ঢাকা ০৮:৩০ অপরাহ্ন, বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
আখেরী মোনাজাতের মধ্যে দিয়ে জাকের পার্টির বিশ্ব ইসলামি মহা সম্মেলন ও মহা পবিত্র ফাতেহা শরীফের সমাপ্তি টঙ্গীতে পরিবহনে চাঁদাবাজি, গ্রেফতার ৮ সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা সম্ভবঃ প্রধান বিচারপতি  শত কোটি টাকা আত্মসাৎ: দেশত্যাগের সময় বিমানবন্দরে বিশ্বাস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আটক লালপুরে আ,লীগ নেতাকে গুলি করে হত্যা ইবিতে নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও আনসার কর্তৃক শিক্ষক হেনস্তার অভিযোগ টেকনাফের বার্মিজ মার্কেটে সাবের হত্যা মামলার ৬ আসামী গ্রেফতার ইবিতে বৃষ্টির আশায় ইসতিসকার নামাজ আদায় সবাইকে সর্বজনীন পেনশনের আওতায় আনা হবে: ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক জমি নিয়ে বিরোধ, ভাতিজার বিরুদ্ধে চাচাকে অপহরণের অভিযোগ

ভাইরাল হতে গিয়ে ৫ লাখ টাকার মোটরসাইকেল পুড়িয়ে পেলো শুধু ২০০ ডলার

শরিফুল হক পাভেল
  • Update Time : ১১:৪৫:০৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • / ৩৬ Time View

ট্রাফিক পুলিশ অন্যায়ভাবে মামলা দিয়েছে- এমন অভিযোগ এনে নিজের ৫ লাখ টাকার মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া যুবককে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের গাড়িচুরি প্রতিরোধের টিম গত শনিবার রাতে ধানমন্ডি থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে রাসেল মিয়া নামক একজন ইউটিউবার কে গ্রেফতার করে তার হেফাজত থেকে পুড়ে যাওয়া ১টি মোটরসাইকেল ও দুটি স্মার্ট ফোন উদ্ধার করেছে।

রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর মিন্টু রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানান ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর থানার রাসেল মিয়া সোশ্যাল মিডিয়াতে Rasel JTS (Junior Tiger Shroff) নাম ধারণ করে নিজের এবং অন্যের বানানো নানা ধরনের কনটেন্ট পোস্ট করতো যার অধিকাংশই অর্থহীন, অশালীন এবং প্রচলিত আইন কানুন বিরোধী ছিল।

বাবা – মা ও বিদেশে অবস্থান করা এক ভাই – বেকার এই বখাটেকে একটি মোটরসাইকেল কিনে দিলে রাজধানীর ৩০০ ফিট রোড, মাওয়া রোড এবং আফতাব নগরের রোডে তা দিয়ে শুরু করে মোটরসাইকেল দিয়ে বিকট শব্দের খেলা, হাই স্পিডিং, স্ট্যানিং এবং রাতে বিরাতে দল বেঁধে ছেলেমেয়েদের নিয়ে অশ্লীলপনা। এই উদ্দেশ্যে মোটর যান আইনের শক্তধারা লংঘন করে তার মোটরসাইকেলটিতে সে একটি অতিরিক্ত সাইলেন্সার/ একজস্ট পাইপ বেআইনিভাবে সংযোজন করেছে যা দিয়ে বিকট শব্দ সৃষ্টি হয়।

সমমনা উড়নচণ্ডী মার্কা যুবক-যুবতীদেরকে নিয়ে ফানি ভিডিও মেকিং এর নামে বিপদজনক এবং অশ্লীল ভিডিও বানিয়ে ভিউ বাড়ানো তার একটি উদ্দেশ্য। পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধ, শালীনতা, আইন কানুন ইত্যাদিকে Damn Care করা উঠতি বয়সী একটি গোষ্ঠীর কাছে এদের জনপ্রিয়তা আছে। তার কোনো কোনো ভিডিওতে নয়/ দশ মিলিয়ন ভিউ হওয়ার প্রেক্ষাপটে বিদেশি বিভিন্ন অনলাইন জুয়ারিরা তাকে দিয়ে অনলাইন জুয়ার প্রমোশনাল বিজ্ঞাপন দিয়েছে। সে যে সকল অনলাইন জুয়ার সাইটকে প্রমোট করে তার কয়েকটি হলো 1xBET, V24BET, Fxbet, CX Crickex.

