ঢাকা ০৩:৩০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
ফেসবুকে অপপ্রচার: জবি শিক্ষককের বিচার চেয়ে ভিসির কাছে ডীনের অভিযোগ কুড়িগ্রামে ছাত্রীনিবাসের সামনে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গির ভিডিও ধারণ, যুবকের কারাদণ্ড সাইকেল চালিয়ে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পাড়ি দিয়েছেন “দিদার” টাঙ্গাইলে মেয়ে ও জামাতার বিরুদ্ধে বাবাকে নির্যাতনের অভিযোগ, বৃদ্ধের মৃত্যু আখেরী মোনাজাতের মধ্যে দিয়ে জাকের পার্টির বিশ্ব ইসলামি মহা সম্মেলন ও মহা পবিত্র ফাতেহা শরীফের সমাপ্তি টঙ্গীতে পরিবহনে চাঁদাবাজি, গ্রেফতার ৮ সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা সম্ভবঃ প্রধান বিচারপতি  শত কোটি টাকা আত্মসাৎ: দেশত্যাগের সময় বিমানবন্দরে বিশ্বাস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আটক লালপুরে আ,লীগ নেতাকে গুলি করে হত্যা ইবিতে নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও আনসার কর্তৃক শিক্ষক হেনস্তার অভিযোগ
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নিরব

কিশোরগঞ্জে সংস্কারের টাকা নিয়ে শিক্ষা অফিসারের লুকোচুরি

লাতিফুল আজম, কিশোরগঞ্জ(নীলফামারী)প্রতিনিধি
  • Update Time : ০৪:৫১:৪৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ নভেম্বর ২০২৩
  • / ১০২ Time View

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নূর মোহাম্মদ মন্ডল সংস্কারের টাকা নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে ইদুর বিড়াল খেলছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে,গত ২০২২-২৩ অর্থ বছরে শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে দুই দফায় ১২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামে ২৪ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয় অধিদপ্তর। বরাদ্দের প্রথম পর্যায়ে দক্ষিণ বাহাগিলী বসুনিয়া পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়,বাজেডুমুরিয়া ২নং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ভেড়ভেরী মাঝাপাড়া সরকারী প্রাধমিক বিদ্যালয়ের নামে ৬ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয় অধিদপ্তর। সেই বরাদ্দের বিপরীতে উপজেলা প্রকৌশল দপ্তর (এলজিইডি) থেকে কাজের প্রাক্কলন (ষ্টিমিট) তৈরী করে নেয় স্ব-স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকগণ।

প্রাক্কলন অনুযায়ী স্কুল প্রধানগণ কাজ শেষ করে বিল উত্তোলনের জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসে বিল ভাউচার (সাবমিট) জমা করেন। সেই আবার ৯ বিদ্যালয়ের নামে ১৮ লক্ষ (প্রত্যেক বিদ্যালয় ২ লক্ষ) টাকা বরাদ্দ দেয় অধিদপ্তর। তারাও উপজেলা প্রকৌশল দপ্তর (এলজিইডি) থেকে প্রাক্কলন (ষ্টিমিট) তৈরী করে কাজ করেন।

প্রথম পর্যায়ের ৩ বিদ্যালয়ের মধ্যে দুই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাদের বিদ্যালয় সংস্কারের টাকা পেলেও ভেড়ভেরী মাঝাপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংস্কারের টাকা অজানা কারণে দেয়া হয়নি।

পরবর্তীতে ৯ বিদ্যালয়ের সংস্কারের টাকা দেয়া হলেও ভেড়ভেরী মাঝাপাড়ার টাকা নিয়ে শুরু হয় ইদুর বিড়াল খেলা। চলতি বছরের জুন ক্লোজিং ও ঈদুল আজহার ছুটির কারণে ২৪ জুন অর্থ ক্লোজের দিন থাকায় ওই দিন ভেড়ভেরী মাঝাপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সিঙ্গেরগাড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামে অর্থ ছাড় করেন উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিস। সেখানেও রয়েছে শুভংকরের ফাঁকি।

দুই বিদ্যালয়ের নামে অর্থ ছাড় দেয়ার আগে উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিসারের সাথে যোগসাজস করে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নূর মোহাম্মদ মন্ডল। সেই বিলের বিপরীতে এক স্কুলের নাম ও অন্য স্কুলের কোড ব্যবহার করে জটিলতা সৃষ্টি করা হয়। সিঙ্গেরগাড়ী স্কুলের কোডে বিল ছাড় দেয় হিসাব রক্ষণ অফিস। বিল ছাড়ের খবর পেয়ে ভেড়ভেরী মাঝাপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ব্যাংকে গিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখেন তার বিদ্যালয়ের কোডে টাকা আসেনি। পরে তিনি হতাশ হয়ে বাড়ী চলে যান। আবার সিঙ্গেরগাড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোপনে কাগজপত্র ঠিকঠাক করে তার স্কুলের নামে সংস্কারের টাকা উত্তোলন করেন।

