ঢাকা ০৪:২৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
আজ সেই ভয়াল ৩ মে! প্রবাসীদের সেবার মান বাড়াতে স্মার্ট কার্ড প্রদান করা হবে – ড. মোমেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের উপস্থিতি হার ৯০ শতাংশ ইবিতে ‘বি’ ইউনিটের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত অবিলম্বে ১০ম ওয়েজবোর্ড গঠন করুন: বিএফইউজে ও ডিইউজে নেতৃবৃন্দ অজ্ঞান করে স্বর্ণ ও টাকা চুরির রহস্য উদঘাটন ও চোরাই মালামালসহ গ্রেফতার ১ কয়েন প্রতারণার ফাঁদে ফেলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া চক্রের দুই সদস্য গ্রেফতার ফেসবুকে অপপ্রচার: জবি শিক্ষককের বিচার চেয়ে ভিসির কাছে ডীনের অভিযোগ কুড়িগ্রামে ছাত্রীনিবাসের সামনে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গির ভিডিও ধারণ, যুবকের কারাদণ্ড সাইকেল চালিয়ে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পাড়ি দিয়েছেন “দিদার”

রংপুর সিটিতে বেড়েছে সাপের উপদ্রব, কামড়ে একজনের মৃত্যু

কামরুল হাসান টিটু,রংপুর ব্যুরো ।
  • Update Time : ০৫:০৯:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  • / ১১০ Time View
রংপুর সিটি করপোরেশনের বর্ধিত এলাকাসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে বসতবাড়ি ও  পথে প্রান্তরে বিষধর সাপের উপদ্রব বেড়েছে।
গোখড়া, কালাচ, কিং কোবরা, গোমা, ডারাইস, কেউটে ও ডোরা সাপসহ অন্যান্য সাপের উপদ্রব বেড়ে গেছে।
এসব সাপ গর্ত থেকে বেড়িয়ে এখন লোকালয়ে আশ্রয় নিয়েছে। সাপের কামড়ে এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
এতে বিভিন্ন এলাকার মানুষের মধ্যে সাপে কাটার আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই সাপের ভয়ে রাতের বেলা চলাচল বন্ধ করেছে দিয়েছেন। এতে আতঙ্কিত হয়ে পরছে মানুষজন।
সম্প্রতি রংপুর নগরীর  ১৫, ৩১, ৩২ ও ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে সবচেয়ে বেশি সাপের উপদ্রব দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে, তামপাট, দর্শনা, মাহিগঞ্জ সরেয়ারতল এলাকায় বিষধর সাপের উপদ্রপ বেড়েছে।
গত এক সপ্তাহে দুজনকে সাপে কেটেছে, এর মধ্যে একজন মারা গেছেন। সাপের উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় শিশু,-কিশোরসহ বয়স্করা আতংকিত হয়ে পড়েছেন।
জানা গেছে, ৩৩টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত রংপুর সিটি করপোরেশন। এর মধ্যে সাবেক ১৫টি ওয়ার্ড মূল নগরীতে।
বাকি ১৮টি ওয়ার্ডের অধিকাংশ এলাকাই গ্রাম এবং বিলুপ্ত ইউনিয়ন পরিষদ। সিটি করপোরেশনের বর্ধিত এলাকাগুলোতে ঝোপঝাড় ও পুকুর-নালা ও খাল বেশি হওয়ায় সেখানে সাপ নিরাপদ আশ্রয় স্থান খুঁজে পেয়েছে।
এসব এলাকায়  সাপের উপদ্রবে মানুষজন আতঙ্কিত। সাপের ভয়ে অনেকেই রাতে চলাফেরা বন্ধ করে দিয়েছেন।
