ঢাকা ১০:১৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ

বিমানবন্দরের শীর্ষ চাঁদাবাজ কে এই সেলিম খান!

রফিকুল ইসলাম মিঠু
  • Update Time : ০২:৫৩:৩৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ জুলাই ২০২৩
  • / ১৭৩ Time View

রাজধানীর ব্যস্ততম রেলওয়ে জংশনের নাম বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন। এটি রাজধানী প্রাণকেন্দ্র হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পূর্বপাশে অবস্হিত। আর এই ব্যস্ততম বিমানবন্দর রেলস্টেশনকে ঘিরে স্হানীয় এক শ্রেণির ফুটপাত চাঁদাবাজদের আস্তানায় পরিনত হয়েছে।

এখানে বিমানবন্দর রেলওয়ে কমিউনিটি পুলিশের সাবেক সভাপতি সেলিম খান গং নামক বাহিনীর সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজ গ্রুপের আবির্ভাব ঘটে।

কমিউনিটি পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে সেলিম খান গং বাহিনীর নেতৃত্বে দিব্যি চলছে হাজার হাজার টাকা চাঁদাবাজি। অল্প দিনের ব্যবধানে চাঁদাবাজ সেলিম খান আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছেন।

খবর সংশ্লিষ্ট ও একাধিক বিশ্বস্ত তথ্য সূত্রের।

অভিযোগে জানা গেছে, বিমানবন্দরের শীর্ষ চাঁদাবাজ এই সেলিম খান এবং তার পরিচয় ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল থানার চড় বেলামারি গ্রামের মৃত মোতালেব খানের পুত্র মো: সেলিম খান।

বর্তমানে সে রাজধানীর দক্ষিনখান থানার সর্দার পাড়া এলাকার রোকন উদ্দীনের বাড়ির ভাড়াটিয়া। পারিবারিক ভাবে সে তিন পুত্র সন্তানের জনক। তার পিতা মাতার দুই পুত্র এক কন্যার মধ্যে সেলিম খান সকলের বড়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, জাতীয় পার্টির আমলে ঢাকায় আগমন ঘটে সেলিমের। জাতীয় পার্টি (জাপা) হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ এর শাসনামলে সেলিম খান তার গ্রাম ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল এলাকা থেকে ঢাকায় এসে আস্তানা গড়ে তুলে।

বিমানবন্দর ও উত্তরা থানার জসিম উদ্দীন রোডের ফুটপাত চালাতো। ফুটপাতে চাঁদাবাজি করা ছিল তার নিত্য দিনের কাজ। চাদাঁর টাকায় চলতো তার সংসার। এভাবে অল্প দিনের ব্যবধানে তার নাম ফুটপাতে ছড়িয়ে পড়ে এবং পরিচিতি লাভ করে ফুটপাত চাঁদাবাজ সেলিম খান হিসেবে। তৎকালিক সময়ে জাপার একজন মহিলা নেত্রীর বাসায় কেয়ারটেকারের কাজ করতো সে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র আরো বলছে, বিমানবন্দর থানার ফুটপাত চলতো সেলিমের ইশারায় পুলিশের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার হাত ধরে বিমানবন্দর থানা এলাকায় আস্তানা হিসেবে বেছে নেয় সেলিম খান। তার ইশারায় চলতো ফুটপাতে চাঁদাবাজি। সে যেন এখানকার বড় মাপের একজন হর্তাকর্তা। সে সময় বিমানবন্দর থানা এলাকায় প্রত্যেকটি দোকান থেকে প্রতিনিয়ত টাকা উঠাতো সেলিম। কেউ যদি তাকে টাকা দিতে রাজী না হত তখন তাকে পুলিশ দিয়ে অহেতুক ভাবে হয়রানী করা হত। এছাড়া অনেক সময় বিভিন্ন ধরনের নাজেহাল করতো সে।

উত্তরা ও বিমানবন্দর এলাকায় চাঁদাবাজ বাহিনীর প্রধান হিসেবে সেলিমের কথায় সব কিছু উঠতো আর বসতো। অনেক সময় পুলিশের সোর্স হিসেবেও কাজ করতো সেলিম।

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে সেলিমের আগমন: ঢাকা রেলওয়ে নিরাপত্তা পুলিশের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার হাত ধরে বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে এসে প্রথমে আশ্রয় নেন সেলিম। এরপর সে স্টেশন এলাকায় মাছের একটি দোকান দেয় এবং ব্যবসার সুবাধে চাঁদাবাজি শুরু করে। পরবর্তীতে নিরাপত্তা বাহিনীর ওই কর্মকর্তার হাত ধরে বিমানবন্দর রেলস্টেশন এলাকায় সিএনজি, রিকসা, ফুটপাতের বিভিন্ন দোকান পাটে ব্যাপক চাঁদাবাজি আরম্ভ করে। এভাবে সেলিম খান অল্প দিনের ব্যবধানে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে উঠে।

বিমানবন্দর রেলস্টেশনের ফুটপাত ফলের দোকানদার ঈমন, নিজাম ও মোটা ফারুক জানান, আমরা এখানে দীর্ঘ দিন ধরে ফলের ব্যবসা করে আসছি। সেলিম খান আমাদের আশ্রয় দিয়েছেন। বিনিময়ে তিনি আমাদের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা নিয়ে থাকেন।

একটি সূত্র ও অভিযোগে জানা গেছে, মা- বাবার সাথে রাগ কিংবা অভিমান করে বাড়ি থেকে চলে আসা উঠতী বয়সী তরুনীদের বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে রাতের অন্ধকারে ফুসলিয়ে নিয়ে গিয়ে তাদের সাথে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হয় সেলিম খান।

এ কাজে তাকে যদি কেউ প্রতিবাদ করতো তাকে পড়তে হতো বিপদে। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথম দিকে নরসিংদী থেকে মার সাথে অভিমান করে ঘর ছাড়া এক মাদ্রাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থী বিমানবন্দর প্লাটফরমে পৌছালে তার সাথে সেলিমের পরিচয় হয়। এরপর সে তাকে স্টেশন থেকে ছলচাতুরীর মাধ্যমে দক্ষিনখান এলাকায় নিয়ে সেলিম তাকে বিয়ে করে এবং বিয়ের ১৫ দিনের মধ্যে স্বামী স্ত্রীর সাথে বনিবনা না হওয়ায় অবশেষে স্ত্রীকে দিয়ে তালাক দেয় সেলিম। অল্প সময়ের মধ্যে ফুটপাতে চাঁদাবাজি করে সেলিম খান বর্তমানে লাখ লাখ টাকার মালিক বনে গেছেন।

এব্যাপারে অভিযুক্ত সেলিম খানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন আমি তিন চার মাস যাবত গ্রামের বাড়িতে আছি। সে আরো বলেন আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট।

এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত অনুসন্ধান চলছে।

 

Please Share This Post in Your Social Media

বিমানবন্দরের শীর্ষ চাঁদাবাজ কে এই সেলিম খান!

Update Time : ০২:৫৩:৩৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ জুলাই ২০২৩

রাজধানীর ব্যস্ততম রেলওয়ে জংশনের নাম বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন। এটি রাজধানী প্রাণকেন্দ্র হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পূর্বপাশে অবস্হিত। আর এই ব্যস্ততম বিমানবন্দর রেলস্টেশনকে ঘিরে স্হানীয় এক শ্রেণির ফুটপাত চাঁদাবাজদের আস্তানায় পরিনত হয়েছে।

এখানে বিমানবন্দর রেলওয়ে কমিউনিটি পুলিশের সাবেক সভাপতি সেলিম খান গং নামক বাহিনীর সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজ গ্রুপের আবির্ভাব ঘটে।

কমিউনিটি পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে সেলিম খান গং বাহিনীর নেতৃত্বে দিব্যি চলছে হাজার হাজার টাকা চাঁদাবাজি। অল্প দিনের ব্যবধানে চাঁদাবাজ সেলিম খান আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছেন।

খবর সংশ্লিষ্ট ও একাধিক বিশ্বস্ত তথ্য সূত্রের।

অভিযোগে জানা গেছে, বিমানবন্দরের শীর্ষ চাঁদাবাজ এই সেলিম খান এবং তার পরিচয় ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল থানার চড় বেলামারি গ্রামের মৃত মোতালেব খানের পুত্র মো: সেলিম খান।

বর্তমানে সে রাজধানীর দক্ষিনখান থানার সর্দার পাড়া এলাকার রোকন উদ্দীনের বাড়ির ভাড়াটিয়া। পারিবারিক ভাবে সে তিন পুত্র সন্তানের জনক। তার পিতা মাতার দুই পুত্র এক কন্যার মধ্যে সেলিম খান সকলের বড়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, জাতীয় পার্টির আমলে ঢাকায় আগমন ঘটে সেলিমের। জাতীয় পার্টি (জাপা) হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ এর শাসনামলে সেলিম খান তার গ্রাম ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল এলাকা থেকে ঢাকায় এসে আস্তানা গড়ে তুলে।

বিমানবন্দর ও উত্তরা থানার জসিম উদ্দীন রোডের ফুটপাত চালাতো। ফুটপাতে চাঁদাবাজি করা ছিল তার নিত্য দিনের কাজ। চাদাঁর টাকায় চলতো তার সংসার। এভাবে অল্প দিনের ব্যবধানে তার নাম ফুটপাতে ছড়িয়ে পড়ে এবং পরিচিতি লাভ করে ফুটপাত চাঁদাবাজ সেলিম খান হিসেবে। তৎকালিক সময়ে জাপার একজন মহিলা নেত্রীর বাসায় কেয়ারটেকারের কাজ করতো সে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র আরো বলছে, বিমানবন্দর থানার ফুটপাত চলতো সেলিমের ইশারায় পুলিশের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার হাত ধরে বিমানবন্দর থানা এলাকায় আস্তানা হিসেবে বেছে নেয় সেলিম খান। তার ইশারায় চলতো ফুটপাতে চাঁদাবাজি। সে যেন এখানকার বড় মাপের একজন হর্তাকর্তা। সে সময় বিমানবন্দর থানা এলাকায় প্রত্যেকটি দোকান থেকে প্রতিনিয়ত টাকা উঠাতো সেলিম। কেউ যদি তাকে টাকা দিতে রাজী না হত তখন তাকে পুলিশ দিয়ে অহেতুক ভাবে হয়রানী করা হত। এছাড়া অনেক সময় বিভিন্ন ধরনের নাজেহাল করতো সে।

উত্তরা ও বিমানবন্দর এলাকায় চাঁদাবাজ বাহিনীর প্রধান হিসেবে সেলিমের কথায় সব কিছু উঠতো আর বসতো। অনেক সময় পুলিশের সোর্স হিসেবেও কাজ করতো সেলিম।

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে সেলিমের আগমন: ঢাকা রেলওয়ে নিরাপত্তা পুলিশের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার হাত ধরে বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে এসে প্রথমে আশ্রয় নেন সেলিম। এরপর সে স্টেশন এলাকায় মাছের একটি দোকান দেয় এবং ব্যবসার সুবাধে চাঁদাবাজি শুরু করে। পরবর্তীতে নিরাপত্তা বাহিনীর ওই কর্মকর্তার হাত ধরে বিমানবন্দর রেলস্টেশন এলাকায় সিএনজি, রিকসা, ফুটপাতের বিভিন্ন দোকান পাটে ব্যাপক চাঁদাবাজি আরম্ভ করে। এভাবে সেলিম খান অল্প দিনের ব্যবধানে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে উঠে।

বিমানবন্দর রেলস্টেশনের ফুটপাত ফলের দোকানদার ঈমন, নিজাম ও মোটা ফারুক জানান, আমরা এখানে দীর্ঘ দিন ধরে ফলের ব্যবসা করে আসছি। সেলিম খান আমাদের আশ্রয় দিয়েছেন। বিনিময়ে তিনি আমাদের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা নিয়ে থাকেন।

একটি সূত্র ও অভিযোগে জানা গেছে, মা- বাবার সাথে রাগ কিংবা অভিমান করে বাড়ি থেকে চলে আসা উঠতী বয়সী তরুনীদের বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে রাতের অন্ধকারে ফুসলিয়ে নিয়ে গিয়ে তাদের সাথে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হয় সেলিম খান।

এ কাজে তাকে যদি কেউ প্রতিবাদ করতো তাকে পড়তে হতো বিপদে। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথম দিকে নরসিংদী থেকে মার সাথে অভিমান করে ঘর ছাড়া এক মাদ্রাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থী বিমানবন্দর প্লাটফরমে পৌছালে তার সাথে সেলিমের পরিচয় হয়। এরপর সে তাকে স্টেশন থেকে ছলচাতুরীর মাধ্যমে দক্ষিনখান এলাকায় নিয়ে সেলিম তাকে বিয়ে করে এবং বিয়ের ১৫ দিনের মধ্যে স্বামী স্ত্রীর সাথে বনিবনা না হওয়ায় অবশেষে স্ত্রীকে দিয়ে তালাক দেয় সেলিম। অল্প সময়ের মধ্যে ফুটপাতে চাঁদাবাজি করে সেলিম খান বর্তমানে লাখ লাখ টাকার মালিক বনে গেছেন।

এব্যাপারে অভিযুক্ত সেলিম খানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন আমি তিন চার মাস যাবত গ্রামের বাড়িতে আছি। সে আরো বলেন আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট।

এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত অনুসন্ধান চলছে।