ঢাকা ০১:৫৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
আজ সেই ভয়াল ৩ মে! প্রবাসীদের সেবার মান বাড়াতে স্মার্ট কার্ড প্রদান করা হবে – ড. মোমেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের উপস্থিতি হার ৯০ শতাংশ ইবিতে ‘বি’ ইউনিটের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত অবিলম্বে ১০ম ওয়েজবোর্ড গঠন করুন: বিএফইউজে ও ডিইউজে নেতৃবৃন্দ অজ্ঞান করে স্বর্ণ ও টাকা চুরির রহস্য উদঘাটন ও চোরাই মালামালসহ গ্রেফতার ১ কয়েন প্রতারণার ফাঁদে ফেলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া চক্রের দুই সদস্য গ্রেফতার ফেসবুকে অপপ্রচার: জবি শিক্ষককের বিচার চেয়ে ভিসির কাছে ডীনের অভিযোগ কুড়িগ্রামে ছাত্রীনিবাসের সামনে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গির ভিডিও ধারণ, যুবকের কারাদণ্ড সাইকেল চালিয়ে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পাড়ি দিয়েছেন “দিদার”

ডাকাত দলের সর্দারসহ ১১জন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৩

শরিফুল হক পাভেল
  • Update Time : ১১:৫৫:০৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ জানুয়ারী ২০২৪
  • / ৬৬ Time View

রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন মহাসড়ক ও এলাকায় দুর্ধর্ষ ডাকাতির সাথে জড়িত সংঘবদ্ধ ডাকাতদলের সর্দারসহ ১১ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-৩)।

র‌্যাব জানিয়েছে, রাজধানীর কদমতলী এলাকা থেকে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে দেশীয় অস্ত্র এবং ডাকাতির সরঞ্জামসহ তাদের গ্রেফতার করা হয়।

মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর টিকাটুলিতে র‌্যাব-৩ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে- আবুল হোসেন (৩৫), মো. মাসুদ রানা (২৬), জসিম মিয়া (৩৩), রহমত আলী (২৮), নয়ন মিয়া (২৪), মো. ইব্রাহীম (২৬), মো. ইদ্রিস (২৩), মো. কফিল উদ্দিন (৩২), হাসান আলী (২৩), জুয়েল (৩৫) ও মো. আলমাস (২৭)।

এ সময় ডাকাত সদস্যদের কাছ থেকে ডাকাতি করে নেওয়া একটি পিকআপসহ ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত দু’টি চাপাতি, ছুরি, চারটি গামছা, তিনটি রশি, ১১টি মোবাইল ফোন, একটি হাতঘড়ি ও সাত হাজার টাকাসহ বিভিন্ন জিনিস উদ্ধার করা হয়।

আরিফ মহিউদ্দিন বলেন, গত ৩১ ডিসেম্বর কুমিল্লা জেলার লালমাই থানাধীন কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কে গতিরোধ করে মালামালসহ পন্যবাহী পিকআপ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কুমিল্লা জেলার লালমাই থানায় ৩১ ডিসেম্বর অজ্ঞাত ৩/৪ জনের বিরুদ্ধে একটি ডাকাতির মামলা করা হয়। এতে জড়িত আসামীদেরকে আইনের আওতায় আনতে র‌্যাব-৩ গোয়েন্দা নজরদারী শুরু করে।

র‌্যাব-৩ এর একটি দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ৩১ ডিসেম্বর রাতে রাজধানীর কদমতলী থানাধীন মুক্তি ফিলিং স্টেশন সংলগ্ন সাকিব টি-স্টলের সামনে অভিযান চালিয়ে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে তাদের গ্রেফতার করে।

তিনি বলেন, এই ডাকাত দলটির সদস্যরা বর্তমানে রাজধানী ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করে। তারা দৃশ্যমান পেশা হিসেবে বিভিন্ন পেশায় কাজ করলেও ডাকাতিই তাদের মূল পেশা। গ্রেফতারকৃত আবুলের নেতৃত্বে সংগঠিত হওয়ার পর হতে অদ্যাবধি তারা বেশকয়েকটি মহাসড়কে পণ্যবাহী যানবাহন, বাস, ঘরবাড়ি ও দোকানে ডাকাতি এবং প্রবাসী যাত্রীদের টার্গেট করে ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে।

তিনি বলেন,গত ৩১ ডিসেম্বর কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কে মালামালসহ পন্যবাহী পিকআপ ডাকাতির ঘটনা ঘটে।

