ঢাকা ০২:২৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পুঁজি খোয়া গেলে ঝালমুড়ি বিক্রির পথ বেছে নেন বাবা-ছেলে

কামরুল হাসান টিটু, রংপুর
  • Update Time : ১১:০০:০৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ মার্চ ২০২৪
  • / ৯৯ Time View

অভাব অনটনের সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে গিয়ে বারবার হোঁচট খেয়েছেন দুলু মিয়া। কখনো গরুর হাটে করেছেন দালালি, আবার কখনো বিক্রি করেছেন শাক-সবজি। সবশেষ করোনা মহামারীতে কাঁচামাল ব্যবসায় লোকসান হলে কুড়িগ্রাম থেকে চলে আসেন বিভাগীয় নগরী রংপুরে দুলু মিয়া। দিনবদলের স্বপ্নে তাঁর সঙ্গী হয় ছেলে মেহেদী হাসান। এখন বাবা-ছেলে ঝালমুড়ি বিক্রি করে সংসারে ফিরিয়েছেন সচ্ছলতা। মাসে তাদের আয় হচ্ছে ৫০-৬০ হাজার টাকা।

করোনায় ব্যবসার পুঁজি খোয়া গেলে ঝালমুড়ি বিক্রির পথ বেচে নেন কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার ৪৮ বছর বয়সী দুলু মিয়া। শুরুটা তেমন সুখকর না হলেও গেল চার বছরে পাল্টেছে তার সংসারের হাল। বাবা-ছেলের হাতে মাখা মুখরোচক ঝালমুড়ি মন কেড়েছে শত শত মানুষের। রংপুর নগরে ইতোমধ্যে অনেকের কাছে পরিচিত হয়েছেন তারা।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রংপুর মহানগরীর ২১ ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের সীমানার মধ‌্যস্থান শাপলা চত্ত্বর বটতলায় গিয়ে দেখা যায় বাবা-ছেলের ঝালমুড়ি বিক্রির পসরা সাজানো একটি ভ্যান। সেই ভ্যান ঘিরে বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষের আনাগোনা। আপন মনে ঝালমুড়ি মেখে চলেছেন বাবা-ছেলে। খাওয়ার অপেক্ষায় জটলা বেধে আছে মানুষজন। কখনও আলুর সাথে বুট বা ডিমের সাথে চানাচুর। মুড়ি, চানাচুর আর সরষে বাটায় ঝাকিয়ে তৈরি করছেন মুখরোচক খাবার।

রংপুর মহানগরীর বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি অন্য জেলা থেকে আসা পথচারীরাও স্বাদ নিচ্ছেন ঝালমুড়ির। একবার খেয়ে বারবার খে‌তে আসতে চান ঝালমুড়ি প্রিয়রা। প্রতি প্যাকেট মুড়ি বা বুটের দাম দশ টাকা। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬ টায় শুরু হয়ে ব্যবসা চলে রাত দেড়টা পর্যন্ত।

এর আগে দুলু মিয়া নগরীর খামার মোড়, ছালেক মার্কেট, কামারপাড়া ঢাকা কোচস্ট্যান্ড এলাকায় ঘুরে ঘুরে ঝালমুড়ি বিক্রি করতেন। তবে গত তিন বছর ধরে শাপলা চত্ত্বরের বটতলাতেই দিব্যি ব্যবসা করছেন। প্রতিদিন ঝালমুড়ি বিক্রি করে দেড় থেকে আড়াই হাজার টাকা আয় করছেন তিনি। ব্যস্ত বাবা-ছেলের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

ঝালমুড়ি বিক্রেতা দুলু মিয়া কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বড়ুয়া তবকপুর গ্রামের মৃত হবিবর রহমানের ছেলে। দুলু মিয়ার সংসারে স্ত্রী ছাড়াও রয়েছে এক ছেলে ও দুই মেয়ে সন্তান। এদের মধ্যে বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। আর একমাত্র ছেলে তার ব্যবসার সঙ্গী মেহেদী হাসান উলিপুর সরকারি কলেজে ডিগ্রি পড়ছেন, ছোট মেয়ে রংপুর নগরীর রবার্টসনগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে দুলু মিয়া জানান, ২০ হাজার টাকার বিনিয়োগে ঝালমুড়ি বিক্রির ব্যবসা শুরু করেছিলেন তিনি। শুরুতে ছোট পরিসরে হলেও এখন তার ঝালমুড়ির চাহিদা বাড়ায় একটু বড় করেছেন ব্যবসার ধরণ। প্রতিদিন সাড়ে তিন হাজার টাকার মালামাল কিনতে হয় তাঁকে। সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত তার মুখরোচক ঝালমুড়ি বিক্রি হয়ে থাকে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা।

তিনি আরো জানান, উলিপুরে গ্রামের বাড়িতে তার ছয় শতাংশ জমি থেকে এক শতাংশ বিক্রি করে বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। বাকি ৫ শতাংশ জমিতে থাকার মতো আধাপাকা বাড়ি নির্মাণ করছেন। বর্তমানে তিনি পরিবারসহ নগরীর মহাদেবপুর এলাকায় ভাড়া বাড়িতে বসবাস করছেন। ব্যবসার পুঁজি থেকে প্রতি মাসে তাকে কিস্তিও দিতে হয়।

