ঢাকা ১০:২৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ

কালামে পাকে কলম এর বয়ান

মোঃ আবদুল গনী শিব্বীর
  • Update Time : ১১:৪৮:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৩
  • / ৩৫৫ Time View

কলম আল্লাহর সেরা সৃষ্টি। তিনি মানব জাতিকে ‘জ্ঞান’ ও ‘হিকমাহ’ শিক্ষা দেয়ার জন্য শিক্ষার সাথে সাথে শিক্ষা উপকরণও সৃষ্টি করেছেন। কলম শিক্ষা উপকরণ সমুহের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বপ্রথম।

জ্ঞান বিজ্ঞান, তথ্যাবলী ও উপকরণ সমুহ সংরক্ষণের প্রয়োজনে আল্লাহ পাক কলম সৃষ্টি করেছেন। জগত সমুহের স্রষ্টা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ‘আলীম’। আলামীন তথা জগত গুলোর সব কিছুর জ্ঞান কেবল তিনিই রাখেন।

তিনিই সকল প্রকার জ্ঞানের ধারক ও সংরক্ষক। কেউই তাঁরসমকক্ষ নয়। তাঁর এতো প্রভাব প্রতিপত্তি এবং ক্ষমতা থাকা সত্তে ও তাঁর সৃষ্টি কৌশল হিসেবে সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ মাখলুক মানব জাতির প্রয়োজন ও কল্যাণে তিনি কলম সৃষ্টি করেছেন। কলম মানব জাতির শ্রেষ্ঠ সম্পদ, যেমনটি: জ্ঞান।

জ্ঞানের প্রকাশ ও বিকাশ মূলতঃ কলম ব্যবহারের মধ্য দিয়ে সাধিত হয়। জ্ঞানেরবাহন বই পুস্তক কলমের সাহায্যে লিখা হয়। যদিও বর্তমান যামানায় কম্পিউটার কিবোর্ড প্রয়োগে লিখা হয়। এক কথায় লিখনি কার্যক্রমের সুচনা হয়েছে কলম সৃষ্টির মধ্য দিয়ে।

কলমকে মানবজাতির প্রতি আল্লাহর পক্ষ হতে বড় নেয়ামত হিসেবে বিবেচনাকরা হয়। মানবজাতির উন্নতি, জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চায় কলমের ভুমিকা অপরিসীম।মানুষ যা পড়ে বা বলে কিংবা মুখস্ত করে তা মানুষের হৃদয়ে গ্রোথিত হয়, এ সংরক্ষণ কেবল নির্দিষ্ট ব্যক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। যদি পড়া বলার সাথে সাথে লেখা হয় তবে সে সংরক্ষণ সুদৃঢ় সংরক্ষণ হিসেবে পরি গণিত হয়।

ব্যক্তি পর্যায়ের এ সংরক্ষণ পদ্ধতি জাতীয় সংরক্ষণ হিসেবেও অনেক সময় বিবেচিতহয়। কেননা একজন গবেষক যখন তার গবেষণা শব্দ,জ্ঞান,তথ্য উপাত্তকে লিখিত আকারে উপস্থাপন করে তখন সেটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যাচাই বাচাই সাপেক্ষে সংরক্ষণ করেন।

জাতির কল্যাণে বই পুস্তক, নানাবিধ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। এ গ্রন্থ গুলো রচনা কালে কলমের সাহায্যে লিখিত হয়। প্রাচীন বা আধুনিক কিংবা অত্যাধুনিক যুগসহ সকল যুগে কলমের ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন ঐতিহাসিক জ্ঞান, বিজ্ঞান, ইতিহাস, সাহিত্য, গণিত, চিকিৎসা, বিষয়ক গ্রন্থাবলী কখনো কাগজের ছত্রে, কখনো শিলা লিপি, কিংবা পাথর খোদাই, কাঠ বা চামড়াতে লেখা হয়। লিখতে গিয়ে তখন ব্যবহার করা হয়সমকালীন যুগ চাহিদার প্রেক্ষিতে নির্মিত কলম।

পবিত্র কোরআন ও হাদিসে কলম শব্দের উল্লেখ পাওয়া যায়। আল্লাহ পাক কোরআন মাজিদে চারস্থানে কলম শব্দের উল্লেখ করে বলেন,

‘পড়ো তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন, মানুষকে ‘আলাক’ থেকে। পড়ো, আর তোমারপ্রভু অতিশয় মহিমান্বিত, যিনি তালিম (শিক্ষা) দিয়েছেন কলমের সাহায্যে। তালিম দিয়েছেন  (মানুষকে) যা সে জানতনা।’(সুরাআলাক: আয়াত: ১-৫)।

তিনি আরো বলেন, ‘পৃথিবীর সমস্ত বৃক্ষ যদি কলম হয় আর সমুদ্র হয় কালি এবং ইহার সঙ্গে আরও সাত সমুদ্র যুক্ত হয়, তবুও আল্লাহর বাণী নিঃশেষ হইবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরা ক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা লোকমান: আয়াত: ২৭)।

আল্লাহ পাক স্বতন্ত্র ভাবে সুরার নাম করণ করেছেন ‘কলম’নামে। তিনি এ সুরার প্রথমার্ধে বলেন, ‘ নূন। শপথ কলমের এবং সেই বিষয়ে রযা তারা লিপিবদ্ধ করে। (সুরা আল কলম: আয়াত: ০১)।

তাফসিরে বর্ণিত রয়েছে, ‘আল্লাহ সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টি করেন এবং তাকেলেখার নির্দেশ দেন। সে মতে কলম কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু হবে, সব লিখেফেলে। এ কিতাব আল্লাহর কাছে আরশে রক্ষিত আছে।’ (তাফসিরে কুরতুবি)।

হযরত উবাদা ইবনে ছামিত (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,‘নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম ‘কলম’ সৃষ্টি করেছেন।অতঃপর কলমকে বললেন, লেখ। কলম বলল, হে প্রভূ! কি লেখবো? আল্লাহ বললেন, লেখ ইতিপূর্বে যা হয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত যা কিছু হবে।'(মুসনাদে আহমদ: হাদিস: ২২৭০৭)।

উল্লেখ্য যে, কলম তিন ধরণের। ১. আল্লাহর কুদরতি হাতে সৃষ্ট কলম, আল্লাহপাক এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ যিনি শিক্ষা দিয়েছেন কলমের সাহায্যে। (সুরা আলাক: আয়াত: ৪)।

২. ফেরেশতাদের কলম, যে কলম দিয়ে তাঁরা মানুষের আমল নামা লিখেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘কিয়ামতের দিন আমি তাকে একটি কর্ম লিপি বের করে দেবো এবং সে তা খোলা অবস্থায় পাবে এবং বলা হবে, তোমার আমল নামা পড়ে দেখো, আজ তুমি ইতোমার নিজের হিসাবের জন্য যথেষ্ট’ (সূরা বনি ইসরাইল : আয়াত: ১৩-১৪)।

৩. সাধারণ কলম, মানুষ যে কলম দিয়ে জ্ঞান বিষয়ক কোন কিছু লেখে। এ প্রসঙ্গে তাফসীরে এসেছে, হজরত কাদাতাহ (রাঃ) বলেন, ‘কলম আল্লাহ তায়ালার একটি বড় নিয়ামত। কলম না থাকলে কোনো ধর্ম প্রতিষ্ঠিত থাকত না এবং দুনিয়ারকাজ-করবারও সঠিকভাবে পরিচালিত হতো না।’

হজরত আলী রা: বলেন, ‘এটা আল্লাহ তায়ালার একটি বড় কৃপা যে, তিনি তাঁর বান্দাকে অজ্ঞাত বিষয় সমূহের জ্ঞানদান করেছেন এবং তাদের মূর্খতার অন্ধকার থেকে জ্ঞানেরআলোর দিকে বের করে এনেছেন। তিনি মানুষকে লিখন বিদ্যায় উৎসাহিত করেছেন। কেননা এর উপকারিতা অপরিসীম।

আল্লাহ ছাড়া কেউ তা গণনা করেশেষ করতে পারে না। যাবতীয় জ্ঞান বিজ্ঞান, পূর্ববর্তী ও পরবর্তীদের ইতিহাস,জীবনালেখ্য ও উক্তি, আল্লাহ তায়ালার অবতীর্ণ কিতাব সমূহ সমস্তই কলমেরসাহায্যে লিখিত হয়েছে এবং পৃথিবীর শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অক্ষয় হয়েথাকবে। কলম না থাকলে ইহকাল ও পরকালের সব কাজ কর্মই বিঘিœত হবে’ (তাফসিরে মা’আরিফুল কুরআন; অষ্টম খন্ড : পৃষ্ঠা : ২৪-২৫)।

কলম মানবজাতির প্রতি আল্লাহর দেয়া আমানত। মানবজাতি এর সাহায্যে দুনিয়া ও আখেরাতের প্রভূত কল্যাণ লাভ করে থাকে। কলমের ব্যবহার স্বাভাবিক দুভাবে হয়ে থাকে। একটি হলো সদ্ব্যবহার আরেকটি হলো অসদ্ব্যবহার।ন্যায়নীতি ও কল্যাণের কাজে যার কলম ব্যবহৃত সে ব্যক্তি উত্তম। আর যার কলম অন্যায়,দুর্নীতি,ষড়যন্ত্র ইত্যাদি কাজে ব্যবহৃত হয় সে ব্যক্তি অসৎ ও অধম।

কেরামান কাতেবীনের কলমে মানুষের ভালোমন্দ সব কিছুই ‘আমল নামা’ নামীয় বিশেষ সংরক্ষিত কিতাবে লেখা হয়। মানব সৃষ্ট সাধারণ কলম অন্যায় ভাবে ব্যবহৃত হলেও আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাদের কলম সর্বদা সঠিক ও ন্যায় সঙ্গত কাজে ব্যবহৃত হয়।

মানুষের তৈরী কলম নষ্ট হতে পারে, হারাতে পারে, সংস্করণ বা ডিজাইনের পরিবর্তন ও পরিবর্ধন হতে পারে। কিন্তু আল্লাহর কুদরতী কলম সর্বদা অপরিবর্তনীয়, সকল প্রকার একটি মুক্ত। আল্লাহর কলমের প্রকৃতরূপ কেমন তাজগতের মানুষ কোন কালেই অনুমান করতে অপারগ।

লেখক: মোঃ আবদুল গনী শিব্বীর। মুহাদ্দিস, নোয়াখালী কারামাতিয়া কামিল মাদরাসা, সোনাপুর, সদর, নোয়াখালী।

Please Share This Post in Your Social Media

কালামে পাকে কলম এর বয়ান

Update Time : ১১:৪৮:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৩

কলম আল্লাহর সেরা সৃষ্টি। তিনি মানব জাতিকে ‘জ্ঞান’ ও ‘হিকমাহ’ শিক্ষা দেয়ার জন্য শিক্ষার সাথে সাথে শিক্ষা উপকরণও সৃষ্টি করেছেন। কলম শিক্ষা উপকরণ সমুহের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বপ্রথম।

জ্ঞান বিজ্ঞান, তথ্যাবলী ও উপকরণ সমুহ সংরক্ষণের প্রয়োজনে আল্লাহ পাক কলম সৃষ্টি করেছেন। জগত সমুহের স্রষ্টা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ‘আলীম’। আলামীন তথা জগত গুলোর সব কিছুর জ্ঞান কেবল তিনিই রাখেন।

তিনিই সকল প্রকার জ্ঞানের ধারক ও সংরক্ষক। কেউই তাঁরসমকক্ষ নয়। তাঁর এতো প্রভাব প্রতিপত্তি এবং ক্ষমতা থাকা সত্তে ও তাঁর সৃষ্টি কৌশল হিসেবে সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ মাখলুক মানব জাতির প্রয়োজন ও কল্যাণে তিনি কলম সৃষ্টি করেছেন। কলম মানব জাতির শ্রেষ্ঠ সম্পদ, যেমনটি: জ্ঞান।

জ্ঞানের প্রকাশ ও বিকাশ মূলতঃ কলম ব্যবহারের মধ্য দিয়ে সাধিত হয়। জ্ঞানেরবাহন বই পুস্তক কলমের সাহায্যে লিখা হয়। যদিও বর্তমান যামানায় কম্পিউটার কিবোর্ড প্রয়োগে লিখা হয়। এক কথায় লিখনি কার্যক্রমের সুচনা হয়েছে কলম সৃষ্টির মধ্য দিয়ে।

কলমকে মানবজাতির প্রতি আল্লাহর পক্ষ হতে বড় নেয়ামত হিসেবে বিবেচনাকরা হয়। মানবজাতির উন্নতি, জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চায় কলমের ভুমিকা অপরিসীম।মানুষ যা পড়ে বা বলে কিংবা মুখস্ত করে তা মানুষের হৃদয়ে গ্রোথিত হয়, এ সংরক্ষণ কেবল নির্দিষ্ট ব্যক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। যদি পড়া বলার সাথে সাথে লেখা হয় তবে সে সংরক্ষণ সুদৃঢ় সংরক্ষণ হিসেবে পরি গণিত হয়।

ব্যক্তি পর্যায়ের এ সংরক্ষণ পদ্ধতি জাতীয় সংরক্ষণ হিসেবেও অনেক সময় বিবেচিতহয়। কেননা একজন গবেষক যখন তার গবেষণা শব্দ,জ্ঞান,তথ্য উপাত্তকে লিখিত আকারে উপস্থাপন করে তখন সেটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যাচাই বাচাই সাপেক্ষে সংরক্ষণ করেন।

জাতির কল্যাণে বই পুস্তক, নানাবিধ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। এ গ্রন্থ গুলো রচনা কালে কলমের সাহায্যে লিখিত হয়। প্রাচীন বা আধুনিক কিংবা অত্যাধুনিক যুগসহ সকল যুগে কলমের ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন ঐতিহাসিক জ্ঞান, বিজ্ঞান, ইতিহাস, সাহিত্য, গণিত, চিকিৎসা, বিষয়ক গ্রন্থাবলী কখনো কাগজের ছত্রে, কখনো শিলা লিপি, কিংবা পাথর খোদাই, কাঠ বা চামড়াতে লেখা হয়। লিখতে গিয়ে তখন ব্যবহার করা হয়সমকালীন যুগ চাহিদার প্রেক্ষিতে নির্মিত কলম।

পবিত্র কোরআন ও হাদিসে কলম শব্দের উল্লেখ পাওয়া যায়। আল্লাহ পাক কোরআন মাজিদে চারস্থানে কলম শব্দের উল্লেখ করে বলেন,

‘পড়ো তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন, মানুষকে ‘আলাক’ থেকে। পড়ো, আর তোমারপ্রভু অতিশয় মহিমান্বিত, যিনি তালিম (শিক্ষা) দিয়েছেন কলমের সাহায্যে। তালিম দিয়েছেন  (মানুষকে) যা সে জানতনা।’(সুরাআলাক: আয়াত: ১-৫)।

তিনি আরো বলেন, ‘পৃথিবীর সমস্ত বৃক্ষ যদি কলম হয় আর সমুদ্র হয় কালি এবং ইহার সঙ্গে আরও সাত সমুদ্র যুক্ত হয়, তবুও আল্লাহর বাণী নিঃশেষ হইবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরা ক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা লোকমান: আয়াত: ২৭)।

আল্লাহ পাক স্বতন্ত্র ভাবে সুরার নাম করণ করেছেন ‘কলম’নামে। তিনি এ সুরার প্রথমার্ধে বলেন, ‘ নূন। শপথ কলমের এবং সেই বিষয়ে রযা তারা লিপিবদ্ধ করে। (সুরা আল কলম: আয়াত: ০১)।

তাফসিরে বর্ণিত রয়েছে, ‘আল্লাহ সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টি করেন এবং তাকেলেখার নির্দেশ দেন। সে মতে কলম কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু হবে, সব লিখেফেলে। এ কিতাব আল্লাহর কাছে আরশে রক্ষিত আছে।’ (তাফসিরে কুরতুবি)।

হযরত উবাদা ইবনে ছামিত (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,‘নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম ‘কলম’ সৃষ্টি করেছেন।অতঃপর কলমকে বললেন, লেখ। কলম বলল, হে প্রভূ! কি লেখবো? আল্লাহ বললেন, লেখ ইতিপূর্বে যা হয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত যা কিছু হবে।'(মুসনাদে আহমদ: হাদিস: ২২৭০৭)।

উল্লেখ্য যে, কলম তিন ধরণের। ১. আল্লাহর কুদরতি হাতে সৃষ্ট কলম, আল্লাহপাক এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ যিনি শিক্ষা দিয়েছেন কলমের সাহায্যে। (সুরা আলাক: আয়াত: ৪)।

