ঢাকা ০৬:১৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
অবিলম্বে ১০ম ওয়েজবোর্ড গঠন করুন: বিএফইউজে ও ডিইউজে নেতৃবৃন্দ অজ্ঞান করে স্বর্ণ ও টাকা চুরির রহস্য উদঘাটন ও চোরাই মালামালসহ গ্রেফতার ১ কয়েন প্রতারণার ফাঁদে ফেলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া চক্রের দুই সদস্য গ্রেফতার ফেসবুকে অপপ্রচার: জবি শিক্ষককের বিচার চেয়ে ভিসির কাছে ডীনের অভিযোগ কুড়িগ্রামে ছাত্রীনিবাসের সামনে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গির ভিডিও ধারণ, যুবকের কারাদণ্ড সাইকেল চালিয়ে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পাড়ি দিয়েছেন “দিদার” টাঙ্গাইলে মেয়ে ও জামাতার বিরুদ্ধে বাবাকে নির্যাতনের অভিযোগ, বৃদ্ধের মৃত্যু আখেরী মোনাজাতের মধ্যে দিয়ে জাকের পার্টির বিশ্ব ইসলামি মহা সম্মেলন ও মহা পবিত্র ফাতেহা শরীফের সমাপ্তি টঙ্গীতে পরিবহনে চাঁদাবাজি, গ্রেফতার ৮ সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা সম্ভবঃ প্রধান বিচারপতি 

নিজের কবর নিজে খুড়ে মৃত্যুর অপেক্ষায় সাত বছর

আবু সাঈদ, শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
  • Update Time : ০৫:৩৬:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • / ৫০ Time View

গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার লোহাগাছ (পশ্চিম পাড়া) এলাকার আমীর আলী (১১০) তার বসতঘরের পাশেই নিজের কবর খুঁড়ে রেখেছেন। গত কমপক্ষে সাত বছর যাবত খুঁড়ে রাখা ওই কবরের পাশেই বসে থেকে দিনের অধিকাংশ সময় কাটান। প্রয়োজন হলে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজও করেন। ওই কবরের ওপরে দু’চালা টিনের ছাউনি দিয়ে রেখেছেন।

স্ত্রী আমেনা খাতুনের মৃত্যুর পর তাকেও তার কবরেরর পাশে দাফনের জন্য উত্তসুরীদের অনুরোধ করে গেছেন। এদিকে স্বামী-স্ত্রী দু’জনের মধ্যে বোঝাপড়া করেছেন, যার আগে মৃত্যু হবে সে যেন পাশপাশি দু’জনের কবরের ব্যবস্থা করেন।

মৃত্যুর আগে কবর খুঁড়ে রাখার এমন ঘটনা এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। আশপাশের লোক ছাড়াও বিভিন্ন এলাকা থেকে খবর পেয়ে লোকজন খুঁড়ে রাখা কবর দেখতে আসছেন। আমীর আলী অভধ্যাতিক জগতের একটি ত্বরিকা অনুসরণ করেন। কিন্তু ওই ত্বরিকায় তাকে মৃত্যুর আগে নিজের কবর খুঁড়ে রাখার বিধান নেই।

আমীর আলী বলেন তার বয়স ১১০ বছর। তার মনে চেয়েছে নিজের কবর নিজে খুঁড়ে রাখার জন্য। সেই ভাবনা থেকেই গত বছর সাতেক আগে তিনি নিজেই দিনের পর দিন কবরটি খুঁড়ে কবরের ভেতরের দেয়াল (ইটের গাঁথূনি) দিয়ে পাকা করেছেন। তার মৃত্যুর পর তার কবর খোড়ার জন্য যেন কাউকে পরিশ্রম করতে না হয় সেই ভাবনা থেকেই তিনি এ কাজটি করেছেন। এতে কারও প্ররোচনা বা কারও পরামর্শ তিনি নেননি বলেও জানান।

