ঢাকা ১০:১৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
ইবিতে বৃষ্টির আশায় ইসতিসকার নামাজ আদায় সবাইকে সর্বজনীন পেনশনের আওতায় আনা হবে: ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক জমি নিয়ে বিরোধ, ভাতিজার বিরুদ্ধে চাচাকে অপহরণের অভিযোগ মেধা ও মানসিক বিকাশের জন্য বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস পালিত কুষ্টিয়া দৌলতপুরে সাংবাদিকের উপর হামলার এজাহারভুক্ত দুই আসামী গ্রেফতার তীব্র দাবদাহের জন্য ভোটার উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কা আছে: ইসি আনিছুর রহমান এক টাকাও বেতন নেন না চিফ হিট অফিসার: ডিএনসিসি মেয়র রাশিয়ার বিরুদ্ধে দূরপাল্লার মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করছে ইউক্রেন দেশে টিআইএনধারীর সংখ্যা ১ কোটি ২ লাখ ছাড়িয়ে
সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ

বুয়েটের আদলে নির্মাণ অথচ ১৫ বছর ধরে ‘ধার করা’ শিক্ষকে পাঠদান

মো.মুহিবুর রহমান, সিলেট
  • Update Time : ০৫:৩০:১১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৩
  • / ১৬৩ Time View

বুয়েটের আদলে ২০০৫ সালে প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছিলো সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। ২০০৮ সালে এই প্রতিষ্ঠানে শুরু হয় শিক্ষা কার্যক্রম। তবে ১৫ বছর পেরিয়ে গেলেও এখানে এখন পর্যন্ত ‘ধার করা শিক্ষক’ দিয়ে চলছে পাঠদান।

অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরি, পর্যাপ্ত অবকাঠামো থাকলেও পর্যাপ্ত লোকবলের অভাবে খুঁড়িয়ে চলছে প্রতিষ্ঠানটি। এ কলেজের ৭০ পদের ৫০টিই শূন্য রয়েছে। এমনকি নেই স্থায়ী অধ্যক্ষ ও রেজিস্ট্রার। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও প্রেষণে নিয়োগপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার দিয়ে চলছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীভুক্ত এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। লোকবল সঙ্কটসহ আরো নানা সমস্যায় ভুগছে কলেজটি। দীর্ঘদিন ধরে এসব সমস্যা সমাধানের দাবি জানিয়েও কোনো সুফল পাচ্ছেন না শিক্ষার্থীরা। এমনকি ৫ বছর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই কলেজকে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের আশ্বাস দিলেও তা আজ পর্যন্ত পূরণ হয়নি।

২০০৫ সালে তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকারের সময় সিলেট নগরের টিলাগড় আলুরতল এলাকায় সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে আট একর জায়গা নিয়ে স্থাপন হয় সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। এখানে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগ (ইইই), পুরকৌশল বিভাগ (সিএ), কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগে স্নাতক (সম্মান) পড়ার সুযোগ রয়েছে। এই তিন বিভাগে বর্তমানে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৬৫০ জন। এ কলেজে তিনটি একাডেমিক ভবন (সিএসই, ইইই, সিই ভবন), একটি লাইব্রেরি ও প্রশাসনিক ভবন ছাড়াও অধ্যক্ষের বাসভবন, শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের বাসভবন, ছাত্রদের জন্য দুটি ও ছাত্রীদের একটি আবাসিক হল রয়েছে। অবকাঠামোয় স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও এখানে নেই পর্যাপ্ত জনবল।

কলেজের প্রশাসনিক শাখা থেকে জানা যায়, ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত এই কলেজে কোন স্থায়ী অধ্যক্ষ নিয়োগ দেয়া হয়নি। দীর্ঘ প্রায় এক যুগ সিলেট পলিটেকনিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ এই কলেজটিরও অস্থায়ী অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর থেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়ে চলছে কার্যক্রম। অধ্যক্ষ ছাড়াও শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীর বেশিরভাগ পদও শূন্য। স্থায়ী শিক্ষক না থাকায় অতিথি শিক্ষককে নিয়ে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। অস্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চালাচ্ছেন প্রশাসনিক ও দাপ্তরিক কার্যক্রম।