২. ফেরেশতাদের কলম, যে কলম দিয়ে তাঁরা মানুষের আমল নামা লিখেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘কিয়ামতের দিন আমি তাকে একটি কর্ম লিপি বের করে দেবো এবং সে তা খোলা অবস্থায় পাবে এবং বলা হবে, তোমার আমল নামা পড়ে দেখো, আজ তুমি ইতোমার নিজের হিসাবের জন্য যথেষ্ট’ (সূরা বনি ইসরাইল : আয়াত: ১৩-১৪)।

৩. সাধারণ কলম, মানুষ যে কলম দিয়ে জ্ঞান বিষয়ক কোন কিছু লেখে। এ প্রসঙ্গে তাফসীরে এসেছে, হজরত কাদাতাহ (রাঃ) বলেন, ‘কলম আল্লাহ তায়ালার একটি বড় নিয়ামত। কলম না থাকলে কোনো ধর্ম প্রতিষ্ঠিত থাকত না এবং দুনিয়ারকাজ-করবারও সঠিকভাবে পরিচালিত হতো না।’

হজরত আলী রা: বলেন, ‘এটা আল্লাহ তায়ালার একটি বড় কৃপা যে, তিনি তাঁর বান্দাকে অজ্ঞাত বিষয় সমূহের জ্ঞানদান করেছেন এবং তাদের মূর্খতার অন্ধকার থেকে জ্ঞানেরআলোর দিকে বের করে এনেছেন। তিনি মানুষকে লিখন বিদ্যায় উৎসাহিত করেছেন। কেননা এর উপকারিতা অপরিসীম।

আল্লাহ ছাড়া কেউ তা গণনা করেশেষ করতে পারে না। যাবতীয় জ্ঞান বিজ্ঞান, পূর্ববর্তী ও পরবর্তীদের ইতিহাস,জীবনালেখ্য ও উক্তি, আল্লাহ তায়ালার অবতীর্ণ কিতাব সমূহ সমস্তই কলমেরসাহায্যে লিখিত হয়েছে এবং পৃথিবীর শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অক্ষয় হয়েথাকবে। কলম না থাকলে ইহকাল ও পরকালের সব কাজ কর্মই বিঘিœত হবে’ (তাফসিরে মা’আরিফুল কুরআন; অষ্টম খন্ড : পৃষ্ঠা : ২৪-২৫)।

কলম মানবজাতির প্রতি আল্লাহর দেয়া আমানত। মানবজাতি এর সাহায্যে দুনিয়া ও আখেরাতের প্রভূত কল্যাণ লাভ করে থাকে। কলমের ব্যবহার স্বাভাবিক দুভাবে হয়ে থাকে। একটি হলো সদ্ব্যবহার আরেকটি হলো অসদ্ব্যবহার।ন্যায়নীতি ও কল্যাণের কাজে যার কলম ব্যবহৃত সে ব্যক্তি উত্তম। আর যার কলম অন্যায়,দুর্নীতি,ষড়যন্ত্র ইত্যাদি কাজে ব্যবহৃত হয় সে ব্যক্তি অসৎ ও অধম।

কেরামান কাতেবীনের কলমে মানুষের ভালোমন্দ সব কিছুই ‘আমল নামা’ নামীয় বিশেষ সংরক্ষিত কিতাবে লেখা হয়। মানব সৃষ্ট সাধারণ কলম অন্যায় ভাবে ব্যবহৃত হলেও আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাদের কলম সর্বদা সঠিক ও ন্যায় সঙ্গত কাজে ব্যবহৃত হয়।

মানুষের তৈরী কলম নষ্ট হতে পারে, হারাতে পারে, সংস্করণ বা ডিজাইনের পরিবর্তন ও পরিবর্ধন হতে পারে। কিন্তু আল্লাহর কুদরতী কলম সর্বদা অপরিবর্তনীয়, সকল প্রকার একটি মুক্ত। আল্লাহর কলমের প্রকৃতরূপ কেমন তাজগতের মানুষ কোন কালেই অনুমান করতে অপারগ।

লেখক: মোঃ আবদুল গনী শিব্বীর। মুহাদ্দিস, নোয়াখালী কারামাতিয়া কামিল মাদরাসা, সোনাপুর, সদর, নোয়াখালী।