ঢাকা ০৭:৩৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সুবর্ণচরে মা-মেয়েকে ধর্ষণ, আসামি হারুন গ্রেপ্তার

নোয়াখালী প্রতিনিধি
  • Update Time : ০৩:৫৭:৫৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • / ৭৩ Time View

নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় ঘরের সিঁধ কেটে মা-মেয়েকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলায় মো. হারুন (৪২) নামে আরও এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে ঢাকার গাবতলী থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ নিয়ে মামলার সব আসামিকে গ্রেপ্তার করা হলো।

চরজব্বর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

গ্রেপ্তারকৃত মো.হারুন সুবর্ণচর উপজেলার চরওয়াপদা ইউনিয়নের চর কাজী মোখলেছ গ্রামের মৃত বশির আহম্মদের ছেলে।

চরজব্বর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, পুলিশের বিশেষ অভিযানের মাধ্যমে হারুনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি পালিয়ে ঢাকা চলে গিয়েছিলেন। তাকে ঢাকা থেকে আনা হচ্ছে। তারপর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করা হবে।

জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, এই মামলার আসামি তিনজন। আমরা দুইজনকে আগেই গ্রেপ্তার করেছি। হারুন বাকি ছিল। আবুল খায়ের মুন্সি মেম্বার ও মেহেরাজকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। মেহেরাজ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

তিনি বলেন, জেলা পুলিশের একটি টিম ঢাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। হারুন এ মামলার এজাহারভুক্ত ২নং আসামি। ঘটনার পর তিনি বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে বেড়ান। এমনকি যশোর সীমান্ত দিয়ে একবার ভারতে পালিয়ে যাওয়ারও চেষ্টা করেন। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনার পর থেকে পুলিশ তার গতিবিধি নজরে রাখে। এ নিয়ে এ মামলার তিন আসামির সবাইকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

অপরদিকে, এ মামলার প্রধান আসামি চরওয়াপদা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদ্য বহিষ্কৃত সভাপতি সাবেক ইউপি সদস্য আবুল খায়ের ওরফে মুন্সী মেম্বারকে গতকাল (বুধবার) আদালতে উপস্থাপন করে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। এ বিষয়ে আজ শুনানি শেষে আদেশ দেবেন আদালত।

মামলার অপর আসমি মেহরাজ উদ্দিন (৪৮) অপরাধ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। বুধবার বিকেলে জেলার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তানিয়া ইসলাম ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন।

এসময় আসামি মেহরাজ জানিয়েছে, এ মামলার অপর দুই আসামি আবুল খায়ের মুন্সী ও মো. হারুনের প্রস্তাবে রাজি হয়ে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন রাতে তিনি ভুক্তভোগী ওই নারীর স্বামীর অনুপস্থিতিতে চুরি করার উদ্দেশ্যে তার বসতঘরে সিঁদ কেটে প্রবেশ করে। এরপর তিনি ঘরের দরজা খুলে দিলে মুন্সি মেম্বার ও হারুন ভেতরে প্রবেশ করেন। একপর্যায়ে মুন্সি মেম্বার ও হারুন দুইজন মিলে পালাক্রমে ওই নারীকে গণধর্ষণ করেন। এসময় মেহরাজ পাশের কক্ষে থাকা ওই নারীর ১২ বছরের শিশু কন্যাকেও ধর্ষণ করেন। পরে স্বর্ণালংকার ও টাকা নিয়ে তিনজন ঘর থেকে বেরিয়ে যান।

এর আগে সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত ২টার দিকে চরওয়াপদা ইউনিয়নের চরকাজী মোখলেছ গ্রামের একটি বাড়িতে গৃহবধূ ও তার মেয়েকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ সময় ঘর থেকে দুটি নাকফুল, কানের দুল এবং নগদ ১৭ হাজার ২২৫ টাকা লুট করে নিয়ে যায় বলে জানা গেছে। ভুক্তভোগীর দিনমজুর স্বামী কাজের জন্য ওই রাতে বাইরে থাকায় গৃহবধূ তার তিন সন্তান নিয়ে বাড়িতে একা ছিলেন। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ধর্ষণের পরিকল্পনা সাজান আসামিরা।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী বাদী হয়ে আবুল খায়ের মুন্সী ও মো. হারুনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত এক ব্যক্তিকে আসামি করে সিঁদ কেটে ঘরে প্রবেশ, পরস্পর সহযোগিতায় গণধর্ষণ, ধর্ষণ, ভয়ভীতি প্রদর্শনের অপরাধে চরজব্বার থানায় মামলা দায়ের করেন।

মামলার পর মঙ্গলবার দুপুরে জেলা শহর মাইজদী থেকে আবুল খায়ের মুন্সীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর গতকাল মঙ্গলবার রাতে চরক্লার্ক ইউনিয়ন থেকে মেহেরাজকে গ্রেপ্তার করা হয়। মেহেরাজ একই এলাকার নুরুল আমিনের ছেলে।

উল্লেখ্য, সুবর্ণচর উপজেলাটি ধর্ষণের জন্য দেশব্যাপী বারবার আলোচনায় আসছে। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের দিন সুবর্ণচর উপজেলায় এক গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে দেশব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

গত ৫ ফেব্রুয়ারি দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নোয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক (জেলা জজ) ফাতেমা ফেরদৌস ওই ধর্ষণ মামলায় ১৬ আসামির মধ্যে ১০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ছয় আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। একই সঙ্গে তাদের অর্থদণ্ডও করা হয়।

