ঢাকা ০১:১০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ

সেনাবাহিনী জনগণের বাহিনী: প্রধানমন্ত্রী

বাসস
  • Update Time : ০৯:২১:২০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ জুলাই ২০২৩
  • / ৯৫ Time View

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দ্বিতীয় পুত্র শেখ জামালের আর্মি কোয়ালিফিকেশন সার্টিফিকেট শুভেচ্ছা স্মারক হিসেবে উপহার দেন সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। ছবি: পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণের আস্থা ও ভরসা সেনাবাহিনীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কর্মদক্ষতা দিয়ে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী তা অর্জন করেছে। সেনাবাহিনী জনগণের বাহিনী। সব সময় তারা দেশের জনগণের পাশে থাকে এবং যে কোনো দুর্যোগে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

শনিবার ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে সেনা নির্বাচন বোর্ড (প্রথম পর্যায়) ২০২৩-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

যে কোনো দেশের সেনাবাহিনীর জন্য জনগণের আস্থা ও আত্মবিশ্বাস খুব গুরুত্বপূর্ণ উল্লে­খ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আস্থা ও আত্মবিশ্বাস না থাকলে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা যায় না। আমাদের সেনাবাহিনীর ওপরও জনগণের আস্থা ও ভরসা আছে। দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সেনাবাহিনীর সদস্যদের সরাসরি সম্পৃক্ততার কথা উল্লে­খ করে তিনি বলেন, অবকাঠামো উন্নয়ন থেকে শুরু করে সর্বত্র তারা কাজ করছেন।

তিনি বলেন, সেনাবাহিনী বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। তাই আমরা নিশ্চিত- কাজগুলো গুণগতমান নিশ্চিত করে দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি উদ্ধৃতি উল্লে­খ করে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সেনাবাহিনীকে বলেছিলেন- আমাদের সেনাবাহিনী হবে জনগণের সেনাবাহিনী।’ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জনগণের সেনাবাহিনী হিসেবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

নিরপেক্ষ মূল্যায়নের মাধ্যমে পদোন্নতির জন্য যোগ্য ও বিচক্ষণ কর্মকর্তাদের বাছাই করতে প্রধানমন্ত্রী সেনা নির্বাচন বোর্ড-২০২৩-কে নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, পেশাদার যোগ্যতা বিবেচনা করে আপনাদের এটি করা উচিত। যৌক্তিক ও বৈজ্ঞানিক উপায়ে তুলনামূলক মূল্যায়ন করা উচিত। এছাড়া অফিসারদের কমান্ড দেওয়ার দক্ষতা বা (বিশেষ পরিস্থিতিতে) দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আছে কিনা, সেদিকে আপনাদের মনোযোগ দিতে হবে। পদোন্নতির জন্য যোগ্য কর্মকর্তাদের বাছাই করতে নির্বাচন বোর্ড সততা ও সঠিক বিচারের সঙ্গে পবিত্র দায়িত্ব পালন করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

সেনাবাহিনীর প্রশংসা করে তিনি বলেন, সেনাবাহিনী যে কোনো দুর্যোগ ও সংকটময় সময়ে জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করছে। দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী সব সময় দেশের মানুষের পাশে আছে। সেনাবাহিনীকে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে আখ্যায়িত করে সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ শান্তিতে বিশ্বাসী বলে কারও সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চায় না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালের পরের ইতিহাস সবাই জানেন- যখন একের পর এক অভ্যুত্থানে অনেক সেনা কর্মকর্তা ও সেনা নিহত হন। অনেকে তাদের প্রিয় ও কাছের মানুষকে খুঁজে পাননি। তিনি আরও বলেন- শুধু আমিই আমার বাবা, মা, ভাই ও আত্মীয়স্বজনকে হারাইনি, অনেক সেনা পরিবারও তাদের প্রিয়জনকে হারিয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে কেউ কথা বলতে পারেননি।

