১৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড ভারী বর্ষণে তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চল
- Update Time : ০৩:৩১:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩
- / ৯৬ Time View
রংপুরে অসময়ের ভারী বর্ষণে তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চল। আবহাওয়া অফিসের তথ্য বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় (শনিবার বেলা ১২টা থেকে রোববার বেলা ১২টা পর্যন্ত) রংপুর বিভাগে ১৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
এরমধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে নীলফামারীর সৈয়দপুরে ৪১৫ দশমিক ৪ মিলিমিটার। আর শুধু রংপুরে ১৬২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
এদিকে আশ্বিনেই ঝুমবৃষ্টি রংপুর অঞ্চলের নদ-নদীতে পানি বাড়তে শুরু করেছে। আবার কোথাও কোথাও দেখা দিয়েছে নদীভাঙন। টানা বৃষ্টিতে রংপুর নগরীর বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
অনুন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষজন। সড়কে যানবাহন চলাচল কিছুটা কমেছে।
অবিরাম বৃষ্টির কারণে অনেক মার্কেটে খোলা হয়নি দোকানপাট। এদিকে কাজের আকালে বিপাকে রয়েছেন দিনমজুর ও শ্রমিকেরা। নতুন ধান রোপন করা কৃষকদেরও কপালে পড়েছে চিন্তায় ভাঁজ।
রংপুর নগরীর পানি নিষ্কাশনের প্রবাহপ্রাণ শ্যামাসুন্দরী ও কেডি খাল। এই দুই খাল গেল কয়েকদিনের বৃষ্টির পানিতে এখন অনেকটাই টইটম্বুর।
অনেক জায়গায় জলাবদ্ধতায় অপ্রস্তুত এক বিড়ম্বনায় পড়েছে এই জনপদের মানুষ। নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়াতে ২০২০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর মতো শহর ডুবে যাবার আশঙ্কা চেপে বসেছে অনেকের মনে।
তবে আষাঢ়-শ্রাবণকে হার মানানো অসময়ের এই অবিরাম বৃষ্টিপাতে নদীপাড়েও আবার বন্যার শঙ্কা জেগেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রংপুর নগরীর লালবাগ, খামার মোড়, নেসকো গেট, নূরপূর, কামাল কাছনা, মাহিগঞ্জ, বোতলা, নিউ জুম্মাপাড়া, পূর্ব জুম্মাপাড়া, তাজহাট, বাবুপাড়া, মহাদেবপুর, কামারপাড়া, শালবন, মিস্ত্রিপাড়া, দর্শনা, আশরতপুর, ধাপ এলাকা, মুন্সিপাড়া, হনুমানতলা, মুলাটোল, মেডিকেল পাকার মাথা ও জলকরসহ বিভাগের আট জেলার বিভিন্ন এলাকায় পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
রংপুর নগরীর কলেজ রোড নেসকো ওয়াবদা মোড় এলাকার হারুনুর রশীদ স্বাধীন বলেন, পাড়ার মোড়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
মানুষজন ঠিক মতো চলাচল করতে পারছে না। ড্রেনের মুখগুলো ময়লা-আবর্জনার বন্ধ হওয়াতে এ অবস্থা দেখা দিয়েছে।
চারতলা মোড় মাষ্টার পাড়া এলাকার মোখলেছুর রহমান জানান, রাত থেকে মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে। নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষ।
রংপুর প্রেসক্লাব এলাকায় কথা হয় পত্রিকা বিক্রেতা মনজু মিয়ার সাথে। তিনি জানান, বৃষ্টির কারণে পত্রিকা বিলি করা সম্ভব হয়নি।
স্থানীয় ও ঢাকার পত্রিকাগুলো হাতে থাকলেও পাঠকের দোড়গোড়ায় পৌঁছাতে পারেনি। প্রেসক্লাব বিপণী বিতান মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে বেশির ভাগ দোকানপাট বন্ধ রয়েছে।
সংবাদকর্মী মনিরুজ্জামান ও রেজাউল করিম জানান, টানা বৃষ্টি হলে তাদের ভয় লাগে। ২০২০ সালে এরকম অতি ভারী বর্ষণে পুরো রংপুর নগর পানিতে ডুবেছিল।
সেবার রাত থেকে বৃষ্টি শুরু হয়ে যা ক্রমেই ভয়াবহ রূপ নিয়েছিল। বিরতিহীনভাবে পরের দিন সকাল পর্যন্ত গড়ায়, যা স্মরণকালেও ঘটেনি। এই সময়ে বৃষ্টির পরিমাণ রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৪৭ দশমিক ৩ মিলিমিটার।
বিগত এক শতাব্দীতে এমন বৃষ্টির রেকর্ড নেই। নীলফামারীর সৈয়দপুরের মোতালেব হোসেন বলেন, গত কয়েকদিন ধরে ভারি বর্ষণের কারণে সৈয়দপুরের নিম্নাঞ্চলগুলো পানিতে তলিয়েছে। কোথাও কোথাও বাড়িঘরেও পানি ঢুকে পড়েছে।
এতে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার মানুষেরা সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছেন। শহরের মিস্ত্রীপাড়া, মুন্সিপাড়া, হাওয়ালপাড়া, রসুলপুর, ইসলামবাগ, গোলাহাট এলাকার কিছু বাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে বলেও জানান তিনি।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজার রহমান বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুর বিভাগে হওয়া ১ হাজার ৩০০ দশমিক ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের মধ্যে নীলফামারীর সৈয়দপুরে সর্বোচ্চ ৪১৫.৪ মিলিমিটার এবং রংপুরে ১৬২৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
এছাড়াও দিনাজপুরে ৩১৮.৪ মিলিমিটার, নীলফামারী ডিমলায় ২০৪.৭, পঞ্চগড়ে ১৩৭ মিলিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। যা এ মৌসুমে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। আরও দুদিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ওবায়দুর রহমান মণ্ডল বলেন, এখন ধানের মৌসুম। এই বৃষ্টি ধানের জন্য খুবই উপকারী।
তবে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে সবজি ক্ষেতে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। যা পানি নেমে যাওয়ার পর বোঝা যাবে।
অন্যদিকে নদ-নদীতে পানি বাড়তে শুরু হলেও এখন পর্যন্ত বন্যার কোনো আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃপক্ষ।
ডালিয়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আসফা-উদ-দৌলা বলেন, তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শনিবার একই পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়