জানা যায়, কলেজে অধ্যাপকের তিনটি পদ রয়েছে। তবে এ যাবতকালে একজন অধ্যাপকও এখানে নিয়োগ দেয়া হয়নি । সহযোগী অধ্যাপকের আটটি পদের মধ্যে আছেন দু’জন। তাদের একজন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান আব্দুর রউফ। তিনি বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া সহকারী অধ্যাপকের ১৫টি পদের মধ্যে সাতজন এবং প্রভাষকের ১৬টি পদের মধ্যে আটজন কর্মরত আছেন। ফলে সবমিলিয়ে শিক্ষকের ৪৪ পদের মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ১৫ জন।

অন্যদিকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ২৬টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র তিনজন। অন্যান্য কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অতিথি ও প্রেষণে আনা শিক্ষক-কর্মকর্তাদের দিয়ে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম কোনো রকমে চালিয়ে নেয়া হচ্ছে।

কলেজের একাধিক শিক্ষার্থী নওরোজ প্রতিবেদককে জানান, প্রতিটি বিভাগে অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরি থাকলেও জনবলের অভাবে সেগুলো অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। অনেক ল্যাবরেটরির যন্ত্রপাতিও নষ্ট হয়ে গেছে। কলেজের বিশাল লাইব্রেরি অনেকটা অব্যবহৃত অবস্থায় রয়েছে। ল্যাব টেকনিশিয়ান ও লাইব্রেরিয়ানের পদগুলো শূন্য আছে শুরু থেকেই। কলেজে নেই কোনো পরিবহন ব্যবস্থা। ফলে ক্যাম্পাস থেকে নগরে আসতে শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এছাড়া কলেজে ছাত্রাবাস থাকলেও সেখানে নেই খাবারের ব্যবস্থা। ফলে হলে থাকা ছাত্রদের বাইরে থেকে খাবারের ব্যবস্থা করতে হয়।

এই কলেজের শিক্ষার্থী রাহেল আহমদ নওরোজ প্রতিবেদককে জানান, ‘শিক্ষক না থাকাই এই কলেজের প্রধান সমস্যা। মাঝেমাঝে বাইরে থেকে শিক্ষক এসে ক্লাস করান। তবে তারাও নিয়মিত আসেন না। ফলে একটি সেমিস্টার শেষ হতে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সময় লেগে যায়।’
তিনি বলেন, ‘কর্মকর্তা-কর্মচারী না থাকায় ল্যাবরেটরি এবং লাইব্রেরিও আমরা নিয়মিত ব্যবহার করতে পারি না। ফলে এখানকার বইপত্র ও যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে।’

ছাত্রাবাসে থাকা আরেক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে নওরোজ প্রতিবেদককে জানান, ‘হলের ক্যান্টিন শুরু থেকেই বন্ধ। খাবারের ব্যবস্থা নেই। ফলে বাইরে থেকে খাবার কিনে খেতে হয় আমাদের। খাবারের জন্য রাতে সবচেয়ে সমস্যায় পড়তে হয়।’

তিনি বলেন, ‘নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা না থাকায় যাতায়াতও একটা বড় সমস্যা। ছাত্রীরা ক্যাম্পাস থেকে শহরে যেতে সবচেয়ে সমস্যায় পড়ে। অনেকে ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে।’

ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজকে পূর্ণাঙ্গ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করার করার দাবি দীর্ঘদিনের। শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের এ দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে আয়োজিত জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কলেজকে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের আশ্বাস দেন। তবে এই আশ্বাসের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।

সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. সেলিম জানান, ‘আমি এখানে প্রেষণে দায়িত্বে আছি। আমি ছাড়া কোন কর্মকর্তা এখানে নেই। কলেজের নিয়োগবিধি না থাকায় প্রথম দিকে জনবল নিয়োগ দেয়া যায়নি। এখন নিয়োগবিধি হয়েছে। লোকবল নিয়োগের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।’
লোকবল সংকটে কার্যক্রম ব্যহতের কথা জানিয়ে সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ নওরোজ প্রতিবেদককে বলেন, ‘এখানে জনবল নিয়োগ দেয় পিএসসি। আমরা মন্ত্রণালয়ে সংকটের কথা জানিয়েছি। তারা নিয়োগের আশ্বাস দিয়েছেন।’তবে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এসে এখানে নিয়মিত ক্লাস নেন বলে জানান আব্দুর রউফ।

