ঢাকা ০৬:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মহাদেবপুরে আরো এক নারীর গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার

কাজী সাঈদ টিটো, নওগাঁ
  • Update Time : ০৬:১৫:৩৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • / ৬৪ Time View

নওগাঁর মহাদেবপুর থানা পুলিশ নারগিস বেগম (৪৫) নামে প্রয়াত এক পুলিশ কর্মকর্তার মেয়ের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করেছে। তিনি উপাজেলা সদরের মডেল স্কুল মোড়ের মৃত পুলিশ কর্মকর্তা নাসির উদ্দিনের মেয়ে। তাদের গ্রামের বাড়ি উপজেলার চেরাগপুর ইউনিয়নের চকদৌলত গ্রামে। স্বামী পরিত্যক্তা ও নি:সন্তান নারগিস বেগম দীর্ঘদিন ধরে মডেল স্কুল মোড়ের বাড়িতে তার মায়ের সাথে বসবাস করে আসছিলেন।

থানা পুলিশ মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে তার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নওগাঁ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

নিহতের ভাই উপজেলার আখেড়া গ্রামের শিল্পপতি ওসমান আলীর জামাই মশিউর রহমান বকুল জানান, তিনি ব্যবসায়সূত্রে রাজশাহী বসবাস করেন। তার অপর ভাই মিজানুর রহমান গকুল চট্টগ্রামে বিজিবিতে চাকরি করেন। তার বোন নারগিস বেগম ও মা মেরিনা বেওয়া মডেল স্কুল মোড়ের বাড়িতে থাকতেন।
মেরিনা বেওয়া জানান, বাড়িতে তারা মা-মেয়ে ছিলেন। গেট বন্ধ ছিল। মঙ্গলবার ভোরে তিনি ফজরের নামাজ শেষে পবিত্র কোরআন তেলওয়াত করার সময় তার মেয়ে নারগিস বেগমের গোঙ্গানির আওয়াজ শুনতে পান। দ্রুত তিনি বাথরুমে গিয়ে নারগিসকে গলাকাটা রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পান। তার চিৎকারে প্রতিবেশিরা ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করেন। কিন্তু হাসপাতালে নেয়ার আগেই তার মৃত্যু হয়। পরে থানা পুলিশে খবর দেয়া হয়।

তারা জানান, প্রায় ছয় বছর আগে মহাদেবপুর উপজেলা সদরের ঘোষপাড়ার স্বর্ণ ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনের (৪৭) সাথে নারগিস বেগমের বিয়ে হয়। আনোয়ার হোসেনের আগের পক্ষের স্ত্রী এবং এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। দীর্ঘ ছয় বছরেও নারগিস বেগমের কোন সন্তান না হওয়ায় তিন মাস আগে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এরপর আনোয়ারের সমস্ত জমিজমা তার প্রথম পক্ষের স্ত্রী ও ছেলে মেয়েরা লিখে নেন। একমাস আগে আনোয়ার লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এরপর থেকেই নারগিস ভারসাম্যহীন আচরণ করতে থাকেন। এরই জের ধরে নারগিস বেগম নিজের গলায় হাসুয়া চালিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে তার মা মেরিনা বেওয়ার ধারনা।

খবর পেয়ে নওগাঁ জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার (ডিএসবি) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এহসানুর রহমান ভূঁইয়া, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর ইন্সপেক্টর মাহবুবুর রহমান, মহাদেবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রুহুল আমিন, ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ওসি রুহুল আমিন জানান, সকাল ১০টায় তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তদন্ত শুরু করেন। মরদেহের গলায় বাঁম দিক থেকে নিচের দিকে হাসুয়া দিয়ে কোপ দিয়ে টানা দেয়ার চিহ্ন পাওয়া গেছে। এছাড়া অন্য কোন চিহ্ন ছিলনা। এ থেকে মনে হয় নিহত নারগিস বেগম নিজেই ডান হাতে হাসুয়া দিয়ে কোপ দিয়ে টেনে আত্মহত্যা করেছেন। মরদেহের পাশ থেকে রক্তমাখা হাসুয়াটি উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এটি হত্যা কিনা তাও তদন্ত করা হচ্ছে। বিকেলে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মামলা দায়ের হয়নি।

উল্লেখ্য, এই ঘটনার মাত্র ১২ দিন আগে গত ২৫ জানুয়ারি রাত ১০ টায় থানা পুলিশ উপজেলা সদর থেকে আধা কিলোমিটার দূরে কুঞ্জবন এলাকায় নিজ বাড়ি থেকে রিনা বেগম (৪৩) নামে এক গৃহবধূর হাত-পা ও মুখ বাঁধা মরদেহ উদ্ধার করে। কিন্তু ওই হত্যাকান্ডেরও রহস্য উদঘাটন হয়নি। অল্পদিনের ব্যবধানে দুই নারীর অস্বাভাবিক মৃত্যুতে এলাকায় ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে যে সব নারী একা বাসায় থাকেন তারা দারুন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।

