ঢাকা ০৪:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
সিলেট জেলায় ১৯ চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে ১০ জনই প্রবাসী কুরিয়ার সার্ভিসে ফেনসিডিল পাচারকালে গ্রেফতার ১ উপজেলা নির্বাচনে অনিয়ম দেখলেই অভিযোগ করার আহ্বান ইসির উপজেলা নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে- ডিসি গাজীপুর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণসভা কাল কালিয়াকৈরে বন বিভাগের জমি উদ্ধার ১ম জাতীয় ফুটসাল চ্যাম্পিয়নশীপ টুর্নামেন্টের উদ্বোধন জাতীয় কৃষি প্রশিক্ষণ একাডেমি (নাটা) তে “ইনোভেশন শোকেসিং” আয়োজন টঙ্গীতে বিনিয়োগকৃত অর্থ আদায়ের দাবীতে সংবাদ সম্মেলন পরিবেশ ও উন্নয়ন সাংবাদিকতায় হয়রানি হলে সুরক্ষা দেবে সরকার: তথ্য প্রতিমন্ত্রী

দেশে ঘণ্টায় ২-৩টি শিশু মারা যায় নিউমোনিয়ায়

নওরোজ অনলাইন ডেস্ক
  • Update Time : ০৬:২৮:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ নভেম্বর ২০২৩
  • / ৮৯ Time View

বিশ্বব্যাপী পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর প্রধান কারণ এখন নিউমোনিয়া। এই রোগের ফলে বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ৭ লাখ শিশু মারা যায়, যা পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর ১৪ শতাংশ। বাংলাদেশেও নিউমোনিয়ায় শিশুমৃত্যুর হার বেশি।

পরিসংখ্যান বলছে, দেশে প্রতিঘণ্টায় দুই থেকে তিনটি শিশু মারা নিউমোনিয়ায়। যাদের বয়স পাঁচ বছরের কম। বছরে নতুন করে এ রোগে আক্রান্ত হয় ৪০ লাখ শিশু। আক্রান্তদের মধ্যে মাত্র ৬ লাখ ৭৭ হাজার শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়ে থাকে। এদের মধ্যে মারা যায় প্রায় ২৪ হাজার শিশু। যা পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর ২৪ শতাংশ।

সম্প্রতি রাজধানীর আইসিডিডিআর,বি মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এ সংক্রান্ত গবেষণার তথ্য তুলে ধরা হয়। এতে জানা যায়, দেশে গত ১২ বছরের তুলনায় নিউমোনিয়ায় শিশুমৃত্যু ৪ শতাংশ কমেছে। তবে গত পাঁচ বছরে নিউমোনিয়ায় শিশুমৃত্যুর সংখ্যা প্রায় একই রয়েছে। ২০১১ সালে প্রতিহাজার জীবিত জন্ম নেওয়া শিশুর মধ্যে নিউমোনিয়ায় মারা যেতো ১১ জনের অধিক। ২০১৭-২০১৮ সালে মৃত্যুর এ হার কমে হয় ৮ জন। এরপর গত পাঁচ বছরে নিউমোনিয়ায় মৃত্যুহার শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৪ জনে।

নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করা না গেলে শিশুমৃত্যুর হার কমানো সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। নিউমোনিয়ায় মৃত্যুর জন্য তারা অপুষ্টি, অপরিণত শিশুর জন্ম, শিশুকে বুকের দুধ পানে মায়ের অনীহা, বায়ুদূষণ, পরিবেশ দূষণ, অ্যান্টিবায়োটিকের অকার্যকর হয়ে পড়া এবং রক্তে অক্সিজেনের স্বল্পতা ঠিক সময়ে শনাক্ত করতে না পারাকে দায়ী করছেন।

এমন পরিস্থিতির মধ্যে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য- ‘নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করুন, প্রতিটি প্রশ্বাসই গুরুত্বপূর্ণ’।

ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগের সামনে মাত্র ৬ মাসের শিশু মরিয়মকে কান্না করতে দেখা যায়। গাজীপুরের কাশিমপুরের বাসিন্দা আফজাল হোসেন ও শিখা আকতারের কন্যা মরিয়ম নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত।

