ঢাকা ০৭:৪৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
জাতীয় কৃষি প্রশিক্ষণ একাডেমি (নাটা) তে “ইনোভেশন শোকেসিং” আয়োজন টঙ্গীতে বিনিয়োগকৃত অর্থ আদায়ের দাবীতে সংবাদ সম্মেলন পরিবেশ ও উন্নয়ন সাংবাদিকতায় হয়রানি হলে সুরক্ষা দেবে সরকার: তথ্য প্রতিমন্ত্রী আজ সেই ভয়াল ৩ মে! প্রবাসীদের সেবার মান বাড়াতে স্মার্ট কার্ড প্রদান করা হবে – ড. মোমেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের উপস্থিতি হার ৯০ শতাংশ ইবিতে ‘বি’ ইউনিটের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত অবিলম্বে ১০ম ওয়েজবোর্ড গঠন করুন: বিএফইউজে ও ডিইউজে নেতৃবৃন্দ অজ্ঞান করে স্বর্ণ ও টাকা চুরির রহস্য উদঘাটন ও চোরাই মালামালসহ গ্রেফতার ১ কয়েন প্রতারণার ফাঁদে ফেলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া চক্রের দুই সদস্য গ্রেফতার
স্বামীকে আটকে স্ত্রীকে গণধর্ষণ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে মাদকের ‘হটজোন’ বানিয়েছিলেন মামুন

শরিফুল হক পাভেল
  • Update Time : ০৪:২৪:৩০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • / ৫৩ Time View

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) এক দম্পতিকে ডেকে এনে স্বামীকে আবাসিক হলে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে ওই দম্পতির পূর্বপরিচিত মামুনুর রশিদ মামুনকে চিহ্নিত করেছে র‌্যাব।

র‌্যাব জানায়, বহিরাগত হলেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিয়মিত যাতায়াত ছিল মামুনের। মাদক কারবারি মামুন কক্সবাজার থেকে ইয়াবা এনে বিক্রি করতেন। তার ইয়াবা বিক্রির হটজোন জাবি ক্যাম্পাস, বিশেষ করে বটতলা।

মাদককারবারি মামুন নিয়মিত কক্সবাজার থেকে দুই থেকে আড়াই হাজার পিস ইয়াবা এনে বিক্রি করতেন জাবি ক্যাম্পাসে।

ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আসামি মামুন ও মুরাদকে গ্রেপ্তারের পর এসব জানিয়েছে র‌্যাব। মামুনকে রাজধানীর ফার্মগেট থেকে এবং মুরাদকে নওগাঁ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, মামুন ২০১৭ সাল থেকে জাবি ক্যাম্পাসের সিনিয়র প্রভাবশালী শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় ক্যাম্পাসে মাদক কারবার করে আসছেন। ক্যাম্পাসে আগেও নারী নিপীড়ন, ধর্ষণসহ শ্লীনতাহানির ঘটনায় জড়িয়েছে সে।

কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেপ্তার মামুন প্রায় ৬/৭ বছর যাবত মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। মামুন কক্সবাজারের টেকনাফ হতে প্রতি মাসে কয়েক দফায় প্রায় ৭/৮ হাজার ইয়াবা সংগ্রহ করে তা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশেপাশের এলাকায় বিক্রি করতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশকিছু মাদকসেবী শিক্ষার্থীকে ইয়াবা সরবরাহ করতেন তিনি।

এছাড়াও গ্রেপ্তার মামুন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মাদক বিক্রির সুবাদে মামলার ১নং আসামি সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাফিজুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র ছাত্রদের সঙ্গে সখ্য তৈরি হয় এবং মাঝে মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে মাদকসহ রাত্রিযাপন করতেন এবং অন্যান্য ছাত্রদের সঙ্গে মাদক সেবন করতেন বলে জানায়।

তিনি বলেন, মামুন জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, গ্রেপ্তার মামুনের সঙ্গে ভুক্তভোগীর স্বামীর একই এলাকায় বসবাসের কারণে বিগত ৩/৪ বছর পূর্বে তাদের মধ্যে পরিচয় হয়। পরিচয়ের সুবাদে মামুন মাঝেমধ্যে ভুক্তভোগীর স্বামীর মাধ্যমেও বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশেপাশের এলাকায় মাদক সরবরাহ করতেন বলে দাবি মামুনের।