পরবর্তীতে উপজেলা প্রাথমকি শিক্ষা অফিসার ভেড়ভেরী মাঝাপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামে বরাদ্দের টাকা শিক্ষা অফিসারের হিসাব নম্বরে রেখে দেন। দীর্ঘ সময় ধরে সেই টাকা অবৈধভাবে ধরে রেখে স্কুল উন্নয়নের ধারাকে বাধাগ্রস্থ্য করছেন এই অফিসার। পরে একাধিকবার প্রধান শিক্ষক সেই বিলের ব্যাপারে কথা বললে তাকে নানা ধরণের ভূল ব্যাখ্যা দিয়ে আসছেন শিক্ষা অফিসার নূর মোহাম্মদ মন্ডল। সেই অর্থের ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক কথা বললে শিক্ষা অফিসার বলেন কাজ শেষ করে উপজেলা প্রকৌশলীর কাছ থেকে প্রত্যয়ন নিয়ে আসেন তারপর আপনার কাজ থেকে বিল দেয়া হবে। অথচ কোন বিদ্যালয়ের কাজের প্রত্যয়ন না দিলেও ১১ টি বিদ্যালয় সংস্কারের টাকা পেয়েছেন সঠিক সময়ে।

এ ব্যাপারে ভেড়ভেরী মাঝাপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হাই বলেন,আমি আর বিল তুলতে আগ্রহী না। যা খরচ করেছি তা আল্লাহর রাহে ছেড়ে দিয়েছি। আর ৭ মাস পর আমার চাকুরী শেষ হবে এই টাকা নিয়ে শেষ সময়ে বাড়াবাড়ি করতে চাই না।

উপজেলা প্রকৌশলী মাহমুদুল হোসেন বলেন,এ বছরে আমরা কোন প্রতিষ্ঠানের কোন কাজ তদারকি করি নাই এবং প্রত্যয়ন দেই নাই।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নূর মোহাম্মদ মন্ডল সাংবাদিকদের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কথা বলে আসছেন। কখনো বলছেন বরাদ্দ ল্যাপস (ফেরত) হয়েছে। আবার কখনো বলছেন আমার একাউন্টে আমি টাকা রেখে দিয়েছি। আপনার একাউন্টে আপনি অবৈধভাবে কেন টাকা রেখে দিয়েছেন প্রশ্ন করা হলে তিনি এর সদুত্তোর না দিয়ে অফিস ত্যাগ করেন।

এব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বলেন,আমি এ ব্যাপারে কিছু জানি না। আমি এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে ডেকে বিষয়টি জেনে নিব, কেন এমন হয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শাহজাহান সিদ্দিক বলেন,বিষয়টি আমি শুনেছি। ব্যস্ততার কারণে দেখতে পাইনি। আমি খুব দ্রুত ব্যবস্থা নিব।

Please Share This Post in Your Social Media

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নিরব

কিশোরগঞ্জে সংস্কারের টাকা নিয়ে শিক্ষা অফিসারের লুকোচুরি

Update Time : ০৪:৫১:৪৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ নভেম্বর ২০২৩

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নূর মোহাম্মদ মন্ডল সংস্কারের টাকা নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে ইদুর বিড়াল খেলছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে,গত ২০২২-২৩ অর্থ বছরে শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে দুই দফায় ১২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামে ২৪ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয় অধিদপ্তর। বরাদ্দের প্রথম পর্যায়ে দক্ষিণ বাহাগিলী বসুনিয়া পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়,বাজেডুমুরিয়া ২নং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ভেড়ভেরী মাঝাপাড়া সরকারী প্রাধমিক বিদ্যালয়ের নামে ৬ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয় অধিদপ্তর। সেই বরাদ্দের বিপরীতে উপজেলা প্রকৌশল দপ্তর (এলজিইডি) থেকে কাজের প্রাক্কলন (ষ্টিমিট) তৈরী করে নেয় স্ব-স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকগণ।

প্রাক্কলন অনুযায়ী স্কুল প্রধানগণ কাজ শেষ করে বিল উত্তোলনের জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসে বিল ভাউচার (সাবমিট) জমা করেন। সেই আবার ৯ বিদ্যালয়ের নামে ১৮ লক্ষ (প্রত্যেক বিদ্যালয় ২ লক্ষ) টাকা বরাদ্দ দেয় অধিদপ্তর। তারাও উপজেলা প্রকৌশল দপ্তর (এলজিইডি) থেকে প্রাক্কলন (ষ্টিমিট) তৈরী করে কাজ করেন।

