ঢাকা ০৬:০৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

৩ দফা দাবিতে উপাচার্য ভবনের সামনে মৈত্রী হল ছাত্রীদের অবস্থান

মুহাম্মদ ইমাম-উল-জাননাহ, ঢাবি প্রতিনিধি
  • Update Time : ১২:৫৯:০৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৩
  • / ৬৬ Time View

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বাংলাদেশ কুয়েত-মৈত্রী হলে আসন সংকট নিরসনে তিনশ ছাত্রীকে অন্য হলে স্থানান্তরসহ তিন দফা দাবিতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন হলের ছাত্রীরা।

সোমবার(১৪ আগষ্ট) দুপুর একটার পরে তারা অবস্থান শুরু করেন। রাত সাড়ে ১০ টা অবধি এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা।

সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে উপাচার্য বাসভবনের সামনে আসেন। তবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বাধায় তাকে বহনকারী গাড়ি বাসভবনের ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি। এসময় প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাকসুদুর রহমান ও সহকারী প্রক্টর শিক্ষার্থীদের গেট ছাড়ার অনুরোধ করলেও অবস্থান চালিয়ে যান তারা। এরপর সেখানে ২০-২৫ মিনিট গাড়িতে বসে অপেক্ষা করে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবন কার্যালয়ে ফিরে যান উপাচার্য।

এর কয়েক ঘণ্টা পর রাত ১০টার দিকে উপাচার্য ফের তার বাসভবনের সামনে যান। সেখানে তিনি আবারও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের কথায় দাবি আদায়ের পরিষ্কার আশ্বাস না পাওয়ায় তার পথরোধ করে অবস্থান অব্যাহত রাখেন। প্রায় ৩০ মিনিট সেখানে উপাচার্যের গাড়ি আটকে রাখেন হলের ছাত্রীরা। পরে গাড়ি থেকে নেমে দ্রুত সংকট সমাধানের আশ্বাস দিলে রাত সাড়ে ১০টার পর রাস্তা থেকে সরে যান শিক্ষার্থীরা। পরে বাসভবনে প্রবেশ করেন উপাচার্য।

অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা বলেন, মৈত্রী হল ছোট হলেও প্রতিবছর অধিক ছাত্রী এখানে অ্যালোটমেন্ট দেওয়া হয়। ফলে ছাত্রীদের অন্যান্য হলে ছয়মাসের মধ্যে বৈধ আসন পেলেও মৈত্রী হলে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রীরা চতুর্থ বর্ষে উঠেও আসন পাচ্ছে না।

এছাড়া ২০২০-২১, ২১-২২, ২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের সবার আসনও অনিশ্চিত অবস্থায় আছে বলে উল্লেখ করেন তারা।

অবস্থানরত ছাত্রীরা বলেন, হলের মূল ভবনে পাঁচটি অতিথি কক্ষে চাপাচাপি করে ১০০ শিক্ষার্থী বার্ষিক চার হাজার টাকা প্রদান করে অবস্থান করেন। তাদের জন্য মাত্র তিনটি ওয়াশরুম রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষিত সিকদার মনোয়ারা ভবনের তিনতলার ১৫টি অতিথি কক্ষ, যেখানে বর্তমানে ১১০ জন শিক্ষার্থী অবস্থান করছেন। তাদের জন্য মাত্র দুটি ওয়াশরুম। দোতলায় ২৪ শিক্ষার্থীর জন্য একটি ওয়াশরুম রয়েছে। এতে তারা বর্ণনাতীত কষ্টে আছেন।

তাদের দাবিগুলো হচ্ছে :

১. মৈত্রী হল থেকে অন্তত ৩০০ শিক্ষার্থীকে অন্য হলে এক মাসের মধ্যে স্থানান্তর করা।

২. হলের আসন সংখ্যার সঙ্গে সমন্বয় রেখে শিক্ষার্থী অ্যালোট দেওয়া।

৩. মূল ভবনের প্রতি রুমে ছয় শিক্ষার্থীর বেশি শিক্ষার্থী বরাদ্দ দিয়ে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট না করা।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হলের আইন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী নুসরাত জাহান নিসু দৈনিক নওরোজকে বলেন, হলে অসংখ্য ফোর্থ ইয়ারের শিক্ষার্থীদের গণরুমে থাকতে হচ্ছে। গতকাল উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হলে তিনি বলেছেন যে এই সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে অনেক প্রশাসনিক বাধার সম্মুখীন হতে হবে৷ দুই – তিন বছরের আগে এটা সমাধান করা সম্ভব নয়৷ তাই উপাচার্য মহোদয় থেকে আশানুরূপ কিছু না পেয়ে আমরা হলের মেয়েরা আবারো এখানে অবস্থান নিতে বাধ্য হয়েছি।

এক পর্যায়ে ছাত্রীদের বাসভবনের সামনে অবস্থানরত দেখেও উপাচার্য তাদের সেখানে রেখে গাড়িতে করে অন্যত্র কাটিয়ে চলে গিয়েছেন উল্লেখ করে নিসু বলেন, ভিসি স্যার বলেছেন আমাদের এখানে অবস্থান নেওয়ার বিষয়টি অযৌক্তিক।

পরবর্তী বছর থেকে হলে আসন সংখ্যার সাথে সমন্বয় রেখে ছাত্রী বরাদ্দ দেওয়ার ব্যাপারটি মেনে নিলেও ৩০০ শিক্ষার্থীকে স্থানান্তর করার বিষয়টিকে উপাচার্য গুরুত্ব দিচ্ছেন না বলেও জানান নুসরাত জাহান নিসু।

উল্লেখ্য, এর আগে রোববার তারা উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামানের কাছে দাবি নিয়ে স্মারকলিপি দেন।

