ঢাকা ০৬:৩৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ

ছয় বছর আত্মগোপনে থাকা মোঃ ইদ্রিস আলী মোল্যাকে উদ্ধার করল পিবিআই

আরিফুল হক নভেল
  • Update Time : ১১:২৩:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • / ৫৪ Time View

মোঃ ইদ্রিস আলী মোল্যা (২৩), পিং-মো: রফিকুল ইসলাম, সাং-সারুটিয়া, থানা-কেশবপুর, জেলা-যশোর গত ২০১৮ সালে এস এস সি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে অকৃতকার্য হলে তার বাবা তাকে বকাঝকা করে। তখন ভিকটিম মো: ইদ্রিস আলী মোল্যা তার বাবা-মা উপর রাগ করে কাউকে কিছু না জানিয়ে বাড়ি থেকে চলে যায়। অনুমান ২০১৯ সালে ভিকটিম তার পরিবারের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করেন এবং সে নারায়নগঞ্জ থাকেন মর্মে জানান। ভিকটিম বছরে ২/১ বার বিভিন্ন নম্বর থেকে তার বাবা-মাকে ফোন দিত, দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও ভিকটিম তার বাবা-মা, ভাই-বোন বা আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সাক্ষাত না করায় তারা সবাই উদ্বিগ্ন উৎকন্ঠায় থাকতেন।

এমতাবস্থায় গত ৩০/০৬/২০২৩ তারিখ সকাল ১০.৪৬ ঘটিকায় ভিকটিম ইদ্রিস আলী তার ছোট ভাই এর মোবাইল নম্বরে ফোন করে জানায় সে নারায়ণগঞ্জ থেকে বাড়িতে আসতেছে। ভিকটিমের পরিবারের সদস্যরা তাকে রিসিভ করার জন্য মোহনপুর, কেশবপুর বাসস্টান্ডে অপেক্ষা করতে থাকেন কিন্তু দুপুর গড়িয়ে বিকাল হলেও ভিকটিম আর আসে না।

গত ০৪/০৭/২০২৩ তারিখে অজ্ঞাত মোবাইল নম্বর থেকে ভিকটিমের ভাইয়ের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে ফোন করে অজ্ঞাত ব্যক্তি জানায় ইদ্রিস আলীকে খোঁজাখুজির দরকার নাই, সে ভালো আছে, তার সাথে কথা বলতে হলে ২,০০,০০০/- (দুই লক্ষ) টাকা দিতে হবে। পরবর্তীতে গত ১৩/০৭/২০২৩ তারিখে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি ইদ্রিস আলীর ব্যবহৃত ‘‘স্পন্দিত চাদর’’ নামের ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে পুনরায় জানায় ২,০০,০০০/- (দুই লক্ষ) টাকা দিলে ইদ্রিস আলীকে ছেড়ে দেওয়া হবে। তখন তার পরিবারের লোকজন তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার সকল মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।

এমতাবস্থায় ভিকটিমের পরিবারের লোকজন তাদের সন্তানকে উদ্ধারের জন্য পুলিশ সুপার, পিবিআই, যশোর বরাবরে আবেদন করলে পিবিআই যশোর জেলা বিষয়টি আমলে নিয়ে ছায়া তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে। তখন ভিকটিমের পরিবার ভিকটিমকে উদ্ধারের জন্য বিজ্ঞ আদালতে মামলা দায়ের করেন। বিজ্ঞ আদালতের আদেশে মামলাটি পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন পিপিএম-সেবা, পিবিআই যশোর প্রাপ্ত হয়ে মামলাটি তদন্ত করার জন্য এসআই (নিঃ) সৈয়দ রবিউল আলম পলাশ কে নির্দেশ প্রদান করেন। ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটি নারায়নগঞ্জে গত ৩০/০৬/২০২৩ খ্রিঃ তারিখেই ব্যবহার হয়েছিল এরপর আর ব্যবহার হয় নাই।