সম্প্রতি রাসেল মিয়া তার বন্ধু ফুয়াদ হাসান রাকিবসহ বাড্ডা থানাধীন আফতাবনগর হাউসিং এর ভিতরকার রাস্তার উপর নিজের KTM 125 মোটরসাইকেলটি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে একটি ভিডিও তৈরি করে। মোটরসাইকেলটি পোড়ানোর কারণ হিসেবে একটি কেস স্লিপ দেখিয়ে সে বলতে থাকে ট্রাফিক পুলিশ অন্যায় ভাবে সেদিন সকালে তার মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করে মামলা দেয়। সেই অন্যায় মামলার প্রতিবাদ করে সে তার ইমোশন, তার ভালোবাসার বাইকটিকে পুড়িয়ে দিচ্ছে।

এ ঘটনা ভিডিও ধারণ করে তিনি নিজেই সামাজিক মাধ্যমে পোস্টও করেন। ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। সেই ভিডিও থেকে আয় করেন মাত্র ২০০ ডলার।

প্রকৃতপক্ষে সেইদিন তাকে কোন মামলায় দেয়া হয়নি। যে কেস স্লিপটি ভিডিওতে সে নিজের বলে দাবি করতে ছিল সেটি তার ছিল না। সেটি ছিল তার বন্ধু ফুয়াদের। বিপদজনকভাবে মোটরসাইকেল চালানো, সিগন্যাল অমান্য করা এবং বেআইনি সংযোজনের কারণে তার বন্ধুকে ঐ মামলা দেয়া হয়েছিল। শুধু ভাইরাল হতে, মিথ্যা হিরোইজম দেখাতে গিয়ে সে এ কাজটি করেছে বলে ডিবি পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে রাসেল মিয়া।

এব্যাপারে ডিবি প্রধান জানান, মানিকগঞ্জের দৌলতপুর এলাকার প্রবাসী বাবা-মায়ের সন্তান রাসেল মিয়া। যিনি নিজেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাসেল ওরফে জুনিয়র টাইগার শ্রফ পরিচয় দিত। এই নামে তিনি ফেসবুক ও ইউটিউবে অন্যের বানানো নানা ধরনের কনটেন্ট পোস্ট করত যার অধিকাংশই অর্থহীন, অশালীন ও দেশের আইন বিরোধী।

রাসেলকে ‘বখে যাওয়া তরুণ’ মন্তব্য করে ডিবি প্রধান আরও বলেন, তিনি ২০২০ সালে এইচএসসি পাশ করার পরে আর পড়াশোনা করেনি। মাঝে কিছু সময় ইন্ডিয়ায় মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেকে জুনিয়র টাইগার শ্রফ পরিচয় দিত। সে প্রতিদিন রাজধানীর পূর্বাচল ৩০০ ফিট রোড, মাওয়া ও আফতাব নগর এলাকায় বিকট শব্দের বাইক রেইস, হাই স্পিডিং, বাইক স্ট্যান্ট চালিয়ে আসছিল। সে মোটরসাইকেল স্পিডিং স্টান্ডিংসহ বিভিন্ন ভিডিও বানিয়ে ইউটিউবে ছাড়ত। এতে তার সামান্য আয় হতো। এতে কোনো মাসে দশ, কোনো মাসে বিশ ডলার তার উপার্জন হতো। আয় বাড়াতে বাইকে আগুন দেওয়ার কাজটি করে রাসেল।