Please Share This Post in Your Social Media

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

৩ দফা দাবিতে উপাচার্য ভবনের সামনে মৈত্রী হল ছাত্রীদের অবস্থান

Update Time : ১২:৫৯:০৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৩

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বাংলাদেশ কুয়েত-মৈত্রী হলে আসন সংকট নিরসনে তিনশ ছাত্রীকে অন্য হলে স্থানান্তরসহ তিন দফা দাবিতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন হলের ছাত্রীরা।

সোমবার(১৪ আগষ্ট) দুপুর একটার পরে তারা অবস্থান শুরু করেন। রাত সাড়ে ১০ টা অবধি এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা।

সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে উপাচার্য বাসভবনের সামনে আসেন। তবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বাধায় তাকে বহনকারী গাড়ি বাসভবনের ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি। এসময় প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাকসুদুর রহমান ও সহকারী প্রক্টর শিক্ষার্থীদের গেট ছাড়ার অনুরোধ করলেও অবস্থান চালিয়ে যান তারা। এরপর সেখানে ২০-২৫ মিনিট গাড়িতে বসে অপেক্ষা করে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবন কার্যালয়ে ফিরে যান উপাচার্য।

এর কয়েক ঘণ্টা পর রাত ১০টার দিকে উপাচার্য ফের তার বাসভবনের সামনে যান। সেখানে তিনি আবারও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের কথায় দাবি আদায়ের পরিষ্কার আশ্বাস না পাওয়ায় তার পথরোধ করে অবস্থান অব্যাহত রাখেন। প্রায় ৩০ মিনিট সেখানে উপাচার্যের গাড়ি আটকে রাখেন হলের ছাত্রীরা। পরে গাড়ি থেকে নেমে দ্রুত সংকট সমাধানের আশ্বাস দিলে রাত সাড়ে ১০টার পর রাস্তা থেকে সরে যান শিক্ষার্থীরা। পরে বাসভবনে প্রবেশ করেন উপাচার্য।

অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা বলেন, মৈত্রী হল ছোট হলেও প্রতিবছর অধিক ছাত্রী এখানে অ্যালোটমেন্ট দেওয়া হয়। ফলে ছাত্রীদের অন্যান্য হলে ছয়মাসের মধ্যে বৈধ আসন পেলেও মৈত্রী হলে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রীরা চতুর্থ বর্ষে উঠেও আসন পাচ্ছে না।

এছাড়া ২০২০-২১, ২১-২২, ২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের সবার আসনও অনিশ্চিত অবস্থায় আছে বলে উল্লেখ করেন তারা।

অবস্থানরত ছাত্রীরা বলেন, হলের মূল ভবনে পাঁচটি অতিথি কক্ষে চাপাচাপি করে ১০০ শিক্ষার্থী বার্ষিক চার হাজার টাকা প্রদান করে অবস্থান করেন। তাদের জন্য মাত্র তিনটি ওয়াশরুম রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষিত সিকদার মনোয়ারা ভবনের তিনতলার ১৫টি অতিথি কক্ষ, যেখানে বর্তমানে ১১০ জন শিক্ষার্থী অবস্থান করছেন। তাদের জন্য মাত্র দুটি ওয়াশরুম। দোতলায় ২৪ শিক্ষার্থীর জন্য একটি ওয়াশরুম রয়েছে। এতে তারা বর্ণনাতীত কষ্টে আছেন।

তাদের দাবিগুলো হচ্ছে :

১. মৈত্রী হল থেকে অন্তত ৩০০ শিক্ষার্থীকে অন্য হলে এক মাসের মধ্যে স্থানান্তর করা।

২. হলের আসন সংখ্যার সঙ্গে সমন্বয় রেখে শিক্ষার্থী অ্যালোট দেওয়া।

৩. মূল ভবনের প্রতি রুমে ছয় শিক্ষার্থীর বেশি শিক্ষার্থী বরাদ্দ দিয়ে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট না করা।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হলের আইন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী নুসরাত জাহান নিসু দৈনিক নওরোজকে বলেন, হলে অসংখ্য ফোর্থ ইয়ারের শিক্ষার্থীদের গণরুমে থাকতে হচ্ছে। গতকাল উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হলে তিনি বলেছেন যে এই সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে অনেক প্রশাসনিক বাধার সম্মুখীন হতে হবে৷ দুই – তিন বছরের আগে এটা সমাধান করা সম্ভব নয়৷ তাই উপাচার্য মহোদয় থেকে আশানুরূপ কিছু না পেয়ে আমরা হলের মেয়েরা আবারো এখানে অবস্থান নিতে বাধ্য হয়েছি।

এক পর্যায়ে ছাত্রীদের বাসভবনের সামনে অবস্থানরত দেখেও উপাচার্য তাদের সেখানে রেখে গাড়িতে করে অন্যত্র কাটিয়ে চলে গিয়েছেন উল্লেখ করে নিসু বলেন, ভিসি স্যার বলেছেন আমাদের এখানে অবস্থান নেওয়ার বিষয়টি অযৌক্তিক।

পরবর্তী বছর থেকে হলে আসন সংখ্যার সাথে সমন্বয় রেখে ছাত্রী বরাদ্দ দেওয়ার ব্যাপারটি মেনে নিলেও ৩০০ শিক্ষার্থীকে স্থানান্তর করার বিষয়টিকে উপাচার্য গুরুত্ব দিচ্ছেন না বলেও জানান নুসরাত জাহান নিসু।

উল্লেখ্য, এর আগে রোববার তারা উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামানের কাছে দাবি নিয়ে স্মারকলিপি দেন।