ঢাকা ০৪:১২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
জাতীয় কৃষি প্রশিক্ষণ একাডেমি (নাটা) তে “ইনোভেশন শোকেসিং” আয়োজন টঙ্গীতে বিনিয়োগকৃত অর্থ আদায়ের দাবীতে সংবাদ সম্মেলন পরিবেশ ও উন্নয়ন সাংবাদিকতায় হয়রানি হলে সুরক্ষা দেবে সরকার: তথ্য প্রতিমন্ত্রী আজ সেই ভয়াল ৩ মে! প্রবাসীদের সেবার মান বাড়াতে স্মার্ট কার্ড প্রদান করা হবে – ড. মোমেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের উপস্থিতি হার ৯০ শতাংশ ইবিতে ‘বি’ ইউনিটের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত অবিলম্বে ১০ম ওয়েজবোর্ড গঠন করুন: বিএফইউজে ও ডিইউজে নেতৃবৃন্দ অজ্ঞান করে স্বর্ণ ও টাকা চুরির রহস্য উদঘাটন ও চোরাই মালামালসহ গ্রেফতার ১ কয়েন প্রতারণার ফাঁদে ফেলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া চক্রের দুই সদস্য গ্রেফতার

টঙ্গীর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে বন্দি শিশুদের ‘নরক যন্ত্রণা’

মোঃ হানিফ হোসেন
  • Update Time : ০৫:১৫:৩২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • / ৪৪ Time View

টঙ্গীর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে ধারণক্ষমতার চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি শিশু-কিশোর বন্দি শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য কেনার পর্যাপ্ত টাকা বরাদ্দ নেই। মশার অত্যাচার সহ্য করে তাদের রাতে ঘুমাতে হয় পালাক্রমে। বাথরুম ব্যবহার করতে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় দীর্ঘ সারিতে। এরই মধ্যে যুক্ত হয়েছে গণহারে অসুস্থতা। নেই ডাক্তার-নার্স।

গাজীপুরের টঙ্গীতে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে (বালক) এভাবেই কাটছে প্রায় সাড়ে ৬শ’ শিশু-কিশোরের দিন। ধারণক্ষমতার চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি শিশু-কিশোর নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। এই ‘নরকের’ ভেতরে বন্দি কোনো শিশুর মৃত্যু হলেই ওঠে নানা প্রশ্ন। পরিবার থেকে অভিযোগ করা হয় বন্দি শিশু নির্যাতনে মারা গেছে।

রাজধানীর খিলক্ষেত থানার একটি ডাকাতি মামলায় গ্রেপ্তার ১৬ বছরের কিশোর মারুফ আহমেদের ঠাঁই হয়েছিল টঙ্গীর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে। হঠাৎ করেই কেন্দ্রের ভেতরে অসুস্থ হয়ে পড়ে সে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয় মারুফকে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৪ ফেব্রুয়ারি সকালে তার মৃত্যু হয়।

তার পরিবারের অভিযোগ, শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের নির্যাতনে মারুফের মৃত্যু হয়েছে। গত প্রায় দুই বছর আগে সিহাব নামে এক কিশোরকে কেন্দ্রের ভেতরেই ঘুসি মেরে হত্যা করে অপর কিশোর আলিফ হোসেন রিফাত। আদালতে সে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

গত বছরের শেষের দিকে ছয় বছরের এক শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয় কেন্দ্রের ভেতরে। কেন্দ্রের প্রধান নিরাপত্তাকর্মী আবদুল হাই শিশুটিকে যৌন নির্যাতন করে। কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রায়ই শিশু কিশোরদের সাথে খারাপ আচরণ ও মারধর করে বলেও অভিযোগ রয়েছে। শৈশব বা কৈশোর পার হওয়ার আগেই কেউ কেউ নিজেকে জড়িয়ে ফেলে সামাজিক ও পারিবারিক নানা অপরাধের সঙ্গে। হত্যা, ধর্ষণ, মাদক, চুরি, ছিনতাই মারামারিসহ নানা অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ে এসব শিশু-কিশোররা। এক পর্যায়ে মামলার আসামি হয়ে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর তাদের ঠাঁই হয় শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে। অপরাধী এসব শিশুকে কেন্দ্রের ভেতরে উন্নয়নের কথা থাকলেও বাস্তবতা পুরোটাই ভিন্ন। নামে ‘শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র’ হলেও এটি যেন দিন দিন নরকে পরিণত হয়েছে। কারাগারের চেয়েও ভয়াবহ অবস্থা কেন্দ্রের ভেতর।

সম্প্রতি আদালত থেকে জামিনে উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে বের হওয়া এক শিশু (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানায়, জাহান্নামের চেয়েও ভয়াবহ অবস্থা কেন্দ্রের ভেতর। রাতে পালাক্রমে ঘুমাতে হয়। টয়লেটে যাওয়ার জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। খাবারের জন্যও অপেক্ষা করতে হয় । তার পরও পর্যাপ্ত খাবার পাওয়া যায় না। ক্ষুধা নিয়েই থাকতে হয়। টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের ভিতরে ধারণক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশি শিশু মানবেতর জীবনযাপন করছে। অভিযোগ রয়েছে, শিশুদের পর্যাপ্ত খাবারও দেওয়া হয় না। এমনকি খাবারের মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। প্রত্যেক শিশুর জন্য এক বেলার খাবার খরচ মাত্র ২৯ টাকা। কর্তৃপক্ষ বলছে, খাবারের জন্য জনপ্রতি ১০০ টাকা করে বরাদ্দ। এ টাকা থেকেই রান্নার জ্বালানি খরচ কেটে রাখা হয়। খাদ্য সরবরাহকারী একটা অংশ লাভ নেন এবং সরকারকে ভ্যাটও দিতে হয়। সব মিলিয়ে ২৪ ঘণ্টা খাবারের জন্য মাথা পিছু ৮৮ টাকা থাকে। সেই হিসাবে প্রতি বেলায় ২৯ টাকার করে খাবার দেওয়া হয় তাদের। এই খাবারে পেট ভরে না বলে জানায় জামিনে বের হওয়া ওই শিশু।গাজীপুর জেলা সমাজসেবা কার্যালয় সূত্র জানায়, টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে আসন সংখ্যা ৩শ’। অথচ সেখানে ৬৩২ জন শিশুকে রাখা হয়েছে। ঘরের মেঝেতে গাদাগাদি করে ঘুমাতে হয় তাদের। ডাইনিং রুম ডরমিটরি-১ বন্ধ করে দিয়ে সেখানে রাখা হচ্ছে এসব শিশুকে।
শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক মো: দেলোয়ার হোসেন জানান, শিশুরা কষ্ট করেই থাকছে এ উন্নয়ন কেন্দ্রে। ৩শ’ জনের জায়গায় রয়েছে প্রায় ৬৩২ জন, কষ্ট তো হবেই তিনি বলেন, আরও শতাধিক বন্দি ছিল। তাদের অন্য জায়গায় পাঠানো হয়েছে। জনবল সংকটও তীব্র আকার ধারণ করেছে। ৬৭টি পদ থাকলেও ৩৬টি পদই শূন্য। মাত্র ৩১ জন জনবল নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে এ উন্নয়ন কেন্দ্র। সম্প্রতি এ কেন্দ্রে বন্দি থাকা শিশুরা অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছে। প্রতিদিনই ৪-৫ জনকে হাসপাতালে পাঠাতে হচ্ছে। কোনো ডাক্তার-নার্স না থাকায় প্রাথমিক চিকিৎসা পর্যন্ত দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
গাজীপুর জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক এস এম আনোয়ারুল করিম দৈনিক নওরোজ কে বলেন, বন্দি শিশু-কিশোরদের জন্য খাদ্যের বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য এরই মধ্যে সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। একই সঙ্গে খণ্ডকালীন ডাক্তারের একটি পদ সৃষ্টির জন্য অনুরোধ করেছেন।

Please Share This Post in Your Social Media

টঙ্গীর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে বন্দি শিশুদের ‘নরক যন্ত্রণা’

Update Time : ০৫:১৫:৩২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

টঙ্গীর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে ধারণক্ষমতার চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি শিশু-কিশোর বন্দি শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য কেনার পর্যাপ্ত টাকা বরাদ্দ নেই। মশার অত্যাচার সহ্য করে তাদের রাতে ঘুমাতে হয় পালাক্রমে। বাথরুম ব্যবহার করতে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় দীর্ঘ সারিতে। এরই মধ্যে যুক্ত হয়েছে গণহারে অসুস্থতা। নেই ডাক্তার-নার্স।

গাজীপুরের টঙ্গীতে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে (বালক) এভাবেই কাটছে প্রায় সাড়ে ৬শ’ শিশু-কিশোরের দিন। ধারণক্ষমতার চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি শিশু-কিশোর নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। এই ‘নরকের’ ভেতরে বন্দি কোনো শিশুর মৃত্যু হলেই ওঠে নানা প্রশ্ন। পরিবার থেকে অভিযোগ করা হয় বন্দি শিশু নির্যাতনে মারা গেছে।

রাজধানীর খিলক্ষেত থানার একটি ডাকাতি মামলায় গ্রেপ্তার ১৬ বছরের কিশোর মারুফ আহমেদের ঠাঁই হয়েছিল টঙ্গীর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে। হঠাৎ করেই কেন্দ্রের ভেতরে অসুস্থ হয়ে পড়ে সে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয় মারুফকে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৪ ফেব্রুয়ারি সকালে তার মৃত্যু হয়।

তার পরিবারের অভিযোগ, শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের নির্যাতনে মারুফের মৃত্যু হয়েছে। গত প্রায় দুই বছর আগে সিহাব নামে এক কিশোরকে কেন্দ্রের ভেতরেই ঘুসি মেরে হত্যা করে অপর কিশোর আলিফ হোসেন রিফাত। আদালতে সে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

গত বছরের শেষের দিকে ছয় বছরের এক শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয় কেন্দ্রের ভেতরে। কেন্দ্রের প্রধান নিরাপত্তাকর্মী আবদুল হাই শিশুটিকে যৌন নির্যাতন করে। কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রায়ই শিশু কিশোরদের সাথে খারাপ আচরণ ও মারধর করে বলেও অভিযোগ রয়েছে। শৈশব বা কৈশোর পার হওয়ার আগেই কেউ কেউ নিজেকে জড়িয়ে ফেলে সামাজিক ও পারিবারিক নানা অপরাধের সঙ্গে। হত্যা, ধর্ষণ, মাদক, চুরি, ছিনতাই মারামারিসহ নানা অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ে এসব শিশু-কিশোররা। এক পর্যায়ে মামলার আসামি হয়ে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর তাদের ঠাঁই হয় শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে। অপরাধী এসব শিশুকে কেন্দ্রের ভেতরে উন্নয়নের কথা থাকলেও বাস্তবতা পুরোটাই ভিন্ন। নামে ‘শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র’ হলেও এটি যেন দিন দিন নরকে পরিণত হয়েছে। কারাগারের চেয়েও ভয়াবহ অবস্থা কেন্দ্রের ভেতর।

সম্প্রতি আদালত থেকে জামিনে উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে বের হওয়া এক শিশু (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানায়, জাহান্নামের চেয়েও ভয়াবহ অবস্থা কেন্দ্রের ভেতর। রাতে পালাক্রমে ঘুমাতে হয়। টয়লেটে যাওয়ার জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। খাবারের জন্যও অপেক্ষা করতে হয় । তার পরও পর্যাপ্ত খাবার পাওয়া যায় না। ক্ষুধা নিয়েই থাকতে হয়। টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের ভিতরে ধারণক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশি শিশু মানবেতর জীবনযাপন করছে। অভিযোগ রয়েছে, শিশুদের পর্যাপ্ত খাবারও দেওয়া হয় না। এমনকি খাবারের মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। প্রত্যেক শিশুর জন্য এক বেলার খাবার খরচ মাত্র ২৯ টাকা। কর্তৃপক্ষ বলছে, খাবারের জন্য জনপ্রতি ১০০ টাকা করে বরাদ্দ। এ টাকা থেকেই রান্নার জ্বালানি খরচ কেটে রাখা হয়। খাদ্য সরবরাহকারী একটা অংশ লাভ নেন এবং সরকারকে ভ্যাটও দিতে হয়। সব মিলিয়ে ২৪ ঘণ্টা খাবারের জন্য মাথা পিছু ৮৮ টাকা থাকে। সেই হিসাবে প্রতি বেলায় ২৯ টাকার করে খাবার দেওয়া হয় তাদের। এই খাবারে পেট ভরে না বলে জানায় জামিনে বের হওয়া ওই শিশু।গাজীপুর জেলা সমাজসেবা কার্যালয় সূত্র জানায়, টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে আসন সংখ্যা ৩শ’। অথচ সেখানে ৬৩২ জন শিশুকে রাখা হয়েছে। ঘরের মেঝেতে গাদাগাদি করে ঘুমাতে হয় তাদের। ডাইনিং রুম ডরমিটরি-১ বন্ধ করে দিয়ে সেখানে রাখা হচ্ছে এসব শিশুকে।
শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক মো: দেলোয়ার হোসেন জানান, শিশুরা কষ্ট করেই থাকছে এ উন্নয়ন কেন্দ্রে। ৩শ’ জনের জায়গায় রয়েছে প্রায় ৬৩২ জন, কষ্ট তো হবেই তিনি বলেন, আরও শতাধিক বন্দি ছিল। তাদের অন্য জায়গায় পাঠানো হয়েছে। জনবল সংকটও তীব্র আকার ধারণ করেছে। ৬৭টি পদ থাকলেও ৩৬টি পদই শূন্য। মাত্র ৩১ জন জনবল নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে এ উন্নয়ন কেন্দ্র। সম্প্রতি এ কেন্দ্রে বন্দি থাকা শিশুরা অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছে। প্রতিদিনই ৪-৫ জনকে হাসপাতালে পাঠাতে হচ্ছে। কোনো ডাক্তার-নার্স না থাকায় প্রাথমিক চিকিৎসা পর্যন্ত দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
গাজীপুর জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক এস এম আনোয়ারুল করিম দৈনিক নওরোজ কে বলেন, বন্দি শিশু-কিশোরদের জন্য খাদ্যের বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য এরই মধ্যে সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। একই সঙ্গে খণ্ডকালীন ডাক্তারের একটি পদ সৃষ্টির জন্য অনুরোধ করেছেন।