ভিকটিম শাহেদুল হক রাজধানীর কদমতলী থানাধীন দক্ষিণ দনিয়া এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন এবং একটি পিকআপ ভাড়ায় চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। সেদিন রাজধানী কেরানীগঞ্জের বসুন্ধরা রিভারভিউ এলাকার অক্সিকন কনস্ট্রাকশন এডমিক্সার কোম্পানীর হেড অফিস থেকে ১২৫ টি (২০০০ কেজি) অক্সিকন কনস্ট্রাকশন এডমিক্সার নিয়ে নোয়াখালী জেলার উদ্দেশ্যে রওনা করেন। পথিমধ্যে রাত ৩ টার পর কুমিল্লা জেলার লালমাই থানাধীন কুমিল্লা টু নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের শানিচৌ নামক স্থানে একদল ডাকাত একটি সাদা বলেরো পিকআপ যোগে সামনে গিয়ে গতিরোধ করে ভিকটিমকে তার পিকআপ থেকে টেনে-হিচড়ে নামিয়ে রাস্তার পাশে ফেলে মারপিট করতে থাকে। তারা ভিকটিম শাহেদুলকে চাপাতি, সুইচ-গিয়ারসহ দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র দিয়ে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয় এবং তার হাত-পা রশি দিয়ে ও মুখ টেপ দিয়ে বেধে মালামালসহ তার পিকআপটি নিয়ে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন এসে আহত অবস্থায় ভিকটিমকে উদ্ধার করে নিকটস্থ থানায় খবর দেয়।

উক্ত ঘটনায় কুমিল্লা জেলার লালমাই থানায় ৩১/১২/২০২৩ তারিখে অজ্ঞাত ৩/৪ জনের বিরুদ্ধে একটি দস্যুতার মামলা করা হয়।

ঘটনায় জড়িত আসামীদেরকে আইনের আওতায় আনতে র‌্যাব-৩ গোয়েন্দা নজরদারী শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-৩ এর একটি চৌকশ দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ৩১ তারিখ সকাল ১০ টায় রাজধানীর কদমতলী এলাকায় মুক্তি ফিলিং স্টেশন সংলগ্ন সাকিব টি-স্টলের সামনে অভিযান পরিচালনা করে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে দুর্ধর্ষ ডাকাত দলের নেতা ১। মোঃ আবুল হোসেন (৩৫), ২। মোঃ রহমত আলী (২৮), ৩। মোঃ জসিম মিয়া (৩৩), ৪। মোঃ নয়ন মিয়া (২৪), ৫। মোঃ ইব্রাহীম (২৬)কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

গ্রেফতারকালে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত ১ টি পিকআপ, ১ টি চাপাতি, ১ টি ছুরি, ৪ টি গামছা, ৩ টি রশি, ৫ টি মোবাইল ফোন, ১ টি হাত ঘড়ি এবং নগদ ৭৩১০ টাকা উদ্ধার করা হয়।

গ্রেফতারকৃত ৫ জনের দেয়া তথ্যমতে পরদিন ১ জানুয়ারি ২০২৪ রাত দেড়টায় রাজধানীর কদমতলী থানাধীন শনির আখড়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সংঘবদ্ধ দুর্ধর্ষ ডাকাত দলের সদস্য ১। মোঃ ইদ্রিস (২৩), ২। মোঃ মাসুদ রানা (২৬), ৩। মোঃ কফিল উদ্দিন (৩২), ৪। হাসান আলী (২৩)কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

গ্রেফতারকালে তাদের হেফাজত হতে ৩১/১২/২০২৩ তারিখে কুমিল্লার লালমাই হতে ছিনতাইকৃত ১২৫ ড্রাম অক্সিকন কনস্ট্রাকশন এডমিক্সার বোঝাইসহ ১ টি পিকআপ এবং ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত আরও ১ টি বলেরো পিকআপ, ১ টি চাপাতি, ১ টি ছুরি, ৩ টি লোহার রড, ৩ টি স্ক্রু ডাইভার, ১ টি টেপ, ৪ টি মোবাইল উদ্ধার করা হয়।

এছাড়াও উপরোক্ত ৪ জনের দেয়া তথ্যমতে ১ জানুয়ারি ২০২৪ রাজধানীর শনির আখড়া এলাকা হতে দলের অন্য সহযোগী ১। মোঃ জুয়েল (৩৫), ২। মোঃ আলমাস (২৭)কে ১ টি চোরাই পিকআপ ও ২ টি মোবাইলসহ হাতেনাতে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, দুর্ধর্ষ এই ডাকাত দলটির সকল সদস্যই বর্তমানে ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করে। তারা দৃশ্যমান পেশা হিসেবে বিভিন্ন পেশায় কাজ করলেও ডাকাতিই তাদের মূল পেশা।

