ঢাকা ০৯:৪৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
শত কোটি টাকা আত্মসাৎ: দেশত্যাগের সময় বিমানবন্দরে বিশ্বাস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আটক লালপুরে আ,লীগ নেতাকে গুলি করে হত্যা ইবিতে নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও আনসার কর্তৃক শিক্ষক হেনস্তার অভিযোগ টেকনাফের বার্মিজ মার্কেটে সাবের হত্যা মামলার ৬ আসামী গ্রেফতার ইবিতে বৃষ্টির আশায় ইসতিসকার নামাজ আদায় সবাইকে সর্বজনীন পেনশনের আওতায় আনা হবে: ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক জমি নিয়ে বিরোধ, ভাতিজার বিরুদ্ধে চাচাকে অপহরণের অভিযোগ মেধা ও মানসিক বিকাশের জন্য বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস পালিত কুষ্টিয়া দৌলতপুরে সাংবাদিকের উপর হামলার এজাহারভুক্ত দুই আসামী গ্রেফতার

তিস্তার পাড়ে আরব্য উপন্যাসের ‘আলী বাবা থিম পার্ক’

কামরুল হাসান টিটু, রংপুর
  • Update Time : ০১:০৬:২৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৫ জুলাই ২০২৩
  • / ১৫৭ Time View

আরব্য উপন্যাসের সহস্র রজনীর ‘আলী বাবা ও চল্লিশ চোর’ গল্পের একটি জাদু শব্দ। যে গল্পে ৪০ জন চোর তাদের চুরি করা ধনরত্ন একটি গুহায় লুকিয়ে রাখত। আরব্য রজনীর সেই গল্প অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে বিনোদন কেন্দ্র ‘আলী বাবা থিম পার্ক’। যেখানে গেলেই মনে করিয়ে দেবে আরব্য উপন্যাসের আলী বাবা ও চল্লিশ চোরের সেই রূপকথা।

ঈদুল আজহা ঘিরে দর্শনার্থীদের পদতচারণায় মুখরিত ‘আলী বাবা থিম পার্ক’। তিস্তা নদীরপাড়ে গড়ে তোলা এই বিনোদন কেন্দ্র এখন ছোট-বড় বয়সী মানুষের বিনোদনের খোড়াক। আবহমান বাংলার অতীত ঐতিহ্য এবং গ্রামীণ সংস্কৃতির সঙ্গে ‘আলীবাবা ও চল্লিশ চোর’ গল্পের আদলে সাজানো এখানকার স্থাপনা।

রংপুর শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়ন। এর খুব কাছাকাছি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ সুন্দরগঞ্জ পৌরসভা। সেখান থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে মীরগঞ্জ-চেতন্য-ইমামগঞ্জ বাজার হয়ে সোজা উত্তর দিকে গাইবান্ধা, রংপুর, কুড়িগ্রাম জেলার সম্মিলন স্থানে দাঁড়িয়ে আছে এক নৈসর্গিক প্রাকৃতিক পরিবেশে ‘আলী বাবা থিম পার্ক’।

তিস্তা নদী তীরবর্তী আলী বাবা থিম পার্কটি এখন শুধু বিনোদন কেন্দ্রই নয়, এটি সেখানকার চরবাসীকে স্বাবলম্বী করে তোলার স্বপ্ন দুয়ার। এই বিনোদন কেন্দ্রের কোলঘেঁষে রয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র। বেসরকারি এই সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে ঘিরেও প্রকৃতি প্রেমীদের ভিড় বেড়েছে নদীর তীরে।

স্থানীয়রা বলছেন, বছর দশেক আগেও মানুষ যা ভাবেনি, তাই গড়ে উঠেছে তিস্তাপাড়ে। রাক্ষুসী তিস্তা নদী কখনো শান্ত, আবার কখনো সেখানে পানির হু-হু শব্দ আর শব্দ। শুকিয়ে গেলে দেখা যায় শুধুই ধু-ধু বালুচর। যেখানে গাছগাছালি, পশুপাখি আর মানুষের কোনো অস্তিত্ব কখনো কল্পনাই করা যেত না। এখন ঠিক সেখানেই আলীবাবা থিম পার্ক ও সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির অবস্থান।