আফজাল হোসেন জানান, গত ১৫ দিন ধরে জ্বর ও ঠান্ডাজনিত সমস্যায় ভুগছে মরিয়ম। এরপর নিউমোনিয়া হয়েছে বলে জানান চিকিৎসক। গাজীপুরে এক হাসপাতালে তিনদিন ভর্তি ছিল। সেখানে উন্নতি না হওয়ায় এখন এই হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। তবে সিরিয়াল লম্বা হওয়ায় দীর্ঘসময় অপেক্ষা করছি।

মরিয়মের মতো অনেক শিশুই অভিভাবকের সঙ্গে শিশু হাসপাতালে অপেক্ষা করছিল চিকিৎসকের পরামর্শ পেতে। এরই মধ্যে হালকা শীত পড়তে শুরু হওয়ায় হাসপাতালে বেড়েছে ঠান্ডাজনিত সমস্যায় আক্রান্ত রোগীর চাপ।

সরেজমিনে দেখা যায়, শিশু হাসপাতালের জরুরি বিভাগের বাইরে বসার ব্যবস্থা থাকলেও রোগী ও স্বজনদের চাপে সেখানে জায়গা পাননি অনেকেই। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে ক্লান্ত হয়ে অনেকেই মেঝেতেই বসে পড়েন। কোনো কোনো শিশুর শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা হওয়ায় তাদের অভিভাবকদের আতঙ্কিত থাকতে দেখা গেছে।

শিশু হাসপাতালের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, অক্টোবর থেকে ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত শিশুরা হাসপাতালে আসছে। গত কয়েকদিন শিশু ওয়ার্ডে রোগীর চাপ বেশ বেড়েছে। বিশেষ করে নিউমোনিয়া, ব্রংকাইটিস, শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, হাঁপানি, সর্দি-জ্বর ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে হাসপাতালে আসছেন অভিভাবকরা।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ঋতু পরিবর্তনের এই সময়ে শুধু বহির্বিভাগেই নয়, জরুরি বিভাগেও নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৪শ থেকে ৫শ রোগী হাসপাতালের বহির্বিভাগে আসছেন, যা গত দুই সপ্তাহ আগেও ছিল অর্ধেক।

আইসিডিডিআর,বি-র জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ড. মোহাম্মদ জোবায়ের চিশতী গবেষণা তথ্য তুলে ধরে বলেন, ‘বাংলাদেশের শিশুদের নিউমোনিয়ার কারণ বৈশ্বিক পরিস্থিতি থেকে একটু আলাদা। ২০১৯ এবং ২০২১ সালে আইসিডিডিআর,বি-র গবেষণায় অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী, গ্রাম-নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের বিষয়টি উঠে আসে। শৈশবকালীন নিউমোনিয়ার নতুন কারণ হিসেবে এর আবির্ভাব হচ্ছে। এছাড়া শৈশবকালীন অপুষ্টি, যা নিউমোনিয়ার ঝুঁকি ১৫ গুণ বাড়িয়ে দেয়। অপুষ্টি এখনো একটি গুরুতর সমস্যা, যেখানে ৮ শতাংশ শিশু উচ্চতার তুলনায় কম ওজনের।’

তিনি বলেন, ‘ঘরের ভেতরে বাতাসের গুণগত মান ভালো হলে নিউমোনিয়ায় মৃত্যুর ঝুঁকি অর্ধেক কমে যায়। হাত ধোয়ার কারণে রোগী কমে ২১ শতাংশ। শিশুর জন্মের প্রথম ছয়মাস শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধ খাওয়ালে নিউমোনিয়া হওয়ার ঝুঁকি ১৫ শতাংশ কমে যায়। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পালস অক্সিমিটারের প্রাপ্যতা নিউমোনিয়া রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ায়।’

নিউমোনিয়ার কারণ ও আক্রান্তের পর করণীয় বিষয়ে বারডেম জেনারেল হাসপাতাল ও ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আবিদ হোসেন মোল্লা বলেন, ‘নিউমোনিয়া ফুসফুসের প্রদাহজনিত রোগ। শুরুতে কাশি হয়, যা সাধারণত ২-৪ সপ্তাহের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে এর থেকে শ্বাসকষ্ট এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে অল্পবয়সী, প্রবীণ এবং যাদের হৃদপিণ্ড বা ফুসফুসের সমস্যা রয়েছে তাদের গুরুতর নিউমোনিয়া হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এসব ব্যক্তির স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘শ্বাসের গতি থেকে বোঝা যায় নিউমোনিয়া কি না। শিশুর জ্বর থাকে। নেতিয়ে যায়, খেতে পারে না। কাশতে কাশতে বমি হয়। এসব লক্ষণ দেখলে বুঝতে হবে শিশুর নিউমোনিয়া হতে পারে। তখন দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে। মনে রাখতে হবে, নিউমোনিয়ায় যত দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা যায়, রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকি তত কমে।’

