ঢাকা ০৩:১৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
ফেসবুকে অপপ্রচার: জবি শিক্ষককের বিচার চেয়ে ভিসির কাছে ডীনের অভিযোগ কুড়িগ্রামে ছাত্রীনিবাসের সামনে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গির ভিডিও ধারণ, যুবকের কারাদণ্ড সাইকেল চালিয়ে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পাড়ি দিয়েছেন “দিদার” টাঙ্গাইলে মেয়ে ও জামাতার বিরুদ্ধে বাবাকে নির্যাতনের অভিযোগ, বৃদ্ধের মৃত্যু আখেরী মোনাজাতের মধ্যে দিয়ে জাকের পার্টির বিশ্ব ইসলামি মহা সম্মেলন ও মহা পবিত্র ফাতেহা শরীফের সমাপ্তি টঙ্গীতে পরিবহনে চাঁদাবাজি, গ্রেফতার ৮ সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা সম্ভবঃ প্রধান বিচারপতি  শত কোটি টাকা আত্মসাৎ: দেশত্যাগের সময় বিমানবন্দরে বিশ্বাস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আটক লালপুরে আ,লীগ নেতাকে গুলি করে হত্যা ইবিতে নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও আনসার কর্তৃক শিক্ষক হেনস্তার অভিযোগ

মার্কিন ‘মৃত্যুদূত’ পাচ্ছে ভারত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • Update Time : ১০:৪৪:১৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • / ৪৮ Time View

বিশ্বের ‘সবচেয়ে প্রাণঘাতী ড্রোন’। এই নামেই পরিচিত ‘প্রিডেটর এমকিউ-৯বি’। সেই মারাত্মক ‘মারণদূত’কে এবার ভারতের হাতে তুলে দেবে যুক্তরাষ্ট্র।

গত বৃহস্পতিবার ভারতকে ৩১টি প্রিডেটর ড্রোন দেওয়ার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমেরিকার জো বাইডেন সরকার। শিগগিরই ভারতের সামরিক বাহিনীর অস্ত্রাগারে ঠাঁই পাবে ড্রোনটি।

শত্রুদের ওপর নজর রাখতে ‘প্রিডেটর এমকিউ-৯বি’ ড্রোনের জুড়ি মেলা ভার। উড়তে উড়তেই শত্রুপক্ষের গতিবিধির ওপর নজর রাখতে সক্ষম এই ড্রোন।
ড্রোনটি এতটাই অত্যাধুনিক যে তার ‘চোখে’ কী ধরা পড়ছে, তা আবার দেখতে পাওয়া যায় দুহাজার কিলোমিটার দূরে বসে। প্রয়োজন পড়লে সেই প্রযুক্তি দিয়ে নিয়ন্ত্রিত ‘গুপ্তচর’ ড্রোনকে বদলে ফেলা যায় ‘ঘাতক’ ড্রোনে। একটি বোতাম টিপলেই ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালাতে পারে ‘প্রিডেটর এমকিউ-৯বি’। ধ্বংস করতে পারে শত্রুপক্ষের ডেরা।

‘প্রিডেটর এমকিউ-৯বি’কে সামরিক বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বিশ্বের ‘সবচেয়ে প্রাণঘাতী ড্রোন’ বলে মনে করেন। এর অপর নাম ‘রিপার ড্রোন’।

ছবি: India’s PM Press Office/ UPI Photo/IMAGO

প্রায় ছয় বছর আগে অর্থাৎ আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জমানায় প্রিডেটর ড্রোন কেনা নিয়ে নিজেদের আগ্রহের কথা প্রকাশ করেছিল নরেন্দ্র মোদি সরকার। বছর দেড়েক আগে সে বিষয়ে ‘ইতিবাচক’ সমঝোতায় পৌঁছায় দুই দেশ। গত জুন মাসে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের উপস্থিতিতে ‘প্রতিরক্ষা ক্রয় পরিষদ’ ড্রোন কেনার বিষয়ে চুক্তি সইয়ের আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত হয়েছিল।

আমেরিকা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে, ভারতের হাতে ৩১টি প্রিডেটর ড্রোন তুলে দেওয়ার বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছে মার্কিন কংগ্রেস। আগামী মাসে সেই চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে।

জানা গেছে, প্রায় ৩৯৯ কোটি ডলার(৪০ হাজার কোটি টাকা) ব্যয়ে কেনা হচ্ছে প্রিডেটর সিরিজের আধুনিকতম সংস্করণ। ভারতের হাতে যে ৩১টি প্রিডেটর ড্রোন থাকবে, তার মধ্যে ১৫টি পাবে ভারতীয় নৌ-সেনা। সেই ড্রোনগুলোর নাম হবে ‘সি গার্ডিয়ান’। বিমান ও পদাতিক বাহিনী পারে আটটি করে ‘স্কাই গার্ডিয়ান’ প্রিডেটর ড্রোন।

কিন্তু কেন ‘প্রিডেটর এমকিউ-৯বি’ ‘সবচেয়ে প্রাণঘাতী’? অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন প্রিডেটর ড্রোনের অন্যতম শক্তি হলো সেটির গতি। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৪৪২ কিলোমিটার বেগে ছুটে যেতে পারে ড্রোনটি। চুপিচুপি কাজ সারার জন্যও নামডাক রয়েছে ‘প্রিডেটর এমকিউ-৯বি’-র। মাত্র ২৫০ মিটার উঁচু দিয়ে চলাফেরার সময়ও টুঁ শব্দ পর্যন্ত করে না এই ড্রোন। মাথার ওপর ড্রোন ঘুরঘুর করার আভাস পায় না শত্রুরা। ‘এমকিউ-৯বি’র এই চরবৃত্তিই একে অন্য প্রাণঘাতী ড্রোনদের থেকে আলাদা করে।

সব থেকে কম ২৫০ মিটার ওপর থেকে নজরদারি চালাতে সক্ষম ড্রোনটি সর্বোচ্চ ৫০ হাজার ফুট উঁচু দিয়ে উড়তে পারে। অর্থাৎ, যেকোনো বাণিজ্যিক বিমানের চেয়েও উঁচুতে ওড়ে এ ড্রোন। ‘এমকিউ-৯বি’ প্রিডেটর ড্রোনটি জ্বালানি শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও প্রায় তিন হাজার কিলোমিটারের বেশি ভ্রমণ করতে পারে। ৩৫ ঘণ্টা ধরে ক্রমাগত উড়তেও পারে। পাশাপাশি শিকারি ড্রোনটি চারটি ক্ষেপণাস্ত্র এবং প্রায় ৪৫০ কেজি বোমা-সহ প্রায় ১৭০০ কেজি ওজন বহন করতে সক্ষম।

প্রিডেটর ড্রোনে ‘আকাশ থেকে আকাশ’ ক্ষেপণাস্ত্রের পাশাপাশি ‘আকাশ থেকে ভূমি’ ক্ষেপণাস্ত্রও রাখা যায়। ‘এমকিউ-৯বি’ প্রিডেটর ড্রোনের যে সংস্করণ নৌবাহিনীর জন্য তৈরি করা হয়েছে অর্থাৎ ‘দ্য সি গার্ডিয়ান’-এ অত্যাধুনিক রাডার এবং ‘সোনোবুয় মনিটরিং সিস্টেম’ রয়েছে যা এটিকে ডুবোজাহাজের খোঁজ দিতে পারে।

উল্লেখ্য, নজরদারি, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং জঙ্গি আস্তানায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জন্য প্রিডেটর ড্রোন ব্যবহার করে আমেরিকা। তালিবান প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা মোহম্মদ ওমর, তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানের প্রধান বায়তুল্লা মেহসুদ, সিরিয়ার আল কায়দা প্রধান সেলিম আবু আহমেদ থেকে হালফিলে ইরানের জেনারেল কাশেম সোলেমানি এবং আল কায়দা প্রধান আয়মান আল জাওয়াহিরি হত্যায় ব্যবহার করা হয়েছিল এই ‘এমকিউ রিপার ড্রোন’। আমেরিকা ছাড়াও সম্প্রতি এই প্রিডেটর ড্রোন ব্যবহার করছে ইতালি, ফ্রান্স ও স্পেনের বিমানবাহিনী।

Please Share This Post in Your Social Media

মার্কিন ‘মৃত্যুদূত’ পাচ্ছে ভারত

Update Time : ১০:৪৪:১৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

বিশ্বের ‘সবচেয়ে প্রাণঘাতী ড্রোন’। এই নামেই পরিচিত ‘প্রিডেটর এমকিউ-৯বি’। সেই মারাত্মক ‘মারণদূত’কে এবার ভারতের হাতে তুলে দেবে যুক্তরাষ্ট্র।

গত বৃহস্পতিবার ভারতকে ৩১টি প্রিডেটর ড্রোন দেওয়ার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমেরিকার জো বাইডেন সরকার। শিগগিরই ভারতের সামরিক বাহিনীর অস্ত্রাগারে ঠাঁই পাবে ড্রোনটি।

শত্রুদের ওপর নজর রাখতে ‘প্রিডেটর এমকিউ-৯বি’ ড্রোনের জুড়ি মেলা ভার। উড়তে উড়তেই শত্রুপক্ষের গতিবিধির ওপর নজর রাখতে সক্ষম এই ড্রোন।
ড্রোনটি এতটাই অত্যাধুনিক যে তার ‘চোখে’ কী ধরা পড়ছে, তা আবার দেখতে পাওয়া যায় দুহাজার কিলোমিটার দূরে বসে। প্রয়োজন পড়লে সেই প্রযুক্তি দিয়ে নিয়ন্ত্রিত ‘গুপ্তচর’ ড্রোনকে বদলে ফেলা যায় ‘ঘাতক’ ড্রোনে। একটি বোতাম টিপলেই ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালাতে পারে ‘প্রিডেটর এমকিউ-৯বি’। ধ্বংস করতে পারে শত্রুপক্ষের ডেরা।

‘প্রিডেটর এমকিউ-৯বি’কে সামরিক বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বিশ্বের ‘সবচেয়ে প্রাণঘাতী ড্রোন’ বলে মনে করেন। এর অপর নাম ‘রিপার ড্রোন’।