প্রকৃত পক্ষে ভাইরাল হতে, মিথ্যা হিরোইজম দেখাতে গিয়ে সে এ কাজটি করেছে বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন রাসেল। “রাসেলের সঙ্গে জড়িত তরুণ-তরুণীদের নাম-পরিচয় পেয়েছে ডিবি। তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ডিবি।”

বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ও ঘৃণা ছড়ানো, উশৃংখল ও হঠকারি কাজে মাধ্যমে আইন ভঙ্গে প্রচারণা এবং প্রতারণার অভিযোগে তাকে আটক করে গত সন্ধ্যায় বিজ্ঞ আদালতে মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

ভাইরাল হতে গিয়ে ৫ লাখ টাকার মোটরসাইকেল পুড়িয়ে পেলো শুধু ২০০ ডলার

Update Time : ১১:৪৫:০৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

ট্রাফিক পুলিশ অন্যায়ভাবে মামলা দিয়েছে- এমন অভিযোগ এনে নিজের ৫ লাখ টাকার মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া যুবককে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের গাড়িচুরি প্রতিরোধের টিম গত শনিবার রাতে ধানমন্ডি থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে রাসেল মিয়া নামক একজন ইউটিউবার কে গ্রেফতার করে তার হেফাজত থেকে পুড়ে যাওয়া ১টি মোটরসাইকেল ও দুটি স্মার্ট ফোন উদ্ধার করেছে।

রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর মিন্টু রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানান ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর থানার রাসেল মিয়া সোশ্যাল মিডিয়াতে Rasel JTS (Junior Tiger Shroff) নাম ধারণ করে নিজের এবং অন্যের বানানো নানা ধরনের কনটেন্ট পোস্ট করতো যার অধিকাংশই অর্থহীন, অশালীন এবং প্রচলিত আইন কানুন বিরোধী ছিল।

বাবা – মা ও বিদেশে অবস্থান করা এক ভাই – বেকার এই বখাটেকে একটি মোটরসাইকেল কিনে দিলে রাজধানীর ৩০০ ফিট রোড, মাওয়া রোড এবং আফতাব নগরের রোডে তা দিয়ে শুরু করে মোটরসাইকেল দিয়ে বিকট শব্দের খেলা, হাই স্পিডিং, স্ট্যানিং এবং রাতে বিরাতে দল বেঁধে ছেলেমেয়েদের নিয়ে অশ্লীলপনা। এই উদ্দেশ্যে মোটর যান আইনের শক্তধারা লংঘন করে তার মোটরসাইকেলটিতে সে একটি অতিরিক্ত সাইলেন্সার/ একজস্ট পাইপ বেআইনিভাবে সংযোজন করেছে যা দিয়ে বিকট শব্দ সৃষ্টি হয়।

সমমনা উড়নচণ্ডী মার্কা যুবক-যুবতীদেরকে নিয়ে ফানি ভিডিও মেকিং এর নামে বিপদজনক এবং অশ্লীল ভিডিও বানিয়ে ভিউ বাড়ানো তার একটি উদ্দেশ্য। পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধ, শালীনতা, আইন কানুন ইত্যাদিকে Damn Care করা উঠতি বয়সী একটি গোষ্ঠীর কাছে এদের জনপ্রিয়তা আছে। তার কোনো কোনো ভিডিওতে নয়/ দশ মিলিয়ন ভিউ হওয়ার প্রেক্ষাপটে বিদেশি বিভিন্ন অনলাইন জুয়ারিরা তাকে দিয়ে অনলাইন জুয়ার প্রমোশনাল বিজ্ঞাপন দিয়েছে। সে যে সকল অনলাইন জুয়ার সাইটকে প্রমোট করে তার কয়েকটি হলো 1xBET, V24BET, Fxbet, CX Crickex.