মামলাটির তদন্তকারী অফিসার নারায়নগঞ্জে ভিকটিম যাদের সাথে চলাফেরা করত তাদের সনাক্ত করেন এবং বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে ভিকটিম মো: ইদ্রিস আলী মোল্যার অবস্থান সনাক্ত করেন। পরবর্তীতে গত ০৬/০২/২০২৪ খ্রিস্টাব্দে নারায়ণগঞ্জ জেলার রুপগঞ্জ থানাধীন প্রিমিয়ার ষ্টীল মিল (চ.ঝ.জ.গ) থেকে ভিকটিমকে উদ্ধারপূর্বক জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করার নিমিত্তে গত ০৭/০২/২০২৪ খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞ আদালতে উপস্থাপন করা হলে ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১৬৪ ধারা মোতাবেক জবানবন্দি প্রদান করেন।

মামলাটি তদন্তকালে তদন্তকারী কর্মকর্তা জানতে পারেন, ভিকটিম ইদ্রিস আলী এসএসসি পরীক্ষায় আশানুরুপ ফলাফল না করায় তার বাবা-মা ও পরিবারের অন্য সদস্যরা তার বকাঝকা করে। রাগে ক্ষোভে মনোকষ্টে ইদ্রিস আলী নিজে থেকেই বাড়ি থেকে চলে যায়। সে নিজে নারায়ণগঞ্জে আত্মগোপনে ছিল এবং সেখানে তার পরিচয় গোপন করার জন্য তার প্রকৃত নাম ঠিকানা গোপন করে হুসাইন নামে পরিচয় দেয়। তাকে কেউ অপহরণ করেনি বা মুক্তিপণ চায়নি। পরিবারের প্রতি রাগে ক্ষোভে মো: ইদ্রিস আলী নিজেই তার ভাইকে ফোন করে বাড়ি আসার নাটক সাজিয়েছিল। তবে বর্তমানে মো: ইদ্রিস আলী তার বাবা-মা অর্থাৎ পরিবারের সাথে থাকার ইচ্ছা পোষন করে। সে এখন তার পিতা-মাতার সাথে নিজ বাড়িতে অবস্থান করছে।

Please Share This Post in Your Social Media

ছয় বছর আত্মগোপনে থাকা মোঃ ইদ্রিস আলী মোল্যাকে উদ্ধার করল পিবিআই

Update Time : ১১:২৩:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

মোঃ ইদ্রিস আলী মোল্যা (২৩), পিং-মো: রফিকুল ইসলাম, সাং-সারুটিয়া, থানা-কেশবপুর, জেলা-যশোর গত ২০১৮ সালে এস এস সি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে অকৃতকার্য হলে তার বাবা তাকে বকাঝকা করে। তখন ভিকটিম মো: ইদ্রিস আলী মোল্যা তার বাবা-মা উপর রাগ করে কাউকে কিছু না জানিয়ে বাড়ি থেকে চলে যায়। অনুমান ২০১৯ সালে ভিকটিম তার পরিবারের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করেন এবং সে নারায়নগঞ্জ থাকেন মর্মে জানান। ভিকটিম বছরে ২/১ বার বিভিন্ন নম্বর থেকে তার বাবা-মাকে ফোন দিত, দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও ভিকটিম তার বাবা-মা, ভাই-বোন বা আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সাক্ষাত না করায় তারা সবাই উদ্বিগ্ন উৎকন্ঠায় থাকতেন।

এমতাবস্থায় গত ৩০/০৬/২০২৩ তারিখ সকাল ১০.৪৬ ঘটিকায় ভিকটিম ইদ্রিস আলী তার ছোট ভাই এর মোবাইল নম্বরে ফোন করে জানায় সে নারায়ণগঞ্জ থেকে বাড়িতে আসতেছে। ভিকটিমের পরিবারের সদস্যরা তাকে রিসিভ করার জন্য মোহনপুর, কেশবপুর বাসস্টান্ডে অপেক্ষা করতে থাকেন কিন্তু দুপুর গড়িয়ে বিকাল হলেও ভিকটিম আর আসে না।