Please Share This Post in Your Social Media

মহাদেবপুরে আরো এক নারীর গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার

Update Time : ০৬:১৫:৩৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

নওগাঁর মহাদেবপুর থানা পুলিশ নারগিস বেগম (৪৫) নামে প্রয়াত এক পুলিশ কর্মকর্তার মেয়ের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করেছে। তিনি উপাজেলা সদরের মডেল স্কুল মোড়ের মৃত পুলিশ কর্মকর্তা নাসির উদ্দিনের মেয়ে। তাদের গ্রামের বাড়ি উপজেলার চেরাগপুর ইউনিয়নের চকদৌলত গ্রামে। স্বামী পরিত্যক্তা ও নি:সন্তান নারগিস বেগম দীর্ঘদিন ধরে মডেল স্কুল মোড়ের বাড়িতে তার মায়ের সাথে বসবাস করে আসছিলেন।

থানা পুলিশ মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে তার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নওগাঁ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

নিহতের ভাই উপজেলার আখেড়া গ্রামের শিল্পপতি ওসমান আলীর জামাই মশিউর রহমান বকুল জানান, তিনি ব্যবসায়সূত্রে রাজশাহী বসবাস করেন। তার অপর ভাই মিজানুর রহমান গকুল চট্টগ্রামে বিজিবিতে চাকরি করেন। তার বোন নারগিস বেগম ও মা মেরিনা বেওয়া মডেল স্কুল মোড়ের বাড়িতে থাকতেন।
মেরিনা বেওয়া জানান, বাড়িতে তারা মা-মেয়ে ছিলেন। গেট বন্ধ ছিল। মঙ্গলবার ভোরে তিনি ফজরের নামাজ শেষে পবিত্র কোরআন তেলওয়াত করার সময় তার মেয়ে নারগিস বেগমের গোঙ্গানির আওয়াজ শুনতে পান। দ্রুত তিনি বাথরুমে গিয়ে নারগিসকে গলাকাটা রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পান। তার চিৎকারে প্রতিবেশিরা ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করেন। কিন্তু হাসপাতালে নেয়ার আগেই তার মৃত্যু হয়। পরে থানা পুলিশে খবর দেয়া হয়।

তারা জানান, প্রায় ছয় বছর আগে মহাদেবপুর উপজেলা সদরের ঘোষপাড়ার স্বর্ণ ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনের (৪৭) সাথে নারগিস বেগমের বিয়ে হয়। আনোয়ার হোসেনের আগের পক্ষের স্ত্রী এবং এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। দীর্ঘ ছয় বছরেও নারগিস বেগমের কোন সন্তান না হওয়ায় তিন মাস আগে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এরপর আনোয়ারের সমস্ত জমিজমা তার প্রথম পক্ষের স্ত্রী ও ছেলে মেয়েরা লিখে নেন। একমাস আগে আনোয়ার লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এরপর থেকেই নারগিস ভারসাম্যহীন আচরণ করতে থাকেন। এরই জের ধরে নারগিস বেগম নিজের গলায় হাসুয়া চালিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে তার মা মেরিনা বেওয়ার ধারনা।

খবর পেয়ে নওগাঁ জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার (ডিএসবি) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এহসানুর রহমান ভূঁইয়া, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর ইন্সপেক্টর মাহবুবুর রহমান, মহাদেবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রুহুল আমিন, ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ওসি রুহুল আমিন জানান, সকাল ১০টায় তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তদন্ত শুরু করেন। মরদেহের গলায় বাঁম দিক থেকে নিচের দিকে হাসুয়া দিয়ে কোপ দিয়ে টানা দেয়ার চিহ্ন পাওয়া গেছে। এছাড়া অন্য কোন চিহ্ন ছিলনা। এ থেকে মনে হয় নিহত নারগিস বেগম নিজেই ডান হাতে হাসুয়া দিয়ে কোপ দিয়ে টেনে আত্মহত্যা করেছেন। মরদেহের পাশ থেকে রক্তমাখা হাসুয়াটি উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এটি হত্যা কিনা তাও তদন্ত করা হচ্ছে। বিকেলে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মামলা দায়ের হয়নি।

উল্লেখ্য, এই ঘটনার মাত্র ১২ দিন আগে গত ২৫ জানুয়ারি রাত ১০ টায় থানা পুলিশ উপজেলা সদর থেকে আধা কিলোমিটার দূরে কুঞ্জবন এলাকায় নিজ বাড়ি থেকে রিনা বেগম (৪৩) নামে এক গৃহবধূর হাত-পা ও মুখ বাঁধা মরদেহ উদ্ধার করে। কিন্তু ওই হত্যাকান্ডেরও রহস্য উদঘাটন হয়নি। অল্পদিনের ব্যবধানে দুই নারীর অস্বাভাবিক মৃত্যুতে এলাকায় ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে যে সব নারী একা বাসায় থাকেন তারা দারুন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।