এদিকে ঝালমুড়ির ভ্যান ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজনের সাথে কথা হয়। তাদের একজন ফরহাদুজ্জামান ফারুক। তিনি নগরীর শাপলা চত্বর হাজীপাড়া এলাকার বাসিন্দা। প্রতিদিন রাতে ঝালমুড়ির খেতে আসেন তিনি।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক জানান, এমন কোন দিন নেই যে তার মাখা বুট ও ঝালমুড়ির খাই না। খুব ভালো লাগে তাই বারবার আসি। বিশেষ করে আলু দিয়ে বুট মাখাটা অসাধারণ হয়। কখনো কখনো খেতে এসে আধাঘন্টা পর্যন্ত অপেক্ষাও করতে হয়।

সুমন মিয়া নামে আরেক ক্রেতা বলেন, ঝালমুড়িতে মশলাগুলো খুব ভালো দেয়। এবং অন্যান্য দোকানগুলোর থেকে দুলু মিয়ার মুড়ি ভর্তাটা খুব প্রিয়। তাই খাওয়ার পাশাপাশি বাড়িতেও নিয়ে যাই। দামও কম নেয়ায় দূর-দূরান্ত থেকে অনেক মানুষই খেতে আসেন।

মুখরোচক এই ঝালমুড়ির চাহিদা বাড়ায় বাবার ব্যবসায় সহযোগিতা করছেন ডিগ্রিপড়ুয়া ছেলে মেহেদী হাসান। পড়াশোনার পাশাপাশি ঝালমুড়ি বিক্রিতে মনোযোগি সে। মেহেদী হাসান জানায়, প্রতিদিন খুব ভালো বেচাকেনা হয়। এমন সময় আসে, যখন আমাদের লোক সামলাতে হিমশিম খেতে হয়। অনেকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে তার পরও মানুষ বিরক্তবোধ করেন না। ভালোই লাগে তাই বাবার সাথে সময় দেই।

অন্যদিকে দুলু মিয়া জানান, ঝালমুড়ির ব্যবসা এখন এতই জমজমাট যে, ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হয়। শখের বসে খাওয়ার পাশাপাশি সন্ধ্যার নাস্তা হিসেবে অনেকে বেছে নিয়েছে আমার ঝালমুড়ি। মশলাসহ খাবারের মান ভালো হওয়ায় ক্রেতারা বেশি আসছেন বলেও জানান তিনি।

Please Share This Post in Your Social Media

পুঁজি খোয়া গেলে ঝালমুড়ি বিক্রির পথ বেছে নেন বাবা-ছেলে

Update Time : ১১:০০:০৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ মার্চ ২০২৪

অভাব অনটনের সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে গিয়ে বারবার হোঁচট খেয়েছেন দুলু মিয়া। কখনো গরুর হাটে করেছেন দালালি, আবার কখনো বিক্রি করেছেন শাক-সবজি। সবশেষ করোনা মহামারীতে কাঁচামাল ব্যবসায় লোকসান হলে কুড়িগ্রাম থেকে চলে আসেন বিভাগীয় নগরী রংপুরে দুলু মিয়া। দিনবদলের স্বপ্নে তাঁর সঙ্গী হয় ছেলে মেহেদী হাসান। এখন বাবা-ছেলে ঝালমুড়ি বিক্রি করে সংসারে ফিরিয়েছেন সচ্ছলতা। মাসে তাদের আয় হচ্ছে ৫০-৬০ হাজার টাকা।

করোনায় ব্যবসার পুঁজি খোয়া গেলে ঝালমুড়ি বিক্রির পথ বেচে নেন কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার ৪৮ বছর বয়সী দুলু মিয়া। শুরুটা তেমন সুখকর না হলেও গেল চার বছরে পাল্টেছে তার সংসারের হাল। বাবা-ছেলের হাতে মাখা মুখরোচক ঝালমুড়ি মন কেড়েছে শত শত মানুষের। রংপুর নগরে ইতোমধ্যে অনেকের কাছে পরিচিত হয়েছেন তারা।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রংপুর মহানগরীর ২১ ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের সীমানার মধ‌্যস্থান শাপলা চত্ত্বর বটতলায় গিয়ে দেখা যায় বাবা-ছেলের ঝালমুড়ি বিক্রির পসরা সাজানো একটি ভ্যান। সেই ভ্যান ঘিরে বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষের আনাগোনা। আপন মনে ঝালমুড়ি মেখে চলেছেন বাবা-ছেলে। খাওয়ার অপেক্ষায় জটলা বেধে আছে মানুষজন। কখনও আলুর সাথে বুট বা ডিমের সাথে চানাচুর। মুড়ি, চানাচুর আর সরষে বাটায় ঝাকিয়ে তৈরি করছেন মুখরোচক খাবার।