সম্প্রতি নগরীর ৩২নং ওয়ার্ডে দুজনকে সাপ ছোঁবল দিয়েছে। এর মধ্যে এক যুবক মারা গেছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত সপ্তাহে নগরীর আরাজি তামপাট এলাকার আবদুর রশিদের ছেলে মামুনুর রশিদ মামুন (৩৬) সাপের কামড়ে মারা যান।
এরপর বড় রংপুর এলাকার গফুর মিয়ার স্ত্রী পেয়ারি বেগমকে সাপ ছোঁবল দেয়। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে চিকিৎসা নিয়ে তিনি সুস্থ হন।
গত বুধবার বড় রংপুর এলাকার আকবর আলীর বাড়িতে সাপ দেখা গেছে। পরে স্থানীয়রা ওই সাপটি মেরে ফেলে।
স্থানীয় দুলাল মুন্সীর বাড়ি সংলগ্ন একটি দোকানের সামনেও সাপ দেখা যায়। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার বড় রংপুর এলাকার মোশারফ হোসেনের বাড়িতে দুটি সাপের আনাগোনা দেখা যায়। পরে সাপ দুটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলেন স্থানীয়রা।
গতকাল সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাতে নগরীর ৩৩ নং ওয়ার্ডের সরেয়ারতল বাজার সংলগ্ন মনোয়ার হোসেনের বাড়িতে সাপ দেখে আতংকে ছুটোছুটি করেন বাড়ির লোকজন। এরআগেও ওই বাড়ির আশপাশে সাপ দেখা গেছে বলে জানান স্থানীয় যুবক হাবিবুর রহমান।
তিনি জানান, সাপের উৎপাত বাড়াতে এলাকাবাসী আতংকে রয়েছে। প্রতিদিন কারো না কারো বাড়ি থেকে সাপ উদ্ধার হচ্ছে।
গত দুইদিনে সরেয়ারতল বাজার সংলগ্নে মনোয়ার ও আনোয়ারের বাড়ি থেকে সাপ ধরে মেরে ফেলা হয়েছে।
আমরা  সাপ থেকে রক্ষায় সরকারি ভাবে কোনো সহযোগিতা বা পরামর্শ পাচ্ছি না। এদিকে নগরীর আরাজী তামপাট, সরেয়ারতল বাজার, বড় রংপুর, কাইদাহারা, নগর মীরগঞ্জ, দোলাপাড়া, মেকুড়া, হোসেন নগর, বকচি, দর্শনা এলাকার শেখপাড়া, বনগ্রাম, পানবাড়ি, ঘাঘটপাড়াসহ বিভিন্ন স্থানে সাপের উপদ্রব দেখা দিয়েছে।
এতে আতংকে দিনানিপাত করছে এসব এলাকার মানুষজন। তবে সাপ নিধনে বা সাপের উপদ্রব কমানোর জন্য সরকারি কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি বলে দাবি করছেন স্থানীয়রা।
নগরীর ৩২ নং ওয়ার্ডের আরাজী তামপাট এলাকার আশরাফুল ও হুমায়ন রশিদ বলেন, সম্প্রতি সাপের উপদ্রব দেখা যাচ্ছে।
এক যুবক মারা গেছে। কয়েকটি সাপ স্থানীয়রা মেরে ফেলেছে। এতে স্থানীয় মানুষজন আতংকে রয়েছেন।
তারা সাপ নিধনে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। বড় রংপুর এলাকার বাসিন্দা মেহেদী হাসান লেন, যত্রতত্র সাপ দেখা যাচ্ছে।
মানুষজন সন্ধ্যার পরে সাপের ভয়ে বাড়ি থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছেন। অনেকেই রাতে লাইট জ্বালিয়ে ঘুমাচ্ছেন।
পরিবেশ নিয়ে কাজ করছে এমন কয়েকজনের সাথে সাপের উপদ্রব নিয়ে কথা হয়। তারা মনে করছেন, ভারত থেকে বাংলাদেশে ঢুকছে এইসব সাপ।
বিশেষ করে বন্যা ও নদীর পানিতে ভাসতে ভাসতে বাংলাদেশে ঢুকছে। আর অতিদ্রুত এটি বংশবিস্তার করে চলছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) রংপুর আঞ্চলিক কমিটির সদস্য সচিব রসিদুস সুলতান বাবলু বলেন, হঠাৎ করে রংপুর সিটি করপোরেশনের বর্ধিত এলাকাগুলোতে সাপের এমন উপদ্রব উদ্বেগের।