তিস্তা নদীর তীরে ধু-ধু বালুচরে ৩০ একর জমির উপর চমৎকার এক নৈসর্গিক প্রাকৃতিক পরিবেশে নির্মিত হয়েছে আলী বাবা থিম পার্কটি। এর পাশেই চরের ৭০০ একর জমির ওপর বেক্সিমকোর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান তিস্তা সোলার লিমিটেডের সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। সেখান থেকে বৃহত্তর রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলে বিদ্যুৎ ঘাটতি পূরণে ছড়িয়ে আশার আলো। এখানে ৫ লাখ ২০ হাজার সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে। ১৬টি কনভার্টার স্টেশনের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে ২শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পৌঁছে যাচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, এখন নদীর তীর ঘেঁষে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় শুধু ঈদ নয়, উপলক্ষ্য ছাড়াও এখানে এসেছেন নানান বয়সী মানুষ। বর্ষাকাল আর বন্যার পানিতে যৌবন ফিরে পাওয়া তিস্তার অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভিড় আছে ভ্রমণ পিপাসুদের। সাথে রংপুর,গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম জেলার হাজারো মানুষের কাছে বিনোদন স্পটে পরিণত হয়েছে এলাকাটি।

আলী বাবা থিম পার্কের প্রবেশপথ পার হতেই নজর কাড়বে মহান আল্লাহ তায়ালার ৯৯ নাম খচিত নির্মাণাধীন ২০ মিটার উঁচু ভাস্কর্য। আরব্য উপন্যাসের সেই জাদু শব্দ ‘চিচিং ফাঁক’ বলে দরজা খুলে মণিমাণিক্য না মিললেও এই পার্কের দেয়াল থেকে সহজেই চোখের পলক ফেলানো সম্ভব নয়। কারণ দেয়ালে দেখাবে চোখে পড়বে জাতীয় স্মৃতিসৌধ, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম, জেরুজালেমের পবিত্র মসজিদ আল-আকসা, পবিত্র কাবা-শরিফ, মা ফাতেমা (রা.)-এর বাড়ি, জর্ডানের মরুভূমির সেই সাহাবি ও খেঁজুর গাছসহ খোদাই করা বিভিন্ন ঐতিহাসিক নিদর্শনের চিত্র।

দর্শনার্থীদের বসার জন্য রয়েছে সিমেন্ট দিয়ে গাছের আদলে তৈরি করা বসার চেয়ার, রয়েছে বেঞ্চ। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগিয়ে পরিপাটি করে সাজানো হয়েছে নয়নাভিরাম রাস্তা। সমুদ্রের বড় মাছের খাদ্যসংস্থান কিভাবে হয় ও আগ্নেগিরির গলিত লাভা এবং বড় বড় সাপ কিভাবে মানুষকে দংশন করতে পারে তাও দেখা যাবে। হাটতে হাটতে পার্কের উত্তরে গেলে নজরে পড়বে নির্মাণাধীন পাহাড়, পানির উপর দিয়ে ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা, পানির ঢেউ। রয়েছে পিকনিক স্পট ও রিসোর্ট সেন্টার।

পীরগাছা উপজেলার কান্দি বাজার থেকে ঘুরতে আসা আমিনুল ইসলাম জুয়েল নামের এক দর্শনার্থী জানান, তিস্তা, ঘাঘট ও বুড়াইল নদ-নদী বেষ্টিত পীরগাছাতে তেমন কোনো বিনোদন কেন্দ্র নেই। তবে দর্শনীয় স্থান হিসেবে তিনটি জমিদার বাড়ি, দেবী চৌধুরাণীর পুকুর, বিরবিরিয়ার বিল, তিন গম্বুজ বিশিষ্ট প্রাচীন মসজিদ এবং সৈয়দপুর ও পাওটানাতে নদীতীরে বোল্ডারপার রয়েছে। এসব স্পটের সাথে এখন নতুন করে সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং আলী বাবা থিম পার্ক যোগ হয়েছে। উন্নতমানের বিনোদন কেন্দ্র না থাকায় প্রকৃতি প্রেমীরা সময় কাটানোর পাশাপাশি আনন্দ উল্লাস করতে তিস্তা নদীর তীরে বেড়াতে আসেন বলেও তিনি জানান।

পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঘুরতে এসেছেন সুন্দরগঞ্জের সাজেদুল ইসলাম। সবুজ গাছগাছালিতে ভরা নির্মল পরিবেশে গড়া এই পার্কের সবকিছুই ভালো লেগেছে তার। হাস্যেজ্জ্বল মুখে তিনি বলেন, পার্কটি আমার খুব ভালো লেগেছে। পুরো নির্মাণ কাজ শেষ হলে বিশ্বের সকল পার্কের বিষয়বস্তু এখানে থাকবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

কথা হয় পার্কে ঘুরতে আসা কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার জুম্মারহাট এলাকার ব্যবসায়ী চান মিয়ার সাথে। তিনি বলেন, এ পার্কের কথাশুনে আমি পরিবারসহ ঘুরতে এসেছি। আমাদের খুব ভালো লাগছে। বর্ষাকালে এটিকে আরও বেশি সুন্দর লাগছে। পার্কের পাশে তিস্তা নদীর স্রোত, নৌকার ছুটোছুটি, সঙ্গে চরের বুকে বিশাল সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র, সবমিলিয়ে অনেক বেশি উপভোগ করার মতো ।

বর্তমানে এই এলাকায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মানুষের আনাগোনা থাকে। নদীর বুকে নৌকার ছুটে চলা আর বিকেল বেলা আকাশে মেঘের রঙিন রূপ, মনে দোলা দেয়। শিল্পীর রঙ তুলিতে আঁকা ছবির মতোই যেন এখানকার আকাশ। রঙিন মেঘ আর নদীর রুপ অসাধারণ। নদীর কোল ঘেঁষে বাঁধের মতো সড়ক ধরে হাটতে হাটতে হারিয়ে যেতে মন চাইবে। কিন্তু এখানে হারিয়ে যাওয়া মানা। আর সন্ধ্যালগ্নে লাবণ্য লুকিয়ে মেঘের রঙ পরিবর্তনও বিমোহিত করে প্রকৃতি প্রেমীদের।

আলী বাবা থিম পার্কের উদ্যোক্তা ইয়ার আলী জানান, ব্যতিক্রমধর্মী বিনোদন দিতে তিনি এ উদ্যোগ নিয়েছেন। পার্কটি এখানকার হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। বেকারত্ব ঘোচানোর সঙ্গে এই অঞ্চলের মানুষের বিনোদনেও ভূমিকা রাখবে। পুরো
পরিকল্পনা অনুযায়ী এ পার্কের নির্মাণ কাজ শেষ হলে এটি হবে রংপুর অঞ্চলের বিশেষত্বে ভরা বিনোদনের একটি অন্যতম আকর্ষণীয় কেন্দ্রস্থল। বর্তমানে প্রায় প্রতিদিনই পার্কটিকে কেন্দ্র করে শত শত দর্শনার্থী ভ্রমণ করতে আসছেন বলেও জানান তিনি।

Please Share This Post in Your Social Media

তিস্তার পাড়ে আরব্য উপন্যাসের ‘আলী বাবা থিম পার্ক’

Update Time : ০১:০৬:২৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৫ জুলাই ২০২৩

আরব্য উপন্যাসের সহস্র রজনীর ‘আলী বাবা ও চল্লিশ চোর’ গল্পের একটি জাদু শব্দ। যে গল্পে ৪০ জন চোর তাদের চুরি করা ধনরত্ন একটি গুহায় লুকিয়ে রাখত। আরব্য রজনীর সেই গল্প অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে বিনোদন কেন্দ্র ‘আলী বাবা থিম পার্ক’। যেখানে গেলেই মনে করিয়ে দেবে আরব্য উপন্যাসের আলী বাবা ও চল্লিশ চোরের সেই রূপকথা।

ঈদুল আজহা ঘিরে দর্শনার্থীদের পদতচারণায় মুখরিত ‘আলী বাবা থিম পার্ক’। তিস্তা নদীরপাড়ে গড়ে তোলা এই বিনোদন কেন্দ্র এখন ছোট-বড় বয়সী মানুষের বিনোদনের খোড়াক। আবহমান বাংলার অতীত ঐতিহ্য এবং গ্রামীণ সংস্কৃতির সঙ্গে ‘আলীবাবা ও চল্লিশ চোর’ গল্পের আদলে সাজানো এখানকার স্থাপনা।