রংপুর মহানগরীর বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি অন্য জেলা থেকে আসা পথচারীরাও স্বাদ নিচ্ছেন ঝালমুড়ির। একবার খেয়ে বারবার খে‌তে আসতে চান ঝালমুড়ি প্রিয়রা। প্রতি প্যাকেট মুড়ি বা বুটের দাম দশ টাকা। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬ টায় শুরু হয়ে ব্যবসা চলে রাত দেড়টা পর্যন্ত।

এর আগে দুলু মিয়া নগরীর খামার মোড়, ছালেক মার্কেট, কামারপাড়া ঢাকা কোচস্ট্যান্ড এলাকায় ঘুরে ঘুরে ঝালমুড়ি বিক্রি করতেন। তবে গত তিন বছর ধরে শাপলা চত্ত্বরের বটতলাতেই দিব্যি ব্যবসা করছেন। প্রতিদিন ঝালমুড়ি বিক্রি করে দেড় থেকে আড়াই হাজার টাকা আয় করছেন তিনি। ব্যস্ত বাবা-ছেলের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

ঝালমুড়ি বিক্রেতা দুলু মিয়া কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বড়ুয়া তবকপুর গ্রামের মৃত হবিবর রহমানের ছেলে। দুলু মিয়ার সংসারে স্ত্রী ছাড়াও রয়েছে এক ছেলে ও দুই মেয়ে সন্তান। এদের মধ্যে বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। আর একমাত্র ছেলে তার ব্যবসার সঙ্গী মেহেদী হাসান উলিপুর সরকারি কলেজে ডিগ্রি পড়ছেন, ছোট মেয়ে রংপুর নগরীর রবার্টসনগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে দুলু মিয়া জানান, ২০ হাজার টাকার বিনিয়োগে ঝালমুড়ি বিক্রির ব্যবসা শুরু করেছিলেন তিনি। শুরুতে ছোট পরিসরে হলেও এখন তার ঝালমুড়ির চাহিদা বাড়ায় একটু বড় করেছেন ব্যবসার ধরণ। প্রতিদিন সাড়ে তিন হাজার টাকার মালামাল কিনতে হয় তাঁকে। সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত তার মুখরোচক ঝালমুড়ি বিক্রি হয়ে থাকে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা।

তিনি আরো জানান, উলিপুরে গ্রামের বাড়িতে তার ছয় শতাংশ জমি থেকে এক শতাংশ বিক্রি করে বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। বাকি ৫ শতাংশ জমিতে থাকার মতো আধাপাকা বাড়ি নির্মাণ করছেন। বর্তমানে তিনি পরিবারসহ নগরীর মহাদেবপুর এলাকায় ভাড়া বাড়িতে বসবাস করছেন। ব্যবসার পুঁজি থেকে প্রতি মাসে তাকে কিস্তিও দিতে হয়।

এদিকে ঝালমুড়ির ভ্যান ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজনের সাথে কথা হয়। তাদের একজন ফরহাদুজ্জামান ফারুক। তিনি নগরীর শাপলা চত্বর হাজীপাড়া এলাকার বাসিন্দা। প্রতিদিন রাতে ঝালমুড়ির খেতে আসেন তিনি।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক জানান, এমন কোন দিন নেই যে তার মাখা বুট ও ঝালমুড়ির খাই না। খুব ভালো লাগে তাই বারবার আসি। বিশেষ করে আলু দিয়ে বুট মাখাটা অসাধারণ হয়। কখনো কখনো খেতে এসে আধাঘন্টা পর্যন্ত অপেক্ষাও করতে হয়।

সুমন মিয়া নামে আরেক ক্রেতা বলেন, ঝালমুড়িতে মশলাগুলো খুব ভালো দেয়। এবং অন্যান্য দোকানগুলোর থেকে দুলু মিয়ার মুড়ি ভর্তাটা খুব প্রিয়। তাই খাওয়ার পাশাপাশি বাড়িতেও নিয়ে যাই। দামও কম নেয়ায় দূর-দূরান্ত থেকে অনেক মানুষই খেতে আসেন।

মুখরোচক এই ঝালমুড়ির চাহিদা বাড়ায় বাবার ব্যবসায় সহযোগিতা করছেন ডিগ্রিপড়ুয়া ছেলে মেহেদী হাসান। পড়াশোনার পাশাপাশি ঝালমুড়ি বিক্রিতে মনোযোগি সে। মেহেদী হাসান জানায়, প্রতিদিন খুব ভালো বেচাকেনা হয়। এমন সময় আসে, যখন আমাদের লোক সামলাতে হিমশিম খেতে হয়। অনেকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে তার পরও মানুষ বিরক্তবোধ করেন না। ভালোই লাগে তাই বাবার সাথে সময় দেই।

অন্যদিকে দুলু মিয়া জানান, ঝালমুড়ির ব্যবসা এখন এতই জমজমাট যে, ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হয়। শখের বসে খাওয়ার পাশাপাশি সন্ধ্যার নাস্তা হিসেবে অনেকে বেছে নিয়েছে আমার ঝালমুড়ি। মশলাসহ খাবারের মান ভালো হওয়ায় ক্রেতারা বেশি আসছেন বলেও জানান তিনি।