অস্ত্র ও মাদক মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির গুলশান বিভাগের পরিদর্শক আব্দুল মালেক। ওই বছর ২৫ এপ্রিল আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন একই আদালত।রাষ্ট্রপক্ষে ১৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত তাকে খালাস দেন।

অপরদিকে গোল্ডেন মনিরের অবৈধ সম্পদ ও অপরাধলব্ধ আয়ের তথ্য-প্রমাণ পেয়ে ২০২২ সালের ১১ মে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এ মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। এ ছাড়া বিশেষ ক্ষমতা আইন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলা সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে।

২০২০ সালের ২০ নভেম্বর মনিরের মেরুল বাড্ডার ১৩ নম্বর রোডের ৪১ নম্বর বাড়িতে অভিযান চালায় র‌্যাব।

অস্ত্র মামলায় যে কারণে খালাস
আদালতের রায়ের তথ্য অনুযায়ী, র‍্যাব মামলায় বলেছিল, ২০২০ সালের ২২ নভেম্বর মনির হোসেনের বাড্ডার বাসায় র‍্যাব অভিযান চালিয়েছিল সকাল ছয়টায়। বাসার তৃতীয় তলায় শয়নকক্ষের তোশকের নিচ থেকে ম্যাগাজিনভর্তি একটি পিস্তল উদ্ধার করে তারা। উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের লাইসেন্স ছিল না। অস্ত্র আইনে মামলার পর মনিরকে আদালতের অনুমতি নিয়ে সাত দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। পরে তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। অভিযোগ গঠনের পর রাষ্ট্রপক্ষ থেকে ১৬ জন সাক্ষীকে আদালতে হাজির করা হয়।

আদালত বলেছেন, রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আদালতে সাক্ষ্য দেওয়া ১৬ সাক্ষীর মধ্যে দুজন পাবলিক সাক্ষী। অন্যরা সবাই পুলিশ সদস্য। মামলার ১৩ নম্বর পাবলিক সাক্ষী এমাদ উদ্দিন আদালতকে বলেন, ২০২০ সালের ২০ নভেম্বর রাত সাড়ে ১০টার দিকে ওষুধের দোকানে কর্মরত থাকা অবস্থায় র‍্যাব সদস্যরা তাঁকে ডেকে নিয়ে যান। পরে মনিরের বাসার একটি কক্ষে সারা রাত বসিয়ে রাখা হয় তাঁকে। মধ্যরাতে (রাত ৩টা) র‍্যাব কর্মকর্তারা একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেন। পরদিন সকাল সাড়ে ১০টায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। মামলার ১৪তম সাক্ষী মোবারক হোসেন আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেন, তাঁকেও রাত সাড়ে ১০টার দিকে র‍্যাবের সদস্যরা ডেকে মনিরের বাসায় নিয়ে যান। তাঁর কাছ থেকেও সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেন র‍্যাবের সদস্যরা।

রায়ে বলা হয়েছে, পাবলিক সাক্ষী এমাদ ও মোবারকদের উপস্থিতিতে মনিরের বাসার শয়নকক্ষ থেকে অস্ত্র ও গুলি উদ্ধারের অভিযোগ সমর্থন করে না। রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের তথ্য বিশ্লেষণে প্রমাণিত হয়, মনিরের বাসায় সকাল সাড়ে ছয়টায় নয়; অভিযান চালানো হয় রাত সাড়ে ১০টায়। বিশেষ উদ্দেশ্যে মনিরের বাসায় অভিযান চালানো হয়। রাষ্ট্রপক্ষের মামলাটি সাজানো। অন্য সাক্ষীরা মনিরের শয়নকক্ষ থেকে অস্ত্র ও গুলি উদ্ধারে যে সাক্ষ্য দিয়েছেন, তা আদৌ বিশ্বাসযোগ্য নয়।

