মানা যাবে না যে ৪ রুসুম-রেওয়াজ
- Update Time : ০৯:২৮:০৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ জুলাই ২০২৩
- / ৬৭ Time View
জাহেলিয়াতের কিছু কাজ ও প্রথা এখনও মুসলমানদের মধ্যে প্রচলিত আছে। যা থেকে বিরত থাকতে কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে আয়াত নাজিল করে সেসব বিষয় থেকে বিরত থাকতে বলেছেন।
আল্লাহ তা’আলা বলেন-
یٰۤاَیُّهَا النَّبِیُّ اِذَا جَآءَکَ الۡمُؤۡمِنٰتُ یُبَایِعۡنَکَ عَلٰۤی اَنۡ لَّا یُشۡرِکۡنَ بِاللّٰهِ شَیۡئًا وَّ لَا یَسۡرِقۡنَ وَ لَا یَزۡنِیۡنَ وَ لَا یَقۡتُلۡنَ اَوۡلَادَهُنَّ وَ لَا یَاۡتِیۡنَ بِبُهۡتَانٍ یَّفۡتَرِیۡنَهٗ بَیۡنَ اَیۡدِیۡهِنَّ وَ اَرۡجُلِهِنَّ وَ لَا یَعۡصِیۡنَکَ فِیۡ مَعۡرُوۡفٍ فَبَایِعۡهُنَّ وَ اسۡتَغۡفِرۡ لَهُنَّ اللّٰهَ ؕ اِنَّ اللّٰهَ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ
‘হে নবি! যখন মুমিন নারীরা তোমার কাছে এসে এই মর্মে বাইআত করে যে, তারা আল্লাহর সঙ্গে কোনো কিছু শরিক করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, নিজেদের সন্তানদের হত্যা করবে না, তারা জেনে শুনে কোনা অপবাদ রচনা করে রটাবে না এবং সৎকাজে তারা তোমার অবাধ্য হবে না। তখন তুমি তাদের বাইআত গ্রহণ করো এবং তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ অতিশয় ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা মুমতাহিনা: আয়াত ১২)
এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা নামাজ রোজা হজ জাকাতের কথা বলেননি বরং এর বাইরে অন্যান্য সব নিয়ম-নীতির কথা বর্ণনা করেছেন।
এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ওলামা, দ্বীনের পথে আহবানকারী এবং বক্তাগণ যেন তাঁদের বক্তব্যকে কেবল আরকানে দ্বীন বর্ণনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ না রাখেন। কেননা এগুলো তো পূর্ব থেকেই স্পষ্ট। বরং তাঁদের উচিত সেই সব অন্যায়-অনাচার, রসম-রেওয়াজ, কুসংস্কার ও কুপ্রথার বিরুদ্ধে জোরদার প্রতিবাদ জানানো, যা সমাজে ব্যাপকভাবে চলছে এবং যা থেকে নামাজ-রোজার প্রতি যত্নবান ব্যক্তিরাও অনেক সময় দূরে থাকে না।
জাহেলিয়াতের যুগের কিছু রুসুম-রেওয়াজ এখনও মুসলমানদের মধ্যে প্রচলিত। এমন ৪টি রুসুম-রেওয়াজ মানা যাবে না। এরমধ্যে অন্যতম হলো- মানুষের মৃত্যুর পর উচ্চ স্বরে বিলাপ করা এবং নিজেদের বংশ নিয়ে গর্ব করা। এগুলো ইসলামে বরাবরই নিষিদ্ধ। এর শাস্তিও মারাত্মক।
এ সম্পর্কে হাদিসের দিকনির্দেশনা সুস্পষ্ট।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
أَرْبَعٌ فِيْ أُمَّتِيْ مِنْ أَمْرِ الْجَاهِلِيَّةِ، لَا يَتْرُكُوْنَهُنَّ: الْفَخْـرُ فِيْ الْأَحْسَابِ، وَالطَّعْنُ فِيْ الْأَنْسَابِ، وَالاسْتِسْقَاءُ بِالنُّجُوْمِ، وَالنِّيَاحَةُ
‘আমার উম্মতের মাঝে ৪টি কাজ হলো জাহেলিয়াতের প্রথা; যা তারা ত্যাগ করবে না। তাহলো-
১. বংশ নিয়ে গর্ব করা।
২. বংশসূত্রে খোঁটা দেওয়া।
৩. নক্ষত্রের মাধ্যমে বৃষ্টির আশা করা।
৪. মৃত মানুষের জন্য বিলাপ করা।
(মুসলিম ৯৩৪, মুসতাদরাকে হাকেম ১/৩৮৩, তাবারানি ৩৪২৫, ৩৪২৬, বায়হাকি ৪/৬৩, ইবনে আবি শায়বা ৩/৩৯০, মুসনাদে আহমাদ ৫/৩৪২, ৩৪৩, ৩৪৪, মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক ৩/৬৬৮৬)
অন্য হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
لَيَنْتَهِيَنَّ أَقْوَامٌ يَفْتَخِرُوْنَ بِآبَائِهِمْ الَّذِيْنَ مَاتُوْا، إِنَّمَا هُمْ فَحْمُ جَهَنَّمَ، أَوْ لَيَكُوْنُنَّ أَهْوَنَ عَلَى اللهِ مِنَ الْجُعْلِ الَّذِيْ يُدَهْدِهُ الْخِرَاءَ بِأَنْفِهِ، إِنَّ اللهَ قَدْ أَذْهَبَ عَنْكُمْ عُبِّيَّةَ الْجَاهِليَّةِ وَفَخْرَهَا بِالْآبَاءِ، إِنَّمَا هُوَ مُؤْمِنٌ تَقِيٌّ، أَوْ فَاجِرٌ شَقِيٌّ، النَّاسُ كُلُّهُمْ بَنُوْ آدَمَ، وَآدَمُ خُلِقَ مِنْ تُرَابٍ.