রংপুর শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়ন। এর খুব কাছাকাছি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ সুন্দরগঞ্জ পৌরসভা। সেখান থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে মীরগঞ্জ-চেতন্য-ইমামগঞ্জ বাজার হয়ে সোজা উত্তর দিকে গাইবান্ধা, রংপুর, কুড়িগ্রাম জেলার সম্মিলন স্থানে দাঁড়িয়ে আছে এক নৈসর্গিক প্রাকৃতিক পরিবেশে ‘আলী বাবা থিম পার্ক’।

তিস্তা নদী তীরবর্তী আলী বাবা থিম পার্কটি এখন শুধু বিনোদন কেন্দ্রই নয়, এটি সেখানকার চরবাসীকে স্বাবলম্বী করে তোলার স্বপ্ন দুয়ার। এই বিনোদন কেন্দ্রের কোলঘেঁষে রয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র। বেসরকারি এই সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে ঘিরেও প্রকৃতি প্রেমীদের ভিড় বেড়েছে নদীর তীরে।

স্থানীয়রা বলছেন, বছর দশেক আগেও মানুষ যা ভাবেনি, তাই গড়ে উঠেছে তিস্তাপাড়ে। রাক্ষুসী তিস্তা নদী কখনো শান্ত, আবার কখনো সেখানে পানির হু-হু শব্দ আর শব্দ। শুকিয়ে গেলে দেখা যায় শুধুই ধু-ধু বালুচর। যেখানে গাছগাছালি, পশুপাখি আর মানুষের কোনো অস্তিত্ব কখনো কল্পনাই করা যেত না। এখন ঠিক সেখানেই আলীবাবা থিম পার্ক ও সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির অবস্থান।

তিস্তা নদীর তীরে ধু-ধু বালুচরে ৩০ একর জমির উপর চমৎকার এক নৈসর্গিক প্রাকৃতিক পরিবেশে নির্মিত হয়েছে আলী বাবা থিম পার্কটি। এর পাশেই চরের ৭০০ একর জমির ওপর বেক্সিমকোর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান তিস্তা সোলার লিমিটেডের সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। সেখান থেকে বৃহত্তর রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলে বিদ্যুৎ ঘাটতি পূরণে ছড়িয়ে আশার আলো। এখানে ৫ লাখ ২০ হাজার সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে। ১৬টি কনভার্টার স্টেশনের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে ২শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পৌঁছে যাচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, এখন নদীর তীর ঘেঁষে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় শুধু ঈদ নয়, উপলক্ষ্য ছাড়াও এখানে এসেছেন নানান বয়সী মানুষ। বর্ষাকাল আর বন্যার পানিতে যৌবন ফিরে পাওয়া তিস্তার অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভিড় আছে ভ্রমণ পিপাসুদের। সাথে রংপুর,গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম জেলার হাজারো মানুষের কাছে বিনোদন স্পটে পরিণত হয়েছে এলাকাটি।

আলী বাবা থিম পার্কের প্রবেশপথ পার হতেই নজর কাড়বে মহান আল্লাহ তায়ালার ৯৯ নাম খচিত নির্মাণাধীন ২০ মিটার উঁচু ভাস্কর্য। আরব্য উপন্যাসের সেই জাদু শব্দ ‘চিচিং ফাঁক’ বলে দরজা খুলে মণিমাণিক্য না মিললেও এই পার্কের দেয়াল থেকে সহজেই চোখের পলক ফেলানো সম্ভব নয়। কারণ দেয়ালে দেখাবে চোখে পড়বে জাতীয় স্মৃতিসৌধ, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম, জেরুজালেমের পবিত্র মসজিদ আল-আকসা, পবিত্র কাবা-শরিফ, মা ফাতেমা (রা.)-এর বাড়ি, জর্ডানের মরুভূমির সেই সাহাবি ও খেঁজুর গাছসহ খোদাই করা বিভিন্ন ঐতিহাসিক নিদর্শনের চিত্র।

দর্শনার্থীদের বসার জন্য রয়েছে সিমেন্ট দিয়ে গাছের আদলে তৈরি করা বসার চেয়ার, রয়েছে বেঞ্চ। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগিয়ে পরিপাটি করে সাজানো হয়েছে নয়নাভিরাম রাস্তা। সমুদ্রের বড় মাছের খাদ্যসংস্থান কিভাবে হয় ও আগ্নেগিরির গলিত লাভা এবং বড় বড় সাপ কিভাবে মানুষকে দংশন করতে পারে তাও দেখা যাবে। হাটতে হাটতে পার্কের উত্তরে গেলে নজরে পড়বে নির্মাণাধীন পাহাড়, পানির উপর দিয়ে ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা, পানির ঢেউ। রয়েছে পিকনিক স্পট ও রিসোর্ট সেন্টার।

