ঢাকা ০৫:৫৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের পর মায়েরও মৃত্যু

স্টাফ রিপোর্টার
  • Update Time : ০৭:০৬:৩১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ জুন ২০২৩
  • / ১১১ Time View

ছবি :সংগৃহীত

রাজধানীর গ্রিন রোডে অবস্থিত সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের পর মা মাহমুদা রহমান আঁখিও মারা গেছেন।

সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের পর মা আঁখিরও মৃত্যু।

রোববার (১৮ জুন) দুপুর ২টার পর ল্যাবএইড হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে মারা যান তিনি। আঁখির স্বামী ইয়াকুব আলী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গত ৯ জুন প্রসব ব্যথা উঠলে সেন্ট্রাল হাসপাতালে ডা. সংযুক্তা সাহার অধীনে মাহবুবা রহমান আঁখিকে ভর্তি করা হয়। কিন্তু সেই সময়ে ডা. সংযুক্তা সাহা হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন না, তবুও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, তিনি আছেন এবং অপারেশন থিয়েটারে কাজ করছেন।

এমন অবস্থায় আঁখি সেন্সলেস হয়ে যায়। ডেলিভারি করলে হার্টবিট বন্ধ হয়ে আইসিউতে মারা যায় নবজাতকটি।

এমন ঘটনার পর আঁখিকে সেন্ট্রাল হাসপাতাল থেকে ল্যাবএইড হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

ল্যাবএইডের চিকিৎসকরা জানান, তার শরীরের কিডনি, লিভার, হার্ট এবং অন্য কোনো অংশ কাজ করছিল না। এরমধ্যে ব্রেন স্টোকও করে আঁখি। তার সাথে রক্তক্ষরণও বন্ধ হচ্ছিল না।

এই ঘটনায় চিকিৎসক-নার্সসহ ১১ জনকে বরখাস্ত করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এছাড়া বুধবার (১৪ জুন) ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যু এবং মা মৃত্যুঝুঁকিতে পড়ার ঘটনায় ধানমন্ডি থানায় ‘অবহেলাজনিত মৃত্যু’র একটি মামলা করা হয়। মামলায় ডা. শাহজাদী, ডা. মুনা, ডা. মিলি, সহকারী জমির, এহসান ও হাসপাতালের ম্যানেজার পারভেজকে আসামি করা হয়। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়। মামলার পর বুধবার রাতেই ডা. শাহজাদী ও ডা. মুনাকে হাসপাতাল থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) ডা. শাহজাদী ও ডা. মুনা দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতর গঠিত পরিদর্শন টিম গত শুক্রবার (১৬ জুন) বিকেলে হাসপাতালটি পরিদর্শন করে। পরে সেন্ট্রাল হাসপাতালে সব ধরনের অস্ত্রোপচার বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়।

সেই সঙ্গে গাইনি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহা হাসপাতালটিতে আর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা দিতে পারবেন না বলেও জানানো হয়।

ভুল চিকিৎসায় নবজাতক মারা যাওয়ার পর ১০ দিন আইসিইউতে চিকিৎসা দেয়া হলেও বাঁচানো যায়নি মা মাহমুদা রহমান আঁখিকে। এই সময়ে তাকে প্রায় ৩৩ ব্যাগ রক্ত দেয়া হয় বলে জানিয়েছেন স্বজনরা।

তাদের এখন একটাই দাবি বাংলাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালগুলোর অনিয়ম যেন আইনের আওতায় আসে।

রোববার (১৮ জুন) দুপুরে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আঁখি। ডেলিভারির সময় ভুল চিকিৎসায় আঁখির মূত্রনালী কেটে ফেলে রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালের চিকিৎসক। এরপর একে একে আঁখির শরীর অকেজো হতে থাকে, বিকল হয়ে যায় কিডনিসহ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন অঙ্গ। পরে তাকে বাঁচাতে ৩৩ ব্যাগ রক্ত দেয়া হলেও শেষ রক্ষা হয়নি।
এদেকে আঁখিকে কুমিল্লায় দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন তার ভাই শামীম। তিনি জানান, অনাগত সন্তানকে ঘিরে আঁখি ও তার স্বামী ইয়াকুব আলীর ছিল হাজারো স্বপ্ন। কিন্তু তা আর বাস্তব হয়ে ওঠেনি। রাজধানীর বেসরকারি সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে পৃথিবী ছাড়তে হলো আঁখি ও তার সন্তানকে।

এদিকে আঁখির মৃত্যুর খবর শুনে হাসপাতালে ছুটে আসেন সহপাঠীরা। এ সময় সেন্ট্রাল হাসপাতাল থেকে আঁখির পরিবারকে হুমকি দেয়ার অভিযোগ করেন তারা।