গ্রেফতারকৃত আবুলের নেতৃত্বে সংগঠিত হওয়ার পর তারা বেশকয়েকটি মহাসড়কে পণ্যবাহী যানবাহনে ডাকাতি, বাসে ডাকাতি, ঘরবাড়ি ও দোকানে ডাকাতি এবং প্রবাসী যাত্রীদের টার্গেট করে ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা আরও জানায় যে, তারা মহাসড়কে নির্জন কোন স্থানে এসে টার্গেটকৃত গাড়িটিকে ওভারটেক করে গতিরোধপূর্বক গাড়িতে থাকা ড্রাইভারসহ সকলকে দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্র, সুইচ গিয়ার, চাপাতি, স্টীলের পাইপ ইত্যাদি দ্বারা মারপিট করে ও প্রাণে মেরে ফেলার ভয়ভীতি দেখিয়ে হাত-পা ও মুখ বেঁধে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে গাড়ি এবং মালামাল নিয়ে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে তারা ডাকাতি করা মালামাল এবং গাড়িগুলো বিভিন্ন চোরাকারবারীদের কাছে বিক্রি করে দেয়।

তাদের দেয়া তথ্যমতে সর্বশেষ রাজধানীর কদমতলী এলাকায় একটি পণ্যবাহী গাড়ি ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ১টি চোরাই পিকআপ এবং ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র ও সরঞ্জামাদিসহ র‌্যাব-৩ এর হাতে গ্রেফতার হয়।

গ্রেফতারকৃত আবুল হোসেন পেশায় একজন ট্রাকচালক। তার এই পেশার আড়ালে সে সরাসরি উক্ত ডাকাত দলটির নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। তার সাথে অন্যতম সহযোগী হিসেবে মাসুদ রানা ডাকাতির কার্যক্রম পরিচালনা করত। মাসুদ মূলত একজন মাছ ব্যবসায়ী এবং সে তার ব্যবসার আড়ালে ডাকাতি করত।

গ্রেফতারকৃত জসিম এবং জুয়েল পেশায় মিনি ট্রাক চালক। ডাকাতিকৃত যানবাহনগুলো তারা সু-কৌশলে বিভিন্ন জায়গায় চোরাকারবারীর কাছে পৌছে দিত। এছাড়াও জুয়েল ডাকাতি করে আনা কিছু গাড়ি সংরক্ষণ করতো।

গ্রেফতারকৃত ইদ্রিস চোরাই গাড়ি ক্রয় বিক্রয় করতো। পাশাপাশি সে ডাকাতির জন্য প্রয়োজনীয় গাড়ি সরবরাহ করতো।

আসামি আলমাস পেশায় মুদি ব্যবসায়ী। সে তার পেশার আড়ালে চোরাকারবারীদের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখতো এবং ডাকাতি করা মালামাল তাদের কাছে বিক্রয় করতো।

Please Share This Post in Your Social Media

ডাকাত দলের সর্দারসহ ১১জন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৩

Update Time : ১১:৫৫:০৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ জানুয়ারী ২০২৪

রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন মহাসড়ক ও এলাকায় দুর্ধর্ষ ডাকাতির সাথে জড়িত সংঘবদ্ধ ডাকাতদলের সর্দারসহ ১১ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-৩)।

র‌্যাব জানিয়েছে, রাজধানীর কদমতলী এলাকা থেকে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে দেশীয় অস্ত্র এবং ডাকাতির সরঞ্জামসহ তাদের গ্রেফতার করা হয়।

মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর টিকাটুলিতে র‌্যাব-৩ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে- আবুল হোসেন (৩৫), মো. মাসুদ রানা (২৬), জসিম মিয়া (৩৩), রহমত আলী (২৮), নয়ন মিয়া (২৪), মো. ইব্রাহীম (২৬), মো. ইদ্রিস (২৩), মো. কফিল উদ্দিন (৩২), হাসান আলী (২৩), জুয়েল (৩৫) ও মো. আলমাস (২৭)।

এ সময় ডাকাত সদস্যদের কাছ থেকে ডাকাতি করে নেওয়া একটি পিকআপসহ ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত দু’টি চাপাতি, ছুরি, চারটি গামছা, তিনটি রশি, ১১টি মোবাইল ফোন, একটি হাতঘড়ি ও সাত হাজার টাকাসহ বিভিন্ন জিনিস উদ্ধার করা হয়।