কমান্ডার মঈন বলেন, বেশিদিন একস্থানে থাকতেন না মামুন। মাদক কারবারের কারণে কিছুদিন পূর্বে গ্রেপ্তার হওয়ায় তার থাকার জায়গার সমস্যা সৃষ্টি হয়। তখন তিনি ভুক্তভোগীর স্বামীকে ফোন দিয়ে কিছুদিনের জন্য তাদের বাসায় অবস্থান করবে বলে জানায়। গ্রেপ্তার মামুন ভুক্তভোগীর ভাড়া বাসায় সাবলেট হিসেবে প্রায় ৩/৪ মাস অবস্থান করায় তাদের মধ্যে সখ্য তৈরি হয়।

৩ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের পাশের জঙ্গলে এ ধর্ষণের ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর এ নিয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।

ঘটনার পরদিনই বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাফিজুর রহমান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হাসান প্রান্ত, ৪৬তম ব্যাচের সাগর সিদ্দিকী এবং উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের সাব্বির হাসানকে আটকের কথা জানায় সাভার ও আশুলিয়া থানা পুলিশ। আশুলিয়া থানায় মামলাও করেন ওই নারীর স্বামী।

উল্লেখ্য ,পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে মামুন ওই তরুণীর স্বামীকে ফোন করে বলেন— মোস্তাফিজুর রহমান নামে এক বড় ভাই বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে তার থাকার ব্যবস্থা করেছেন। ওই বড় ভাইয়ের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার জন্য তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে বলেন মামুন। মামুনের কথা মতো সন্ধ্যার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের ৩১৭ নম্বর কক্ষে দেখা করেন তিনি। সেখানে মামলার অন্য আসামি মুরাদ, সাব্বির হাসান, সাগর সিদ্দিক ও হাসানুজ্জামানের সাথেও পরিচিত হন তিনি।

মামুন এরপর কৌশলে ভুক্তভোগীর স্বামীকে বলেন, বাসায় থেকে যাওয়া তার (মামুন) কাপড়গুলো তার স্ত্রী যেন একটি ব্যাগে করে মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনে নিয়ে আসেন। এরপর রাত ৯টার দিকে মামুনের ব্যবহৃত কাপড় নিয়ে হলের সামনে উপস্থিত হন ওই তরুণী। এ সময় মামুন ও মোস্তাফিজ মুরাদকে বলেন, ওই তরুণীর স্বামীকে ৩১৭ নম্বর রুমে নিয়ে যেতে।

এই সুযোগে ভুক্তভোগী তরুণীকে হলের পাশে নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হয় ও ভয়ভীতি দেখিয়ে বাসায় চলে যেতে বলে। পরে মামুন ও মোস্তাফিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের রুমে গিয়ে তার স্বামীকে বাসায় চলে যেতে বলে।

বাসায় গিয়ে স্ত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনা জানতে পেরে থানায় গিয়ে মামলা দায়ের করেন তিনি।

ঘটনার পূর্বে মামলার ১ নম্বর আসামি মোস্তাফিজুর গ্রেপ্তার মামুনের কাছে অনৈতিক কাজের ইচ্ছা পোষণ করলে পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক মামুন গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ভুক্তভোগীর স্বামীকে ফোন দিয়ে জানায় মোস্তাফিজুর রহমান নামের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বড় ভাই বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে তার থাকার ব্যবস্থা করেছেন বিধায় তিনি এখন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় হলে থাকবেন। তাই মোস্তাফিজের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে আসতে বলেন মামুন।

মামুনের কথামতো ওই দিন সন্ধ্যার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের ৩১৭ নম্বর কক্ষে দেখা করে জাহিদ। পরবর্তীতে ভুক্তভোগীর স্বামী জাহিদকে গ্রেপ্তার মামুন তার অন্যতম সহযোগী মোস্তাফিজ, মুরাদ, সাব্বির, সাগর সিদ্দিক ও হাসানুজ্জামানের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।

গ্রেপ্তার মামুন কৌশলে ভুক্তভোগীর স্বামীকে তাদের বাসায় থাকাকালীন তার ব্যবহৃত কাপড় আনতে তার স্ত্রীকে (ভিকটিম) ফোন দিতে বলে। মামুনের কথায় জাহিদ ফোন করলে রাত ৯টার দিকে মামুনের ব্যবহৃত কাপড়সমূহ একটি ব্যাগে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনে উপস্থিত হয়।