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে তিনি প্রথমে এ বিষয়ে কথা বলতে শুরু করেন। কারণ অনেক সুপরিচিত মুক্তিযোদ্ধাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। ১৯৮১ সালের ৭ জুন আওয়ামী লীগের এক সমাবেশে তিনি ঘোষণা করেছিলেন, ‘আমি সেনাবাহিনীতে বিধবাদের কান্না শুনতে চাই না, আমি সন্তানহারা পিতার কান্না শুনতে চাই না। আমি পিতৃহীন এতিম শিশুদের আর্তনাত শুনতে চাই না। এ হত্যা বন্ধ হোক।’ ওই সময় অনেকের সতর্কতা উপেক্ষা করে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘এ বিষয়ে কাউকে কথা বলতে হবে। শৃঙ্খলা থাকতে হবে। আমি বারবার (সশস্ত্র বাহিনীতে) রক্ত দেখতে চাই না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সেনাবাহিনী জনগণের। এটা আপনাদের মাথায় রাখতে হবে।’ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশি সেনাদের ভূমিকার প্রশংসা করে তিনি বলেন, শান্তিরক্ষীরা যেসব দেশে কাজ করছেন, সেসব দেশ থেকেই তারা ব্যাপক প্রশংসা পাচ্ছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে একটি মানবিক গুণ রয়েছে। কারণ, তারা তাদের নির্দিষ্ট দায়িত্বের বাইরে গিয়ে মানবিক কাজও করে। তারা সামাজিক কাজে নিয়োজিত হয়, তাই তারা যেখানেই কাজ করে না কেন, তারা স্থানীয় মানুষের কাছ থেকে যথেষ্ট সম্মান ও প্রশংসা পায়। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ এবং ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নে তার সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথা তিনি তুলে ধরেন।

২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশের অগ্রগতির বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, দেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলা করে এগিয়ে যাচ্ছে। তার সরকার দারিদ্র্যের হার ৪১ থেকে ১৮.৬ শতাংশে এবং চরম দারিদ্র্য ২৫.১ থেকে ৫.৭ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। তার সরকার দেশের শতভাগ বাড়িকে বিদ্যুতের আওতায় এনেছে। বৈশ্বিক সংকটে সবাইকে তিনি বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে এবং খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে বলেছেন।

আইএসপিআর-এর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এর আগে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে পৌঁছালে নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারেক আহমেদ সিদ্দিক এবং সেনাপ্রধান জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ তাকে স্বাগত জানান।

Please Share This Post in Your Social Media

সেনাবাহিনী জনগণের বাহিনী: প্রধানমন্ত্রী

Update Time : ০৯:২১:২০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ জুলাই ২০২৩

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণের আস্থা ও ভরসা সেনাবাহিনীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কর্মদক্ষতা দিয়ে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী তা অর্জন করেছে। সেনাবাহিনী জনগণের বাহিনী। সব সময় তারা দেশের জনগণের পাশে থাকে এবং যে কোনো দুর্যোগে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

শনিবার ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে সেনা নির্বাচন বোর্ড (প্রথম পর্যায়) ২০২৩-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

যে কোনো দেশের সেনাবাহিনীর জন্য জনগণের আস্থা ও আত্মবিশ্বাস খুব গুরুত্বপূর্ণ উল্লে­খ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আস্থা ও আত্মবিশ্বাস না থাকলে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা যায় না। আমাদের সেনাবাহিনীর ওপরও জনগণের আস্থা ও ভরসা আছে। দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সেনাবাহিনীর সদস্যদের সরাসরি সম্পৃক্ততার কথা উল্লে­খ করে তিনি বলেন, অবকাঠামো উন্নয়ন থেকে শুরু করে সর্বত্র তারা কাজ করছেন।

তিনি বলেন, সেনাবাহিনী বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। তাই আমরা নিশ্চিত- কাজগুলো গুণগতমান নিশ্চিত করে দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি উদ্ধৃতি উল্লে­খ করে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সেনাবাহিনীকে বলেছিলেন- আমাদের সেনাবাহিনী হবে জনগণের সেনাবাহিনী।’ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জনগণের সেনাবাহিনী হিসেবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