আরিফ মহিউদ্দিন বলেন, গত ৩১ ডিসেম্বর কুমিল্লা জেলার লালমাই থানাধীন কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কে গতিরোধ করে মালামালসহ পন্যবাহী পিকআপ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কুমিল্লা জেলার লালমাই থানায় ৩১ ডিসেম্বর অজ্ঞাত ৩/৪ জনের বিরুদ্ধে একটি ডাকাতির মামলা করা হয়। এতে জড়িত আসামীদেরকে আইনের আওতায় আনতে র‌্যাব-৩ গোয়েন্দা নজরদারী শুরু করে।

র‌্যাব-৩ এর একটি দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ৩১ ডিসেম্বর রাতে রাজধানীর কদমতলী থানাধীন মুক্তি ফিলিং স্টেশন সংলগ্ন সাকিব টি-স্টলের সামনে অভিযান চালিয়ে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে তাদের গ্রেফতার করে।

তিনি বলেন, এই ডাকাত দলটির সদস্যরা বর্তমানে রাজধানী ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করে। তারা দৃশ্যমান পেশা হিসেবে বিভিন্ন পেশায় কাজ করলেও ডাকাতিই তাদের মূল পেশা। গ্রেফতারকৃত আবুলের নেতৃত্বে সংগঠিত হওয়ার পর হতে অদ্যাবধি তারা বেশকয়েকটি মহাসড়কে পণ্যবাহী যানবাহন, বাস, ঘরবাড়ি ও দোকানে ডাকাতি এবং প্রবাসী যাত্রীদের টার্গেট করে ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে।

তিনি বলেন,গত ৩১ ডিসেম্বর কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কে মালামালসহ পন্যবাহী পিকআপ ডাকাতির ঘটনা ঘটে।

ভিকটিম শাহেদুল হক রাজধানীর কদমতলী থানাধীন দক্ষিণ দনিয়া এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন এবং একটি পিকআপ ভাড়ায় চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। সেদিন রাজধানী কেরানীগঞ্জের বসুন্ধরা রিভারভিউ এলাকার অক্সিকন কনস্ট্রাকশন এডমিক্সার কোম্পানীর হেড অফিস থেকে ১২৫ টি (২০০০ কেজি) অক্সিকন কনস্ট্রাকশন এডমিক্সার নিয়ে নোয়াখালী জেলার উদ্দেশ্যে রওনা করেন। পথিমধ্যে রাত ৩ টার পর কুমিল্লা জেলার লালমাই থানাধীন কুমিল্লা টু নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের শানিচৌ নামক স্থানে একদল ডাকাত একটি সাদা বলেরো পিকআপ যোগে সামনে গিয়ে গতিরোধ করে ভিকটিমকে তার পিকআপ থেকে টেনে-হিচড়ে নামিয়ে রাস্তার পাশে ফেলে মারপিট করতে থাকে। তারা ভিকটিম শাহেদুলকে চাপাতি, সুইচ-গিয়ারসহ দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র দিয়ে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয় এবং তার হাত-পা রশি দিয়ে ও মুখ টেপ দিয়ে বেধে মালামালসহ তার পিকআপটি নিয়ে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন এসে আহত অবস্থায় ভিকটিমকে উদ্ধার করে নিকটস্থ থানায় খবর দেয়।

উক্ত ঘটনায় কুমিল্লা জেলার লালমাই থানায় ৩১/১২/২০২৩ তারিখে অজ্ঞাত ৩/৪ জনের বিরুদ্ধে একটি দস্যুতার মামলা করা হয়।

ঘটনায় জড়িত আসামীদেরকে আইনের আওতায় আনতে র‌্যাব-৩ গোয়েন্দা নজরদারী শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-৩ এর একটি চৌকশ দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ৩১ তারিখ সকাল ১০ টায় রাজধানীর কদমতলী এলাকায় মুক্তি ফিলিং স্টেশন সংলগ্ন সাকিব টি-স্টলের সামনে অভিযান পরিচালনা করে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে দুর্ধর্ষ ডাকাত দলের নেতা ১। মোঃ আবুল হোসেন (৩৫), ২। মোঃ রহমত আলী (২৮), ৩। মোঃ জসিম মিয়া (৩৩), ৪। মোঃ নয়ন মিয়া (২৪), ৫। মোঃ ইব্রাহীম (২৬)কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

গ্রেফতারকালে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত ১ টি পিকআপ, ১ টি চাপাতি, ১ টি ছুরি, ৪ টি গামছা, ৩ টি রশি, ৫ টি মোবাইল ফোন, ১ টি হাত ঘড়ি এবং নগদ ৭৩১০ টাকা উদ্ধার করা হয়।

গ্রেফতারকৃত ৫ জনের দেয়া তথ্যমতে পরদিন ১ জানুয়ারি ২০২৪ রাত দেড়টায় রাজধানীর কদমতলী থানাধীন শনির আখড়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সংঘবদ্ধ দুর্ধর্ষ ডাকাত দলের সদস্য ১। মোঃ ইদ্রিস (২৩), ২। মোঃ মাসুদ রানা (২৬), ৩। মোঃ কফিল উদ্দিন (৩২), ৪। হাসান আলী (২৩)কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

গ্রেফতারকালে তাদের হেফাজত হতে ৩১/১২/২০২৩ তারিখে কুমিল্লার লালমাই হতে ছিনতাইকৃত ১২৫ ড্রাম অক্সিকন কনস্ট্রাকশন এডমিক্সার বোঝাইসহ ১ টি পিকআপ এবং ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত আরও ১ টি বলেরো পিকআপ, ১ টি চাপাতি, ১ টি ছুরি, ৩ টি লোহার রড, ৩ টি স্ক্রু ডাইভার, ১ টি টেপ, ৪ টি মোবাইল উদ্ধার করা হয়।

এছাড়াও উপরোক্ত ৪ জনের দেয়া তথ্যমতে ১ জানুয়ারি ২০২৪ রাজধানীর শনির আখড়া এলাকা হতে দলের অন্য সহযোগী ১। মোঃ জুয়েল (৩৫), ২। মোঃ আলমাস (২৭)কে ১ টি চোরাই পিকআপ ও ২ টি মোবাইলসহ হাতেনাতে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, দুর্ধর্ষ এই ডাকাত দলটির সকল সদস্যই বর্তমানে ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করে। তারা দৃশ্যমান পেশা হিসেবে বিভিন্ন পেশায় কাজ করলেও ডাকাতিই তাদের মূল পেশা।

গ্রেফতারকৃত আবুলের নেতৃত্বে সংগঠিত হওয়ার পর তারা বেশকয়েকটি মহাসড়কে পণ্যবাহী যানবাহনে ডাকাতি, বাসে ডাকাতি, ঘরবাড়ি ও দোকানে ডাকাতি এবং প্রবাসী যাত্রীদের টার্গেট করে ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা আরও জানায় যে, তারা মহাসড়কে নির্জন কোন স্থানে এসে টার্গেটকৃত গাড়িটিকে ওভারটেক করে গতিরোধপূর্বক গাড়িতে থাকা ড্রাইভারসহ সকলকে দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্র, সুইচ গিয়ার, চাপাতি, স্টীলের পাইপ ইত্যাদি দ্বারা মারপিট করে ও প্রাণে মেরে ফেলার ভয়ভীতি দেখিয়ে হাত-পা ও মুখ বেঁধে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে গাড়ি এবং মালামাল নিয়ে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে তারা ডাকাতি করা মালামাল এবং গাড়িগুলো বিভিন্ন চোরাকারবারীদের কাছে বিক্রি করে দেয়।

তাদের দেয়া তথ্যমতে সর্বশেষ রাজধানীর কদমতলী এলাকায় একটি পণ্যবাহী গাড়ি ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ১টি চোরাই পিকআপ এবং ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র ও সরঞ্জামাদিসহ র‌্যাব-৩ এর হাতে গ্রেফতার হয়।

গ্রেফতারকৃত আবুল হোসেন পেশায় একজন ট্রাকচালক। তার এই পেশার আড়ালে সে সরাসরি উক্ত ডাকাত দলটির নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। তার সাথে অন্যতম সহযোগী হিসেবে মাসুদ রানা ডাকাতির কার্যক্রম পরিচালনা করত। মাসুদ মূলত একজন মাছ ব্যবসায়ী এবং সে তার ব্যবসার আড়ালে ডাকাতি করত।

গ্রেফতারকৃত জসিম এবং জুয়েল পেশায় মিনি ট্রাক চালক। ডাকাতিকৃত যানবাহনগুলো তারা সু-কৌশলে বিভিন্ন জায়গায় চোরাকারবারীর কাছে পৌছে দিত। এছাড়াও জুয়েল ডাকাতি করে আনা কিছু গাড়ি সংরক্ষণ করতো।

গ্রেফতারকৃত ইদ্রিস চোরাই গাড়ি ক্রয় বিক্রয় করতো। পাশাপাশি সে ডাকাতির জন্য প্রয়োজনীয় গাড়ি সরবরাহ করতো।

আসামি আলমাস পেশায় মুদি ব্যবসায়ী। সে তার পেশার আড়ালে চোরাকারবারীদের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখতো এবং ডাকাতি করা মালামাল তাদের কাছে বিক্রয় করতো।