কুড়িগ্রামে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের রোষানলে পড়ে পদ হারালেন শিক্ষিকা
- Update Time : ০২:৩৭:২৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ অগাস্ট ২০২৩
- / ১৪৬ Time View
কুড়িগ্রামে এক উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অন্য উপজেলায় স্থানান্তর করার সম্মতি না দেওয়াসহ গণমাধ্যমকর্মীর কাছে বক্তব্য দেওয়ায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে অব্যহতি দিয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে পদে নিযুক্ত করা হয়েছে।
এবং বিদ্যালয় স্থানান্তরের সাথে অভিযুক্ত সহকারি শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু ছালেহ সরকার ক্ষুব্ধ হয়ে এই ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, গত ২৮ আগষ্ট উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু ছালেহ সরকার স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, উত্তর খাউরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইনসাব আলীর অবসর জনিত কারণে একই বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক জুলেখা খাতুনকে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়।
দায়িত্বে অবহেলা, বিদ্যালয় পরিচালনাসহ তার অন্যান্য জ্ঞান কম থাকায় বিদ্যালয়ের সার্বিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়েছে। এমতাবস্থায় বিদ্যালয়ের ও শিক্ষার্থীদের লেখা পড়ার মান নিশ্চিত করতে জুলেখা খাতুনের পরিবর্তে সিনিয়র শিক্ষক আবু হোসেন মোল্লাকে দায়িত্বভার প্রদান করা হলো।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ওই বিদ্যালয়ের কর্মরত ৫ জন সহকারি শিক্ষকের মধ্যে জুলেখা খাতুন ২০০৬ সালের ৩ আগষ্ট, আবু হোসেন মোল্লা-২০১৭সালের ০১এপ্রিল,লায়লা খাতুন-২০১৬ সালের ১১জুলাই, হাসান মাহমুদ-২০২০সালের ০২ ফেব্রুয়ারি এবং মুবারক হোসেন-২০২৩ সালের ২২ফেব্রুয়ারি যোগদান করেন।
এদের মধ্যে চাকুরি হবার পর ওই বিদ্যালয়ে প্রথম যোগদান করেন সহকারি শিক্ষক জুলেখা খাতুন। তিনি সি ইন এড কোর্স সম্পন্ন করেছেন এবং প্রায় ৬ বছর ধরে ওই বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
আর সহকারি শিক্ষক আবু হোসেন মোল্লার দ্বিতীয় যোগদান ওই বিদ্যালয়ে। তিনি বি এড কোর্স সম্পন্ন করেছেন।
উল্লেখ্য, চিলমারী উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নের উত্তর খাউরিয়ার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ভাঙনের কবলে পড়ে। পরে সেটি বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবু হোসেন মোল্লা তার দলবল নিয়ে বিদ্যালয়ের আসবাবপত্র পার্শ্ববর্তী রৌমারী উপজেলায় নিয়ে যান। সেখানে একটি নিচু জমিতে স্কুল ঘরটি নির্মাণ করা হয়। এক উপজেলার স্কুল অন্য উপজেলায় নেওয়ার ফলে বিপাকে পড়েন উত্তর খাউরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
বিদ্যালয় স্থানান্তরের বিষয়টি নিয়ে শিক্ষক জুলেখা খাতুন জেলা শিক্ষা অফিসারকে অভিযোগ করা এবং গণমাধ্যমে বক্তব্য দেয়া ও সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু ছালেহ সরকার।
পরে জুলেখা খাতুনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পদ থেকে সরিয়ে অভিযুক্ত সহকারি শিক্ষক আবু হোসেন মোল্লাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দিয়ে তার ক্ষোভের বহিপ্রকাশ ঘটান তিনি।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষকরা জানান, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু ছালেহ সরকারকে ম্যানেজ করে উপজেলার চরাঞ্চলের বেশ কয়েকজন শিক্ষক বিদ্যালয় না করেও নিয়মিত বিল-ভাতা উত্তোলন করে আসছেন।
বিদ্যালয়ের স্লিপ,রুটিন ম্যাইনটেন্সসহ বিভিন্ন উন্নয়ন বরাদ্দের বিল তুলতে গেলে তাকে কমিশন দিতে হয়। এছাড়াও তিনি মোটা অংকের বিনিময়ে শিক্ষক আবু হোসেন মোল্লাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দিয়েছেন।
শিক্ষক জুলেখা খাতুন এই বিষয়ে বলেন, আমি এখন কোন চিঠি পাইনি এবং আমাকে অবগত করা হয়নি।
এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে উত্তর খাউরিয়া চর সরকারি বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মাহফুজা আকতার বলেন, জুলেখা খাতুনকে তার পদ থেকে অব্যহতির বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আমাকে শিক্ষা অফিসার কিংবা কোন শিক্ষকও বলেনি। বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হবার পর আমি নিজেই উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সাথে কথা বলেছিলাম। উনি আমাদের উত্তর খাউরিয়া এলাকায় স্কুল পরিচালনার নির্দেশ দেন। কিন্তু তিনি আবার বিদ্যালয়ের বাকি তিন শিক্ষককে রৌমারী উপজেলায় স্কুল পরিচালনা করার নির্দেশ দেন। শিক্ষা অফিসার তার ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকেই জুলেখা খাতুনকে পদ থেকে সরিয়ে জুনিয়র শিক্ষককে দায়িত্ব দিল। ইনি এই চরাঞ্চলের শিশু সন্তানদের পড়ালেখা নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছেন।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার কথা স্বীকার করে আবু হোসেন মোল্লা বলেন,স্কুল বর্তমানে রৌমারী উপজেলার যেখানে আছে সেখানে থাকবে। পানি কমে উপজেলা প্রশাসন যে সিদ্ধান্ত নেবে তা বাস্তবায়ন করা হবে। আর কোন অর্থের বিনিময়ে তিনি এই পদ নেননি বলেও জানান।
চিলমারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু ছালেহ সিনিয়রিটির ভিত্তিতে আবু হোসেন মোল্লাকে দায়িত্ব দেবার কথা স্বীকার করলেও তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেন।
এই বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নবেজ উদ্দিন সরকার বলেন,জুনিয়র শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেবার বিষয়ে আমি জানি না। আর এটা কোন নিয়মও নেই। উপজেলা শিক্ষা অফিসার কোন অনিয়ম করে থাকলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়