Please Share This Post in Your Social Media

দেশে ঘণ্টায় ২-৩টি শিশু মারা যায় নিউমোনিয়ায়

Update Time : ০৬:২৮:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ নভেম্বর ২০২৩

বিশ্বব্যাপী পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর প্রধান কারণ এখন নিউমোনিয়া। এই রোগের ফলে বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ৭ লাখ শিশু মারা যায়, যা পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর ১৪ শতাংশ। বাংলাদেশেও নিউমোনিয়ায় শিশুমৃত্যুর হার বেশি।

পরিসংখ্যান বলছে, দেশে প্রতিঘণ্টায় দুই থেকে তিনটি শিশু মারা নিউমোনিয়ায়। যাদের বয়স পাঁচ বছরের কম। বছরে নতুন করে এ রোগে আক্রান্ত হয় ৪০ লাখ শিশু। আক্রান্তদের মধ্যে মাত্র ৬ লাখ ৭৭ হাজার শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়ে থাকে। এদের মধ্যে মারা যায় প্রায় ২৪ হাজার শিশু। যা পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর ২৪ শতাংশ।

সম্প্রতি রাজধানীর আইসিডিডিআর,বি মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এ সংক্রান্ত গবেষণার তথ্য তুলে ধরা হয়। এতে জানা যায়, দেশে গত ১২ বছরের তুলনায় নিউমোনিয়ায় শিশুমৃত্যু ৪ শতাংশ কমেছে। তবে গত পাঁচ বছরে নিউমোনিয়ায় শিশুমৃত্যুর সংখ্যা প্রায় একই রয়েছে। ২০১১ সালে প্রতিহাজার জীবিত জন্ম নেওয়া শিশুর মধ্যে নিউমোনিয়ায় মারা যেতো ১১ জনের অধিক। ২০১৭-২০১৮ সালে মৃত্যুর এ হার কমে হয় ৮ জন। এরপর গত পাঁচ বছরে নিউমোনিয়ায় মৃত্যুহার শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৪ জনে।

নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করা না গেলে শিশুমৃত্যুর হার কমানো সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। নিউমোনিয়ায় মৃত্যুর জন্য তারা অপুষ্টি, অপরিণত শিশুর জন্ম, শিশুকে বুকের দুধ পানে মায়ের অনীহা, বায়ুদূষণ, পরিবেশ দূষণ, অ্যান্টিবায়োটিকের অকার্যকর হয়ে পড়া এবং রক্তে অক্সিজেনের স্বল্পতা ঠিক সময়ে শনাক্ত করতে না পারাকে দায়ী করছেন।

এমন পরিস্থিতির মধ্যে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য- ‘নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করুন, প্রতিটি প্রশ্বাসই গুরুত্বপূর্ণ’।

ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগের সামনে মাত্র ৬ মাসের শিশু মরিয়মকে কান্না করতে দেখা যায়। গাজীপুরের কাশিমপুরের বাসিন্দা আফজাল হোসেন ও শিখা আকতারের কন্যা মরিয়ম নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত।

আফজাল হোসেন জানান, গত ১৫ দিন ধরে জ্বর ও ঠান্ডাজনিত সমস্যায় ভুগছে মরিয়ম। এরপর নিউমোনিয়া হয়েছে বলে জানান চিকিৎসক। গাজীপুরে এক হাসপাতালে তিনদিন ভর্তি ছিল। সেখানে উন্নতি না হওয়ায় এখন এই হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। তবে সিরিয়াল লম্বা হওয়ায় দীর্ঘসময় অপেক্ষা করছি।