পীরগাছা উপজেলার কান্দি বাজার থেকে ঘুরতে আসা আমিনুল ইসলাম জুয়েল নামের এক দর্শনার্থী জানান, তিস্তা, ঘাঘট ও বুড়াইল নদ-নদী বেষ্টিত পীরগাছাতে তেমন কোনো বিনোদন কেন্দ্র নেই। তবে দর্শনীয় স্থান হিসেবে তিনটি জমিদার বাড়ি, দেবী চৌধুরাণীর পুকুর, বিরবিরিয়ার বিল, তিন গম্বুজ বিশিষ্ট প্রাচীন মসজিদ এবং সৈয়দপুর ও পাওটানাতে নদীতীরে বোল্ডারপার রয়েছে। এসব স্পটের সাথে এখন নতুন করে সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং আলী বাবা থিম পার্ক যোগ হয়েছে। উন্নতমানের বিনোদন কেন্দ্র না থাকায় প্রকৃতি প্রেমীরা সময় কাটানোর পাশাপাশি আনন্দ উল্লাস করতে তিস্তা নদীর তীরে বেড়াতে আসেন বলেও তিনি জানান।

পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঘুরতে এসেছেন সুন্দরগঞ্জের সাজেদুল ইসলাম। সবুজ গাছগাছালিতে ভরা নির্মল পরিবেশে গড়া এই পার্কের সবকিছুই ভালো লেগেছে তার। হাস্যেজ্জ্বল মুখে তিনি বলেন, পার্কটি আমার খুব ভালো লেগেছে। পুরো নির্মাণ কাজ শেষ হলে বিশ্বের সকল পার্কের বিষয়বস্তু এখানে থাকবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

কথা হয় পার্কে ঘুরতে আসা কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার জুম্মারহাট এলাকার ব্যবসায়ী চান মিয়ার সাথে। তিনি বলেন, এ পার্কের কথাশুনে আমি পরিবারসহ ঘুরতে এসেছি। আমাদের খুব ভালো লাগছে। বর্ষাকালে এটিকে আরও বেশি সুন্দর লাগছে। পার্কের পাশে তিস্তা নদীর স্রোত, নৌকার ছুটোছুটি, সঙ্গে চরের বুকে বিশাল সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র, সবমিলিয়ে অনেক বেশি উপভোগ করার মতো ।

বর্তমানে এই এলাকায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মানুষের আনাগোনা থাকে। নদীর বুকে নৌকার ছুটে চলা আর বিকেল বেলা আকাশে মেঘের রঙিন রূপ, মনে দোলা দেয়। শিল্পীর রঙ তুলিতে আঁকা ছবির মতোই যেন এখানকার আকাশ। রঙিন মেঘ আর নদীর রুপ অসাধারণ। নদীর কোল ঘেঁষে বাঁধের মতো সড়ক ধরে হাটতে হাটতে হারিয়ে যেতে মন চাইবে। কিন্তু এখানে হারিয়ে যাওয়া মানা। আর সন্ধ্যালগ্নে লাবণ্য লুকিয়ে মেঘের রঙ পরিবর্তনও বিমোহিত করে প্রকৃতি প্রেমীদের।

আলী বাবা থিম পার্কের উদ্যোক্তা ইয়ার আলী জানান, ব্যতিক্রমধর্মী বিনোদন দিতে তিনি এ উদ্যোগ নিয়েছেন। পার্কটি এখানকার হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। বেকারত্ব ঘোচানোর সঙ্গে এই অঞ্চলের মানুষের বিনোদনেও ভূমিকা রাখবে। পুরো
পরিকল্পনা অনুযায়ী এ পার্কের নির্মাণ কাজ শেষ হলে এটি হবে রংপুর অঞ্চলের বিশেষত্বে ভরা বিনোদনের একটি অন্যতম আকর্ষণীয় কেন্দ্রস্থল। বর্তমানে প্রায় প্রতিদিনই পার্কটিকে কেন্দ্র করে শত শত দর্শনার্থী ভ্রমণ করতে আসছেন বলেও জানান তিনি।