ঢাকা ০৩:৩২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
মানুষের জীবনযাত্রা স্থবির

রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলে জেঁকে বসেছে তীব্র শীত

কামরুল হাসান টিটু, রংপুর
  • Update Time : ০৯:৫৯:৪৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৪
  • / ৩৪ Time View

রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলে জেঁকে বসেছে তীব্র শীত। রাত থেকে পড়ছে ঘন কুয়াশা, সেই সঙ্গে রয়েছে হিমেল হাওয়া। এতে করে উত্তরাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়েছে।

মাঘের শীতের হাড়কাঁপানো আচরণ এই মাসে শীতের তীব্রতা আরও বাড়বে এমনটায় আভাস মিলছে। এরই মধ্যে শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়েছে উত্তরাঞ্চল।

বুধবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয় উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়।

গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে রংপুর অঞ্চলে চলছে মাঝারি ও তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। সঙ্গে রয়েছে কনকনে শীত আর হিমেল হাওয়া। শীতের তীব্রতার সঙ্গে শৈত্যপ্রবাহের প্রভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উত্তরাঞ্চলের জনজীবন।

কয়েকদিন ধরে সূর্যের দেখা মিললেও ভোরবেলা উত্তরের আকাশ থাকছে ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন। আর বিকেল হওয়ার আগেই কোথাও কোথাও শীতের দাপটে সূর্যের দেখা মিলছে না। এমন জবুথবু শীতে বাড়ছে রোগ, সঙ্গে আগুন পোহাতে গিয়ে ঘটছে দগ্ধ হওয়ার ঘটনাও।

এদিকে আরো দু-এক দিন শীতের তীব্রতা এমন থাকার সম্ভাবনার পূর্বাভাসে শঙ্কিত এ অঞ্চলের শীতার্ত অসহায় ও দরিদ্র মানুষজন। বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষগুলোর পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র না থাকায় দুর্ভোগও বেড়েছে কয়েকগুণ। নদী তীরবর্তী ও ছিন্নমূল মানুষরা রয়েছেন চরম ভোগান্তিতে। যেন তাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে প্রতিটি কর্মক্ষেত্রে শীতের প্রভাব পড়েছে।

শীতের সকালে ছিন্নমূল আর গ্রামের অনেক মানুষই খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। শীতের পাশাপাশি কুয়াশা বেশি হওয়ায় সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে গাড়ি। এতে দূরপাল্লার পরিবহন চলছে ধীরগতিতে।

রংপুর মহানগরীর শাপলা চত্বরে খাঁন বহুমুখী মার্কেটের সবজি বিক্রেতা আনাম মিয়া জানান, তীব্র শীতের কারণে বিক্রি অনেক কমে গেছে। হাড়কাঁপানো শীতে জীবিকার প্রয়োজনে সকাল থেকে দোকান খুলে বসে থাকলেও ক্রেতাদের দেখা মিলছে দুপুরের পর থেকে। আগের মতো বিক্রি না হওয়ায় তেমন লাভ হচ্ছে না।

হাজীপাাড়া এলাকার গৃহিণী লাভলী বেগম বলেন, সাতসকালে উঠেই সন্তানদের স্কুলে রেখে আসতে হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো খোলা রয়েছে। এত ঠাণ্ডায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রাখা উচিত। গত কয়েকদিন থেকে ঠান্ডায় তার ছোট মেয়ে ও তিনি সর্দি-কাশিতে ভুগছেন।

শীতের মধ্যে সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠানোর সময়সূচি পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে রংপুর সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নাছিমা জামান ববি বলেন,‌ সকাল পৌনে নয়টার সময়েও রংপুর ঘন কুয়াশায় আচ্ছাদিত। তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে থাকলেও ঠান্ডা অনেক। ড্রেস কোড মেনে বিদ্যালয়ে যাওয়া শিশুদের কষ্ট পেতে হচ্ছে। অনেক বিদ্যালয়ে সকাল সাতটায় পাঠদান শুরু হয়। মাধ্যমিক বিদ্যালয় কতৃপক্ষর কাছে আমার অনুরোধ পাঠদান শুরুর সময়টা পিছিয়ে ১০টা করা হোক।