উল্লেখ্য, ফেসবুকে সেন্ট্রাল হাসপাতালের গাইনি চিকিৎসক ডা. সংযুক্তা সাহার নরমাল ডেলিভারি সংক্রান্ত ভিডিও ও পরামর্শ দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে তার কাছে নরমাল ডেলিভারি করাতে চেয়েছিলেন আঁখি।

সেই চাওয়া অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েছিলেন তার স্বামী। আর সেটাই যেন কাল হলো তার জন্য। জন্মের সময়ই মারা গেছে নবজাতক ।এখন মারা গেলেন আঁখি ।

বুধবার (১৪ জুন) রাতে আলাপকালে আঁখির স্বজনরা জানান, গত শুক্রবার (৯ জুন) প্রসব ব্যথা ওঠায় রাত সাড়ে ১২টার দিকে সেন্ট্রাল হসপিটালে ডা. সংযুক্তা সাহার অধীনে ভর্তি করা হয় মাহবুবা রহমান আঁখিকে। তখন ডা. সংযুক্তা সাহা হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন না, তারপরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, তিনি আছেন এবং ওটিতে (অপারেশন থিয়েটার) কাজ করছেন।

ভুক্তভোগীর স্বামী ইয়াকুব আলী বলেন, আমার স্ত্রীকে যখন ওটিতে ঢোকানো হয় এবং নরমাল ডেলিভারির জন্য চেষ্টা শুরু করা হয়, তখনও আমি সংযুক্তা সাহা হাসপাতালে আছেন কি না জানতে চাই। কর্তৃপক্ষ জানায়, তিনি আছেন এবং তিনি তার চেষ্টা চালাচ্ছেন। রোগীর কোনো রকম চেকআপ ছাড়াই ডেলিভারির কাজ শুরু করে দেন তারা।

পরে জানতে পেরেছি ডা. সংযুক্তা সাহা ছিলেন না, তিনি তখন দুবাইতে ছিলেন। চিকিৎসক না থাকার পরও তার অধীনে রোগী ভর্তি করা হয়। এরপর ডেলিভারির চেষ্টা ও পরবর্তীতে সফল না হওয়ায় সিজার করে বাচ্চা বের করে আনা হয়। সিজারের পরদিন মারা যায় বাচ্চাটি। আর মায়ের এখনো জ্ঞান ফেরেনি। তাকে ল্যাবএইড হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, এ ধরনের রোগীর বাঁচার সম্ভাবনা ৯৯ শতাংশেরও কম।

আঁখির চাচাতো ভাই জানান, শুক্রবার (৯ জুন) রাতে আঁখির লেবার পেইন ওঠে। এরপর রাত সাড়ে ১২টার দিকে ডা. সংযুক্তা সাহার অ্যাসিস্ট্যান্টের সঙ্গে ফোনে কথা বলে ঢাকায় আনা হয় আঁখিকে। হাসপাতালে ভর্তির পর নরমাল ডেলিভারির জন্য আঁখিকে ৪০ মিনিট ব্যায়াম করানো হয়।

তিনি বলেন, আমার বোন সুস্থ-স্বাভাবিক ছিলেন। আমরা বাইরে অপেক্ষা করছিলাম। রাত ২টার পর দেখলাম হাসপাতালের লোকজন দৌড়াদৌড়ি করে আঁখিকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর অ্যানেস্থেসিয়ার ডাক্তার আসেন। এরপর আসেন প্রফেসর মিলি। তিনি সিজার করে চলে যান।

যাওয়ার সময় প্রফেসর মিলি জানান, ডা. সংযুক্তা সাহা হাসপাতালে নেই। তখন আমরা জানতে চাইলাম ডাক্তার নেই, তাহলে প্রথম দিকে নরমাল ডেলিভারির জন্য চেষ্টা করালো কে?

আঁখির চাচাতো ভাই আরও বলেন, আমার বোনের ছেলে বাচ্চা হয়েছিল। তাকে রাখা হয়েছিল এনআইসিইউতে। রাত সাড়ে ৩টার দিকে বুঝতে পারি আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। তখন আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলি। হাসপাতালের পক্ষ থেকে সন্তোষজনক কোনো পদক্ষেপ দেখতে না পেয়ে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ কল দিলে ধানমন্ডি থানা থেকে পুলিশ আসে। পুলিশ এসে কথা বললে তারা রোগীকে বিএসএমএমইউ’র সিসিইউতে নিতে বলে। কিন্তু সেখানে সিট খালি না থাকায় পরদিন বিকেলে ল্যাবএইডের সিসিইউতে নেওয়া হয়।

এদিকে সেন্ট্রাল হসপিটালের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর ডা. আফসানা বিনতে গাউস বলেন, এ ঘটনায় আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। সেই সঙ্গে সেদিন ওটিতে যেসব চিকিৎসক-নার্স উপস্থিত ছিলেন, এমন ১১ জনের সবাইকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের পর মায়েরও মৃত্যু

Update Time : ০৭:০৬:৩১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ জুন ২০২৩

রাজধানীর গ্রিন রোডে অবস্থিত সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের পর মা মাহমুদা রহমান আঁখিও মারা গেছেন।

সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের পর মা আঁখিরও মৃত্যু।

রোববার (১৮ জুন) দুপুর ২টার পর ল্যাবএইড হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে মারা যান তিনি। আঁখির স্বামী ইয়াকুব আলী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গত ৯ জুন প্রসব ব্যথা উঠলে সেন্ট্রাল হাসপাতালে ডা. সংযুক্তা সাহার অধীনে মাহবুবা রহমান আঁখিকে ভর্তি করা হয়। কিন্তু সেই সময়ে ডা. সংযুক্তা সাহা হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন না, তবুও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, তিনি আছেন এবং অপারেশন থিয়েটারে কাজ করছেন।

এমন অবস্থায় আঁখি সেন্সলেস হয়ে যায়। ডেলিভারি করলে হার্টবিট বন্ধ হয়ে আইসিউতে মারা যায় নবজাতকটি।

এমন ঘটনার পর আঁখিকে সেন্ট্রাল হাসপাতাল থেকে ল্যাবএইড হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

ল্যাবএইডের চিকিৎসকরা জানান, তার শরীরের কিডনি, লিভার, হার্ট এবং অন্য কোনো অংশ কাজ করছিল না। এরমধ্যে ব্রেন স্টোকও করে আঁখি। তার সাথে রক্তক্ষরণও বন্ধ হচ্ছিল না।

এই ঘটনায় চিকিৎসক-নার্সসহ ১১ জনকে বরখাস্ত করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এছাড়া বুধবার (১৪ জুন) ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যু এবং মা মৃত্যুঝুঁকিতে পড়ার ঘটনায় ধানমন্ডি থানায় ‘অবহেলাজনিত মৃত্যু’র একটি মামলা করা হয়। মামলায় ডা. শাহজাদী, ডা. মুনা, ডা. মিলি, সহকারী জমির, এহসান ও হাসপাতালের ম্যানেজার পারভেজকে আসামি করা হয়। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়। মামলার পর বুধবার রাতেই ডা. শাহজাদী ও ডা. মুনাকে হাসপাতাল থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) ডা. শাহজাদী ও ডা. মুনা দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতর গঠিত পরিদর্শন টিম গত শুক্রবার (১৬ জুন) বিকেলে হাসপাতালটি পরিদর্শন করে। পরে সেন্ট্রাল হাসপাতালে সব ধরনের অস্ত্রোপচার বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়।

সেই সঙ্গে গাইনি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহা হাসপাতালটিতে আর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা দিতে পারবেন না বলেও জানানো হয়।

ভুল চিকিৎসায় নবজাতক মারা যাওয়ার পর ১০ দিন আইসিইউতে চিকিৎসা দেয়া হলেও বাঁচানো যায়নি মা মাহমুদা রহমান আঁখিকে। এই সময়ে তাকে প্রায় ৩৩ ব্যাগ রক্ত দেয়া হয় বলে জানিয়েছেন স্বজনরা।

তাদের এখন একটাই দাবি বাংলাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালগুলোর অনিয়ম যেন আইনের আওতায় আসে।

রোববার (১৮ জুন) দুপুরে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আঁখি। ডেলিভারির সময় ভুল চিকিৎসায় আঁখির মূত্রনালী কেটে ফেলে রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালের চিকিৎসক। এরপর একে একে আঁখির শরীর অকেজো হতে থাকে, বিকল হয়ে যায় কিডনিসহ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন অঙ্গ। পরে তাকে বাঁচাতে ৩৩ ব্যাগ রক্ত দেয়া হলেও শেষ রক্ষা হয়নি।
এদেকে আঁখিকে কুমিল্লায় দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন তার ভাই শামীম। তিনি জানান, অনাগত সন্তানকে ঘিরে আঁখি ও তার স্বামী ইয়াকুব আলীর ছিল হাজারো স্বপ্ন। কিন্তু তা আর বাস্তব হয়ে ওঠেনি। রাজধানীর বেসরকারি সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে পৃথিবী ছাড়তে হলো আঁখি ও তার সন্তানকে।

এদিকে আঁখির মৃত্যুর খবর শুনে হাসপাতালে ছুটে আসেন সহপাঠীরা। এ সময় সেন্ট্রাল হাসপাতাল থেকে আঁখির পরিবারকে হুমকি দেয়ার অভিযোগ করেন তারা।

উল্লেখ্য, ফেসবুকে সেন্ট্রাল হাসপাতালের গাইনি চিকিৎসক ডা. সংযুক্তা সাহার নরমাল ডেলিভারি সংক্রান্ত ভিডিও ও পরামর্শ দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে তার কাছে নরমাল ডেলিভারি করাতে চেয়েছিলেন আঁখি।

সেই চাওয়া অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েছিলেন তার স্বামী। আর সেটাই যেন কাল হলো তার জন্য। জন্মের সময়ই মারা গেছে নবজাতক ।এখন মারা গেলেন আঁখি ।

বুধবার (১৪ জুন) রাতে আলাপকালে আঁখির স্বজনরা জানান, গত শুক্রবার (৯ জুন) প্রসব ব্যথা ওঠায় রাত সাড়ে ১২টার দিকে সেন্ট্রাল হসপিটালে ডা. সংযুক্তা সাহার অধীনে ভর্তি করা হয় মাহবুবা রহমান আঁখিকে। তখন ডা. সংযুক্তা সাহা হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন না, তারপরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, তিনি আছেন এবং ওটিতে (অপারেশন থিয়েটার) কাজ করছেন।

ভুক্তভোগীর স্বামী ইয়াকুব আলী বলেন, আমার স্ত্রীকে যখন ওটিতে ঢোকানো হয় এবং নরমাল ডেলিভারির জন্য চেষ্টা শুরু করা হয়, তখনও আমি সংযুক্তা সাহা হাসপাতালে আছেন কি না জানতে চাই। কর্তৃপক্ষ জানায়, তিনি আছেন এবং তিনি তার চেষ্টা চালাচ্ছেন। রোগীর কোনো রকম চেকআপ ছাড়াই ডেলিভারির কাজ শুরু করে দেন তারা।

পরে জানতে পেরেছি ডা. সংযুক্তা সাহা ছিলেন না, তিনি তখন দুবাইতে ছিলেন। চিকিৎসক না থাকার পরও তার অধীনে রোগী ভর্তি করা হয়। এরপর ডেলিভারির চেষ্টা ও পরবর্তীতে সফল না হওয়ায় সিজার করে বাচ্চা বের করে আনা হয়। সিজারের পরদিন মারা যায় বাচ্চাটি। আর মায়ের এখনো জ্ঞান ফেরেনি। তাকে ল্যাবএইড হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, এ ধরনের রোগীর বাঁচার সম্ভাবনা ৯৯ শতাংশেরও কম।

আঁখির চাচাতো ভাই জানান, শুক্রবার (৯ জুন) রাতে আঁখির লেবার পেইন ওঠে। এরপর রাত সাড়ে ১২টার দিকে ডা. সংযুক্তা সাহার অ্যাসিস্ট্যান্টের সঙ্গে ফোনে কথা বলে ঢাকায় আনা হয় আঁখিকে। হাসপাতালে ভর্তির পর নরমাল ডেলিভারির জন্য আঁখিকে ৪০ মিনিট ব্যায়াম করানো হয়।

তিনি বলেন, আমার বোন সুস্থ-স্বাভাবিক ছিলেন। আমরা বাইরে অপেক্ষা করছিলাম। রাত ২টার পর দেখলাম হাসপাতালের লোকজন দৌড়াদৌড়ি করে আঁখিকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর অ্যানেস্থেসিয়ার ডাক্তার আসেন। এরপর আসেন প্রফেসর মিলি। তিনি সিজার করে চলে যান।

যাওয়ার সময় প্রফেসর মিলি জানান, ডা. সংযুক্তা সাহা হাসপাতালে নেই। তখন আমরা জানতে চাইলাম ডাক্তার নেই, তাহলে প্রথম দিকে নরমাল ডেলিভারির জন্য চেষ্টা করালো কে?

আঁখির চাচাতো ভাই আরও বলেন, আমার বোনের ছেলে বাচ্চা হয়েছিল। তাকে রাখা হয়েছিল এনআইসিইউতে। রাত সাড়ে ৩টার দিকে বুঝতে পারি আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। তখন আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলি। হাসপাতালের পক্ষ থেকে সন্তোষজনক কোনো পদক্ষেপ দেখতে না পেয়ে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ কল দিলে ধানমন্ডি থানা থেকে পুলিশ আসে। পুলিশ এসে কথা বললে তারা রোগীকে বিএসএমএমইউ’র সিসিইউতে নিতে বলে। কিন্তু সেখানে সিট খালি না থাকায় পরদিন বিকেলে ল্যাবএইডের সিসিইউতে নেওয়া হয়।

এদিকে সেন্ট্রাল হসপিটালের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর ডা. আফসানা বিনতে গাউস বলেন, এ ঘটনায় আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। সেই সঙ্গে সেদিন ওটিতে যেসব চিকিৎসক-নার্স উপস্থিত ছিলেন, এমন ১১ জনের সবাইকে বরখাস্ত করা হয়েছে।