ঢাকা ০২:৫৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
সন্তানদের নতুন জামা পরিয়ে রাতে ঘর থেকে বের হয়ে আর ফিরলেন না বাবা প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স নীতির ফলে দেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মুল হয়েছেঃ সিলেটে আইজিপি বড় পরিসরে আর. কে. মিশন রোডে ব্র্যাক ব্যাংকের শাখা উদ্বোধন সৌদিতে প্রথমবারের মতো সুইমস্যুট পরে র‌্যাম্পে হাঁটলেন মডেলরা ‘আয়রনম্যান’ চরিত্রে ফিরতে ‘আপত্তি নেই’ রবার্ট ডাউনি জুনিয়রের বাংলাদেশের গণতন্ত্র ধ্বংসের জন্য ভারত সরকার দায়ী : কর্নেল অলি বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সিরিজ নিয়ে শঙ্কা কাঠালিয়ায় ডাকাতের গুলিতে আহত ২ বিএনপি একটা জালিয়ত রাজনৈতিক দল : পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেয়র তাপস মনগড়া ও অসত্য বক্তব্য দিচ্ছেন : সাঈদ খোকন

দুই মাস পর রোগী দেখছেন ডা. সংযুক্তা সাহা

স্টাফ রিপোর্টার
  • Update Time : ১০:৫৪:৫০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ অগাস্ট ২০২৩
  • / ৮০ Time View

প্রায় দুই মাস পর প্র্যাকটিস শুরু করেছেন চিকিৎসক সংযুক্তা সাহা। সোমবার (১৪ আগস্ট) রাজধানীর ইমপালস হাসপাতালে বিকেল ৪টা থেকে প্র্যাকটিস শুরু করেন তিনি।

এর আগে রোববার (১৩ আগস্ট) এক ফেসবুক পোস্টে নতুন কর্মস্থলের ঘোষণা করেন তিনি। তিনি ইমপালস হাসপাতালে পরিচালক হিসেবে থাকবেন।

এর আগে সেন্ট্রাল হসপিটালে চেম্বার করতেন ডা. সংযুক্তা। ১০ জুন হাসপাতালটিতে ভুল চিকিৎসা ও কর্তৃপক্ষের প্রতারণায় নবজাতকের মৃত্যু এবং মাহবুবা রহমান আঁখি নামে এক প্রসূতির মৃত্যু ঘটনায় তাকে অভিযুক্ত করা হয়। ঘটনাটি দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। তবে আঁখির মৃত্যুর বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

সংযুক্তা সাহা গণমাধ্যমকে জানান, আগের ঘটনা পুলিশ তদন্ত করছে। এ বিষয়ে এ মুহূর্তে আমি কিছু বলতে পারবো না। তবে, আমার চেম্বার করতে এখন আর কোনো বাধা নেই।

রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পর প্রথমে নবজাতক ও পরে মায়ের মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতালের গাইনি ও প্রসূতি বিভাগের চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহার বিশেষজ্ঞ সেবা দেওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

জানা গেছে, তিন মাস ধরে ডা. সংযুক্তা সাহার অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন কুমিল্লার তিতাস উপজেলার অন্তঃসত্ত্বা মাহবুবা রহমান আঁখি। এমনকি তার শারীরিক অবস্থা স্বাভাবিক ছিল বলেও চিকিৎসক জানিয়েছিলেন। নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমেই সন্তান প্রসব সম্ভব বলে আশ্বস্ত করেছিলেন ডা. সংযুক্তা সাহা।

এরপর প্রসব ব্যথা ওঠায় ৯ জুন মাহবুবাকে রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাকে যে চিকিৎসকের (সংযুক্তা সাহা) অধীনে ভর্তি করানো হয়, তখন সেই চিকিৎসক দেশে ছিলেন না। তার অনুপস্থিতির কথা রোগী বা রোগীর স্বজনদের জানানো হয়নি। অন্য একজন চিকিৎসক স্বাভাবিক প্রসব করাতে ব্যর্থ হয়ে অস্ত্রোপচার করেন। ১১ জুন নবজাতকের মৃত্যু হয়।

অন্যদিকে, মাহবুবার শারীরিক অবস্থাও খারাপের দিকে যায়। তার আইসিইউ দরকার ছিল। কিন্তু সেন্ট্রাল হাসপাতালে তা ছিল না। তাকে পার্শ্ববর্তী ল্যাবএইড হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে রোববার (১৮ জুন) তার মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় আঁখির স্বামী ইয়াকুব আলী ধানমন্ডি থানায় ‘অবহেলাজনিত’ মৃত্যুর একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানা, ডা. মুনা সাহা, ডা. মিলি, তার সহকারী জমির, এহসান ও হাসপাতালের ম্যানেজার পারভেজকে আসামি করা হয়। এছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় আরও কয়েকজনকেও আসামি করা হয়েছে।

