ঢাকা ০৯:১৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ

নামাজে টুপি পরার বিধান জেনে নিন

নওরোজ ইসলাম ডেস্ক
  • Update Time : ০৯:১৬:৩৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ জুলাই ২০২৩
  • / ৯৬ Time View

নামাজ ফরজ ইবাদত। অনেকে সব সময় টুপি না পরলেও নামাজের সময় ঠিকই টুপি পরেন। কিন্তু নামাজে টুপি পড়ার বিধান কী? নামাজে কি টুপি পরতেই হবে?

হজরত ইবনে আসাকির ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন-
أن النبي صلى الله عليه وسلم كان ربما نزع قلنسوته فجعلها سترة بين يديه
‘নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়অ সাল্লাম অনেক সময় নামাজে মাথার টুপিটি খুলে তাঁর সামনে সুতরা বানিয়ে রাখতেন।’ হানাফি ওলামাদের মতে, টুপিবিহীন খোলা মাথায় নামাজ পড়াতে আপত্তির কিছু নেই। আর যদি তা (টুপি পরা) খুশুখুজু প্রকাশের জন্য হয় তবে তা তারা মোস্তাহাব বলে মনে করেন। টুপি দ্বারা মাথা ঢেকে নামাজ আদায় করা ফজিলতপূর্ণ হওয়ার পক্ষে কোনো দলিল নেই।’ (ফিকহুস সুন্নাহ, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১২৮)
ড.আল্লামা ইউসুফ আল কারজাভি রাহিমাহুল্লাহ তাঁর ‘আল ইবাদাহ ফিল ইসলাম’ নামক গ্রন্থ একটি ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, আমি একবার একজনকে দেখলাম যে, তিনি এক ন¤্র-ভদ্র যুবককে এজন্য তিরস্কার করছেন যে, যুবকটি নামাজ পড়ার জন্য কাতারে দাঁড়িয়েছে। লোকটির কাছে যুবকটির অপরাধ ছিল সে মাথায় টুপিবিহীন নামাজে দাঁড়িয়েছে আর তার মাথর চুলগুলো আছড়ানো।
তখন আমি লোকটিকে বললাম, ইমামদের মধ্যে কোনো ইমাম কি নামাজে মাথয় টুপি পরতে হবে এমন শর্ত আরোপ করেছেন?
লোকটি বলল, না করেন নি।
তাহলে টুপিবিহীন এই নামাজ সকলের ঐক্যমতেই সহিহ?
তখন লোকটি বলল, হ্যাঁ।
তখন আমি বললাম তাহলে এ ধরণের একজন যুবকের সাথে এরূপ কর্কশ ও কঠোর ব্যবহার কেন করছেন? ওর মত যুবকেরা সিনামায় যায়, আর সে এসেছে মসজিদে নামাজ পড়তে। কোন কর্মটি উত্তম? এর সিনেমা দেখতে যাওয়া নাকি তার টুপিবিহীন নামাজ আদায় করা?
সুতরাং সঠিক মানহাজ হচ্ছে, আমাদের সবাইকে নফলের আগে ফরজের প্রতি গুরুত্বারোপ করতে হবে। আমাদের দীনের মূল বিষয়ে কঠোর হতে হবে। আর শাখা প্রশাখার বিষয়ে সহজতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ মতবিরোধ হওয়া শাখা প্রশাখার বিষয়ে কঠোরতা আরোপ করা হলে তখন মানুষ ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত বিষয় থেকেও পালাতে পারে। বরং মানুষ গোটা দ্বীনই ছেড়ে দিতে পারে।
তবে টুপি পরা নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে টুপি পরেছেন। সাহাবায়ে কেরাম, তাবেইন, তাবে-তাবেইন এবং পরবর্তী সময়ে সব যুগে মুসলিমগণের মধ্যে টুপি পরার আমলের ধারাবাহিকতা চলে আসছে। টুপি মুসলিম উম্মাহর জাতীয় পোশাকের একটি উৎকৃষ্ট পোশাক। তাই নামাজেও টুপি পরা উত্তম।
কোনো কোনো ইসলামি স্কলার নামাজে টুপি পরাকে সুন্নত বলেছেন এবং অবহেলা করে টুপি না পরে নামাজ পড়াকে মাকরূহ বলেছেন, যদিও নামাজ আদায় হয়ে যাবে।’ (ফতোয়ায়ে কাজিখান ১/১৩৫, রদ্দুল মুহতার ১/৬৪০)
নামাজ পড়া অবস্থায় যদি কারো মাথা থেকে টুপি পড়ে যায় তবে তা আবার মাথায় উঠিয়ে নেওয়া উত্তম। (রদ্দুল মুহতার ১/৬৪০)
তবে নিয়ম হলো, টুপি মাথায় উঠাতে এক হাত ব্যবহার করা যাবে, তাহলে নামাজে কোনো সমস্যা হবে না, কিন্তু টুপি উঠাতে দুই হাত ব্যবহার করলে আমলে কাছির হয়ে যাবে, আর তাতে নামাজ ভেঙে যাবে। (রদ্দুল মুহতার ১/৫৮৪, আহসানুল ফতোয়া ৩/৪২০)।

Please Share This Post in Your Social Media

নামাজে টুপি পরার বিধান জেনে নিন

Update Time : ০৯:১৬:৩৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ জুলাই ২০২৩

নামাজ ফরজ ইবাদত। অনেকে সব সময় টুপি না পরলেও নামাজের সময় ঠিকই টুপি পরেন। কিন্তু নামাজে টুপি পড়ার বিধান কী? নামাজে কি টুপি পরতেই হবে?

হজরত ইবনে আসাকির ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন-
أن النبي صلى الله عليه وسلم كان ربما نزع قلنسوته فجعلها سترة بين يديه
‘নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়অ সাল্লাম অনেক সময় নামাজে মাথার টুপিটি খুলে তাঁর সামনে সুতরা বানিয়ে রাখতেন।’ হানাফি ওলামাদের মতে, টুপিবিহীন খোলা মাথায় নামাজ পড়াতে আপত্তির কিছু নেই। আর যদি তা (টুপি পরা) খুশুখুজু প্রকাশের জন্য হয় তবে তা তারা মোস্তাহাব বলে মনে করেন। টুপি দ্বারা মাথা ঢেকে নামাজ আদায় করা ফজিলতপূর্ণ হওয়ার পক্ষে কোনো দলিল নেই।’ (ফিকহুস সুন্নাহ, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ১২৮)
ড.আল্লামা ইউসুফ আল কারজাভি রাহিমাহুল্লাহ তাঁর ‘আল ইবাদাহ ফিল ইসলাম’ নামক গ্রন্থ একটি ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, আমি একবার একজনকে দেখলাম যে, তিনি এক ন¤্র-ভদ্র যুবককে এজন্য তিরস্কার করছেন যে, যুবকটি নামাজ পড়ার জন্য কাতারে দাঁড়িয়েছে। লোকটির কাছে যুবকটির অপরাধ ছিল সে মাথায় টুপিবিহীন নামাজে দাঁড়িয়েছে আর তার মাথর চুলগুলো আছড়ানো।
তখন আমি লোকটিকে বললাম, ইমামদের মধ্যে কোনো ইমাম কি নামাজে মাথয় টুপি পরতে হবে এমন শর্ত আরোপ করেছেন?
লোকটি বলল, না করেন নি।
তাহলে টুপিবিহীন এই নামাজ সকলের ঐক্যমতেই সহিহ?
তখন লোকটি বলল, হ্যাঁ।
তখন আমি বললাম তাহলে এ ধরণের একজন যুবকের সাথে এরূপ কর্কশ ও কঠোর ব্যবহার কেন করছেন? ওর মত যুবকেরা সিনামায় যায়, আর সে এসেছে মসজিদে নামাজ পড়তে। কোন কর্মটি উত্তম? এর সিনেমা দেখতে যাওয়া নাকি তার টুপিবিহীন নামাজ আদায় করা?
সুতরাং সঠিক মানহাজ হচ্ছে, আমাদের সবাইকে নফলের আগে ফরজের প্রতি গুরুত্বারোপ করতে হবে। আমাদের দীনের মূল বিষয়ে কঠোর হতে হবে। আর শাখা প্রশাখার বিষয়ে সহজতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ মতবিরোধ হওয়া শাখা প্রশাখার বিষয়ে কঠোরতা আরোপ করা হলে তখন মানুষ ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত বিষয় থেকেও পালাতে পারে। বরং মানুষ গোটা দ্বীনই ছেড়ে দিতে পারে।
তবে টুপি পরা নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে টুপি পরেছেন। সাহাবায়ে কেরাম, তাবেইন, তাবে-তাবেইন এবং পরবর্তী সময়ে সব যুগে মুসলিমগণের মধ্যে টুপি পরার আমলের ধারাবাহিকতা চলে আসছে। টুপি মুসলিম উম্মাহর জাতীয় পোশাকের একটি উৎকৃষ্ট পোশাক। তাই নামাজেও টুপি পরা উত্তম।
কোনো কোনো ইসলামি স্কলার নামাজে টুপি পরাকে সুন্নত বলেছেন এবং অবহেলা করে টুপি না পরে নামাজ পড়াকে মাকরূহ বলেছেন, যদিও নামাজ আদায় হয়ে যাবে।’ (ফতোয়ায়ে কাজিখান ১/১৩৫, রদ্দুল মুহতার ১/৬৪০)
নামাজ পড়া অবস্থায় যদি কারো মাথা থেকে টুপি পড়ে যায় তবে তা আবার মাথায় উঠিয়ে নেওয়া উত্তম। (রদ্দুল মুহতার ১/৬৪০)
তবে নিয়ম হলো, টুপি মাথায় উঠাতে এক হাত ব্যবহার করা যাবে, তাহলে নামাজে কোনো সমস্যা হবে না, কিন্তু টুপি উঠাতে দুই হাত ব্যবহার করলে আমলে কাছির হয়ে যাবে, আর তাতে নামাজ ভেঙে যাবে। (রদ্দুল মুহতার ১/৫৮৪, আহসানুল ফতোয়া ৩/৪২০)।