ঢাকা ১১:০২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন তামিম ইকবাল

নওরোজ স্পোর্টস ডেস্ক
  • Update Time : ০৪:১৩:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ জুলাই ২০২৩
  • / ১০৯ Time View

সংবাদ সম্মেলনে তামিম ইকবাল

শেষ পর্যন্ত গুঞ্জনই সত্যি হলো। অশ্রুসিক্ত নয়নে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সব ফরম্যাট থেকে বিদায় নিয়েছেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল।

বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) বন্দরনগরীর জুবিলি রোডের ‘টাওয়ার ইন’ হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন তিনি।

এর আগে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বুধবার অপ্রত্যাশিত হারের পর রাতে আচমকা সংবাদ সম্মেলনের ঘোষণা দেন টাইগারদের ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল।
এরই মধ্যে ওঠে গুঞ্জন: অধিনায়কত্ব ছাড়ছেন তামিম ইকবাল। সেই গুঞ্জনই সত্যি হলো। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিয়েছেন এই বাঁ-হাতি ওপেনার।

এদিন ১৮ মিনিটের বক্তব্যের শুরুতেই তামিম বলেন, ‘গতকাল (বুধবার) আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটিই আমার শেষ আন্তর্জাতিক খেলা। আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে এই মুহূর্তে অবসরের ঘোষণা দিলাম। এই সিদ্ধান্তটি আমি হুট করে নেইনি। আমি গত কয়েক দিন থেকে এটা ভাবছিলাম। আমি আমি পরিবারের সঙ্গেও কথা বলেছি। আমি মনে করি এটাই সঠিক সময় সিদ্ধান্ত নেয়ার।’

বাবা ইকবাল খানের স্বপ্ন পূরণ করতেই জাতীয় দলে পা রেখেছিলেন তামিম। ছোট চাচা প্রয়াত আকবর খানের কাছেই হাতেখড়ি ক্রিকেটের। সেই সঙ্গে যাদের কাছে পেয়েছেন ক্রিকেটের পাঠ, তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানান তামিম, ‘আমি সবসময় একটা কথা বলেছি যে, আমি ক্রিকেট খেলি আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য। আমি নিশ্চিত নই, এই ১৬ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে তাকে গর্বিত করতে পেরেছি কি না। আরও অনেক মানুষকে ধন্যবাদ জানানোর আছে। আমার সবচেয়ে ছোট চাচা, যিনি ইন্তেকাল করেছেন – আকবর খান; ওনার হাত ধরেই আমার প্রথম ক্রিকেট বলের টুর্নামেন্ট খেলা। তাকে ও তার পরিবারকে আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই। এম এ আজিজে তপনদা নামের একজন কোচ আছেন, যার কাছে আমি ছোটবেলা থেকে প্র্যাকটিস করেছি। তাকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

সেই সঙ্গে সতীর্থ ও ক্রিকেট বোর্ডকেও ধন্যবাদ জানিয়েছেন দেশের ইতিহাসের সেরা ওপেনার ব্যাটার, ‘যে খেলোয়াড়দের সঙ্গে আমি (বয়সভিত্তিক, প্রিমিয়ার লিগ, ন্যাশনাল লিগ, জাতীয় দল) খেলেছি, তাদের সকলকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বিশেষ করে জাতীয় দলে যারা ছিলেন তাদের। ক্রিকেট বোর্ডকেও অবশ্যই, তারা আমাকে লম্বা সময়ের জন্য জাতীয় দলকে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ দিয়েছিল। অধিনায়কত্ব করার সুযোগ দিয়েছিল।’

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে সম্পূর্ণভাবে বিদায় জানার বেশ আগেই টি-টোয়েন্টি থেকে সরে যান তামিম। ২০২২ সালের ১৬ জুলাই হঠাৎ করেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে টি টোয়েন্টি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন তামিম। এরপর দেশের হয়ে টেস্ট ও ওয়ানডে ক্রিকেট খেলে যাচ্ছিলেন।

অবসর ঘোষণা করার সময় সাংবাকিদকের প্রতি কিছু অনুরোধ করেছেন এই ড্যাশিং ওপেনার। তামিম আর্জি জানিয়েছেন, যেন ক্রিকেটারদের নিয়ে লেখার সময় সীমা অতিক্রম না করা হয়।

অবসর ঘোষণা দিয়ে তামিম বলেন, ‘আমার একটা অনুরোধ, যারা সামনে ক্রিকেট খেলবে আপনারা তাদের কথা ভালো লিখবেন, খারাপ লিখবেন, যা খুশি লিখবেন। কিন্তু ক্রিকেটের মধ্যেই থাকবেন, সীমা অতিক্রম করবেন না। আপনারা অবশ্যই বোঝেন, আমরা মাঝে মাঝে সীমা অতিক্রম করে ফেলি।’