গত ০৪/০৭/২০২৩ তারিখে অজ্ঞাত মোবাইল নম্বর থেকে ভিকটিমের ভাইয়ের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে ফোন করে অজ্ঞাত ব্যক্তি জানায় ইদ্রিস আলীকে খোঁজাখুজির দরকার নাই, সে ভালো আছে, তার সাথে কথা বলতে হলে ২,০০,০০০/- (দুই লক্ষ) টাকা দিতে হবে। পরবর্তীতে গত ১৩/০৭/২০২৩ তারিখে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি ইদ্রিস আলীর ব্যবহৃত ‘‘স্পন্দিত চাদর’’ নামের ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে পুনরায় জানায় ২,০০,০০০/- (দুই লক্ষ) টাকা দিলে ইদ্রিস আলীকে ছেড়ে দেওয়া হবে। তখন তার পরিবারের লোকজন তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার সকল মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।

এমতাবস্থায় ভিকটিমের পরিবারের লোকজন তাদের সন্তানকে উদ্ধারের জন্য পুলিশ সুপার, পিবিআই, যশোর বরাবরে আবেদন করলে পিবিআই যশোর জেলা বিষয়টি আমলে নিয়ে ছায়া তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে। তখন ভিকটিমের পরিবার ভিকটিমকে উদ্ধারের জন্য বিজ্ঞ আদালতে মামলা দায়ের করেন। বিজ্ঞ আদালতের আদেশে মামলাটি পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন পিপিএম-সেবা, পিবিআই যশোর প্রাপ্ত হয়ে মামলাটি তদন্ত করার জন্য এসআই (নিঃ) সৈয়দ রবিউল আলম পলাশ কে নির্দেশ প্রদান করেন। ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটি নারায়নগঞ্জে গত ৩০/০৬/২০২৩ খ্রিঃ তারিখেই ব্যবহার হয়েছিল এরপর আর ব্যবহার হয় নাই।

মামলাটির তদন্তকারী অফিসার নারায়নগঞ্জে ভিকটিম যাদের সাথে চলাফেরা করত তাদের সনাক্ত করেন এবং বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে ভিকটিম মো: ইদ্রিস আলী মোল্যার অবস্থান সনাক্ত করেন। পরবর্তীতে গত ০৬/০২/২০২৪ খ্রিস্টাব্দে নারায়ণগঞ্জ জেলার রুপগঞ্জ থানাধীন প্রিমিয়ার ষ্টীল মিল (চ.ঝ.জ.গ) থেকে ভিকটিমকে উদ্ধারপূর্বক জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করার নিমিত্তে গত ০৭/০২/২০২৪ খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞ আদালতে উপস্থাপন করা হলে ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১৬৪ ধারা মোতাবেক জবানবন্দি প্রদান করেন।

মামলাটি তদন্তকালে তদন্তকারী কর্মকর্তা জানতে পারেন, ভিকটিম ইদ্রিস আলী এসএসসি পরীক্ষায় আশানুরুপ ফলাফল না করায় তার বাবা-মা ও পরিবারের অন্য সদস্যরা তার বকাঝকা করে। রাগে ক্ষোভে মনোকষ্টে ইদ্রিস আলী নিজে থেকেই বাড়ি থেকে চলে যায়। সে নিজে নারায়ণগঞ্জে আত্মগোপনে ছিল এবং সেখানে তার পরিচয় গোপন করার জন্য তার প্রকৃত নাম ঠিকানা গোপন করে হুসাইন নামে পরিচয় দেয়। তাকে কেউ অপহরণ করেনি বা মুক্তিপণ চায়নি। পরিবারের প্রতি রাগে ক্ষোভে মো: ইদ্রিস আলী নিজেই তার ভাইকে ফোন করে বাড়ি আসার নাটক সাজিয়েছিল। তবে বর্তমানে মো: ইদ্রিস আলী তার বাবা-মা অর্থাৎ পরিবারের সাথে থাকার ইচ্ছা পোষন করে। সে এখন তার পিতা-মাতার সাথে নিজ বাড়িতে অবস্থান করছে।