রায়ে বলা হয়েছে, মনিরের বাসা থেকে উদ্ধার অস্ত্রের ফরেনসিক পরীক্ষা করানো হয়েছে বলে কোনো তথ্য নথিতে উল্লেখ নেই। আবার মামলা করতে দেরি হয় ১৯ ঘণ্টা ১৫ মিনিট। এত বিলম্বের ব্যাখ্যা সন্তোষজনক নয়।

রায়ের তথ্য বলছে, মামলার সাক্ষী উপপরিদর্শক (এসআই) মানিক চন্দ্র রায় আদালতকে বলেন, মনির হোসেনকে তাঁর বাসার দোতলা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। আরেক সাক্ষী এসআই জামাল হোসেন ও এএসআই নাজিম উদ্দিন বলেন, মনির হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয় বাসার তৃতীয় তলা থেকে। অর্থাৎ সাক্ষীদের সাক্ষ্য পরস্পরবিরোধী।

আদালত আরও উল্লেখ করেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের পরিদর্শক আবদুল মালেক আদালতকে বলেছেন, তদন্তের সময় তিনি জানতে পারেন, মনির ও তাঁর স্ত্রীর নামে দুটি লাইসেন্স করা অস্ত্র ছিল। অর্থাৎ আবদুল মালেকের সাক্ষ্য থেকে স্পষ্ট যে মনির ও তাঁর স্ত্রীর নামে দুটি বৈধ অস্ত্র ছিল। বৈধ অস্ত্র থাকা অবস্থায় আরেকটি অবৈধ অস্ত্র ঘরে রাখার ঘটনা বিশ্বাসযোগ্য নয়।

মনিরের বাসা থেকে ৬০০ ভরি স্বর্ণালংকার ও ১ কোটি ৯ লাখ টাকা জব্দ করা হয়েছে বলে জানায় র‍্যাব।

দোকানকর্মী থেকে স্বর্ণ চোরাচালানি
মানি লন্ডারিং মামলার কাগজপত্রের তথ্য বলছে, গোল্ডেন মনির ও তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা ১২৯টি ব্যাংক হিসাবে ৭৯১ কোটি ৫ লাখ ৯৬ হাজার ৫২৩ টাকা জমা করা হয়। মনির এ আয়ের একটি অংশ সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের সদস্যদের যোগসাজশে যৌথ ও একক নামে ব্যবসায় বিনিয়োগ করে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তিতে রূপান্তর করেছেন।

মনিরকে গ্রেপ্তার করার পর র‍্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, নব্বইয়ের দশকে গাউছিয়া মার্কেটে কাপড়ের দোকানের বিক্রয়কর্মী ছিলেন মনির। পরে মৌচাক মার্কেটের ক্রোকারিজের দোকানে চাকরি নেন। এরপর তিনি বিমানবন্দরকেন্দ্রিক লাগেজ পার্টি ও সোনা চোরাচালানে জড়িয়ে পড়েন। পরিচিতি পান ‘গোল্ডেন মনির’ নামে। বিক্রয়কর্মী থেকে লাগেজ পার্টিতে যোগ দেওয়ার পর মনির শুরুতে কর ফাঁকি দিয়ে কাপড়, প্রসাধনী, ইলেকট্রনিক পণ্য, কম্পিউটার-সামগ্রীসহ বিভিন্ন মালামাল আনা-নেওয়া করতেন। একপর্যায়ে আকাশপথে সোনা চোরাচালানে জড়িয়ে পড়েন।

এদিকে সিআইডির তথ্য বলছে, অপরাধলব্ধ আয় দিয়ে গোল্ডেন মনির স্ত্রী, ছেলে ও নিজের নামে সরকারি ২০টিসহ ৩০টি প্লট, ১৫টি বাড়ি, একটি আবাসন প্রতিষ্ঠান ও দুটি গাড়ির শোরুম করেছেন। অথচ মনির ২০০৯ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে দাখিল করা সম্পদের হিসাব বিবরণীতে উল্লেখ করেছিলেন, তাঁর স্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৩ কোটি টাকা। আর অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৬৭ লাখ টাকা।