তিনি বলেন, একটি মাত্র পুত্র সন্তান রয়েছে তাদের। সেও স্ত্রী সন্তান নিয়ে সংসার করছে। তার প্রতি কোনো ক্ষোভ নেই। বয়সের ভারে আমীর আলী রুটি রুজি করতে পারেন না। ঘরে যা থাকে, বা কেউ কিছু দিয়ে গেলে তা দিয়েই যা রান্না হয় স্ত্রীকে নিয়ে সেসব খেয়েই তাদের দিন চলে যায়। খাবার যোগাড় না থাকলে না খেয়েই চলে যায় কয়েকদিন। বাড়ি ছেড়ে বাইরে গিয়ে কারও কাছে হাত পাততে যান না। মৃত্যুর প্রহর গণনা করার কথা জানিয়ে আমীর আলী বলেন, তার মৃত্যু আগে হলে তাকে তার স্ত্রী খুঁড়ে রাখা কবরে শোয়াবে। আর যদি স্ত্রী আগে মারা যায় তবে স্ত্রীকে তার খুড়ে রাখা কবরের পাশে খনন করে শোয়াবে।

আমীর আলীর স্ত্রী আমেনা বেগম বলেন, সে বলেছে সে আগে চলে যাবে। খুড়ে রাখা কবর দেখে তার মনটা সব সময় নরম থাকবে। কবর খননে কাউকে কোনো পরিশ্রম করতে না দেওয়ার জন্যই নিজের কবর নিজে খনন করেছে। সে যেখানে কবরস্থ হবে আমাকে তার পাশে জায়গা রেখে গেছে। সেখানে আমার কবর হবে। আমার কবর অবশ্য খনন করা নেই। এটা আমার এবং তার প্রতিজ্ঞা। আমাদের চির বিদায়ের পর আমাদের একমাত্র ছেলে এবং পীর ভাই কবরের দেখভাল করবে। আমার স্বামী আগে মারা গেলে তাকে তার কবরেই দাফন করব। আমি আগে মারা গেলে সে আমাকে তার খনন করা কবরের পাশে কবর খনন করে সেখানে শায়িত করবে।

স্থানীয় শিক্ষার্থী মাশরাফি সরকার বলেন, গত ৫/৭ বছর যাবত দেখছি করব খুঁড়ে রেখেছে। তিনি কবরের পাশেই বসে থাকেন, নামাজ পড়েন। উনার স্ত্রীও সব সময় উনার পাশে থাকে।

প্রতিবেশী ইসমাইল হোসেন বলেন, আমীর আলী নিজের কবর নিজেই অগ্রীম খুড়ে রেখেছে। এলাকার সকলের সাথে আমি নিজেও গিয়ে দেখে এসেছি। মৃত্যুর আগে কবর খুড়ে রেখেছে, তার মৃত্যু এখানে হবে কিনা আল্লাহ ছাড়া কে জানে? তার বিষয় সে যেমন বুঝেছে তেমনই বাড়ির সামনে কবর খুড়ে রেখেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা যুবক সাহিদ মিয়া বলেন, কবর খুড়ে রাখাই শেষ নয়, কাফনের কাপড়ও সে এনে রেখেছে। এলাকার মানুষ সবাই জানে। এমনিতে মানুষ তার অগ্রীম খুড়ে রাখা কবর দেখতে যায়। বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ আসে তার কবর দেখতে। তার বাড়িতে কয়দিন পর পর মাহফিল হচ্ছে। তারা ঢাকার দোহার এলাকার কাটাখালীর মুরিদান।

আমীর আলীর বন্ধু ইব্রাহীম হোসেন বলেন, তার কবর সে নিজেই খনন করেছে কিনা জানিনা। তবে কবর দেখেছি। আমরা তার বাড়িতে প্রতি বৃহষ্পতিবার যাই। জিকির আসগার করি। আমরা একই তরিকার লোক। সে আমাদের কাছে বলেছে, তার কবর সে নিজেই খনন করেছে। মারা গেলে তাকে এখানে কবর দেওয়ার কথাও সে বলেছে। অগ্রীম কবর খনননের ব্যাপারে কিছু জানার প্রয়োজন পড়ে না তাই জিজ্ঞেস করি না।