‘নিজেদের মৃত বাপ-দাদাদের নিয়ে গর্বকারীদের সতর্ক হওয়া উচিত, তারা যেন তা দ্বিতীয়বার না করে। কারণ, তারা তো মূলতঃ জাহান্নামের কয়লা। অন্যথায় তারা আল্লাহ তাআলার কাছে মলকীটের চেয়েও অধিক মূল্যহীন বলে বিবেচিত হবে। আর মলকীটের কাজই তো শুধু নাক দিয়ে মল খন্ড ঠেলে নেওয়া। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তোমাদের জাহেলি যুগের হঠকারিতা তথা নিজেদের বাপ-দাদাদের নিয়ে গর্ব করা থেকে পবিত্র করেছেন।
মূলতঃ মানুষ তো শুধুমাত্র দুই প্রকার- ১. মুত্তাকি ঈমানদার অথবা ২. দুর্ভাগা ফাসিক। সকল মানুষই তো আদম সন্তান। আর আদম আলাইহিস সালামকে তো মাটি থেকেই সৃষ্টি করা হয়েছে। সুতরাং এতে একের উপর অন্যের গর্বের কীই বা রয়েছে?! (তিরমিজি ৩৯৫৫)
হাদিসের বিখ্যাত গ্রন্থ ইবনে মাজাহতে একাধিক হাদিসে জাহেলিয়াতের এসব রীতির ব্যাপারে কঠোর সতর্কবাণী উল্লেখ করা হয়েছে। তাহলো-
১. হজরত উম্মু সালামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বরাতে বলেন- (وَلَا يَعْصِينَكَ فِي مَعْرُوفٍ) ’তারা উত্তম কাজে তোমাদের অমান্য করবে না’ (সুরা মুমতাহিনা : আয়াত ১২), এর অর্থ ’বিলাপ করবে না’। (ইবনে মাজাহ)
২. হজরত মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুর মুক্ত দাস জারীর রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, হজরত মুআবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু হিমস নামক স্থানে ভাষণ দানকালে তার ভাষণে উল্লেখ করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিলাপ করে কাঁদতে নিষেধ করেছেন।’ (ইবনে মাজাহ)
৩. হজরত আবু মালিক আল-আশআরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘বিলাপকারিণী তওবা না করে মারা গেলে, আল্লাহ তাআলা তাকে আলকাতরা যুক্ত কাপড় এবং লেলিহান শিখার বর্ম পরাবেন।’ (ইবনে মাজাহ, মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ, তালিকুর রাগিব)
৪. হজরত ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন মৃতের জন্য বিলাপ করে কান্নাকাটি করা জাহিলী প্রথা। অতএব যে বিলাপকারিণী মৃত্যুর আগে তওবা করেনি, কেয়ামতের দিন তাকে আলকাতরা যুক্ত জামা পরিয়ে উঠানো হবে, এরপর তাকে লেলিহান শিখার বর্ম পরানো হবে।’ (ইবনে মাজাহ)
৫. হজরত ইবনু ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, কোনো লাশের সঙ্গে বিলাপকারিণী থাকলে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন।’ (ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমাদ)
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনেক হাদিসে জাহেলিয়াতের প্রথার অনুসরণ ও অনুকরণ করতে নিষেধ করেছেন। এসবই জাহেলিয়াতের রীতি-নীতি। এসবের অনুসরণ ও অনুকরণ মারাত্মক অপরাধ ও গুনাহের কারণ।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উল্লিখিত চারটি অভ্যাস থেকে মুক্ত থাকার মাধ্যমে নবিজীর হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়