প্রথম পর্যায়ের ৩ বিদ্যালয়ের মধ্যে দুই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাদের বিদ্যালয় সংস্কারের টাকা পেলেও ভেড়ভেরী মাঝাপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংস্কারের টাকা অজানা কারণে দেয়া হয়নি।

পরবর্তীতে ৯ বিদ্যালয়ের সংস্কারের টাকা দেয়া হলেও ভেড়ভেরী মাঝাপাড়ার টাকা নিয়ে শুরু হয় ইদুর বিড়াল খেলা। চলতি বছরের জুন ক্লোজিং ও ঈদুল আজহার ছুটির কারণে ২৪ জুন অর্থ ক্লোজের দিন থাকায় ওই দিন ভেড়ভেরী মাঝাপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সিঙ্গেরগাড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামে অর্থ ছাড় করেন উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিস। সেখানেও রয়েছে শুভংকরের ফাঁকি।

দুই বিদ্যালয়ের নামে অর্থ ছাড় দেয়ার আগে উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিসারের সাথে যোগসাজস করে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নূর মোহাম্মদ মন্ডল। সেই বিলের বিপরীতে এক স্কুলের নাম ও অন্য স্কুলের কোড ব্যবহার করে জটিলতা সৃষ্টি করা হয়। সিঙ্গেরগাড়ী স্কুলের কোডে বিল ছাড় দেয় হিসাব রক্ষণ অফিস। বিল ছাড়ের খবর পেয়ে ভেড়ভেরী মাঝাপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ব্যাংকে গিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখেন তার বিদ্যালয়ের কোডে টাকা আসেনি। পরে তিনি হতাশ হয়ে বাড়ী চলে যান। আবার সিঙ্গেরগাড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোপনে কাগজপত্র ঠিকঠাক করে তার স্কুলের নামে সংস্কারের টাকা উত্তোলন করেন।

পরবর্তীতে উপজেলা প্রাথমকি শিক্ষা অফিসার ভেড়ভেরী মাঝাপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামে বরাদ্দের টাকা শিক্ষা অফিসারের হিসাব নম্বরে রেখে দেন। দীর্ঘ সময় ধরে সেই টাকা অবৈধভাবে ধরে রেখে স্কুল উন্নয়নের ধারাকে বাধাগ্রস্থ্য করছেন এই অফিসার। পরে একাধিকবার প্রধান শিক্ষক সেই বিলের ব্যাপারে কথা বললে তাকে নানা ধরণের ভূল ব্যাখ্যা দিয়ে আসছেন শিক্ষা অফিসার নূর মোহাম্মদ মন্ডল। সেই অর্থের ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক কথা বললে শিক্ষা অফিসার বলেন কাজ শেষ করে উপজেলা প্রকৌশলীর কাছ থেকে প্রত্যয়ন নিয়ে আসেন তারপর আপনার কাজ থেকে বিল দেয়া হবে। অথচ কোন বিদ্যালয়ের কাজের প্রত্যয়ন না দিলেও ১১ টি বিদ্যালয় সংস্কারের টাকা পেয়েছেন সঠিক সময়ে।

এ ব্যাপারে ভেড়ভেরী মাঝাপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হাই বলেন,আমি আর বিল তুলতে আগ্রহী না। যা খরচ করেছি তা আল্লাহর রাহে ছেড়ে দিয়েছি। আর ৭ মাস পর আমার চাকুরী শেষ হবে এই টাকা নিয়ে শেষ সময়ে বাড়াবাড়ি করতে চাই না।

উপজেলা প্রকৌশলী মাহমুদুল হোসেন বলেন,এ বছরে আমরা কোন প্রতিষ্ঠানের কোন কাজ তদারকি করি নাই এবং প্রত্যয়ন দেই নাই।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নূর মোহাম্মদ মন্ডল সাংবাদিকদের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কথা বলে আসছেন। কখনো বলছেন বরাদ্দ ল্যাপস (ফেরত) হয়েছে। আবার কখনো বলছেন আমার একাউন্টে আমি টাকা রেখে দিয়েছি। আপনার একাউন্টে আপনি অবৈধভাবে কেন টাকা রেখে দিয়েছেন প্রশ্ন করা হলে তিনি এর সদুত্তোর না দিয়ে অফিস ত্যাগ করেন।

এব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বলেন,আমি এ ব্যাপারে কিছু জানি না। আমি এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে ডেকে বিষয়টি জেনে নিব, কেন এমন হয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শাহজাহান সিদ্দিক বলেন,বিষয়টি আমি শুনেছি। ব্যস্ততার কারণে দেখতে পাইনি। আমি খুব দ্রুত ব্যবস্থা নিব।