শ্রীপুর পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাহিদ সরকার বলেন, এলাকার মানুষসহ আমরা সবাই জানি আমীর আলী তার কবর নিজেই অগ্রীম খনন করে রেখেছে। বাড়িতে সে জিকির আসগার, মিলাদ মাহফিল ওয়াজ নসিহত করে। বয়স বেশি হওয়ায় আমরা তাকে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দিয়েছি।

Please Share This Post in Your Social Media

নিজের কবর নিজে খুড়ে মৃত্যুর অপেক্ষায় সাত বছর

Update Time : ০৫:৩৬:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার লোহাগাছ (পশ্চিম পাড়া) এলাকার আমীর আলী (১১০) তার বসতঘরের পাশেই নিজের কবর খুঁড়ে রেখেছেন। গত কমপক্ষে সাত বছর যাবত খুঁড়ে রাখা ওই কবরের পাশেই বসে থেকে দিনের অধিকাংশ সময় কাটান। প্রয়োজন হলে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজও করেন। ওই কবরের ওপরে দু’চালা টিনের ছাউনি দিয়ে রেখেছেন।

স্ত্রী আমেনা খাতুনের মৃত্যুর পর তাকেও তার কবরেরর পাশে দাফনের জন্য উত্তসুরীদের অনুরোধ করে গেছেন। এদিকে স্বামী-স্ত্রী দু’জনের মধ্যে বোঝাপড়া করেছেন, যার আগে মৃত্যু হবে সে যেন পাশপাশি দু’জনের কবরের ব্যবস্থা করেন।

মৃত্যুর আগে কবর খুঁড়ে রাখার এমন ঘটনা এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। আশপাশের লোক ছাড়াও বিভিন্ন এলাকা থেকে খবর পেয়ে লোকজন খুঁড়ে রাখা কবর দেখতে আসছেন। আমীর আলী অভধ্যাতিক জগতের একটি ত্বরিকা অনুসরণ করেন। কিন্তু ওই ত্বরিকায় তাকে মৃত্যুর আগে নিজের কবর খুঁড়ে রাখার বিধান নেই।

আমীর আলী বলেন তার বয়স ১১০ বছর। তার মনে চেয়েছে নিজের কবর নিজে খুঁড়ে রাখার জন্য। সেই ভাবনা থেকেই গত বছর সাতেক আগে তিনি নিজেই দিনের পর দিন কবরটি খুঁড়ে কবরের ভেতরের দেয়াল (ইটের গাঁথূনি) দিয়ে পাকা করেছেন। তার মৃত্যুর পর তার কবর খোড়ার জন্য যেন কাউকে পরিশ্রম করতে না হয় সেই ভাবনা থেকেই তিনি এ কাজটি করেছেন। এতে কারও প্ররোচনা বা কারও পরামর্শ তিনি নেননি বলেও জানান।

তিনি বলেন, একটি মাত্র পুত্র সন্তান রয়েছে তাদের। সেও স্ত্রী সন্তান নিয়ে সংসার করছে। তার প্রতি কোনো ক্ষোভ নেই। বয়সের ভারে আমীর আলী রুটি রুজি করতে পারেন না। ঘরে যা থাকে, বা কেউ কিছু দিয়ে গেলে তা দিয়েই যা রান্না হয় স্ত্রীকে নিয়ে সেসব খেয়েই তাদের দিন চলে যায়। খাবার যোগাড় না থাকলে না খেয়েই চলে যায় কয়েকদিন। বাড়ি ছেড়ে বাইরে গিয়ে কারও কাছে হাত পাততে যান না। মৃত্যুর প্রহর গণনা করার কথা জানিয়ে আমীর আলী বলেন, তার মৃত্যু আগে হলে তাকে তার স্ত্রী খুঁড়ে রাখা কবরে শোয়াবে। আর যদি স্ত্রী আগে মারা যায় তবে স্ত্রীকে তার খুড়ে রাখা কবরের পাশে খনন করে শোয়াবে।