মরিয়মের মতো অনেক শিশুই অভিভাবকের সঙ্গে শিশু হাসপাতালে অপেক্ষা করছিল চিকিৎসকের পরামর্শ পেতে। এরই মধ্যে হালকা শীত পড়তে শুরু হওয়ায় হাসপাতালে বেড়েছে ঠান্ডাজনিত সমস্যায় আক্রান্ত রোগীর চাপ।

সরেজমিনে দেখা যায়, শিশু হাসপাতালের জরুরি বিভাগের বাইরে বসার ব্যবস্থা থাকলেও রোগী ও স্বজনদের চাপে সেখানে জায়গা পাননি অনেকেই। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে ক্লান্ত হয়ে অনেকেই মেঝেতেই বসে পড়েন। কোনো কোনো শিশুর শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা হওয়ায় তাদের অভিভাবকদের আতঙ্কিত থাকতে দেখা গেছে।

শিশু হাসপাতালের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, অক্টোবর থেকে ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত শিশুরা হাসপাতালে আসছে। গত কয়েকদিন শিশু ওয়ার্ডে রোগীর চাপ বেশ বেড়েছে। বিশেষ করে নিউমোনিয়া, ব্রংকাইটিস, শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, হাঁপানি, সর্দি-জ্বর ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে হাসপাতালে আসছেন অভিভাবকরা।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ঋতু পরিবর্তনের এই সময়ে শুধু বহির্বিভাগেই নয়, জরুরি বিভাগেও নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৪শ থেকে ৫শ রোগী হাসপাতালের বহির্বিভাগে আসছেন, যা গত দুই সপ্তাহ আগেও ছিল অর্ধেক।

আইসিডিডিআর,বি-র জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ড. মোহাম্মদ জোবায়ের চিশতী গবেষণা তথ্য তুলে ধরে বলেন, ‘বাংলাদেশের শিশুদের নিউমোনিয়ার কারণ বৈশ্বিক পরিস্থিতি থেকে একটু আলাদা। ২০১৯ এবং ২০২১ সালে আইসিডিডিআর,বি-র গবেষণায় অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী, গ্রাম-নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের বিষয়টি উঠে আসে। শৈশবকালীন নিউমোনিয়ার নতুন কারণ হিসেবে এর আবির্ভাব হচ্ছে। এছাড়া শৈশবকালীন অপুষ্টি, যা নিউমোনিয়ার ঝুঁকি ১৫ গুণ বাড়িয়ে দেয়। অপুষ্টি এখনো একটি গুরুতর সমস্যা, যেখানে ৮ শতাংশ শিশু উচ্চতার তুলনায় কম ওজনের।’

তিনি বলেন, ‘ঘরের ভেতরে বাতাসের গুণগত মান ভালো হলে নিউমোনিয়ায় মৃত্যুর ঝুঁকি অর্ধেক কমে যায়। হাত ধোয়ার কারণে রোগী কমে ২১ শতাংশ। শিশুর জন্মের প্রথম ছয়মাস শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধ খাওয়ালে নিউমোনিয়া হওয়ার ঝুঁকি ১৫ শতাংশ কমে যায়। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পালস অক্সিমিটারের প্রাপ্যতা নিউমোনিয়া রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ায়।’

নিউমোনিয়ার কারণ ও আক্রান্তের পর করণীয় বিষয়ে বারডেম জেনারেল হাসপাতাল ও ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আবিদ হোসেন মোল্লা বলেন, ‘নিউমোনিয়া ফুসফুসের প্রদাহজনিত রোগ। শুরুতে কাশি হয়, যা সাধারণত ২-৪ সপ্তাহের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে এর থেকে শ্বাসকষ্ট এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে অল্পবয়সী, প্রবীণ এবং যাদের হৃদপিণ্ড বা ফুসফুসের সমস্যা রয়েছে তাদের গুরুতর নিউমোনিয়া হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এসব ব্যক্তির স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘শ্বাসের গতি থেকে বোঝা যায় নিউমোনিয়া কি না। শিশুর জ্বর থাকে। নেতিয়ে যায়, খেতে পারে না। কাশতে কাশতে বমি হয়। এসব লক্ষণ দেখলে বুঝতে হবে শিশুর নিউমোনিয়া হতে পারে। তখন দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে। মনে রাখতে হবে, নিউমোনিয়ায় যত দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা যায়, রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকি তত কমে।’