তিনি বলেন, ‘বাদবাকি যে সমস্যা সেগুলোও লোকবল সংকটের কারণে হচ্ছে। কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দিলে এসব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।’

Please Share This Post in Your Social Media

সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ

বুয়েটের আদলে নির্মাণ অথচ ১৫ বছর ধরে ‘ধার করা’ শিক্ষকে পাঠদান

Update Time : ০৫:৩০:১১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৩

বুয়েটের আদলে ২০০৫ সালে প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছিলো সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। ২০০৮ সালে এই প্রতিষ্ঠানে শুরু হয় শিক্ষা কার্যক্রম। তবে ১৫ বছর পেরিয়ে গেলেও এখানে এখন পর্যন্ত ‘ধার করা শিক্ষক’ দিয়ে চলছে পাঠদান।

অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরি, পর্যাপ্ত অবকাঠামো থাকলেও পর্যাপ্ত লোকবলের অভাবে খুঁড়িয়ে চলছে প্রতিষ্ঠানটি। এ কলেজের ৭০ পদের ৫০টিই শূন্য রয়েছে। এমনকি নেই স্থায়ী অধ্যক্ষ ও রেজিস্ট্রার। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও প্রেষণে নিয়োগপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার দিয়ে চলছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীভুক্ত এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। লোকবল সঙ্কটসহ আরো নানা সমস্যায় ভুগছে কলেজটি। দীর্ঘদিন ধরে এসব সমস্যা সমাধানের দাবি জানিয়েও কোনো সুফল পাচ্ছেন না শিক্ষার্থীরা। এমনকি ৫ বছর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই কলেজকে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের আশ্বাস দিলেও তা আজ পর্যন্ত পূরণ হয়নি।

২০০৫ সালে তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকারের সময় সিলেট নগরের টিলাগড় আলুরতল এলাকায় সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে আট একর জায়গা নিয়ে স্থাপন হয় সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। এখানে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগ (ইইই), পুরকৌশল বিভাগ (সিএ), কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগে স্নাতক (সম্মান) পড়ার সুযোগ রয়েছে। এই তিন বিভাগে বর্তমানে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৬৫০ জন। এ কলেজে তিনটি একাডেমিক ভবন (সিএসই, ইইই, সিই ভবন), একটি লাইব্রেরি ও প্রশাসনিক ভবন ছাড়াও অধ্যক্ষের বাসভবন, শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের বাসভবন, ছাত্রদের জন্য দুটি ও ছাত্রীদের একটি আবাসিক হল রয়েছে। অবকাঠামোয় স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও এখানে নেই পর্যাপ্ত জনবল।

কলেজের প্রশাসনিক শাখা থেকে জানা যায়, ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত এই কলেজে কোন স্থায়ী অধ্যক্ষ নিয়োগ দেয়া হয়নি। দীর্ঘ প্রায় এক যুগ সিলেট পলিটেকনিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ এই কলেজটিরও অস্থায়ী অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর থেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়ে চলছে কার্যক্রম। অধ্যক্ষ ছাড়াও শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীর বেশিরভাগ পদও শূন্য। স্থায়ী শিক্ষক না থাকায় অতিথি শিক্ষককে নিয়ে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। অস্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চালাচ্ছেন প্রশাসনিক ও দাপ্তরিক কার্যক্রম।

জানা যায়, কলেজে অধ্যাপকের তিনটি পদ রয়েছে। তবে এ যাবতকালে একজন অধ্যাপকও এখানে নিয়োগ দেয়া হয়নি । সহযোগী অধ্যাপকের আটটি পদের মধ্যে আছেন দু’জন। তাদের একজন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান আব্দুর রউফ। তিনি বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া সহকারী অধ্যাপকের ১৫টি পদের মধ্যে সাতজন এবং প্রভাষকের ১৬টি পদের মধ্যে আটজন কর্মরত আছেন। ফলে সবমিলিয়ে শিক্ষকের ৪৪ পদের মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ১৫ জন।