চুরি নয়, ধর্ষণই ছিল মূল উদ্দেশ্য

Please Share This Post in Your Social Media

সুবর্ণচরে মা-মেয়েকে ধর্ষণ, আসামি হারুন গ্রেপ্তার

Update Time : ০৩:৫৭:৫৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় ঘরের সিঁধ কেটে মা-মেয়েকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলায় মো. হারুন (৪২) নামে আরও এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে ঢাকার গাবতলী থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ নিয়ে মামলার সব আসামিকে গ্রেপ্তার করা হলো।

চরজব্বর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

গ্রেপ্তারকৃত মো.হারুন সুবর্ণচর উপজেলার চরওয়াপদা ইউনিয়নের চর কাজী মোখলেছ গ্রামের মৃত বশির আহম্মদের ছেলে।

চরজব্বর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, পুলিশের বিশেষ অভিযানের মাধ্যমে হারুনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি পালিয়ে ঢাকা চলে গিয়েছিলেন। তাকে ঢাকা থেকে আনা হচ্ছে। তারপর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করা হবে।

জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, এই মামলার আসামি তিনজন। আমরা দুইজনকে আগেই গ্রেপ্তার করেছি। হারুন বাকি ছিল। আবুল খায়ের মুন্সি মেম্বার ও মেহেরাজকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। মেহেরাজ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

তিনি বলেন, জেলা পুলিশের একটি টিম ঢাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। হারুন এ মামলার এজাহারভুক্ত ২নং আসামি। ঘটনার পর তিনি বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে বেড়ান। এমনকি যশোর সীমান্ত দিয়ে একবার ভারতে পালিয়ে যাওয়ারও চেষ্টা করেন। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনার পর থেকে পুলিশ তার গতিবিধি নজরে রাখে। এ নিয়ে এ মামলার তিন আসামির সবাইকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

অপরদিকে, এ মামলার প্রধান আসামি চরওয়াপদা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদ্য বহিষ্কৃত সভাপতি সাবেক ইউপি সদস্য আবুল খায়ের ওরফে মুন্সী মেম্বারকে গতকাল (বুধবার) আদালতে উপস্থাপন করে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। এ বিষয়ে আজ শুনানি শেষে আদেশ দেবেন আদালত।

মামলার অপর আসমি মেহরাজ উদ্দিন (৪৮) অপরাধ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। বুধবার বিকেলে জেলার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তানিয়া ইসলাম ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন।

এসময় আসামি মেহরাজ জানিয়েছে, এ মামলার অপর দুই আসামি আবুল খায়ের মুন্সী ও মো. হারুনের প্রস্তাবে রাজি হয়ে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন রাতে তিনি ভুক্তভোগী ওই নারীর স্বামীর অনুপস্থিতিতে চুরি করার উদ্দেশ্যে তার বসতঘরে সিঁদ কেটে প্রবেশ করে। এরপর তিনি ঘরের দরজা খুলে দিলে মুন্সি মেম্বার ও হারুন ভেতরে প্রবেশ করেন। একপর্যায়ে মুন্সি মেম্বার ও হারুন দুইজন মিলে পালাক্রমে ওই নারীকে গণধর্ষণ করেন। এসময় মেহরাজ পাশের কক্ষে থাকা ওই নারীর ১২ বছরের শিশু কন্যাকেও ধর্ষণ করেন। পরে স্বর্ণালংকার ও টাকা নিয়ে তিনজন ঘর থেকে বেরিয়ে যান।

এর আগে সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত ২টার দিকে চরওয়াপদা ইউনিয়নের চরকাজী মোখলেছ গ্রামের একটি বাড়িতে গৃহবধূ ও তার মেয়েকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ সময় ঘর থেকে দুটি নাকফুল, কানের দুল এবং নগদ ১৭ হাজার ২২৫ টাকা লুট করে নিয়ে যায় বলে জানা গেছে। ভুক্তভোগীর দিনমজুর স্বামী কাজের জন্য ওই রাতে বাইরে থাকায় গৃহবধূ তার তিন সন্তান নিয়ে বাড়িতে একা ছিলেন। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ধর্ষণের পরিকল্পনা সাজান আসামিরা।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী বাদী হয়ে আবুল খায়ের মুন্সী ও মো. হারুনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত এক ব্যক্তিকে আসামি করে সিঁদ কেটে ঘরে প্রবেশ, পরস্পর সহযোগিতায় গণধর্ষণ, ধর্ষণ, ভয়ভীতি প্রদর্শনের অপরাধে চরজব্বার থানায় মামলা দায়ের করেন।

মামলার পর মঙ্গলবার দুপুরে জেলা শহর মাইজদী থেকে আবুল খায়ের মুন্সীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর গতকাল মঙ্গলবার রাতে চরক্লার্ক ইউনিয়ন থেকে মেহেরাজকে গ্রেপ্তার করা হয়। মেহেরাজ একই এলাকার নুরুল আমিনের ছেলে।

উল্লেখ্য, সুবর্ণচর উপজেলাটি ধর্ষণের জন্য দেশব্যাপী বারবার আলোচনায় আসছে। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের দিন সুবর্ণচর উপজেলায় এক গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে দেশব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

গত ৫ ফেব্রুয়ারি দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নোয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক (জেলা জজ) ফাতেমা ফেরদৌস ওই ধর্ষণ মামলায় ১৬ আসামির মধ্যে ১০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ছয় আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। একই সঙ্গে তাদের অর্থদণ্ডও করা হয়।

চুরি নয়, ধর্ষণই ছিল মূল উদ্দেশ্য