সম্প্রতি রাসেল মিয়া তার বন্ধু ফুয়াদ হাসান রাকিবসহ বাড্ডা থানাধীন আফতাবনগর হাউসিং এর ভিতরকার রাস্তার উপর নিজের KTM 125 মোটরসাইকেলটি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে একটি ভিডিও তৈরি করে। মোটরসাইকেলটি পোড়ানোর কারণ হিসেবে একটি কেস স্লিপ দেখিয়ে সে বলতে থাকে ট্রাফিক পুলিশ অন্যায় ভাবে সেদিন সকালে তার মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করে মামলা দেয়। সেই অন্যায় মামলার প্রতিবাদ করে সে তার ইমোশন, তার ভালোবাসার বাইকটিকে পুড়িয়ে দিচ্ছে।

এ ঘটনা ভিডিও ধারণ করে তিনি নিজেই সামাজিক মাধ্যমে পোস্টও করেন। ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। সেই ভিডিও থেকে আয় করেন মাত্র ২০০ ডলার।

প্রকৃতপক্ষে সেইদিন তাকে কোন মামলায় দেয়া হয়নি। যে কেস স্লিপটি ভিডিওতে সে নিজের বলে দাবি করতে ছিল সেটি তার ছিল না। সেটি ছিল তার বন্ধু ফুয়াদের। বিপদজনকভাবে মোটরসাইকেল চালানো, সিগন্যাল অমান্য করা এবং বেআইনি সংযোজনের কারণে তার বন্ধুকে ঐ মামলা দেয়া হয়েছিল। শুধু ভাইরাল হতে, মিথ্যা হিরোইজম দেখাতে গিয়ে সে এ কাজটি করেছে বলে ডিবি পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে রাসেল মিয়া।

এব্যাপারে ডিবি প্রধান জানান, মানিকগঞ্জের দৌলতপুর এলাকার প্রবাসী বাবা-মায়ের সন্তান রাসেল মিয়া। যিনি নিজেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাসেল ওরফে জুনিয়র টাইগার শ্রফ পরিচয় দিত। এই নামে তিনি ফেসবুক ও ইউটিউবে অন্যের বানানো নানা ধরনের কনটেন্ট পোস্ট করত যার অধিকাংশই অর্থহীন, অশালীন ও দেশের আইন বিরোধী।

রাসেলকে ‘বখে যাওয়া তরুণ’ মন্তব্য করে ডিবি প্রধান আরও বলেন, তিনি ২০২০ সালে এইচএসসি পাশ করার পরে আর পড়াশোনা করেনি। মাঝে কিছু সময় ইন্ডিয়ায় মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেকে জুনিয়র টাইগার শ্রফ পরিচয় দিত। সে প্রতিদিন রাজধানীর পূর্বাচল ৩০০ ফিট রোড, মাওয়া ও আফতাব নগর এলাকায় বিকট শব্দের বাইক রেইস, হাই স্পিডিং, বাইক স্ট্যান্ট চালিয়ে আসছিল। সে মোটরসাইকেল স্পিডিং স্টান্ডিংসহ বিভিন্ন ভিডিও বানিয়ে ইউটিউবে ছাড়ত। এতে তার সামান্য আয় হতো। এতে কোনো মাসে দশ, কোনো মাসে বিশ ডলার তার উপার্জন হতো। আয় বাড়াতে বাইকে আগুন দেওয়ার কাজটি করে রাসেল।

প্রকৃত পক্ষে ভাইরাল হতে, মিথ্যা হিরোইজম দেখাতে গিয়ে সে এ কাজটি করেছে বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন রাসেল। “রাসেলের সঙ্গে জড়িত তরুণ-তরুণীদের নাম-পরিচয় পেয়েছে ডিবি। তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ডিবি।”

বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ও ঘৃণা ছড়ানো, উশৃংখল ও হঠকারি কাজে মাধ্যমে আইন ভঙ্গে প্রচারণা এবং প্রতারণার অভিযোগে তাকে আটক করে গত সন্ধ্যায় বিজ্ঞ আদালতে মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।