অন্যদিকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ২৬টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র তিনজন। অন্যান্য কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অতিথি ও প্রেষণে আনা শিক্ষক-কর্মকর্তাদের দিয়ে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম কোনো রকমে চালিয়ে নেয়া হচ্ছে।

কলেজের একাধিক শিক্ষার্থী নওরোজ প্রতিবেদককে জানান, প্রতিটি বিভাগে অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরি থাকলেও জনবলের অভাবে সেগুলো অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। অনেক ল্যাবরেটরির যন্ত্রপাতিও নষ্ট হয়ে গেছে। কলেজের বিশাল লাইব্রেরি অনেকটা অব্যবহৃত অবস্থায় রয়েছে। ল্যাব টেকনিশিয়ান ও লাইব্রেরিয়ানের পদগুলো শূন্য আছে শুরু থেকেই। কলেজে নেই কোনো পরিবহন ব্যবস্থা। ফলে ক্যাম্পাস থেকে নগরে আসতে শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এছাড়া কলেজে ছাত্রাবাস থাকলেও সেখানে নেই খাবারের ব্যবস্থা। ফলে হলে থাকা ছাত্রদের বাইরে থেকে খাবারের ব্যবস্থা করতে হয়।

এই কলেজের শিক্ষার্থী রাহেল আহমদ নওরোজ প্রতিবেদককে জানান, ‘শিক্ষক না থাকাই এই কলেজের প্রধান সমস্যা। মাঝেমাঝে বাইরে থেকে শিক্ষক এসে ক্লাস করান। তবে তারাও নিয়মিত আসেন না। ফলে একটি সেমিস্টার শেষ হতে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সময় লেগে যায়।’
তিনি বলেন, ‘কর্মকর্তা-কর্মচারী না থাকায় ল্যাবরেটরি এবং লাইব্রেরিও আমরা নিয়মিত ব্যবহার করতে পারি না। ফলে এখানকার বইপত্র ও যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে।’

ছাত্রাবাসে থাকা আরেক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে নওরোজ প্রতিবেদককে জানান, ‘হলের ক্যান্টিন শুরু থেকেই বন্ধ। খাবারের ব্যবস্থা নেই। ফলে বাইরে থেকে খাবার কিনে খেতে হয় আমাদের। খাবারের জন্য রাতে সবচেয়ে সমস্যায় পড়তে হয়।’

তিনি বলেন, ‘নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা না থাকায় যাতায়াতও একটা বড় সমস্যা। ছাত্রীরা ক্যাম্পাস থেকে শহরে যেতে সবচেয়ে সমস্যায় পড়ে। অনেকে ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে।’

ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজকে পূর্ণাঙ্গ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করার করার দাবি দীর্ঘদিনের। শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের এ দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে আয়োজিত জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কলেজকে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের আশ্বাস দেন। তবে এই আশ্বাসের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।

সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. সেলিম জানান, ‘আমি এখানে প্রেষণে দায়িত্বে আছি। আমি ছাড়া কোন কর্মকর্তা এখানে নেই। কলেজের নিয়োগবিধি না থাকায় প্রথম দিকে জনবল নিয়োগ দেয়া যায়নি। এখন নিয়োগবিধি হয়েছে। লোকবল নিয়োগের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।’
লোকবল সংকটে কার্যক্রম ব্যহতের কথা জানিয়ে সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ নওরোজ প্রতিবেদককে বলেন, ‘এখানে জনবল নিয়োগ দেয় পিএসসি। আমরা মন্ত্রণালয়ে সংকটের কথা জানিয়েছি। তারা নিয়োগের আশ্বাস দিয়েছেন।’তবে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এসে এখানে নিয়মিত ক্লাস নেন বলে জানান আব্দুর রউফ।

তিনি বলেন, ‘বাদবাকি যে সমস্যা সেগুলোও লোকবল সংকটের কারণে হচ্ছে। কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দিলে এসব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।’