এ বছরের অক্টোবরে ভারতে বসবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ। বছরটি তাই ক্রিকেটারদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তামিম। তিনি জানান, ‘যারা ক্রিকেট খেলছে এখন, এটা বিশ্বকাপের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বছর। আমি আশা করব আপনারা দলের সঙ্গে একজন সদস্যের মতো করেই থাকবেন। আমি অনুরোধ করছি, দলকে সমর্থন দেবেন।’
অবসর ঘোষণায় তামিম ধন্যবাদ জানিয়েছেন সতীর্থদের।

তিনি বলেন, ‘যে খেলোয়াড়দের সঙ্গে আমি (বয়সভিত্তিক, প্রিমিয়ার লিগ, ন্যাশনাল লিগ, জাতীয় দল) খেলেছি, তাদের সবাইকে ধন্যবাদ, বিশেষ করে জাতীয় দলে যারা ছিলেন। ক্রিকেট বোর্ডকেও অবশ্যই, তারা আমাকে লম্বা সময়ের জন্য জাতীয় দলকে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ দিয়েছে, অধিনায়কত্ব করার সুযোগ দিয়েছে।’

তামিম আরও বলেন, ‘আমার বেশি কিছু বলার নেই। কিন্তু একটা জিনিস আমি অবশ্যই বলব, আমি আমার সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করেছি। হয়ত আমি ভালো করেছি, কিংবা যথেষ্ট ভালো করতে পারিনি, কিন্তু আমি মাঠে থাকলে আমার শতভাগ দেয়ার চেষ্টা করেছি।’

২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নাম লেখান তামিম। এর মাঝে কেটে গেছে ১৬ বছর। এর মধ্যে ওয়ানডেতে খেলেছেন ২৪১টি ম্যাচ। ৩৬.৬২ গড়ে রান করেছেন ৮ হাজার ৩১৩। পাশাপাশি টেস্টে ৭০ ম্যাচে ৩৮.৮৯ গড়ে করেছেন ৫ হাজার ১৩৪ রান। আর ৭৮টি টি-টোয়েন্টি খেলে ২৪.০৮ গড়ে ১ হাজার ৭৫৮ রান করে গত বছর অবসর নেন।

Please Share This Post in Your Social Media

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন তামিম ইকবাল

Update Time : ০৪:১৩:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ জুলাই ২০২৩

শেষ পর্যন্ত গুঞ্জনই সত্যি হলো। অশ্রুসিক্ত নয়নে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সব ফরম্যাট থেকে বিদায় নিয়েছেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল।

বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) বন্দরনগরীর জুবিলি রোডের ‘টাওয়ার ইন’ হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন তিনি।

এর আগে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বুধবার অপ্রত্যাশিত হারের পর রাতে আচমকা সংবাদ সম্মেলনের ঘোষণা দেন টাইগারদের ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল।
এরই মধ্যে ওঠে গুঞ্জন: অধিনায়কত্ব ছাড়ছেন তামিম ইকবাল। সেই গুঞ্জনই সত্যি হলো। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিয়েছেন এই বাঁ-হাতি ওপেনার।

এদিন ১৮ মিনিটের বক্তব্যের শুরুতেই তামিম বলেন, ‘গতকাল (বুধবার) আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটিই আমার শেষ আন্তর্জাতিক খেলা। আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে এই মুহূর্তে অবসরের ঘোষণা দিলাম। এই সিদ্ধান্তটি আমি হুট করে নেইনি। আমি গত কয়েক দিন থেকে এটা ভাবছিলাম। আমি আমি পরিবারের সঙ্গেও কথা বলেছি। আমি মনে করি এটাই সঠিক সময় সিদ্ধান্ত নেয়ার।’

বাবা ইকবাল খানের স্বপ্ন পূরণ করতেই জাতীয় দলে পা রেখেছিলেন তামিম। ছোট চাচা প্রয়াত আকবর খানের কাছেই হাতেখড়ি ক্রিকেটের। সেই সঙ্গে যাদের কাছে পেয়েছেন ক্রিকেটের পাঠ, তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানান তামিম, ‘আমি সবসময় একটা কথা বলেছি যে, আমি ক্রিকেট খেলি আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য। আমি নিশ্চিত নই, এই ১৬ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে তাকে গর্বিত করতে পেরেছি কি না। আরও অনেক মানুষকে ধন্যবাদ জানানোর আছে। আমার সবচেয়ে ছোট চাচা, যিনি ইন্তেকাল করেছেন – আকবর খান; ওনার হাত ধরেই আমার প্রথম ক্রিকেট বলের টুর্নামেন্ট খেলা। তাকে ও তার পরিবারকে আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই। এম এ আজিজে তপনদা নামের একজন কোচ আছেন, যার কাছে আমি ছোটবেলা থেকে প্র্যাকটিস করেছি। তাকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