আমীর আলীর স্ত্রী আমেনা বেগম বলেন, সে বলেছে সে আগে চলে যাবে। খুড়ে রাখা কবর দেখে তার মনটা সব সময় নরম থাকবে। কবর খননে কাউকে কোনো পরিশ্রম করতে না দেওয়ার জন্যই নিজের কবর নিজে খনন করেছে। সে যেখানে কবরস্থ হবে আমাকে তার পাশে জায়গা রেখে গেছে। সেখানে আমার কবর হবে। আমার কবর অবশ্য খনন করা নেই। এটা আমার এবং তার প্রতিজ্ঞা। আমাদের চির বিদায়ের পর আমাদের একমাত্র ছেলে এবং পীর ভাই কবরের দেখভাল করবে। আমার স্বামী আগে মারা গেলে তাকে তার কবরেই দাফন করব। আমি আগে মারা গেলে সে আমাকে তার খনন করা কবরের পাশে কবর খনন করে সেখানে শায়িত করবে।

স্থানীয় শিক্ষার্থী মাশরাফি সরকার বলেন, গত ৫/৭ বছর যাবত দেখছি করব খুঁড়ে রেখেছে। তিনি কবরের পাশেই বসে থাকেন, নামাজ পড়েন। উনার স্ত্রীও সব সময় উনার পাশে থাকে।

প্রতিবেশী ইসমাইল হোসেন বলেন, আমীর আলী নিজের কবর নিজেই অগ্রীম খুড়ে রেখেছে। এলাকার সকলের সাথে আমি নিজেও গিয়ে দেখে এসেছি। মৃত্যুর আগে কবর খুড়ে রেখেছে, তার মৃত্যু এখানে হবে কিনা আল্লাহ ছাড়া কে জানে? তার বিষয় সে যেমন বুঝেছে তেমনই বাড়ির সামনে কবর খুড়ে রেখেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা যুবক সাহিদ মিয়া বলেন, কবর খুড়ে রাখাই শেষ নয়, কাফনের কাপড়ও সে এনে রেখেছে। এলাকার মানুষ সবাই জানে। এমনিতে মানুষ তার অগ্রীম খুড়ে রাখা কবর দেখতে যায়। বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ আসে তার কবর দেখতে। তার বাড়িতে কয়দিন পর পর মাহফিল হচ্ছে। তারা ঢাকার দোহার এলাকার কাটাখালীর মুরিদান।

আমীর আলীর বন্ধু ইব্রাহীম হোসেন বলেন, তার কবর সে নিজেই খনন করেছে কিনা জানিনা। তবে কবর দেখেছি। আমরা তার বাড়িতে প্রতি বৃহষ্পতিবার যাই। জিকির আসগার করি। আমরা একই তরিকার লোক। সে আমাদের কাছে বলেছে, তার কবর সে নিজেই খনন করেছে। মারা গেলে তাকে এখানে কবর দেওয়ার কথাও সে বলেছে। অগ্রীম কবর খনননের ব্যাপারে কিছু জানার প্রয়োজন পড়ে না তাই জিজ্ঞেস করি না।

শ্রীপুর পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাহিদ সরকার বলেন, এলাকার মানুষসহ আমরা সবাই জানি আমীর আলী তার কবর নিজেই অগ্রীম খনন করে রেখেছে। বাড়িতে সে জিকির আসগার, মিলাদ মাহফিল ওয়াজ নসিহত করে। বয়স বেশি হওয়ায় আমরা তাকে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দিয়েছি।