ঢাকা ০৩:০৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
দুই আসামী ২ দিনের রিমান্ডে

নিজের মাকে মারার বিচার করায় খুন হলো মতুয়া মিশনের সভাপতি রূপকুমার

Reporter Name
  • Update Time : ০৫:১৫:১০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ মে ২০২৩
  • / ১১৩ Time View

মতুয়া মিশনের সভাপতি রূপকুমার

এস এম আলমগীর কবির, নড়াইল প্রতিনিধি: নিজের মাকে মারার বিচারে মতুয়া সম্প্রদায় হতে পদ হারিয়ে বহিস্কার হয় মতুয়া বিপ্লব রায়। এই ক্ষোভেই প্রতিশোধ নিতে হত্যা করা হয় জেলা মতুয়া সমিতির সভাপতি রূপকুমার মজুমদার কে। এমন ধারনা স্থানীয় মতুয়া নেতৃবৃন্দের এবং রূপকুমারের ভক্তদের।

স্থানীয়ভাবে জানা গেছে, ২০২২ সালের মার্চ-এপ্রিল মাসে নিজের মাকে মেরেছে মতুয়া বিপ্লব রায়। স্থানীয় একটি মতুয়া সমাবেশে এমন অভিযোগ তোলেন বিপ্লবের মা সুনিতা রায়। মতুয়া জেলা সভাপতি রূপকুমার এর মাধ্যমে এই অভিযোগ তুলে ধরা হয় গোপালগঞ্জের উড়াকান্দি তে মতুয়া প্রধান পদ্মনাথ বাবাজির কাছে। তিনি বিপ্লবকে মতুয়া সম্প্রদায় থেকে বহিস্কারের নির্দেশ দেন। বিচারে বলা হয়, মতুয়া সম্প্রদায়ের হরিচাদ ঠাকুরের যে ১২ আজ্ঞা আছে তার প্রথমটি হলো বাবা-মা কে ভক্তি করা। এটা অমান্য করায় তাকে মতুয়া থেকে বহিস্কার করা হলো। এর আগে বিপ্লবের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বাবা নিতাই রায় আত্মহত্যা করেন বলেন স্থানীয় সূত্র জানায়।

এই বিচারের পর কমলাপুরের মহাশ্মশান কমিটি গঠনের সময়ে বেয়াদবি করার কারনে বিপ্লবকে চড় মারে রূপকুমার। এরপর থেকেই ঘটনা অন্যদিকে মোড় নিতে থাকে। ওই দিনই প্রকাশ্যে দেখে নেবার হুমকী দেয় বিপ্লব।

রূপকুমারের দাদা অসিত মজুমদার বলেন, বিপ্লব মতুয়া মিশন থেকে বহিস্কার হবার পরে আমার ভাইয়ের উপর প্রতিশোধ নিতে নানা ফন্দি করতো। এইটুকু ঘটনায় কেউ খুন করতে পারে এটা আমরা বিশ্বাস করতে পারিনি।

রূপকুমারের স্ত্রী শুক্লা রানী মজুমদার বলেন, খুনিদের বিচারে যেন ফাসি হয়, আমার মতো কোন মেয়ে যেন এভাবে বিধবা না হয়, আমার ৭ বছরের বাচ্চাটা বাবা হারিয়েছে এরকম যেন কারো বাবা হারা না হতে হয়।

জেলা মতুয়া মিশনের সাধারণ সম্পাদক মতুয়া অসীম পাল বলেন, আমাদের অত্যন্ত জনপ্রিয় নেতা ছিলেন রূপকুমার। তার মতো মানুষকে যারা খুন করেছে তাদের শাস্তি চাই।

গত বছরের ২৭ অক্টোবর ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জেলা মতুয়া মিশনের সভাপতি ও হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী রূপকুমার। সে সদরের কমলাপুর গ্রামের অধীর মজুমদারের ছোট ছেলে। ২৫ অক্টোবর সন্ধ্যায় নড়াইল-লোহাগড়া সড়কের শোলমারা কালভার্ট এর কাছে তার রক্তাক্ত দেহ পড়ে থাকে। মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আহত করে ফেলে রাখে খুনীরা। এ ঘটনায় রূপকুমারের স্ত্রী শুক্লা রানী মজুমদার বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামী উল্লেখ করে সদর থানায় মামলা দায়ের করেন, পরে মামলাটি পিবিআইতে হস্তান্তর করা হয়।

৭ মে রূপকুমার মজুমদার হত্যাকান্ডের দুই আসামী বোড়াবাদুড়িয়া গ্রামের উত্তম দাস ও কমলাপুর গ্রামের বিপ্লব রায়কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সোমবার দুই আসামীকে ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে নড়াইল সদর আমলী আদালতের বিচারক জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমাতুল মোর্শেদা।

পিবিআই যশোরের তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই শরীফ এনামূল হক বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আসামীদের গতিবিধি নানাভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছিল। সন্দেহে প্রমানিত হওয়ায় তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং আদালতে রিমান্ড চাওয়া হয়েছে।

হরিচাঁদ গুরুচাদের ভক্তরাই হলো মতুয়া সম্প্রদায়। যারা জয়ডঙ্কা, কাশি, নিশান নিয়ে চলাচল করে। খুন হওয়া জেলা সভাপতি রূপকুমার মজুমদার কেন্দ্রীয় মতুয়া মিশনের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক। জেলার প্রায় লক্ষ মতুয়া অনুসারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বিচার দাবী করেছেন।