সেই সঙ্গে সতীর্থ ও ক্রিকেট বোর্ডকেও ধন্যবাদ জানিয়েছেন দেশের ইতিহাসের সেরা ওপেনার ব্যাটার, ‘যে খেলোয়াড়দের সঙ্গে আমি (বয়সভিত্তিক, প্রিমিয়ার লিগ, ন্যাশনাল লিগ, জাতীয় দল) খেলেছি, তাদের সকলকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বিশেষ করে জাতীয় দলে যারা ছিলেন তাদের। ক্রিকেট বোর্ডকেও অবশ্যই, তারা আমাকে লম্বা সময়ের জন্য জাতীয় দলকে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ দিয়েছিল। অধিনায়কত্ব করার সুযোগ দিয়েছিল।’

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে সম্পূর্ণভাবে বিদায় জানার বেশ আগেই টি-টোয়েন্টি থেকে সরে যান তামিম। ২০২২ সালের ১৬ জুলাই হঠাৎ করেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে টি টোয়েন্টি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন তামিম। এরপর দেশের হয়ে টেস্ট ও ওয়ানডে ক্রিকেট খেলে যাচ্ছিলেন।

অবসর ঘোষণা করার সময় সাংবাকিদকের প্রতি কিছু অনুরোধ করেছেন এই ড্যাশিং ওপেনার। তামিম আর্জি জানিয়েছেন, যেন ক্রিকেটারদের নিয়ে লেখার সময় সীমা অতিক্রম না করা হয়।

অবসর ঘোষণা দিয়ে তামিম বলেন, ‘আমার একটা অনুরোধ, যারা সামনে ক্রিকেট খেলবে আপনারা তাদের কথা ভালো লিখবেন, খারাপ লিখবেন, যা খুশি লিখবেন। কিন্তু ক্রিকেটের মধ্যেই থাকবেন, সীমা অতিক্রম করবেন না। আপনারা অবশ্যই বোঝেন, আমরা মাঝে মাঝে সীমা অতিক্রম করে ফেলি।’

এ বছরের অক্টোবরে ভারতে বসবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ। বছরটি তাই ক্রিকেটারদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তামিম। তিনি জানান, ‘যারা ক্রিকেট খেলছে এখন, এটা বিশ্বকাপের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বছর। আমি আশা করব আপনারা দলের সঙ্গে একজন সদস্যের মতো করেই থাকবেন। আমি অনুরোধ করছি, দলকে সমর্থন দেবেন।’
অবসর ঘোষণায় তামিম ধন্যবাদ জানিয়েছেন সতীর্থদের।

তিনি বলেন, ‘যে খেলোয়াড়দের সঙ্গে আমি (বয়সভিত্তিক, প্রিমিয়ার লিগ, ন্যাশনাল লিগ, জাতীয় দল) খেলেছি, তাদের সবাইকে ধন্যবাদ, বিশেষ করে জাতীয় দলে যারা ছিলেন। ক্রিকেট বোর্ডকেও অবশ্যই, তারা আমাকে লম্বা সময়ের জন্য জাতীয় দলকে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ দিয়েছে, অধিনায়কত্ব করার সুযোগ দিয়েছে।’

তামিম আরও বলেন, ‘আমার বেশি কিছু বলার নেই। কিন্তু একটা জিনিস আমি অবশ্যই বলব, আমি আমার সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করেছি। হয়ত আমি ভালো করেছি, কিংবা যথেষ্ট ভালো করতে পারিনি, কিন্তু আমি মাঠে থাকলে আমার শতভাগ দেয়ার চেষ্টা করেছি।’

২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নাম লেখান তামিম। এর মাঝে কেটে গেছে ১৬ বছর। এর মধ্যে ওয়ানডেতে খেলেছেন ২৪১টি ম্যাচ। ৩৬.৬২ গড়ে রান করেছেন ৮ হাজার ৩১৩। পাশাপাশি টেস্টে ৭০ ম্যাচে ৩৮.৮৯ গড়ে করেছেন ৫ হাজার ১৩৪ রান। আর ৭৮টি টি-টোয়েন্টি খেলে ২৪.০৮ গড়ে ১ হাজার ৭৫৮ রান করে গত বছর অবসর নেন।