ঢাকা ০৯:৪২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভোটের জন্য প্রস্তুত গাজীপুর সিটি, তিন স্তরের নিরাপত্তা

গাজীপুর প্রতিনিধি
  • Update Time : ০৫:৩৬:০৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ মে ২০২৩
  • / ৮০ Time View

নতুন নগরপিতা ও কাউন্সিলরদের বেছে নিতে ভোটের জন্য প্রস্তুত গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন। এরই মধ্যে প্রতিটি কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে নির্বাচনী সরঞ্জাম। ভোটকে সামনে রেখে গোটা শহরে গড়ে তোলা হয়েছে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এতে পুলিশ, বিজিবি ও আনসারের পাশাপাশি সাদা পোশাকে নিরাপত্তা বাহিনী পর্যাপ্ত কর্মী মোতায়েন থাকবে।

দেশের সবচেয়ে বড় সিটি করপোরেশন গাজীপুরে ভোটার সংখ্যা প্রায় ১১ লাখ সাড়ে ৭৯ হাজার। বৃহস্পতিবার এই সিটিতে প্রথমবারের মতো ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ হবে। তবে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, ইভিএমে ভোট দেয়ার পদ্ধতি নিয়ে প্রত্যাশিত প্রচার হয়নি।

তবে, গাজীপুর সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম বলেন, গাজীপুরে ভোটাররা এবারই প্রথম ইভিএমে ভোট দেবেন। এটি নিয়ে ভোটারদের মধ্যে নানা ধরনের ভীতি কাজ করেছে। এসব ভীতি দূর করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে ইসি। প্রার্থীদেরকে ডামি ইভিএম ব্যবহার করে ভোটারদের ভীতি দূর করার উদ্যোগ নিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৪৮০টি ভোটকেন্দ্রের ৩ হাজার ৪৯৭টি কক্ষে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ৮টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সব কেন্দ্রের সব কটিতেই ইভিএমে ভোট হবে। ইতোমধ্যে প্রস্তুতি শেষ করেছে ইসি।

বুধবার কেন্দ্রে কেন্দ্রে চলে গেছে নির্বাচনী সরঞ্জাম। ভোট কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কাছে ইভিএম মেশিনসহ ৪৬ আইটেমের সামগ্রী বিতরণ করা হয়। গাজীপুর জেলা প্রশাসন কার্যলয় চত্বর, শহরের কাজী আজিম উদ্দিন কলেজ এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় দুপুর একটা থেকে প্রতি কেন্দ্রের জন্য একযোগে ইভিএম মেশিনসহ অন্যান্য সামগ্রী পাঠানো হয়।

এ সবের মধ্যে আরো আছে, হ্যান্ড সেনিটাইজার, ভেসেলিন, মখমলের কাপড়, টিস্যূ, বুথ কক্ষ নির্মানের জন্য কাপড়, অমোছনীয় কালি, ভোটার তালিকা, স্ক্রু-ড্রাইভার, মাল্টিপ্লাগসহ ৪৬ আইটেমের সামগ্রী বিতরণ করা হয়। কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিজাইডিং, সহকারি প্রিজাইডিং অফিসাররা এসব সামগ্রী বুঝে নিয়েছেন।

গাজীপুর সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম জানান, ৪৮০টি কেন্দ্রের তিন হাজার ৪৯৭টি কক্ষ স্থাপন করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে ব্যবহার করার জন্য পাঁচ হাজার ২৪৬টি ইভিএম মেশিন প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রতি কেন্দ্রে একজন করে ৪৮০ জন ট্রাবল শ্যূটার, প্রতি দুই কেন্দ্রে একজন করে মোট ২৪০ জন (ভ্রাম্যমান) টেকনিক্যাল এক্সপার্ট, ১৪জন সহকারি প্রোগামার এবং চার জন থাকবেন প্রোগ্রামার। যাতে কোন ইভিএম মেশিনে সমস্যা দেখা দিলে তা দ্রুত সমাধান করা যায়। প্রতি কেন্দ্রে একটি এবং কক্ষে একটি করে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।

সেই সঙ্গে ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্ন রাখতে ৫৭টি ওয়ার্ডে নির্বাহী হাকিম থাকবেন ৭৬ জন, সঙ্গে বিচারিক হাকিমও থাকবেন। র‌্যাবের ৩০টি টিম থাকবে, আর বিজিবি’র থাকবে ১৩ প্লাটুন। এছাড়া স্ট্রাইকিং ফোর্স পুলিশের ১৯টি ও মোবাইল টিম হিসেবে ৫৭টি টিম থাকবে। গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্য ১৭ ও সাধারণ কেন্দ্রে ১৬ জন সদস্য থাকবেন।

বৃহস্পতিবার ভোটের নিরাপত্তা দিতে সব মিলিয়ে কমপক্ষে সাড়ে ১৩ হাজার নিরাপত্তাকর্মী কাজ করবে। এদের মধ্যে থাকবেন র‌্যাব, পুলিশ বিজিবি ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা। সাদা পোশাকে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন প্রায় সাড়ে ৪০০ সদস্য। সেই সঙ্গে সিসি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে গোটা শহর। এসবের মাধ্যমে চলবে সার্বক্ষণিক নজরদারি।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোল্লা নজরুল ইসলাম জানান, নির্বাচনে ৩৫১টি কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কেন্দ্রে যাদের নির্ধারিত কোন কাজ নেই, তারা থাকতে পারবে না। থাকালে তার বিরুদ্ধে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রায় ১৩ হাজার নিরাপত্তা কর্মী নির্বাচনী মাঠে দায়িত্ব পালন করবেন। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ২০ থেকে ২২ জন থাকবে।

গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৬৬৩টি। তবে এবার কোন কেন্দ্রেই ইভিএমে মক ভোটের আয়োজন করা হয়নি। এই নির্বাচনে আট মেয়র প্রার্থীসহ ৩৩৩ জন কাউন্সিলর প্রার্থী সরাসরি ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হচ্ছেন।

এবার গাজীপুরে সিটিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে তৃতীয়বারের নির্বাচন। এই নির্বাচনে প্রথমবার পরাজিত আজমত উল্লা খান লড়ছেন। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাঠে রয়েছেন নিজ দলের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীর আলম, যিনি মাকে সামনে রেখে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।

গাজীপুরের জনতা শেষ পর্যন্ত তাদের নগরপিতা হিসেবে কাকে বেছে নেন, সেটা জানতে অপেক্ষা করতে হবে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত।

Please Share This Post in Your Social Media

ভোটের জন্য প্রস্তুত গাজীপুর সিটি, তিন স্তরের নিরাপত্তা

Update Time : ০৫:৩৬:০৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ মে ২০২৩

নতুন নগরপিতা ও কাউন্সিলরদের বেছে নিতে ভোটের জন্য প্রস্তুত গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন। এরই মধ্যে প্রতিটি কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে নির্বাচনী সরঞ্জাম। ভোটকে সামনে রেখে গোটা শহরে গড়ে তোলা হয়েছে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এতে পুলিশ, বিজিবি ও আনসারের পাশাপাশি সাদা পোশাকে নিরাপত্তা বাহিনী পর্যাপ্ত কর্মী মোতায়েন থাকবে।

দেশের সবচেয়ে বড় সিটি করপোরেশন গাজীপুরে ভোটার সংখ্যা প্রায় ১১ লাখ সাড়ে ৭৯ হাজার। বৃহস্পতিবার এই সিটিতে প্রথমবারের মতো ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ হবে। তবে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, ইভিএমে ভোট দেয়ার পদ্ধতি নিয়ে প্রত্যাশিত প্রচার হয়নি।

তবে, গাজীপুর সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম বলেন, গাজীপুরে ভোটাররা এবারই প্রথম ইভিএমে ভোট দেবেন। এটি নিয়ে ভোটারদের মধ্যে নানা ধরনের ভীতি কাজ করেছে। এসব ভীতি দূর করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে ইসি। প্রার্থীদেরকে ডামি ইভিএম ব্যবহার করে ভোটারদের ভীতি দূর করার উদ্যোগ নিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৪৮০টি ভোটকেন্দ্রের ৩ হাজার ৪৯৭টি কক্ষে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ৮টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সব কেন্দ্রের সব কটিতেই ইভিএমে ভোট হবে। ইতোমধ্যে প্রস্তুতি শেষ করেছে ইসি।

বুধবার কেন্দ্রে কেন্দ্রে চলে গেছে নির্বাচনী সরঞ্জাম। ভোট কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কাছে ইভিএম মেশিনসহ ৪৬ আইটেমের সামগ্রী বিতরণ করা হয়। গাজীপুর জেলা প্রশাসন কার্যলয় চত্বর, শহরের কাজী আজিম উদ্দিন কলেজ এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় দুপুর একটা থেকে প্রতি কেন্দ্রের জন্য একযোগে ইভিএম মেশিনসহ অন্যান্য সামগ্রী পাঠানো হয়।

এ সবের মধ্যে আরো আছে, হ্যান্ড সেনিটাইজার, ভেসেলিন, মখমলের কাপড়, টিস্যূ, বুথ কক্ষ নির্মানের জন্য কাপড়, অমোছনীয় কালি, ভোটার তালিকা, স্ক্রু-ড্রাইভার, মাল্টিপ্লাগসহ ৪৬ আইটেমের সামগ্রী বিতরণ করা হয়। কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিজাইডিং, সহকারি প্রিজাইডিং অফিসাররা এসব সামগ্রী বুঝে নিয়েছেন।

গাজীপুর সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম জানান, ৪৮০টি কেন্দ্রের তিন হাজার ৪৯৭টি কক্ষ স্থাপন করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে ব্যবহার করার জন্য পাঁচ হাজার ২৪৬টি ইভিএম মেশিন প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রতি কেন্দ্রে একজন করে ৪৮০ জন ট্রাবল শ্যূটার, প্রতি দুই কেন্দ্রে একজন করে মোট ২৪০ জন (ভ্রাম্যমান) টেকনিক্যাল এক্সপার্ট, ১৪জন সহকারি প্রোগামার এবং চার জন থাকবেন প্রোগ্রামার। যাতে কোন ইভিএম মেশিনে সমস্যা দেখা দিলে তা দ্রুত সমাধান করা যায়। প্রতি কেন্দ্রে একটি এবং কক্ষে একটি করে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।

সেই সঙ্গে ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্ন রাখতে ৫৭টি ওয়ার্ডে নির্বাহী হাকিম থাকবেন ৭৬ জন, সঙ্গে বিচারিক হাকিমও থাকবেন। র‌্যাবের ৩০টি টিম থাকবে, আর বিজিবি’র থাকবে ১৩ প্লাটুন। এছাড়া স্ট্রাইকিং ফোর্স পুলিশের ১৯টি ও মোবাইল টিম হিসেবে ৫৭টি টিম থাকবে। গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্য ১৭ ও সাধারণ কেন্দ্রে ১৬ জন সদস্য থাকবেন।

বৃহস্পতিবার ভোটের নিরাপত্তা দিতে সব মিলিয়ে কমপক্ষে সাড়ে ১৩ হাজার নিরাপত্তাকর্মী কাজ করবে। এদের মধ্যে থাকবেন র‌্যাব, পুলিশ বিজিবি ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা। সাদা পোশাকে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন প্রায় সাড়ে ৪০০ সদস্য। সেই সঙ্গে সিসি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে গোটা শহর। এসবের মাধ্যমে চলবে সার্বক্ষণিক নজরদারি।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোল্লা নজরুল ইসলাম জানান, নির্বাচনে ৩৫১টি কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কেন্দ্রে যাদের নির্ধারিত কোন কাজ নেই, তারা থাকতে পারবে না। থাকালে তার বিরুদ্ধে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রায় ১৩ হাজার নিরাপত্তা কর্মী নির্বাচনী মাঠে দায়িত্ব পালন করবেন। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ২০ থেকে ২২ জন থাকবে।

গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৬৬৩টি। তবে এবার কোন কেন্দ্রেই ইভিএমে মক ভোটের আয়োজন করা হয়নি। এই নির্বাচনে আট মেয়র প্রার্থীসহ ৩৩৩ জন কাউন্সিলর প্রার্থী সরাসরি ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হচ্ছেন।

এবার গাজীপুরে সিটিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে তৃতীয়বারের নির্বাচন। এই নির্বাচনে প্রথমবার পরাজিত আজমত উল্লা খান লড়ছেন। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাঠে রয়েছেন নিজ দলের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীর আলম, যিনি মাকে সামনে রেখে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।

গাজীপুরের জনতা শেষ পর্যন্ত তাদের নগরপিতা হিসেবে কাকে বেছে নেন, সেটা জানতে অপেক্ষা করতে হবে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত।