ঢাকা ০১:৪১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মৌলভীবাজারে জঙ্গি সন্দেহে ১৭ জনকে আটক করেছে এলাকাবাসী

মৌলভীবাজার(কুলাউড়া) প্রতিনিধি
  • Update Time : ০৬:৫২:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ অগাস্ট ২০২৩
  • / ১২৮ Time View

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার কর্মধা ইউনিয়নের আলোচিত সেই বাইশালী টিলার জঙ্গি আস্তানায় অপারেশন চালিয়ে ১৭ জঙ্গিকে সিএনজি অটোরিকশাচালকদের সহযোগিতায় আটক করেছে কুলাউড়া থানার পুলিশ। আটককৃতদের কর্মধা ইউনিয়ন পরিষদের হলরুমে পুলিশি পাহারায় রাখা হয়েছে। পুরো ইউনিয়ন পরিষদ এলাকা ঘিরে রেখেছেন জেলা পুলিশ, কুলাউড়া থানা পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার শতাধিক সদস্য।

আটক ১৭ জনের মধ্যে সিরাজগঞ্জের একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক পলাতক থাকা সোহেল তানজিম ও আব্দুল আহাদ মেন্দি নামের এক ব্যক্তিও রয়েছেন।

মেন্দি জঙ্গি সংগঠনের কমান্ডার নামে পরিচিত। তিনি নিজেকে ইমাম মাহমুদ বলে দাবি করছেন বলে প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান।

এর আগে গত শনিবার সকালে কর্মধা ইউনিয়নের বাইশালী টিলায় থাকা জঙ্গি আস্তানা থেকে নারী-পুরুষসহ ১০ জঙ্গিকে আটক করে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট, সোয়াত ও পুলিশ। এ সময় অভিযানের খবর পেয়ে জঙ্গিদের সঙ্গে থাকা অন্য সদস্যরা পাহাড়ের ভেতরে আত্মগোপনে চলে যায়।

পরে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করলে নাটোর সদর উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের মাইশা ইসলামের (২০) নাম থাকার বিষয়টি জানা যায়।

এর আগে, পুলিশের এই বিশেষায়িত ইউনিট শুক্রবার রাত থেকে কর্মদা ইউনিয়নের পূর্ব টাট্টিওয়ালি গ্রামের বাইশালী বাড়ি এলাকার একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে সন্দেহভাজন ১০ জনকে আটক করে। তাদের সঙ্গে তিনি শিশুও ছিল।

‘অপারেশন হিলসাইট’নামের ওই অভিযান শেষে সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান জানান, আটকরা ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’ নামের নতুন এক জঙ্গি সংগঠনের সদস্য।

সেখান থেকে আড়াই কেজি বিস্ফোরক, ৫০ কেজি ডেটোনেটর, প্রশিক্ষণ ম্যুানুয়াল, কমান্ডো বুট, জিহাদি বই, নগদ তিন লাখ ৬১ হাজার টাকা, স্বর্ণাংকার, ছুরি-রাম দাসহ অন্যান্য ধারালো অস্ত্র উদ্ধারের কথা জানায় সিটিটিসি।

অভিযানের পর থেকে এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছিল। সবার ধারণা ছিল, পাহাড়ের ভেতরে সেই আস্তানা থেকে জঙ্গিদের কমান্ডার হিসেবে পরিচিত আব্দুল আহাদ মেন্দিকে কাঁধে বহন করে চলে যায় অন্য সদস্যরা।

জানা যায়, সোমবার সকাল ১০টার দিকে কর্মধা ইউনিয়নের আছকরাবাদ চা বাগানের খেলার মাঠ থেকে কিছু অপরিচিত লোক পাহাড়ের ভেতর থেকে নেমে পাঁচটি সিএনজি অটোরিকশায় অন্যত্র যাওয়ার জন্য ভাড়া নির্ধারণ করেন। এ সময় চারটি সিএনজির চালকদের কথাবার্তায় সন্দেহ হলে তাদের নিয়ে সরাসরি ইউনিয়ন পরিষদে আসেন।

আরেক সিএনজিচালক লকুছ মিয়ার গাড়িতে তাদের কমান্ডার আব্দুল আহাদ মেন্দি (পঙ্গু) ছিলেন। সেই গাড়িটি রবিরবাজার পর্যন্ত যাওয়ার পর সেখানে চালক ও সিএনজি স্ট্যান্ডের লোকজন ১০-১২টি সিএনজিযোগে কমান্ডার মেন্দিকে আটক করে ইউনিয়নে নিয়ে আসেন।

এ সময় কুলাউড়া থানা পুলিশের এসআই পরিমল চন্দ্র দাস, এএসআই নাজমুল হোসেনসহ পুলিশের একটি দল চালকদের সহযোগিতায় তাদের আটক করেন। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কুলাউড়া সার্কেল দীপঙ্কর ঘোষ, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মেহেদী হাসান, থানার ওসি মো. আব্দুছ ছালেক, জুড়ী থানার ওসি মো. মোশাররফ, জেলা গোয়েন্দা সংস্থা ডিবির ওসি মো. আশরাফুল ইসলাম ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। তারা আটক জঙ্গিদের ইউনিয়ন পরিষদের হলরুমে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

এদিকে তাদের গ্রেপ্তার করতে ঢাকা থেকে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্র্যান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা দেন। বিকেল সাড়ে ৫টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আটক জঙ্গিরা ইউনিয়ন পরিষদের হলরুমে তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে।

সন্দেহভাজন জঙ্গিদের ধরতে ভূমিকা রাখেন কর্মধা গ্রামের বাসিন্দা সিএনজিচালক লকুছ মিয়া (৩৫), পূর্ব ফটিগুলির রব উল্লাহ (৫৭), নলডরী গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস (৪০), হুসনাবাদের সাইফুল ইসলাম (৩৭) ও রনি মল্লিক (২৬)। এ সময় রবিরবাজার-কর্মধা সিএনজি লাইনের ২০-২৫টি সিএনজির চালক এ কাজে সহযোগিতা করেন।

স্থানীয় অনেকেই বলছেন, যদি সিএনজিচালকরা টাকার লোভে জঙ্গি সদস্যদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া নিয়ে অন্যত্র পৌঁছে দিতেন তাহলে ওই জঙ্গি সদস্যদের আটক করা যেত না। জঙ্গি সদস্যদের আটক করে বীরত্ব দেখানোতে স্থানীয়রা চালকদের ভূয়সী প্রশংসা করছেন।

সিএনজিচালক রবউল্লাহ বলেন, ‘সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় অপরিচিত চারজন লোক তাদের সাথে থাকা পঙ্গু একজন ব্যক্তিকে কাঁধে বহন করে নিয়ে সিএনজি গাড়িতে ওঠেন। আমার গাড়িতে অন্য তিনজন ওঠেন। তারা সবাই আমাদের জানান তারা বনভোজনে এসেছেন। তারা বলেন, তাদের পঙ্গু ব্যক্তি নাকি গাছ থেকে পড়ে কোমর ভেঙে গেছে। তাকে চিকিৎসার জন্য মৌলভীবাজার নিয়ে যাবেন। আমরা বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে কথাবার্তা সন্দেহজনক হলে তাদের কৌশলে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসি।’

আরেক সিএনজিচালক আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘আমার গাড়িতে ছয়জন অপরিচিত লোক ওঠেন। এর মধ্যে একজন চিকিৎসক রয়েছেন। আমিও তাদের নিয়ে আসি পরিষদে।’

সিএনজিচালক লকুছ মিয়া বলেন, ‘আমার গাড়িতে ল্যাংড়া (পঙ্গু) একজন ব্যক্তি উঠেছিল তার চারজন সহযোগী নিয়ে। আমি তাদের নিয়ে যাই রবিরবাজারে। সেখানে আমাদের সিএনজি স্ট্যান্ডে গিয়ে গাড়িটি থামাই। এ সময় রবিরবাজার-কর্মধা সিএনজি লাইনের নেতৃবৃন্দের সহযোগিতায় ১০-১২টি সিএনজিযোগে কড়া পাহারায় তাদের ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসি।’

কর্মধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুহিবুল ইসলাম আজাদ ১৭ জন জঙ্গি সদস্য আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আটককৃত জঙ্গি সদস্যরা পরিষদের হলরুমে আছে। তাদের পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

কুলাউড়া থানার ওসি মো. আব্দুছ ছালেক বলেন, জঙ্গি সন্দেহে আটককৃতদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাদের পরিচয় শনাক্ত করার কাজ চলছে। সিটিটিসির কর্মকর্তারা আসার পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিস্তারিত জানানো হবে।

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় সন্দেহভাজন ‘জঙ্গি আস্তানা’ থেকে গ্রেপ্তার ১০ জনের মধ্যে একজন সিরাজগঞ্জের নিখোঁজ এক চিকিৎসকের স্ত্রী। ২৬ জুলাই থেকে ওই চিকিৎসক সোহেল তানজিম ও তাঁর স্ত্রী মাইশা ইসলাম ওরফে হাফসা নিখোঁজ উল্লেখ করে ৩১ জুলাই সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন নিখোঁজ চিকিৎসক সোহেল তানজিমের বাবা হেলালউদ্দিন।

গত ৩১ জুলাই এনায়েতপুর থানায় করা জিডিতে হেলালউদ্দিন উল্লেখ করেন, ২৬ জুলাই থেকে স্ত্রীসহ নিখোঁজ তাঁর ছেলে সোহেল তানজিম। ১০ মাস আগে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস সম্পন্ন করে এনায়েতপুরে খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যোগদান করেন তানজিম। আড়াই মাস আগে পরিবারের অমতে মাইশা ইসলামকে বিয়ে করেন। এরপর হাসপাতালের পাশে একটি ভাড়াবাসা নিয়ে তাঁরা স্বামী–স্ত্রী থাকতেন।

হেলালউদ্দিন বলেন, ঈদুল আজহার আগের দিন তানজিম তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে প্রথম বাড়িতে আসেন। ঈদের পরদিন আবার চলে যান। মাত্র এক দিন তাঁর ছেলের স্ত্রীর সঙ্গে দেখা ও কথা হয়। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তাঁদের নিখোঁজের খবর জানতে পেরে থানায় জিডি করেন। হঠাৎ আজ বিকেলে জানতে পারেন, ছেলের স্ত্রীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।

২৭ বছর বয়সী তানজিম সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার এনায়েতপুরে খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) দায়িত্ব পালন করতেন। তাঁর বাড়ি সিরাজগঞ্জের সয়দাবাদ ইউনিয়নের পোড়াবাড়ি গ্রামে। তানজিম স্ত্রীকে নিয়ে কর্মস্থলের পাশে একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন।

Please Share This Post in Your Social Media

মৌলভীবাজারে জঙ্গি সন্দেহে ১৭ জনকে আটক করেছে এলাকাবাসী

Update Time : ০৬:৫২:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ অগাস্ট ২০২৩

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার কর্মধা ইউনিয়নের আলোচিত সেই বাইশালী টিলার জঙ্গি আস্তানায় অপারেশন চালিয়ে ১৭ জঙ্গিকে সিএনজি অটোরিকশাচালকদের সহযোগিতায় আটক করেছে কুলাউড়া থানার পুলিশ। আটককৃতদের কর্মধা ইউনিয়ন পরিষদের হলরুমে পুলিশি পাহারায় রাখা হয়েছে। পুরো ইউনিয়ন পরিষদ এলাকা ঘিরে রেখেছেন জেলা পুলিশ, কুলাউড়া থানা পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার শতাধিক সদস্য।

আটক ১৭ জনের মধ্যে সিরাজগঞ্জের একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক পলাতক থাকা সোহেল তানজিম ও আব্দুল আহাদ মেন্দি নামের এক ব্যক্তিও রয়েছেন।

মেন্দি জঙ্গি সংগঠনের কমান্ডার নামে পরিচিত। তিনি নিজেকে ইমাম মাহমুদ বলে দাবি করছেন বলে প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান।

এর আগে গত শনিবার সকালে কর্মধা ইউনিয়নের বাইশালী টিলায় থাকা জঙ্গি আস্তানা থেকে নারী-পুরুষসহ ১০ জঙ্গিকে আটক করে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট, সোয়াত ও পুলিশ। এ সময় অভিযানের খবর পেয়ে জঙ্গিদের সঙ্গে থাকা অন্য সদস্যরা পাহাড়ের ভেতরে আত্মগোপনে চলে যায়।

পরে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করলে নাটোর সদর উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের মাইশা ইসলামের (২০) নাম থাকার বিষয়টি জানা যায়।

এর আগে, পুলিশের এই বিশেষায়িত ইউনিট শুক্রবার রাত থেকে কর্মদা ইউনিয়নের পূর্ব টাট্টিওয়ালি গ্রামের বাইশালী বাড়ি এলাকার একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে সন্দেহভাজন ১০ জনকে আটক করে। তাদের সঙ্গে তিনি শিশুও ছিল।

‘অপারেশন হিলসাইট’নামের ওই অভিযান শেষে সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান জানান, আটকরা ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’ নামের নতুন এক জঙ্গি সংগঠনের সদস্য।

সেখান থেকে আড়াই কেজি বিস্ফোরক, ৫০ কেজি ডেটোনেটর, প্রশিক্ষণ ম্যুানুয়াল, কমান্ডো বুট, জিহাদি বই, নগদ তিন লাখ ৬১ হাজার টাকা, স্বর্ণাংকার, ছুরি-রাম দাসহ অন্যান্য ধারালো অস্ত্র উদ্ধারের কথা জানায় সিটিটিসি।

অভিযানের পর থেকে এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছিল। সবার ধারণা ছিল, পাহাড়ের ভেতরে সেই আস্তানা থেকে জঙ্গিদের কমান্ডার হিসেবে পরিচিত আব্দুল আহাদ মেন্দিকে কাঁধে বহন করে চলে যায় অন্য সদস্যরা।

জানা যায়, সোমবার সকাল ১০টার দিকে কর্মধা ইউনিয়নের আছকরাবাদ চা বাগানের খেলার মাঠ থেকে কিছু অপরিচিত লোক পাহাড়ের ভেতর থেকে নেমে পাঁচটি সিএনজি অটোরিকশায় অন্যত্র যাওয়ার জন্য ভাড়া নির্ধারণ করেন। এ সময় চারটি সিএনজির চালকদের কথাবার্তায় সন্দেহ হলে তাদের নিয়ে সরাসরি ইউনিয়ন পরিষদে আসেন।

আরেক সিএনজিচালক লকুছ মিয়ার গাড়িতে তাদের কমান্ডার আব্দুল আহাদ মেন্দি (পঙ্গু) ছিলেন। সেই গাড়িটি রবিরবাজার পর্যন্ত যাওয়ার পর সেখানে চালক ও সিএনজি স্ট্যান্ডের লোকজন ১০-১২টি সিএনজিযোগে কমান্ডার মেন্দিকে আটক করে ইউনিয়নে নিয়ে আসেন।

এ সময় কুলাউড়া থানা পুলিশের এসআই পরিমল চন্দ্র দাস, এএসআই নাজমুল হোসেনসহ পুলিশের একটি দল চালকদের সহযোগিতায় তাদের আটক করেন। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কুলাউড়া সার্কেল দীপঙ্কর ঘোষ, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মেহেদী হাসান, থানার ওসি মো. আব্দুছ ছালেক, জুড়ী থানার ওসি মো. মোশাররফ, জেলা গোয়েন্দা সংস্থা ডিবির ওসি মো. আশরাফুল ইসলাম ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। তারা আটক জঙ্গিদের ইউনিয়ন পরিষদের হলরুমে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

এদিকে তাদের গ্রেপ্তার করতে ঢাকা থেকে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্র্যান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা দেন। বিকেল সাড়ে ৫টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আটক জঙ্গিরা ইউনিয়ন পরিষদের হলরুমে তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে।

সন্দেহভাজন জঙ্গিদের ধরতে ভূমিকা রাখেন কর্মধা গ্রামের বাসিন্দা সিএনজিচালক লকুছ মিয়া (৩৫), পূর্ব ফটিগুলির রব উল্লাহ (৫৭), নলডরী গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস (৪০), হুসনাবাদের সাইফুল ইসলাম (৩৭) ও রনি মল্লিক (২৬)। এ সময় রবিরবাজার-কর্মধা সিএনজি লাইনের ২০-২৫টি সিএনজির চালক এ কাজে সহযোগিতা করেন।

স্থানীয় অনেকেই বলছেন, যদি সিএনজিচালকরা টাকার লোভে জঙ্গি সদস্যদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া নিয়ে অন্যত্র পৌঁছে দিতেন তাহলে ওই জঙ্গি সদস্যদের আটক করা যেত না। জঙ্গি সদস্যদের আটক করে বীরত্ব দেখানোতে স্থানীয়রা চালকদের ভূয়সী প্রশংসা করছেন।

সিএনজিচালক রবউল্লাহ বলেন, ‘সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় অপরিচিত চারজন লোক তাদের সাথে থাকা পঙ্গু একজন ব্যক্তিকে কাঁধে বহন করে নিয়ে সিএনজি গাড়িতে ওঠেন। আমার গাড়িতে অন্য তিনজন ওঠেন। তারা সবাই আমাদের জানান তারা বনভোজনে এসেছেন। তারা বলেন, তাদের পঙ্গু ব্যক্তি নাকি গাছ থেকে পড়ে কোমর ভেঙে গেছে। তাকে চিকিৎসার জন্য মৌলভীবাজার নিয়ে যাবেন। আমরা বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে কথাবার্তা সন্দেহজনক হলে তাদের কৌশলে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসি।’

আরেক সিএনজিচালক আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘আমার গাড়িতে ছয়জন অপরিচিত লোক ওঠেন। এর মধ্যে একজন চিকিৎসক রয়েছেন। আমিও তাদের নিয়ে আসি পরিষদে।’

সিএনজিচালক লকুছ মিয়া বলেন, ‘আমার গাড়িতে ল্যাংড়া (পঙ্গু) একজন ব্যক্তি উঠেছিল তার চারজন সহযোগী নিয়ে। আমি তাদের নিয়ে যাই রবিরবাজারে। সেখানে আমাদের সিএনজি স্ট্যান্ডে গিয়ে গাড়িটি থামাই। এ সময় রবিরবাজার-কর্মধা সিএনজি লাইনের নেতৃবৃন্দের সহযোগিতায় ১০-১২টি সিএনজিযোগে কড়া পাহারায় তাদের ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসি।’

কর্মধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুহিবুল ইসলাম আজাদ ১৭ জন জঙ্গি সদস্য আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আটককৃত জঙ্গি সদস্যরা পরিষদের হলরুমে আছে। তাদের পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

কুলাউড়া থানার ওসি মো. আব্দুছ ছালেক বলেন, জঙ্গি সন্দেহে আটককৃতদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাদের পরিচয় শনাক্ত করার কাজ চলছে। সিটিটিসির কর্মকর্তারা আসার পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিস্তারিত জানানো হবে।

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় সন্দেহভাজন ‘জঙ্গি আস্তানা’ থেকে গ্রেপ্তার ১০ জনের মধ্যে একজন সিরাজগঞ্জের নিখোঁজ এক চিকিৎসকের স্ত্রী। ২৬ জুলাই থেকে ওই চিকিৎসক সোহেল তানজিম ও তাঁর স্ত্রী মাইশা ইসলাম ওরফে হাফসা নিখোঁজ উল্লেখ করে ৩১ জুলাই সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন নিখোঁজ চিকিৎসক সোহেল তানজিমের বাবা হেলালউদ্দিন।

গত ৩১ জুলাই এনায়েতপুর থানায় করা জিডিতে হেলালউদ্দিন উল্লেখ করেন, ২৬ জুলাই থেকে স্ত্রীসহ নিখোঁজ তাঁর ছেলে সোহেল তানজিম। ১০ মাস আগে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস সম্পন্ন করে এনায়েতপুরে খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যোগদান করেন তানজিম। আড়াই মাস আগে পরিবারের অমতে মাইশা ইসলামকে বিয়ে করেন। এরপর হাসপাতালের পাশে একটি ভাড়াবাসা নিয়ে তাঁরা স্বামী–স্ত্রী থাকতেন।

হেলালউদ্দিন বলেন, ঈদুল আজহার আগের দিন তানজিম তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে প্রথম বাড়িতে আসেন। ঈদের পরদিন আবার চলে যান। মাত্র এক দিন তাঁর ছেলের স্ত্রীর সঙ্গে দেখা ও কথা হয়। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তাঁদের নিখোঁজের খবর জানতে পেরে থানায় জিডি করেন। হঠাৎ আজ বিকেলে জানতে পারেন, ছেলের স্ত্রীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।

২৭ বছর বয়সী তানজিম সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার এনায়েতপুরে খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) দায়িত্ব পালন করতেন। তাঁর বাড়ি সিরাজগঞ্জের সয়দাবাদ ইউনিয়নের পোড়াবাড়ি গ্রামে। তানজিম স্ত্রীকে নিয়ে কর্মস্থলের পাশে একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন।