ঢাকা ১২:০৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে জাল টাকা প্রস্তুতকারী চক্রের মূলহোতাসহ গ্রেফতার ৩

শরিফুল হক পাভেল
  • Update Time : ০১:০১:১০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
  • / ৩৫ Time View

ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে জালনোটের অবাধ কারবার নিয়ে দেশব্যাপী বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হলে র‍্যাব এসব সংঘবদ্ধ জালনোট প্রস্তুতকারী চক্রের সদস্যদের গ্রেফতারে বিশেষ গোয়েন্দা নজরদারী শুরু করে। পবিত্র রমজান ও আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল ফিতরকে কেন্দ্র করে এরূপ বেশকিছু জাল নোট প্রস্তুতকারী চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে র‌্যাব গোয়েন্দা সূত্রে জানতে পারে।

এরই ধারাবাহিকতায় ২৮ মার্চ শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া থানাধীন ঘড়িষাড় ইউনিয়নের অন্তর্গত চরমোহন এলাকায় অভিযান চালিয়ে জালনোট তৈরী ও ব্যবসায়ী চক্রের মূলহোতা ১। মোঃ আরিফ ব্যাপারী (২০), তার অন্যতম প্রধান সহযোগী ও চক্রের সক্রিয় সদস্য ২। মোঃ জাহিদ (২৩), ৩। অনিক (১৯)কে গ্রেফতার করে র‍্যাব-৩।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

তিনি জানান, গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে ২০ লক্ষ ৪৬ হাজার টাকা মূল্যমানের জালনোট যার মধ্যে ৫০০ টাকার জাল নোট ৯২ টি এবং ১০০০ টাকার জাল নোট ২০০০ টি ছাড়াও প্রিন্টকৃত ৫০০ টাকার বিপুল পরিমান নোট এবং জালটাকা তৈরীতে ব্যবহৃত ১ টি কালার প্রিন্টার, ১ টি ল্যাপটপ, ১ টি মাউস, ১ টি ল্যাপটপ চার্জার, ২ টি প্রিন্টারের ক্যাবল, ১ টি মাল্টিপ্লাগ, ১ টি স্টীলের স্কেল, ১ টি এন্টিকাটার, ১ টি স্কিন প্রিন্টের ফ্রেম, ১ টি টাকা কাটার কাঁচ এবং ২ টি মোবাইলফোন উদ্ধার করা হয়।

গ্রেফতারকৃত আরিফ ব্যাপারী এই জাল নোট ছাপানো চক্রের মূলহোতা। আরিফ পূর্ব থেকেই কম্পিউটারে পারদর্শী ছিল। সে ঘড়িষাড় ইউনিয়নের বাংলা বাজারে একটি কম্পিউটার দোকানে কাজ করতো। সে ইউটিউব থেকে জালটাকা বানানোর প্রক্রিয়া দেখে এবং নিজের অর্জিত কম্পিউটার দক্ষতা কাজে লাগিয়ে জাল নোট তৈরিতে পারদর্শিতা অর্জন করে। পরবর্তীতে আরিফ তার অপর দুই সহযোগী জাহিদ এবং অনিক এর সহযোগিতায় কম্পিউটার, প্রিন্টার এবং জালটাকা তৈরির কাঁচামাল সংগ্রহ করে নিজ বাসায় জালটাকা ছাপানোর কাজ শুরু করে।

গ্রেফতারকৃত আরিফ, জাহিদ ও অনিক বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়া ও অনলাইন মাধ্যম ব্যবহার করে জাল টাকা বিক্রয়ের জন্য নেটওয়ার্ক তৈরী করে। এ চক্রটি বছরব্যাপী জাল নোট প্রস্তুত ও বিক্রয় করে আসলেও আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতরকে টার্গেট করে বিপুল পরিমাণ জাল নোট বাজারে সরবরাহ করার প্রস্তুতি নিয়েছিল। তারা প্রতি ১ লক্ষ টাকা মূল্যমানের জাল নোট ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায় বিক্রি করত। ঈদ উপলক্ষে জাল নোটের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে তারা প্রতি ১ লাখ টাকার জাল নোট ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করছিল বলে জানা যায়।

গ্রেফতারকৃত আসামি আরিফ ব্যাপারী জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, শরিয়তপুর জেলার অধিকাংশ লোকই ইতালি প্রবাসী এবং দেশে অবস্থানরত বড় একটি অংশ রাজধানীর বাংলা বাজারের বিভিন্ন প্রিন্টিং প্রেসে কর্মরত। পরিচিতদের সূত্র ধরে সে বিভিন্ন সময় রাজধানীর বাংলা বাজারে এসে অবস্থান করে প্রিন্টিং সম্পর্কে ধারনা লাভ করে। সে ধারণা থেকেই জাল টাকা তৈরীর জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল যেমন রং, কালি ও কাগজ পুরান ঢাকা হতে ক্রয় করতো।

এসব তৈরিকৃত জালনোট গুলো বিক্রয়ের জন্য আরিফ, জাহিদ এবং অনিক মিলে ফেসবুকে জালটাকা বিক্রয়ের বিভিন্ন পেজ ও গ্রুপের (যেমন; এ গ্রেড জালনোট, টাকা চাই, জালনোট, জালটাকা বিক্রি করি, জাল টাকার ডিলার, জাল টাকা বিক্রয় কেন্দ্র, রিয়েল সেলস্, টাকা বিজনেস ইত্যাদি) পোস্টে জালটাকা ক্রয়ে আগ্রহী কমেন্টকারীদের সাথে ভুয়া আইডি খুলে ইনবক্সে যোগাযোগ করে। পরবর্তীতে তারা হোয়াটসঅ্যাপ, ম্যাসেঞ্জার, ইমো প্রভৃতি অনলাইন যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে সরাসরি সাক্ষাতের মাধ্যমে জালটাকা ডেলিভারির কাজ করে থাকে।

এ চক্রটি বিগত সময়ে জালটাকার বড় ধরনের একাধিক চালান ডেলিভারি দিয়েছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়। ১৮ মার্চ ৫ লক্ষ টাকার জালনোট ডেলিভারির জন্য প্রস্তুতিকালীন টাকা, মেশিন ও সরঞ্জামাদিসহ র‍্যাবের কাছে হাতেনাতে ধরা পরে।

গ্রেফতারকৃত আরিফ এইচএসসি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। সে পড়ালেখা বাদ দিয়ে শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার বাংলাবাজারে একটি কম্পিউটারের দোকানে কাজ করতো। দোকানের কাজ করে যে অর্থ উপার্জন করতো সে টাকা জমিয়ে জালনোট ছাপানোর জন্য ল্যাপটপ, প্রিন্টার এবং প্রয়োজনীয় জিনিস ক্রয় করে।

গ্রেফতারকৃত জাহিদ নবম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। ২০২১ সালে সৌদি ফেরত জাহিদ পদ্মা নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল বলে জানায়। কিন্তু সে অল্প পরিশ্রমে অধিক অর্থের আশায় মাছ ধরার আড়ালে গ্রেফতারকৃত আরিফের সাথে জালনোট ছাপানোর কাজ শুরু করে। সে জালনোট বিক্রির জন্য বিভিন্ন অনলাইন গ্রুপে পোষ্ট করে কাস্টমার সংগ্রহ করতো।

গ্রেফতারকৃত অনিক পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। সে তার পেশার আড়ালে গ্রেফতারকৃত আরিফ এবং জাহিদের সাথে জালনোট ছাপানোর কাজে যোগদান করে। সে তৈরীকৃত জাল টাকা প্রিন্টিং এর পর সঠিক সাইজ অনুযায়ী কাটিং এর কাজ করতো।

Please Share This Post in Your Social Media

ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে জাল টাকা প্রস্তুতকারী চক্রের মূলহোতাসহ গ্রেফতার ৩

Update Time : ০১:০১:১০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে জালনোটের অবাধ কারবার নিয়ে দেশব্যাপী বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হলে র‍্যাব এসব সংঘবদ্ধ জালনোট প্রস্তুতকারী চক্রের সদস্যদের গ্রেফতারে বিশেষ গোয়েন্দা নজরদারী শুরু করে। পবিত্র রমজান ও আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল ফিতরকে কেন্দ্র করে এরূপ বেশকিছু জাল নোট প্রস্তুতকারী চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে র‌্যাব গোয়েন্দা সূত্রে জানতে পারে।

এরই ধারাবাহিকতায় ২৮ মার্চ শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া থানাধীন ঘড়িষাড় ইউনিয়নের অন্তর্গত চরমোহন এলাকায় অভিযান চালিয়ে জালনোট তৈরী ও ব্যবসায়ী চক্রের মূলহোতা ১। মোঃ আরিফ ব্যাপারী (২০), তার অন্যতম প্রধান সহযোগী ও চক্রের সক্রিয় সদস্য ২। মোঃ জাহিদ (২৩), ৩। অনিক (১৯)কে গ্রেফতার করে র‍্যাব-৩।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

তিনি জানান, গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে ২০ লক্ষ ৪৬ হাজার টাকা মূল্যমানের জালনোট যার মধ্যে ৫০০ টাকার জাল নোট ৯২ টি এবং ১০০০ টাকার জাল নোট ২০০০ টি ছাড়াও প্রিন্টকৃত ৫০০ টাকার বিপুল পরিমান নোট এবং জালটাকা তৈরীতে ব্যবহৃত ১ টি কালার প্রিন্টার, ১ টি ল্যাপটপ, ১ টি মাউস, ১ টি ল্যাপটপ চার্জার, ২ টি প্রিন্টারের ক্যাবল, ১ টি মাল্টিপ্লাগ, ১ টি স্টীলের স্কেল, ১ টি এন্টিকাটার, ১ টি স্কিন প্রিন্টের ফ্রেম, ১ টি টাকা কাটার কাঁচ এবং ২ টি মোবাইলফোন উদ্ধার করা হয়।

গ্রেফতারকৃত আরিফ ব্যাপারী এই জাল নোট ছাপানো চক্রের মূলহোতা। আরিফ পূর্ব থেকেই কম্পিউটারে পারদর্শী ছিল। সে ঘড়িষাড় ইউনিয়নের বাংলা বাজারে একটি কম্পিউটার দোকানে কাজ করতো। সে ইউটিউব থেকে জালটাকা বানানোর প্রক্রিয়া দেখে এবং নিজের অর্জিত কম্পিউটার দক্ষতা কাজে লাগিয়ে জাল নোট তৈরিতে পারদর্শিতা অর্জন করে। পরবর্তীতে আরিফ তার অপর দুই সহযোগী জাহিদ এবং অনিক এর সহযোগিতায় কম্পিউটার, প্রিন্টার এবং জালটাকা তৈরির কাঁচামাল সংগ্রহ করে নিজ বাসায় জালটাকা ছাপানোর কাজ শুরু করে।

গ্রেফতারকৃত আরিফ, জাহিদ ও অনিক বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়া ও অনলাইন মাধ্যম ব্যবহার করে জাল টাকা বিক্রয়ের জন্য নেটওয়ার্ক তৈরী করে। এ চক্রটি বছরব্যাপী জাল নোট প্রস্তুত ও বিক্রয় করে আসলেও আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতরকে টার্গেট করে বিপুল পরিমাণ জাল নোট বাজারে সরবরাহ করার প্রস্তুতি নিয়েছিল। তারা প্রতি ১ লক্ষ টাকা মূল্যমানের জাল নোট ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায় বিক্রি করত। ঈদ উপলক্ষে জাল নোটের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে তারা প্রতি ১ লাখ টাকার জাল নোট ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করছিল বলে জানা যায়।

গ্রেফতারকৃত আসামি আরিফ ব্যাপারী জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, শরিয়তপুর জেলার অধিকাংশ লোকই ইতালি প্রবাসী এবং দেশে অবস্থানরত বড় একটি অংশ রাজধানীর বাংলা বাজারের বিভিন্ন প্রিন্টিং প্রেসে কর্মরত। পরিচিতদের সূত্র ধরে সে বিভিন্ন সময় রাজধানীর বাংলা বাজারে এসে অবস্থান করে প্রিন্টিং সম্পর্কে ধারনা লাভ করে। সে ধারণা থেকেই জাল টাকা তৈরীর জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল যেমন রং, কালি ও কাগজ পুরান ঢাকা হতে ক্রয় করতো।

এসব তৈরিকৃত জালনোট গুলো বিক্রয়ের জন্য আরিফ, জাহিদ এবং অনিক মিলে ফেসবুকে জালটাকা বিক্রয়ের বিভিন্ন পেজ ও গ্রুপের (যেমন; এ গ্রেড জালনোট, টাকা চাই, জালনোট, জালটাকা বিক্রি করি, জাল টাকার ডিলার, জাল টাকা বিক্রয় কেন্দ্র, রিয়েল সেলস্, টাকা বিজনেস ইত্যাদি) পোস্টে জালটাকা ক্রয়ে আগ্রহী কমেন্টকারীদের সাথে ভুয়া আইডি খুলে ইনবক্সে যোগাযোগ করে। পরবর্তীতে তারা হোয়াটসঅ্যাপ, ম্যাসেঞ্জার, ইমো প্রভৃতি অনলাইন যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে সরাসরি সাক্ষাতের মাধ্যমে জালটাকা ডেলিভারির কাজ করে থাকে।

এ চক্রটি বিগত সময়ে জালটাকার বড় ধরনের একাধিক চালান ডেলিভারি দিয়েছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়। ১৮ মার্চ ৫ লক্ষ টাকার জালনোট ডেলিভারির জন্য প্রস্তুতিকালীন টাকা, মেশিন ও সরঞ্জামাদিসহ র‍্যাবের কাছে হাতেনাতে ধরা পরে।

গ্রেফতারকৃত আরিফ এইচএসসি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। সে পড়ালেখা বাদ দিয়ে শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার বাংলাবাজারে একটি কম্পিউটারের দোকানে কাজ করতো। দোকানের কাজ করে যে অর্থ উপার্জন করতো সে টাকা জমিয়ে জালনোট ছাপানোর জন্য ল্যাপটপ, প্রিন্টার এবং প্রয়োজনীয় জিনিস ক্রয় করে।

গ্রেফতারকৃত জাহিদ নবম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। ২০২১ সালে সৌদি ফেরত জাহিদ পদ্মা নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল বলে জানায়। কিন্তু সে অল্প পরিশ্রমে অধিক অর্থের আশায় মাছ ধরার আড়ালে গ্রেফতারকৃত আরিফের সাথে জালনোট ছাপানোর কাজ শুরু করে। সে জালনোট বিক্রির জন্য বিভিন্ন অনলাইন গ্রুপে পোষ্ট করে কাস্টমার সংগ্রহ করতো।

গ্রেফতারকৃত অনিক পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। সে তার পেশার আড়ালে গ্রেফতারকৃত আরিফ এবং জাহিদের সাথে জালনোট ছাপানোর কাজে যোগদান করে। সে তৈরীকৃত জাল টাকা প্রিন্টিং এর পর সঠিক সাইজ অনুযায়ী কাটিং এর কাজ করতো।