ওই সময় পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক গ্রেপ্তার মামুন ও মামলার ১নং আসামি মোস্তাফিজ কৌশলে গ্রেপ্তার মুরাদকে ভিকটিমের স্বামী ও গ্রেপ্তারকৃত মামুনের ব্যবহৃত কাপড়ের ব্যাগসহ হলের ৩১৭নং রুমে নিয়ে যেতে বলে। গ্রেপ্তার মুরাদ ভুক্তভোগীর স্বামীকে নিয়ে হলের রুমে অবস্থান করে।

এসময় গ্রেপ্তার মামুন ও মামলার ১ নম্বর আসামি মোস্তাফিজ ভিকটিমকে কৌশলে হলের পাশে নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে পর্যায়ক্রমে গণধর্ষণ করে। পরে ভয়ভীতি দেখিয়ে বাসায় চলে যেতে বলে। গ্রেপ্তার মামুন ও মোস্তাফিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের রুমে গিয়ে স্বামী জাহিদকেও বাসায় চলে যেতে বলে।

স্বামী ভুক্তভোগী স্ত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনা জানতে পেরে থানায় গিয়ে মামলা দায়ের করে। ঘটনা জানাজানি হলে মামুন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার এড়াতে রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় আত্মগোপন করেন।

গ্রেপ্তার মুরাদ গণধর্ষণের বিষয়টি ঘটনার সময় না জানলেও থানায় মামলা হওয়ার পর সেও পালিয়ে নওগাঁ এলাকায় আত্মগোপন করে। পরবর্তীতে উভয়ে আত্মগোপনে থাকাকালীন সময় র‌্যাব কর্তৃক গ্রেপ্তার হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের বরাতে কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেপ্তার মামুন প্রায় ২০ বছর পূর্বে ঢাকার জুরাইন এলাকায় এসে গার্মেন্টস কর্মী হিসেবে চাকরি করেন। পরবর্তীতে তিনি আশুলিয়া এলাকায় এসে গার্মেন্টসের চাকরি পাশাপাশি মাদক ব্যবসায় জড়িত হন।

পরবর্তীতে তিনি গার্মেন্টসের চাকরি ছেড়ে দিয়ে ২০১৭ সাল থেকে পুরোপুরি মাদক ব্যবসায় জড়ান। তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় মাদক সংক্রান্তে ৮টি মামলা রয়েছে এবং ইতিপূর্বে এসকল মামলায় একাধিক বার কারাভোগ করেছে বলে জানা যায়।

গ্রেপ্তার মুরাদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকতেন। তার বিরুদ্ধে নওগাঁ থানায় মারামারি সংক্রান্ত ১টি জিডি রয়েছে বলে জানা যায় । ৩১৭ নম্বর কক্ষে তার নামে বরাদ্দ হলেও থাকতেন অন্য রুমে।

মামুন, মুরাদসহ ধর্ষণকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানান র‌্যাব কর্মকর্তা।

Please Share This Post in Your Social Media

স্বামীকে আটকে স্ত্রীকে গণধর্ষণ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে মাদকের ‘হটজোন’ বানিয়েছিলেন মামুন

Update Time : ০৪:২৪:৩০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) এক দম্পতিকে ডেকে এনে স্বামীকে আবাসিক হলে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে ওই দম্পতির পূর্বপরিচিত মামুনুর রশিদ মামুনকে চিহ্নিত করেছে র‌্যাব।

র‌্যাব জানায়, বহিরাগত হলেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিয়মিত যাতায়াত ছিল মামুনের। মাদক কারবারি মামুন কক্সবাজার থেকে ইয়াবা এনে বিক্রি করতেন। তার ইয়াবা বিক্রির হটজোন জাবি ক্যাম্পাস, বিশেষ করে বটতলা।

মাদককারবারি মামুন নিয়মিত কক্সবাজার থেকে দুই থেকে আড়াই হাজার পিস ইয়াবা এনে বিক্রি করতেন জাবি ক্যাম্পাসে।

ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আসামি মামুন ও মুরাদকে গ্রেপ্তারের পর এসব জানিয়েছে র‌্যাব। মামুনকে রাজধানীর ফার্মগেট থেকে এবং মুরাদকে নওগাঁ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, মামুন ২০১৭ সাল থেকে জাবি ক্যাম্পাসের সিনিয়র প্রভাবশালী শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় ক্যাম্পাসে মাদক কারবার করে আসছেন। ক্যাম্পাসে আগেও নারী নিপীড়ন, ধর্ষণসহ শ্লীনতাহানির ঘটনায় জড়িয়েছে সে।

কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেপ্তার মামুন প্রায় ৬/৭ বছর যাবত মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। মামুন কক্সবাজারের টেকনাফ হতে প্রতি মাসে কয়েক দফায় প্রায় ৭/৮ হাজার ইয়াবা সংগ্রহ করে তা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশেপাশের এলাকায় বিক্রি করতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশকিছু মাদকসেবী শিক্ষার্থীকে ইয়াবা সরবরাহ করতেন তিনি।

এছাড়াও গ্রেপ্তার মামুন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মাদক বিক্রির সুবাদে মামলার ১নং আসামি সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাফিজুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র ছাত্রদের সঙ্গে সখ্য তৈরি হয় এবং মাঝে মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে মাদকসহ রাত্রিযাপন করতেন এবং অন্যান্য ছাত্রদের সঙ্গে মাদক সেবন করতেন বলে জানায়।

তিনি বলেন, মামুন জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, গ্রেপ্তার মামুনের সঙ্গে ভুক্তভোগীর স্বামীর একই এলাকায় বসবাসের কারণে বিগত ৩/৪ বছর পূর্বে তাদের মধ্যে পরিচয় হয়। পরিচয়ের সুবাদে মামুন মাঝেমধ্যে ভুক্তভোগীর স্বামীর মাধ্যমেও বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশেপাশের এলাকায় মাদক সরবরাহ করতেন বলে দাবি মামুনের।

কমান্ডার মঈন বলেন, বেশিদিন একস্থানে থাকতেন না মামুন। মাদক কারবারের কারণে কিছুদিন পূর্বে গ্রেপ্তার হওয়ায় তার থাকার জায়গার সমস্যা সৃষ্টি হয়। তখন তিনি ভুক্তভোগীর স্বামীকে ফোন দিয়ে কিছুদিনের জন্য তাদের বাসায় অবস্থান করবে বলে জানায়। গ্রেপ্তার মামুন ভুক্তভোগীর ভাড়া বাসায় সাবলেট হিসেবে প্রায় ৩/৪ মাস অবস্থান করায় তাদের মধ্যে সখ্য তৈরি হয়।

৩ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের পাশের জঙ্গলে এ ধর্ষণের ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর এ নিয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।

ঘটনার পরদিনই বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাফিজুর রহমান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হাসান প্রান্ত, ৪৬তম ব্যাচের সাগর সিদ্দিকী এবং উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের সাব্বির হাসানকে আটকের কথা জানায় সাভার ও আশুলিয়া থানা পুলিশ। আশুলিয়া থানায় মামলাও করেন ওই নারীর স্বামী।

উল্লেখ্য ,পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে মামুন ওই তরুণীর স্বামীকে ফোন করে বলেন— মোস্তাফিজুর রহমান নামে এক বড় ভাই বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে তার থাকার ব্যবস্থা করেছেন। ওই বড় ভাইয়ের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার জন্য তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে বলেন মামুন। মামুনের কথা মতো সন্ধ্যার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের ৩১৭ নম্বর কক্ষে দেখা করেন তিনি। সেখানে মামলার অন্য আসামি মুরাদ, সাব্বির হাসান, সাগর সিদ্দিক ও হাসানুজ্জামানের সাথেও পরিচিত হন তিনি।

মামুন এরপর কৌশলে ভুক্তভোগীর স্বামীকে বলেন, বাসায় থেকে যাওয়া তার (মামুন) কাপড়গুলো তার স্ত্রী যেন একটি ব্যাগে করে মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনে নিয়ে আসেন। এরপর রাত ৯টার দিকে মামুনের ব্যবহৃত কাপড় নিয়ে হলের সামনে উপস্থিত হন ওই তরুণী। এ সময় মামুন ও মোস্তাফিজ মুরাদকে বলেন, ওই তরুণীর স্বামীকে ৩১৭ নম্বর রুমে নিয়ে যেতে।

এই সুযোগে ভুক্তভোগী তরুণীকে হলের পাশে নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হয় ও ভয়ভীতি দেখিয়ে বাসায় চলে যেতে বলে। পরে মামুন ও মোস্তাফিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের রুমে গিয়ে তার স্বামীকে বাসায় চলে যেতে বলে।

বাসায় গিয়ে স্ত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনা জানতে পেরে থানায় গিয়ে মামলা দায়ের করেন তিনি।