Please Share This Post in Your Social Media

দুই আসামী ২ দিনের রিমান্ডে

নিজের মাকে মারার বিচার করায় খুন হলো মতুয়া মিশনের সভাপতি রূপকুমার

Update Time : ০৫:১৫:১০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ মে ২০২৩

এস এম আলমগীর কবির, নড়াইল প্রতিনিধি: নিজের মাকে মারার বিচারে মতুয়া সম্প্রদায় হতে পদ হারিয়ে বহিস্কার হয় মতুয়া বিপ্লব রায়। এই ক্ষোভেই প্রতিশোধ নিতে হত্যা করা হয় জেলা মতুয়া সমিতির সভাপতি রূপকুমার মজুমদার কে। এমন ধারনা স্থানীয় মতুয়া নেতৃবৃন্দের এবং রূপকুমারের ভক্তদের।

স্থানীয়ভাবে জানা গেছে, ২০২২ সালের মার্চ-এপ্রিল মাসে নিজের মাকে মেরেছে মতুয়া বিপ্লব রায়। স্থানীয় একটি মতুয়া সমাবেশে এমন অভিযোগ তোলেন বিপ্লবের মা সুনিতা রায়। মতুয়া জেলা সভাপতি রূপকুমার এর মাধ্যমে এই অভিযোগ তুলে ধরা হয় গোপালগঞ্জের উড়াকান্দি তে মতুয়া প্রধান পদ্মনাথ বাবাজির কাছে। তিনি বিপ্লবকে মতুয়া সম্প্রদায় থেকে বহিস্কারের নির্দেশ দেন। বিচারে বলা হয়, মতুয়া সম্প্রদায়ের হরিচাদ ঠাকুরের যে ১২ আজ্ঞা আছে তার প্রথমটি হলো বাবা-মা কে ভক্তি করা। এটা অমান্য করায় তাকে মতুয়া থেকে বহিস্কার করা হলো। এর আগে বিপ্লবের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বাবা নিতাই রায় আত্মহত্যা করেন বলেন স্থানীয় সূত্র জানায়।

এই বিচারের পর কমলাপুরের মহাশ্মশান কমিটি গঠনের সময়ে বেয়াদবি করার কারনে বিপ্লবকে চড় মারে রূপকুমার। এরপর থেকেই ঘটনা অন্যদিকে মোড় নিতে থাকে। ওই দিনই প্রকাশ্যে দেখে নেবার হুমকী দেয় বিপ্লব।

রূপকুমারের দাদা অসিত মজুমদার বলেন, বিপ্লব মতুয়া মিশন থেকে বহিস্কার হবার পরে আমার ভাইয়ের উপর প্রতিশোধ নিতে নানা ফন্দি করতো। এইটুকু ঘটনায় কেউ খুন করতে পারে এটা আমরা বিশ্বাস করতে পারিনি।

রূপকুমারের স্ত্রী শুক্লা রানী মজুমদার বলেন, খুনিদের বিচারে যেন ফাসি হয়, আমার মতো কোন মেয়ে যেন এভাবে বিধবা না হয়, আমার ৭ বছরের বাচ্চাটা বাবা হারিয়েছে এরকম যেন কারো বাবা হারা না হতে হয়।

জেলা মতুয়া মিশনের সাধারণ সম্পাদক মতুয়া অসীম পাল বলেন, আমাদের অত্যন্ত জনপ্রিয় নেতা ছিলেন রূপকুমার। তার মতো মানুষকে যারা খুন করেছে তাদের শাস্তি চাই।

গত বছরের ২৭ অক্টোবর ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জেলা মতুয়া মিশনের সভাপতি ও হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী রূপকুমার। সে সদরের কমলাপুর গ্রামের অধীর মজুমদারের ছোট ছেলে। ২৫ অক্টোবর সন্ধ্যায় নড়াইল-লোহাগড়া সড়কের শোলমারা কালভার্ট এর কাছে তার রক্তাক্ত দেহ পড়ে থাকে। মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আহত করে ফেলে রাখে খুনীরা। এ ঘটনায় রূপকুমারের স্ত্রী শুক্লা রানী মজুমদার বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামী উল্লেখ করে সদর থানায় মামলা দায়ের করেন, পরে মামলাটি পিবিআইতে হস্তান্তর করা হয়।

৭ মে রূপকুমার মজুমদার হত্যাকান্ডের দুই আসামী বোড়াবাদুড়িয়া গ্রামের উত্তম দাস ও কমলাপুর গ্রামের বিপ্লব রায়কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সোমবার দুই আসামীকে ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে নড়াইল সদর আমলী আদালতের বিচারক জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমাতুল মোর্শেদা।

পিবিআই যশোরের তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই শরীফ এনামূল হক বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আসামীদের গতিবিধি নানাভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছিল। সন্দেহে প্রমানিত হওয়ায় তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং আদালতে রিমান্ড চাওয়া হয়েছে।

হরিচাঁদ গুরুচাদের ভক্তরাই হলো মতুয়া সম্প্রদায়। যারা জয়ডঙ্কা, কাশি, নিশান নিয়ে চলাচল করে। খুন হওয়া জেলা সভাপতি রূপকুমার মজুমদার কেন্দ্রীয় মতুয়া মিশনের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক। জেলার প্রায় লক্ষ মতুয়া অনুসারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বিচার দাবী করেছেন।