ইতোমধ্যে সাপের কামড়ে এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এখন শিশু-কিশোর কেউই নিরাপদ নয়।
তাছাড় বর্ধিত এলাকাগুলোতে খাল-পুকুরের পাশাপাশি কোথাও কোথাও ঘাঘট নদ ছড়িয়ে থাকায় উজার থেকে বন্যার পানিতে এসব সাপ ভেসে আসতে পারে বলে ধারণা করছি। তবে এ পরিস্থিতিতে সতর্কতা ও সচেতনতার বিকল্প নেই।

Please Share This Post in Your Social Media

রংপুর সিটিতে বেড়েছে সাপের উপদ্রব, কামড়ে একজনের মৃত্যু

Update Time : ০৫:০৯:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩
রংপুর সিটি করপোরেশনের বর্ধিত এলাকাসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে বসতবাড়ি ও  পথে প্রান্তরে বিষধর সাপের উপদ্রব বেড়েছে।
গোখড়া, কালাচ, কিং কোবরা, গোমা, ডারাইস, কেউটে ও ডোরা সাপসহ অন্যান্য সাপের উপদ্রব বেড়ে গেছে।
এসব সাপ গর্ত থেকে বেড়িয়ে এখন লোকালয়ে আশ্রয় নিয়েছে। সাপের কামড়ে এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
এতে বিভিন্ন এলাকার মানুষের মধ্যে সাপে কাটার আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই সাপের ভয়ে রাতের বেলা চলাচল বন্ধ করেছে দিয়েছেন। এতে আতঙ্কিত হয়ে পরছে মানুষজন।
সম্প্রতি রংপুর নগরীর  ১৫, ৩১, ৩২ ও ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে সবচেয়ে বেশি সাপের উপদ্রব দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে, তামপাট, দর্শনা, মাহিগঞ্জ সরেয়ারতল এলাকায় বিষধর সাপের উপদ্রপ বেড়েছে।
গত এক সপ্তাহে দুজনকে সাপে কেটেছে, এর মধ্যে একজন মারা গেছেন। সাপের উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় শিশু,-কিশোরসহ বয়স্করা আতংকিত হয়ে পড়েছেন।
জানা গেছে, ৩৩টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত রংপুর সিটি করপোরেশন। এর মধ্যে সাবেক ১৫টি ওয়ার্ড মূল নগরীতে।
বাকি ১৮টি ওয়ার্ডের অধিকাংশ এলাকাই গ্রাম এবং বিলুপ্ত ইউনিয়ন পরিষদ। সিটি করপোরেশনের বর্ধিত এলাকাগুলোতে ঝোপঝাড় ও পুকুর-নালা ও খাল বেশি হওয়ায় সেখানে সাপ নিরাপদ আশ্রয় স্থান খুঁজে পেয়েছে।
এসব এলাকায়  সাপের উপদ্রবে মানুষজন আতঙ্কিত। সাপের ভয়ে অনেকেই রাতে চলাফেরা বন্ধ করে দিয়েছেন।
সম্প্রতি নগরীর ৩২নং ওয়ার্ডে দুজনকে সাপ ছোঁবল দিয়েছে। এর মধ্যে এক যুবক মারা গেছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত সপ্তাহে নগরীর আরাজি তামপাট এলাকার আবদুর রশিদের ছেলে মামুনুর রশিদ মামুন (৩৬) সাপের কামড়ে মারা যান।
এরপর বড় রংপুর এলাকার গফুর মিয়ার স্ত্রী পেয়ারি বেগমকে সাপ ছোঁবল দেয়। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে চিকিৎসা নিয়ে তিনি সুস্থ হন।
গত বুধবার বড় রংপুর এলাকার আকবর আলীর বাড়িতে সাপ দেখা গেছে। পরে স্থানীয়রা ওই সাপটি মেরে ফেলে।
স্থানীয় দুলাল মুন্সীর বাড়ি সংলগ্ন একটি দোকানের সামনেও সাপ দেখা যায়। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার বড় রংপুর এলাকার মোশারফ হোসেনের বাড়িতে দুটি সাপের আনাগোনা দেখা যায়। পরে সাপ দুটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলেন স্থানীয়রা।
গতকাল সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাতে নগরীর ৩৩ নং ওয়ার্ডের সরেয়ারতল বাজার সংলগ্ন মনোয়ার হোসেনের বাড়িতে সাপ দেখে আতংকে ছুটোছুটি করেন বাড়ির লোকজন। এরআগেও ওই বাড়ির আশপাশে সাপ দেখা গেছে বলে জানান স্থানীয় যুবক হাবিবুর রহমান।
তিনি জানান, সাপের উৎপাত বাড়াতে এলাকাবাসী আতংকে রয়েছে। প্রতিদিন কারো না কারো বাড়ি থেকে সাপ উদ্ধার হচ্ছে।
গত দুইদিনে সরেয়ারতল বাজার সংলগ্নে মনোয়ার ও আনোয়ারের বাড়ি থেকে সাপ ধরে মেরে ফেলা হয়েছে।
আমরা  সাপ থেকে রক্ষায় সরকারি ভাবে কোনো সহযোগিতা বা পরামর্শ পাচ্ছি না। এদিকে নগরীর আরাজী তামপাট, সরেয়ারতল বাজার, বড় রংপুর, কাইদাহারা, নগর মীরগঞ্জ, দোলাপাড়া, মেকুড়া, হোসেন নগর, বকচি, দর্শনা এলাকার শেখপাড়া, বনগ্রাম, পানবাড়ি, ঘাঘটপাড়াসহ বিভিন্ন স্থানে সাপের উপদ্রব দেখা দিয়েছে।
এতে আতংকে দিনানিপাত করছে এসব এলাকার মানুষজন। তবে সাপ নিধনে বা সাপের উপদ্রব কমানোর জন্য সরকারি কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি বলে দাবি করছেন স্থানীয়রা।
নগরীর ৩২ নং ওয়ার্ডের আরাজী তামপাট এলাকার আশরাফুল ও হুমায়ন রশিদ বলেন, সম্প্রতি সাপের উপদ্রব দেখা যাচ্ছে।
এক যুবক মারা গেছে। কয়েকটি সাপ স্থানীয়রা মেরে ফেলেছে। এতে স্থানীয় মানুষজন আতংকে রয়েছেন।
তারা সাপ নিধনে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। বড় রংপুর এলাকার বাসিন্দা মেহেদী হাসান লেন, যত্রতত্র সাপ দেখা যাচ্ছে।
মানুষজন সন্ধ্যার পরে সাপের ভয়ে বাড়ি থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছেন। অনেকেই রাতে লাইট জ্বালিয়ে ঘুমাচ্ছেন।
পরিবেশ নিয়ে কাজ করছে এমন কয়েকজনের সাথে সাপের উপদ্রব নিয়ে কথা হয়। তারা মনে করছেন, ভারত থেকে বাংলাদেশে ঢুকছে এইসব সাপ।
বিশেষ করে বন্যা ও নদীর পানিতে ভাসতে ভাসতে বাংলাদেশে ঢুকছে। আর অতিদ্রুত এটি বংশবিস্তার করে চলছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) রংপুর আঞ্চলিক কমিটির সদস্য সচিব রসিদুস সুলতান বাবলু বলেন, হঠাৎ করে রংপুর সিটি করপোরেশনের বর্ধিত এলাকাগুলোতে সাপের এমন উপদ্রব উদ্বেগের।
ইতোমধ্যে সাপের কামড়ে এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এখন শিশু-কিশোর কেউই নিরাপদ নয়।
তাছাড় বর্ধিত এলাকাগুলোতে খাল-পুকুরের পাশাপাশি কোথাও কোথাও ঘাঘট নদ ছড়িয়ে থাকায় উজার থেকে বন্যার পানিতে এসব সাপ ভেসে আসতে পারে বলে ধারণা করছি। তবে এ পরিস্থিতিতে সতর্কতা ও সচেতনতার বিকল্প নেই।