ঘটনার পূর্বে মামলার ১ নম্বর আসামি মোস্তাফিজুর গ্রেপ্তার মামুনের কাছে অনৈতিক কাজের ইচ্ছা পোষণ করলে পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক মামুন গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ভুক্তভোগীর স্বামীকে ফোন দিয়ে জানায় মোস্তাফিজুর রহমান নামের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বড় ভাই বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে তার থাকার ব্যবস্থা করেছেন বিধায় তিনি এখন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় হলে থাকবেন। তাই মোস্তাফিজের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে আসতে বলেন মামুন।

মামুনের কথামতো ওই দিন সন্ধ্যার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের ৩১৭ নম্বর কক্ষে দেখা করে জাহিদ। পরবর্তীতে ভুক্তভোগীর স্বামী জাহিদকে গ্রেপ্তার মামুন তার অন্যতম সহযোগী মোস্তাফিজ, মুরাদ, সাব্বির, সাগর সিদ্দিক ও হাসানুজ্জামানের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।

গ্রেপ্তার মামুন কৌশলে ভুক্তভোগীর স্বামীকে তাদের বাসায় থাকাকালীন তার ব্যবহৃত কাপড় আনতে তার স্ত্রীকে (ভিকটিম) ফোন দিতে বলে। মামুনের কথায় জাহিদ ফোন করলে রাত ৯টার দিকে মামুনের ব্যবহৃত কাপড়সমূহ একটি ব্যাগে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনে উপস্থিত হয়।

ওই সময় পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক গ্রেপ্তার মামুন ও মামলার ১নং আসামি মোস্তাফিজ কৌশলে গ্রেপ্তার মুরাদকে ভিকটিমের স্বামী ও গ্রেপ্তারকৃত মামুনের ব্যবহৃত কাপড়ের ব্যাগসহ হলের ৩১৭নং রুমে নিয়ে যেতে বলে। গ্রেপ্তার মুরাদ ভুক্তভোগীর স্বামীকে নিয়ে হলের রুমে অবস্থান করে।

এসময় গ্রেপ্তার মামুন ও মামলার ১ নম্বর আসামি মোস্তাফিজ ভিকটিমকে কৌশলে হলের পাশে নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে পর্যায়ক্রমে গণধর্ষণ করে। পরে ভয়ভীতি দেখিয়ে বাসায় চলে যেতে বলে। গ্রেপ্তার মামুন ও মোস্তাফিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের রুমে গিয়ে স্বামী জাহিদকেও বাসায় চলে যেতে বলে।

স্বামী ভুক্তভোগী স্ত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনা জানতে পেরে থানায় গিয়ে মামলা দায়ের করে। ঘটনা জানাজানি হলে মামুন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার এড়াতে রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় আত্মগোপন করেন।

গ্রেপ্তার মুরাদ গণধর্ষণের বিষয়টি ঘটনার সময় না জানলেও থানায় মামলা হওয়ার পর সেও পালিয়ে নওগাঁ এলাকায় আত্মগোপন করে। পরবর্তীতে উভয়ে আত্মগোপনে থাকাকালীন সময় র‌্যাব কর্তৃক গ্রেপ্তার হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের বরাতে কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেপ্তার মামুন প্রায় ২০ বছর পূর্বে ঢাকার জুরাইন এলাকায় এসে গার্মেন্টস কর্মী হিসেবে চাকরি করেন। পরবর্তীতে তিনি আশুলিয়া এলাকায় এসে গার্মেন্টসের চাকরি পাশাপাশি মাদক ব্যবসায় জড়িত হন।

পরবর্তীতে তিনি গার্মেন্টসের চাকরি ছেড়ে দিয়ে ২০১৭ সাল থেকে পুরোপুরি মাদক ব্যবসায় জড়ান। তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় মাদক সংক্রান্তে ৮টি মামলা রয়েছে এবং ইতিপূর্বে এসকল মামলায় একাধিক বার কারাভোগ করেছে বলে জানা যায়।

গ্রেপ্তার মুরাদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকতেন। তার বিরুদ্ধে নওগাঁ থানায় মারামারি সংক্রান্ত ১টি জিডি রয়েছে বলে জানা যায় । ৩১৭ নম্বর কক্ষে তার নামে বরাদ্দ হলেও থাকতেন অন্য রুমে।

মামুন, মুরাদসহ ধর্ষণকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানান র‌্যাব কর্মকর্তা।