এদিকে, রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, শীতের কারণে বেড়েছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ নানা রোগের প্রকোপ। গত কয়েকদিনের তুলনায় হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে লম্বা হচ্ছে মৃত্যুর পরিসংখ্যানও। একই সঙ্গে শীত নিবারণ করতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হবার ঘটনাও ঘটেছে। গত দুই সপ্তাহে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৪ জন অগ্নিদগ্ধ রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছে, শীতজনিত রোগবালাই বিশেষ করে নিউমোনিয়া, কোল্ড ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, জ্বর ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। আক্রান্তদের বেশিরভাগই শিশু ও বয়স্ক মানুষ। শীতজনিত রোগসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত প্রায় সহস্রাধিক শিশু গত ৭-৮ দিনে ভর্তি হয়েছে। শিশুরা কোল্ড ডায়রিয়ায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়া শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া রোগেও আক্রান্ত হচ্ছে। তবে এতে আতঙ্কের কিছু নেই।

এসব রোগ থেকে শিশুকে রক্ষা করতে গরম কাপড় পরানো জরুরি। মায়েদের খেয়াল রাখতে হবে কোনোভাবেই যেন বাচ্চাদের শীত না লাগে। তবে বেশি অসুস্থ মনে হলে স্বাস্থ্যকেন্দ্র কিংবা হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।

এদিকে রংপুর জেলার জনসংখ্যা প্রায় ত্রিশ লক্ষাধিক, এর মধ্যে শীতার্ত মানুষের সংখ্যা পাঁচ লাখেরও বেশি। এর মধ্যে শুধু রংপুর মহানগরীতেই বাস করে প্রায় ৭০ হাজার ভাসমান নারী-পুরুষ। এরা রেলস্টেশনের প্ল্যাটফরম, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন অফিস-আদালতের বারান্দা আর ফুটপাতে রাত কাটায়। জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সংগঠন থেকে শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হলেও তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। একইভাবে জেলার আট উপজেলা বিশেষ করে তিস্তা, ঘাঘট, করতোয়া, যমুনেশ্বরী বিধৌত চরাঞ্চলে বসবাসকারী হাজার হাজার পরিবার শীতে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। তাদের বেশিরভাগ মানুষের কাছে এখনো শীতবস্ত্র পৌঁছেনি।

এ বিষয়ে রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান জানান, যেসব হতদরিদ্র ও নিম্নআয়ের মানুষ রয়েছে, তাঁদের জন্য সরকার শীতবস্ত্র ও গরম কাপড়ের ব্যবস্থা করেছেন। ইতোমধ্যে সরকারি ও বেসরকারিভাবে প্রায় ৬৫ হাজার কম্বল ও গরম কাপড় বিতরণ করেছেন। আরো কম্বল চেয়ে চাহিদা পাঠিয়েছেন মন্ত্রণালয়ে।

এদিকে রংপুর আবহাওয়া অফিসের দেওয়া তথ্য মতে, বুধবার সকাল ৯টায় রংপুরে তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৪ রেকর্ড করা হয়। এছাড়া দিনাজপুরে ১০ দশমিক ২, ডিমলায় ৯ দশমিক ৫, ও রাজারহাটে ৮ দশমিক ৫ এবং সৈয়দপুরে ৯ দশমিক ২, গাইবান্ধায় ৯ দশমিক ৬, লালমনিরহাটে ৯ দশমিক ২ এবং ঠাকুরগাঁওয়ে ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়।

রংপুর আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রংপুর অঞ্চলের মধ্যে আজ পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। রংপুর বিভাগে ৭ থেকে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উঠানামা করছে। ২৮ জানুয়ারির পর তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায়ে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।

অন্যদিকে বিভাগের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের রংপুর বিভাগীয় উপপরিচালক মুজাহিদুল ইসলাম জানান, রংপুর বিভাগের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। ফলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশ অনুযায়ী বিভাগের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে শীত ও ঠাণ্ডার তাপমাত্রা স্বাভাবিক হলে আবারো যথারীতি পাঠদান চালু করা হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