নিরপেক্ষ মূল্যায়নের মাধ্যমে পদোন্নতির জন্য যোগ্য ও বিচক্ষণ কর্মকর্তাদের বাছাই করতে প্রধানমন্ত্রী সেনা নির্বাচন বোর্ড-২০২৩-কে নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, পেশাদার যোগ্যতা বিবেচনা করে আপনাদের এটি করা উচিত। যৌক্তিক ও বৈজ্ঞানিক উপায়ে তুলনামূলক মূল্যায়ন করা উচিত। এছাড়া অফিসারদের কমান্ড দেওয়ার দক্ষতা বা (বিশেষ পরিস্থিতিতে) দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আছে কিনা, সেদিকে আপনাদের মনোযোগ দিতে হবে। পদোন্নতির জন্য যোগ্য কর্মকর্তাদের বাছাই করতে নির্বাচন বোর্ড সততা ও সঠিক বিচারের সঙ্গে পবিত্র দায়িত্ব পালন করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

সেনাবাহিনীর প্রশংসা করে তিনি বলেন, সেনাবাহিনী যে কোনো দুর্যোগ ও সংকটময় সময়ে জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করছে। দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী সব সময় দেশের মানুষের পাশে আছে। সেনাবাহিনীকে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে আখ্যায়িত করে সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ শান্তিতে বিশ্বাসী বলে কারও সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চায় না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালের পরের ইতিহাস সবাই জানেন- যখন একের পর এক অভ্যুত্থানে অনেক সেনা কর্মকর্তা ও সেনা নিহত হন। অনেকে তাদের প্রিয় ও কাছের মানুষকে খুঁজে পাননি। তিনি আরও বলেন- শুধু আমিই আমার বাবা, মা, ভাই ও আত্মীয়স্বজনকে হারাইনি, অনেক সেনা পরিবারও তাদের প্রিয়জনকে হারিয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে কেউ কথা বলতে পারেননি।

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে তিনি প্রথমে এ বিষয়ে কথা বলতে শুরু করেন। কারণ অনেক সুপরিচিত মুক্তিযোদ্ধাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। ১৯৮১ সালের ৭ জুন আওয়ামী লীগের এক সমাবেশে তিনি ঘোষণা করেছিলেন, ‘আমি সেনাবাহিনীতে বিধবাদের কান্না শুনতে চাই না, আমি সন্তানহারা পিতার কান্না শুনতে চাই না। আমি পিতৃহীন এতিম শিশুদের আর্তনাত শুনতে চাই না। এ হত্যা বন্ধ হোক।’ ওই সময় অনেকের সতর্কতা উপেক্ষা করে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘এ বিষয়ে কাউকে কথা বলতে হবে। শৃঙ্খলা থাকতে হবে। আমি বারবার (সশস্ত্র বাহিনীতে) রক্ত দেখতে চাই না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সেনাবাহিনী জনগণের। এটা আপনাদের মাথায় রাখতে হবে।’ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশি সেনাদের ভূমিকার প্রশংসা করে তিনি বলেন, শান্তিরক্ষীরা যেসব দেশে কাজ করছেন, সেসব দেশ থেকেই তারা ব্যাপক প্রশংসা পাচ্ছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে একটি মানবিক গুণ রয়েছে। কারণ, তারা তাদের নির্দিষ্ট দায়িত্বের বাইরে গিয়ে মানবিক কাজও করে। তারা সামাজিক কাজে নিয়োজিত হয়, তাই তারা যেখানেই কাজ করে না কেন, তারা স্থানীয় মানুষের কাছ থেকে যথেষ্ট সম্মান ও প্রশংসা পায়। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ এবং ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নে তার সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথা তিনি তুলে ধরেন।

২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশের অগ্রগতির বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, দেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলা করে এগিয়ে যাচ্ছে। তার সরকার দারিদ্র্যের হার ৪১ থেকে ১৮.৬ শতাংশে এবং চরম দারিদ্র্য ২৫.১ থেকে ৫.৭ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। তার সরকার দেশের শতভাগ বাড়িকে বিদ্যুতের আওতায় এনেছে। বৈশ্বিক সংকটে সবাইকে তিনি বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে এবং খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে বলেছেন।

আইএসপিআর-এর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এর আগে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে পৌঁছালে নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারেক আহমেদ সিদ্দিক এবং সেনাপ্রধান জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ তাকে স্বাগত জানান।