ঢাকা ০৪:৪৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
রংপুরে আলু উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে

আলুর বাম্পার ফলনে উচ্ছ্বসিত চাষিরা,শঙ্কা বাড়াচ্ছে লেট ব্লাইট

কামরুল হাসান টিটু,রংপুর
  • Update Time : ০৬:১০:০৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৪
  • / ২৯ Time View

রংপুরে আলুর বাম্পার ফলনে উচ্ছ্বসিত চাষিরা। তবে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ আর ঘন কুয়াশায় লেট ব্লাইটের শঙ্কা চেপে বসেছে তাদের মনে। যদিও আলুর রোগ প্রতিরোধে আগাম প্রস্তুতি হিসেবে চাষিদের পরিমিত স্প্রে করার পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। ত‌বে আলু উৎপাদনকারী অঞ্চল হিসেবে রংপুরে চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে।

কৃষিবিভাগের তথ্য অনুযায়ী রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় এ বছর চলতি মৌসুমে ১ লাখ ৬০২ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ করা হয়েছে। এ বছর রংপুর অঞ্চলে ৯৮ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সে হিসেবে ২ হাজার ৯২ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ বেড়েছে। গত বছর রংপুর অঞ্চলে ৯৭ হাজার ৩২৭ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ করা হয়েছিল।

সরেজমিনে দেখা যায়, আলুর খেতে ব্যস্ত সময় পার করছেন আলুচাষিরা। আলুর খেত দেখে মন ভালো হলেও অজানা শঙ্কায় চাষিরা। নিয়মিত কুয়াশা কাটাতে স্প্রে করায় তাদের খরচ বাড়ছে। ঘন কুয়াশার সঙ্গে যুদ্ধ করে এখনও ভরা আলুর মাঠ রক্ষা করে চলেছেন। শীতের ধকল কাটিয়ে ন্যায্য দাম আর আলু সংরক্ষণে হিমাগার সংকট সৃষ্টি না হলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

কৃষকরা বলছেন, গত বছরে আলুর ভালো দাম আর এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় দিন দিন ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠছে। এখন আলু খেতে কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। আর এরই মধ্যে আগাম জাতের আলু ঘরে তোলার কাজ শুরু করেছেন অনেকেই।

রংপুরের পীরগাছা উপজেলার দেউতি গ্রামের আনোয়ার শিকদার বলেন, বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এবার আলুর ফলন ভালো হয়েছে। আগাম কিছু আলু বিক্রি করে দামও ভালো পেয়েছেন। তবে ডিসেম্বরের শেষের দিকে শীতের প্রকোপ বেশি হওয়ায় আলু ক্ষেতে রোগ নিয়ে কিছুটা চিন্তিত ছিলেন বলেও তিনি জানান।

অন্যদিকে মিঠাপুকুর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের শহিদুল ইসলাম জানান, এবার তিনি ১৫ একর জমিতে আলুর আবাদ করেছেন। এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যা হয়নি। ভালো ফলন হয়েছে।

রংপুর নগরীর তামপাট, মাহিগঞ্জ, দর্শনা, তপোধন, পশুরাম, রাজেন্দ্রপুর, সদরের পালিচড়া, ধাপেরহাট ও পীরগাছা উপজেলার পারুল, অন্নদানগর, পাওটানা, কান্দিসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে চাষিরা আলুর খেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। কোথাও পানি দিচ্ছে, কেউ স্প্রে দিচ্ছে আবার কেউ আগাছা পরিস্কার করছে।

নগরীর তামপাট এলাকার আলুচাষি আশরাফুল আলম বলেন, যেভাবে শীত বাড়ছে, তাতে চাষাবাদ করা মুশকিল। সার, বীজ, সেচ সব কিছুর দাম বাড়ছে। সেই সাথে দিনমজুরও পাওয়া যায় না। ধার দেনা করে আলু চাষ করছি। কিন্তু শীতের কারণে যদি আলুর পচারি রোগ হয় তাইলে আমরা শেষ।

পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের গাবুড়া চরে আলু চাষ করেছেন সোহাগ মিয়া ও আজগর আলী। তাদের বাড়ি নগরীর বড় রংপুর এলাকায়। তারা প্রতিবছর ওই এলাকায় জমি বর্গা নিয়ে আলু চাষ করেন। তারা জানান, এবার আলুর মৌসুমের শুরুতে বীজ আলু ও সার সংকটের কারণে কিছুটা সমস্যা হয়েছে। তবে আলুর ফলন ভালো হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে আলু নিয়ে বিপাকে পড়তে হবে না।

এদিকে রংপুরের পুষ্টিবিদ গোলাম রসূল জানান, পুষ্টির দিক দিয়ে ভাত ও গমের সঙ্গে আলুকে তুলনা করা যায়। আলুতে প্রচুর পরিমাণ শর্করার পাশাপাশি ফাইবারও রয়েছে, যা হজমে সহায়তা করে। এছাড়া আলুতে রয়েছে ভিটামিন ও খনিজ লবণ। আলুতে বিদ্যমান ভিটামিন ও খনিজ লবণ রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। খাদ্য হিসাবে আলুর রয়েছে বহুমুখী ব্যবহার। আলু দিয়ে মিষ্টি, সেমাই, নানা রকম ভর্তাসহ বিভিন্ন মুখরোচক খাবার তৈরি করা যায়। এছাড়া আলুকে প্রক্রিয়াজাত করে বিভিন্ন ধরনের চিপস তৈরি করা হচ্ছে।

কৃষি বিভাগ বলছেন, আলু চাষের জন্য বেলে দোআশ ও দোআঁশ মাটি সবচেয়ে উপযোগী। বাংলাদেশে দেশি ও উচ্চফলনশীল দুই জাতের আলুই চাষ করা হয়। আলুর উৎপাদন বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বেশ কয়েকটি উচ্চফলনশীল আলুর জাত উদ্ভাবন করেছে। বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে উচ্চফলনশীল জাতের আলু চাষ‌ করলে ফলন বাড়বে এবং উৎপাদন খরচ কমে আসবে। যা দেশের খাদ্য চাহিদা পূরণে সহায়তা করার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে।

রংপুর অঞ্চলের আলুচাষিরা এবার আগে ভাগেই দ্রুত বর্ধনশীল জাতের গ্রানোলা, লরা, মিউজিকা, ক্যারেজ, রোমানা ও ফাটা পাকরি চাষ করেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলু আবাদ হয়েছে রংপুরে এবং সবচেয়ে কম লালমনিরহাট জেলায়। আসছে মার্চ মাসের শেষের দিকে জমিতে আলু উত্তোলন শেষ হবে বলে জানান কৃষি বিভাগ।

চলতি মৌসুমে রংপুর কৃষি অঞ্চলের পাঁচ জেলার মধ্যে এ বছর রংপুর জেলায় ৫৩ হাজার ৯৩০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে, যা রংপুর অঞ্চলের সর্বোচ্চ। এ ছাড়া নীলফামারী জেলায় ২১ হাজার ৯৯০ হেক্টর, গাইবান্ধা জেলায় ১১ হাজার ১৫২ হেক্টর, কুড়িগ্রাম জেলায় ৭ হাজার ৭৫ হেক্টর ও লালমনিরহাট জেলায় ৬ হাজার ৪৫৫ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছে বলে জানান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর রংপুরের উপ-পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন।

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, মৃদু শৈত্যপ্রবাহ চলছে। আলুর খেতের জন্য সবচেয়ে বেশির শঙ্কার কারণ হলো ঘন কুয়াশা। এই ঘন কুয়াশা দীর্ঘদিন থাকলে আলুর মধ্যে লেট ব্লাইট হতে পারে। তবে আমাদের পক্ষ থেকে আলুচাষিদের নিয়মিত আগাম প্রস্তুতি হিসেবে কৃষকদের পরিমিত ছত্রাকনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে আমিসহ আমাদের কর্মকর্তারা মাঠে গিয়ে পরামর্শসহ সরেজমিনে আলুর খেত দেখা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

২০০৯ সাল থেকে মুন্সীগঞ্জকে ছাড়িয়ে সর্বোচ্চ আলু উৎপানদকারী জেলা হিসেবে রংপুর দেশের কৃষিখাতে সুনাম ধরে রেখেছে। এই অঞ্চলে আলু সংরক্ষণে ৬৭টি হিমাগার রয়েছে। এরমধ্যে ৪০টি হিমাগার রয়েছে রংপুরে এবং ১০টি নীলফামারী জেলার মধ্যে। বাকি তিন জেলায় ১৭টি হিমাগার রয়েছে।

এদিকে আবহাওয়া, রাডার ও ভূ-কম্পন পর্যবেক্ষাণাগার রংপুরের কর্মকর্তা আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজার রহমান জানান, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা ও নীলফামারীর উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত রংপুরে ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া দিনাজপুরে ৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ৮ দশমিক ৪, নীলফামারীর ডিমলায় ৮ দশমিক ৮, সৈয়দপুরে ৮ দশমিক ৮, লালমনিরহাটে ৯ দশমিক ৬, ঠাকুরগাঁওয়ে ১০ দশমিক ৩, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ১০ দশমিক ৬ এবং গাইবান্ধায় ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

রংপুরে আলু উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে

আলুর বাম্পার ফলনে উচ্ছ্বসিত চাষিরা,শঙ্কা বাড়াচ্ছে লেট ব্লাইট

Update Time : ০৬:১০:০৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৪

রংপুরে আলুর বাম্পার ফলনে উচ্ছ্বসিত চাষিরা। তবে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ আর ঘন কুয়াশায় লেট ব্লাইটের শঙ্কা চেপে বসেছে তাদের মনে। যদিও আলুর রোগ প্রতিরোধে আগাম প্রস্তুতি হিসেবে চাষিদের পরিমিত স্প্রে করার পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। ত‌বে আলু উৎপাদনকারী অঞ্চল হিসেবে রংপুরে চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে।

কৃষিবিভাগের তথ্য অনুযায়ী রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় এ বছর চলতি মৌসুমে ১ লাখ ৬০২ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ করা হয়েছে। এ বছর রংপুর অঞ্চলে ৯৮ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সে হিসেবে ২ হাজার ৯২ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ বেড়েছে। গত বছর রংপুর অঞ্চলে ৯৭ হাজার ৩২৭ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ করা হয়েছিল।

সরেজমিনে দেখা যায়, আলুর খেতে ব্যস্ত সময় পার করছেন আলুচাষিরা। আলুর খেত দেখে মন ভালো হলেও অজানা শঙ্কায় চাষিরা। নিয়মিত কুয়াশা কাটাতে স্প্রে করায় তাদের খরচ বাড়ছে। ঘন কুয়াশার সঙ্গে যুদ্ধ করে এখনও ভরা আলুর মাঠ রক্ষা করে চলেছেন। শীতের ধকল কাটিয়ে ন্যায্য দাম আর আলু সংরক্ষণে হিমাগার সংকট সৃষ্টি না হলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

কৃষকরা বলছেন, গত বছরে আলুর ভালো দাম আর এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় দিন দিন ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠছে। এখন আলু খেতে কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। আর এরই মধ্যে আগাম জাতের আলু ঘরে তোলার কাজ শুরু করেছেন অনেকেই।

রংপুরের পীরগাছা উপজেলার দেউতি গ্রামের আনোয়ার শিকদার বলেন, বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এবার আলুর ফলন ভালো হয়েছে। আগাম কিছু আলু বিক্রি করে দামও ভালো পেয়েছেন। তবে ডিসেম্বরের শেষের দিকে শীতের প্রকোপ বেশি হওয়ায় আলু ক্ষেতে রোগ নিয়ে কিছুটা চিন্তিত ছিলেন বলেও তিনি জানান।

অন্যদিকে মিঠাপুকুর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের শহিদুল ইসলাম জানান, এবার তিনি ১৫ একর জমিতে আলুর আবাদ করেছেন। এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যা হয়নি। ভালো ফলন হয়েছে।

রংপুর নগরীর তামপাট, মাহিগঞ্জ, দর্শনা, তপোধন, পশুরাম, রাজেন্দ্রপুর, সদরের পালিচড়া, ধাপেরহাট ও পীরগাছা উপজেলার পারুল, অন্নদানগর, পাওটানা, কান্দিসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে চাষিরা আলুর খেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। কোথাও পানি দিচ্ছে, কেউ স্প্রে দিচ্ছে আবার কেউ আগাছা পরিস্কার করছে।

নগরীর তামপাট এলাকার আলুচাষি আশরাফুল আলম বলেন, যেভাবে শীত বাড়ছে, তাতে চাষাবাদ করা মুশকিল। সার, বীজ, সেচ সব কিছুর দাম বাড়ছে। সেই সাথে দিনমজুরও পাওয়া যায় না। ধার দেনা করে আলু চাষ করছি। কিন্তু শীতের কারণে যদি আলুর পচারি রোগ হয় তাইলে আমরা শেষ।

পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের গাবুড়া চরে আলু চাষ করেছেন সোহাগ মিয়া ও আজগর আলী। তাদের বাড়ি নগরীর বড় রংপুর এলাকায়। তারা প্রতিবছর ওই এলাকায় জমি বর্গা নিয়ে আলু চাষ করেন। তারা জানান, এবার আলুর মৌসুমের শুরুতে বীজ আলু ও সার সংকটের কারণে কিছুটা সমস্যা হয়েছে। তবে আলুর ফলন ভালো হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে আলু নিয়ে বিপাকে পড়তে হবে না।

এদিকে রংপুরের পুষ্টিবিদ গোলাম রসূল জানান, পুষ্টির দিক দিয়ে ভাত ও গমের সঙ্গে আলুকে তুলনা করা যায়। আলুতে প্রচুর পরিমাণ শর্করার পাশাপাশি ফাইবারও রয়েছে, যা হজমে সহায়তা করে। এছাড়া আলুতে রয়েছে ভিটামিন ও খনিজ লবণ। আলুতে বিদ্যমান ভিটামিন ও খনিজ লবণ রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। খাদ্য হিসাবে আলুর রয়েছে বহুমুখী ব্যবহার। আলু দিয়ে মিষ্টি, সেমাই, নানা রকম ভর্তাসহ বিভিন্ন মুখরোচক খাবার তৈরি করা যায়। এছাড়া আলুকে প্রক্রিয়াজাত করে বিভিন্ন ধরনের চিপস তৈরি করা হচ্ছে।

কৃষি বিভাগ বলছেন, আলু চাষের জন্য বেলে দোআশ ও দোআঁশ মাটি সবচেয়ে উপযোগী। বাংলাদেশে দেশি ও উচ্চফলনশীল দুই জাতের আলুই চাষ করা হয়। আলুর উৎপাদন বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বেশ কয়েকটি উচ্চফলনশীল আলুর জাত উদ্ভাবন করেছে। বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে উচ্চফলনশীল জাতের আলু চাষ‌ করলে ফলন বাড়বে এবং উৎপাদন খরচ কমে আসবে। যা দেশের খাদ্য চাহিদা পূরণে সহায়তা করার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে।

রংপুর অঞ্চলের আলুচাষিরা এবার আগে ভাগেই দ্রুত বর্ধনশীল জাতের গ্রানোলা, লরা, মিউজিকা, ক্যারেজ, রোমানা ও ফাটা পাকরি চাষ করেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলু আবাদ হয়েছে রংপুরে এবং সবচেয়ে কম লালমনিরহাট জেলায়। আসছে মার্চ মাসের শেষের দিকে জমিতে আলু উত্তোলন শেষ হবে বলে জানান কৃষি বিভাগ।

চলতি মৌসুমে রংপুর কৃষি অঞ্চলের পাঁচ জেলার মধ্যে এ বছর রংপুর জেলায় ৫৩ হাজার ৯৩০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে, যা রংপুর অঞ্চলের সর্বোচ্চ। এ ছাড়া নীলফামারী জেলায় ২১ হাজার ৯৯০ হেক্টর, গাইবান্ধা জেলায় ১১ হাজার ১৫২ হেক্টর, কুড়িগ্রাম জেলায় ৭ হাজার ৭৫ হেক্টর ও লালমনিরহাট জেলায় ৬ হাজার ৪৫৫ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছে বলে জানান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর রংপুরের উপ-পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন।

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, মৃদু শৈত্যপ্রবাহ চলছে। আলুর খেতের জন্য সবচেয়ে বেশির শঙ্কার কারণ হলো ঘন কুয়াশা। এই ঘন কুয়াশা দীর্ঘদিন থাকলে আলুর মধ্যে লেট ব্লাইট হতে পারে। তবে আমাদের পক্ষ থেকে আলুচাষিদের নিয়মিত আগাম প্রস্তুতি হিসেবে কৃষকদের পরিমিত ছত্রাকনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে আমিসহ আমাদের কর্মকর্তারা মাঠে গিয়ে পরামর্শসহ সরেজমিনে আলুর খেত দেখা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

২০০৯ সাল থেকে মুন্সীগঞ্জকে ছাড়িয়ে সর্বোচ্চ আলু উৎপানদকারী জেলা হিসেবে রংপুর দেশের কৃষিখাতে সুনাম ধরে রেখেছে। এই অঞ্চলে আলু সংরক্ষণে ৬৭টি হিমাগার রয়েছে। এরমধ্যে ৪০টি হিমাগার রয়েছে রংপুরে এবং ১০টি নীলফামারী জেলার মধ্যে। বাকি তিন জেলায় ১৭টি হিমাগার রয়েছে।

এদিকে আবহাওয়া, রাডার ও ভূ-কম্পন পর্যবেক্ষাণাগার রংপুরের কর্মকর্তা আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজার রহমান জানান, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা ও নীলফামারীর উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত রংপুরে ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া দিনাজপুরে ৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ৮ দশমিক ৪, নীলফামারীর ডিমলায় ৮ দশমিক ৮, সৈয়দপুরে ৮ দশমিক ৮, লালমনিরহাটে ৯ দশমিক ৬, ঠাকুরগাঁওয়ে ১০ দশমিক ৩, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ১০ দশমিক ৬ এবং গাইবান্ধায় ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।