মানুষের জীবনযাত্রা স্থবির

রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলে জেঁকে বসেছে তীব্র শীত

Update Time : ০৯:৫৯:৪৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৪

রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলে জেঁকে বসেছে তীব্র শীত। রাত থেকে পড়ছে ঘন কুয়াশা, সেই সঙ্গে রয়েছে হিমেল হাওয়া। এতে করে উত্তরাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়েছে।

মাঘের শীতের হাড়কাঁপানো আচরণ এই মাসে শীতের তীব্রতা আরও বাড়বে এমনটায় আভাস মিলছে। এরই মধ্যে শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়েছে উত্তরাঞ্চল।

বুধবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয় উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়।

গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে রংপুর অঞ্চলে চলছে মাঝারি ও তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। সঙ্গে রয়েছে কনকনে শীত আর হিমেল হাওয়া। শীতের তীব্রতার সঙ্গে শৈত্যপ্রবাহের প্রভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উত্তরাঞ্চলের জনজীবন।

কয়েকদিন ধরে সূর্যের দেখা মিললেও ভোরবেলা উত্তরের আকাশ থাকছে ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন। আর বিকেল হওয়ার আগেই কোথাও কোথাও শীতের দাপটে সূর্যের দেখা মিলছে না। এমন জবুথবু শীতে বাড়ছে রোগ, সঙ্গে আগুন পোহাতে গিয়ে ঘটছে দগ্ধ হওয়ার ঘটনাও।

এদিকে আরো দু-এক দিন শীতের তীব্রতা এমন থাকার সম্ভাবনার পূর্বাভাসে শঙ্কিত এ অঞ্চলের শীতার্ত অসহায় ও দরিদ্র মানুষজন। বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষগুলোর পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র না থাকায় দুর্ভোগও বেড়েছে কয়েকগুণ। নদী তীরবর্তী ও ছিন্নমূল মানুষরা রয়েছেন চরম ভোগান্তিতে। যেন তাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে প্রতিটি কর্মক্ষেত্রে শীতের প্রভাব পড়েছে।

শীতের সকালে ছিন্নমূল আর গ্রামের অনেক মানুষই খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। শীতের পাশাপাশি কুয়াশা বেশি হওয়ায় সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে গাড়ি। এতে দূরপাল্লার পরিবহন চলছে ধীরগতিতে।

রংপুর মহানগরীর শাপলা চত্বরে খাঁন বহুমুখী মার্কেটের সবজি বিক্রেতা আনাম মিয়া জানান, তীব্র শীতের কারণে বিক্রি অনেক কমে গেছে। হাড়কাঁপানো শীতে জীবিকার প্রয়োজনে সকাল থেকে দোকান খুলে বসে থাকলেও ক্রেতাদের দেখা মিলছে দুপুরের পর থেকে। আগের মতো বিক্রি না হওয়ায় তেমন লাভ হচ্ছে না।

হাজীপাাড়া এলাকার গৃহিণী লাভলী বেগম বলেন, সাতসকালে উঠেই সন্তানদের স্কুলে রেখে আসতে হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো খোলা রয়েছে। এত ঠাণ্ডায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রাখা উচিত। গত কয়েকদিন থেকে ঠান্ডায় তার ছোট মেয়ে ও তিনি সর্দি-কাশিতে ভুগছেন।

শীতের মধ্যে সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠানোর সময়সূচি পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে রংপুর সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নাছিমা জামান ববি বলেন,‌ সকাল পৌনে নয়টার সময়েও রংপুর ঘন কুয়াশায় আচ্ছাদিত। তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে থাকলেও ঠান্ডা অনেক। ড্রেস কোড মেনে বিদ্যালয়ে যাওয়া শিশুদের কষ্ট পেতে হচ্ছে। অনেক বিদ্যালয়ে সকাল সাতটায় পাঠদান শুরু হয়। মাধ্যমিক বিদ্যালয় কতৃপক্ষর কাছে আমার অনুরোধ পাঠদান শুরুর সময়টা পিছিয়ে ১০টা করা হোক।