ছবি: India’s PM Press Office/ UPI Photo/IMAGO

প্রায় ছয় বছর আগে অর্থাৎ আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জমানায় প্রিডেটর ড্রোন কেনা নিয়ে নিজেদের আগ্রহের কথা প্রকাশ করেছিল নরেন্দ্র মোদি সরকার। বছর দেড়েক আগে সে বিষয়ে ‘ইতিবাচক’ সমঝোতায় পৌঁছায় দুই দেশ। গত জুন মাসে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের উপস্থিতিতে ‘প্রতিরক্ষা ক্রয় পরিষদ’ ড্রোন কেনার বিষয়ে চুক্তি সইয়ের আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত হয়েছিল।

আমেরিকা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে, ভারতের হাতে ৩১টি প্রিডেটর ড্রোন তুলে দেওয়ার বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছে মার্কিন কংগ্রেস। আগামী মাসে সেই চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে।

জানা গেছে, প্রায় ৩৯৯ কোটি ডলার(৪০ হাজার কোটি টাকা) ব্যয়ে কেনা হচ্ছে প্রিডেটর সিরিজের আধুনিকতম সংস্করণ। ভারতের হাতে যে ৩১টি প্রিডেটর ড্রোন থাকবে, তার মধ্যে ১৫টি পাবে ভারতীয় নৌ-সেনা। সেই ড্রোনগুলোর নাম হবে ‘সি গার্ডিয়ান’। বিমান ও পদাতিক বাহিনী পারে আটটি করে ‘স্কাই গার্ডিয়ান’ প্রিডেটর ড্রোন।

কিন্তু কেন ‘প্রিডেটর এমকিউ-৯বি’ ‘সবচেয়ে প্রাণঘাতী’? অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন প্রিডেটর ড্রোনের অন্যতম শক্তি হলো সেটির গতি। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৪৪২ কিলোমিটার বেগে ছুটে যেতে পারে ড্রোনটি। চুপিচুপি কাজ সারার জন্যও নামডাক রয়েছে ‘প্রিডেটর এমকিউ-৯বি’-র। মাত্র ২৫০ মিটার উঁচু দিয়ে চলাফেরার সময়ও টুঁ শব্দ পর্যন্ত করে না এই ড্রোন। মাথার ওপর ড্রোন ঘুরঘুর করার আভাস পায় না শত্রুরা। ‘এমকিউ-৯বি’র এই চরবৃত্তিই একে অন্য প্রাণঘাতী ড্রোনদের থেকে আলাদা করে।

সব থেকে কম ২৫০ মিটার ওপর থেকে নজরদারি চালাতে সক্ষম ড্রোনটি সর্বোচ্চ ৫০ হাজার ফুট উঁচু দিয়ে উড়তে পারে। অর্থাৎ, যেকোনো বাণিজ্যিক বিমানের চেয়েও উঁচুতে ওড়ে এ ড্রোন। ‘এমকিউ-৯বি’ প্রিডেটর ড্রোনটি জ্বালানি শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও প্রায় তিন হাজার কিলোমিটারের বেশি ভ্রমণ করতে পারে। ৩৫ ঘণ্টা ধরে ক্রমাগত উড়তেও পারে। পাশাপাশি শিকারি ড্রোনটি চারটি ক্ষেপণাস্ত্র এবং প্রায় ৪৫০ কেজি বোমা-সহ প্রায় ১৭০০ কেজি ওজন বহন করতে সক্ষম।

প্রিডেটর ড্রোনে ‘আকাশ থেকে আকাশ’ ক্ষেপণাস্ত্রের পাশাপাশি ‘আকাশ থেকে ভূমি’ ক্ষেপণাস্ত্রও রাখা যায়। ‘এমকিউ-৯বি’ প্রিডেটর ড্রোনের যে সংস্করণ নৌবাহিনীর জন্য তৈরি করা হয়েছে অর্থাৎ ‘দ্য সি গার্ডিয়ান’-এ অত্যাধুনিক রাডার এবং ‘সোনোবুয় মনিটরিং সিস্টেম’ রয়েছে যা এটিকে ডুবোজাহাজের খোঁজ দিতে পারে।

উল্লেখ্য, নজরদারি, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং জঙ্গি আস্তানায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জন্য প্রিডেটর ড্রোন ব্যবহার করে আমেরিকা। তালিবান প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা মোহম্মদ ওমর, তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানের প্রধান বায়তুল্লা মেহসুদ, সিরিয়ার আল কায়দা প্রধান সেলিম আবু আহমেদ থেকে হালফিলে ইরানের জেনারেল কাশেম সোলেমানি এবং আল কায়দা প্রধান আয়মান আল জাওয়াহিরি হত্যায় ব্যবহার করা হয়েছিল এই ‘এমকিউ রিপার ড্রোন’। আমেরিকা ছাড়াও সম্প্রতি এই প্রিডেটর ড্রোন ব্যবহার করছে ইতালি, ফ্রান্স ও স্পেনের বিমানবাহিনী।