এদিকে, রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, শীতের কারণে বেড়েছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ নানা রোগের প্রকোপ। গত কয়েকদিনের তুলনায় হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে লম্বা হচ্ছে মৃত্যুর পরিসংখ্যানও। একই সঙ্গে শীত নিবারণ করতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হবার ঘটনাও ঘটেছে। গত দুই সপ্তাহে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৪ জন অগ্নিদগ্ধ রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছে, শীতজনিত রোগবালাই বিশেষ করে নিউমোনিয়া, কোল্ড ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, জ্বর ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। আক্রান্তদের বেশিরভাগই শিশু ও বয়স্ক মানুষ। শীতজনিত রোগসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত প্রায় সহস্রাধিক শিশু গত ৭-৮ দিনে ভর্তি হয়েছে। শিশুরা কোল্ড ডায়রিয়ায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়া শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া রোগেও আক্রান্ত হচ্ছে। তবে এতে আতঙ্কের কিছু নেই।

এসব রোগ থেকে শিশুকে রক্ষা করতে গরম কাপড় পরানো জরুরি। মায়েদের খেয়াল রাখতে হবে কোনোভাবেই যেন বাচ্চাদের শীত না লাগে। তবে বেশি অসুস্থ মনে হলে স্বাস্থ্যকেন্দ্র কিংবা হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।

এদিকে রংপুর জেলার জনসংখ্যা প্রায় ত্রিশ লক্ষাধিক, এর মধ্যে শীতার্ত মানুষের সংখ্যা পাঁচ লাখেরও বেশি। এর মধ্যে শুধু রংপুর মহানগরীতেই বাস করে প্রায় ৭০ হাজার ভাসমান নারী-পুরুষ। এরা রেলস্টেশনের প্ল্যাটফরম, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন অফিস-আদালতের বারান্দা আর ফুটপাতে রাত কাটায়। জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সংগঠন থেকে শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হলেও তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। একইভাবে জেলার আট উপজেলা বিশেষ করে তিস্তা, ঘাঘট, করতোয়া, যমুনেশ্বরী বিধৌত চরাঞ্চলে বসবাসকারী হাজার হাজার পরিবার শীতে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। তাদের বেশিরভাগ মানুষের কাছে এখনো শীতবস্ত্র পৌঁছেনি।

এ বিষয়ে রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান জানান, যেসব হতদরিদ্র ও নিম্নআয়ের মানুষ রয়েছে, তাঁদের জন্য সরকার শীতবস্ত্র ও গরম কাপড়ের ব্যবস্থা করেছেন। ইতোমধ্যে সরকারি ও বেসরকারিভাবে প্রায় ৬৫ হাজার কম্বল ও গরম কাপড় বিতরণ করেছেন। আরো কম্বল চেয়ে চাহিদা পাঠিয়েছেন মন্ত্রণালয়ে।

এদিকে রংপুর আবহাওয়া অফিসের দেওয়া তথ্য মতে, বুধবার সকাল ৯টায় রংপুরে তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৪ রেকর্ড করা হয়। এছাড়া দিনাজপুরে ১০ দশমিক ২, ডিমলায় ৯ দশমিক ৫, ও রাজারহাটে ৮ দশমিক ৫ এবং সৈয়দপুরে ৯ দশমিক ২, গাইবান্ধায় ৯ দশমিক ৬, লালমনিরহাটে ৯ দশমিক ২ এবং ঠাকুরগাঁওয়ে ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়।

রংপুর আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রংপুর অঞ্চলের মধ্যে আজ পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। রংপুর বিভাগে ৭ থেকে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উঠানামা করছে। ২৮ জানুয়ারির পর তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায়ে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।

অন্যদিকে বিভাগের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের রংপুর বিভাগীয় উপপরিচালক মুজাহিদুল ইসলাম জানান, রংপুর বিভাগের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। ফলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশ অনুযায়ী বিভাগের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে শীত ও ঠাণ্ডার তাপমাত্রা স্বাভাবিক হলে আবারো যথারীতি পাঠদান চালু করা হবে।