এছাড়া সেন্ট্রাল হসপিটাল কর্তৃপক্ষ ও স্বাস্থ্য অধিদফতর আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করে। দুই তদন্ত কমিটি ডা. সংযুক্তা সাহাকে দায়ী করে প্রতিবেদন জমা দেয়।

মৃত আঁখির চিকিৎসায় নিয়োজিত সবার বক্তব্যের ভিত্তিতে তৈরি করা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ডিউটি ডাক্তার রোগীর অবস্থা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ হওয়ায় এবং রোগী ও তার পরিবারের সিজারিয়ান ডেলিভারির পরিবর্তে নরমাল ডেলিভারির জন্য চাপ দেওয়া মূলত নবজাতক ও তার মায়ের মৃত্যুর কারণ। এ ক্ষেত্রে সেন্ট্রাল হসপিটাল কর্তৃপক্ষেরও কিছু দায় থাকতে পারে।

তদন্ত কমিটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ৪টি অসঙ্গতি চিহ্নিত করেছে। ডা. সংযুক্তা সাহা ও ডা. মুনা সাহার লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও তাদের মাধ্যমে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া, ডা. সংযুক্তা সাহা উপস্থিত না থাকার তথ্য গোপন রাখা, অন্যান্য ডাক্তারদের আঁখির চিকিৎসা করতে দেওয়া এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ডা. সংযুক্তা সাহার ‘বেআইনি’ প্রচারণার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া।

তদন্ত কমিটি ২ আগস্ট স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ৩ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে এ প্রতিবেদন জমা দেয়।

এর আগে ১৬ জুন স্বাস্থ্য অধিদফতরের তদন্ত কমিটি হাসপাতালটি পরিদর্শন করে ৬ দফা নির্দেশনা দেয়। তাতে ডা. সংযুক্তা সাহাকে চিকিৎসায় যুক্ত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে সব ধরনের অপারেশন বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। ৫৬ দিন বন্ধ থাকার পর সাত শর্তে সেন্ট্রাল হসপিটালের অপারেশন থিয়েটারসহ অন্যান্য কার্যক্রম চালু করার অনুমতি দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর।

Please Share This Post in Your Social Media

দুই মাস পর রোগী দেখছেন ডা. সংযুক্তা সাহা

Update Time : ১০:৫৪:৫০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ অগাস্ট ২০২৩

প্রায় দুই মাস পর প্র্যাকটিস শুরু করেছেন চিকিৎসক সংযুক্তা সাহা। সোমবার (১৪ আগস্ট) রাজধানীর ইমপালস হাসপাতালে বিকেল ৪টা থেকে প্র্যাকটিস শুরু করেন তিনি।

এর আগে রোববার (১৩ আগস্ট) এক ফেসবুক পোস্টে নতুন কর্মস্থলের ঘোষণা করেন তিনি। তিনি ইমপালস হাসপাতালে পরিচালক হিসেবে থাকবেন।

এর আগে সেন্ট্রাল হসপিটালে চেম্বার করতেন ডা. সংযুক্তা। ১০ জুন হাসপাতালটিতে ভুল চিকিৎসা ও কর্তৃপক্ষের প্রতারণায় নবজাতকের মৃত্যু এবং মাহবুবা রহমান আঁখি নামে এক প্রসূতির মৃত্যু ঘটনায় তাকে অভিযুক্ত করা হয়। ঘটনাটি দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। তবে আঁখির মৃত্যুর বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

সংযুক্তা সাহা গণমাধ্যমকে জানান, আগের ঘটনা পুলিশ তদন্ত করছে। এ বিষয়ে এ মুহূর্তে আমি কিছু বলতে পারবো না। তবে, আমার চেম্বার করতে এখন আর কোনো বাধা নেই।

রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পর প্রথমে নবজাতক ও পরে মায়ের মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতালের গাইনি ও প্রসূতি বিভাগের চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহার বিশেষজ্ঞ সেবা দেওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

জানা গেছে, তিন মাস ধরে ডা. সংযুক্তা সাহার অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন কুমিল্লার তিতাস উপজেলার অন্তঃসত্ত্বা মাহবুবা রহমান আঁখি। এমনকি তার শারীরিক অবস্থা স্বাভাবিক ছিল বলেও চিকিৎসক জানিয়েছিলেন। নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমেই সন্তান প্রসব সম্ভব বলে আশ্বস্ত করেছিলেন ডা. সংযুক্তা সাহা।

এরপর প্রসব ব্যথা ওঠায় ৯ জুন মাহবুবাকে রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাকে যে চিকিৎসকের (সংযুক্তা সাহা) অধীনে ভর্তি করানো হয়, তখন সেই চিকিৎসক দেশে ছিলেন না। তার অনুপস্থিতির কথা রোগী বা রোগীর স্বজনদের জানানো হয়নি। অন্য একজন চিকিৎসক স্বাভাবিক প্রসব করাতে ব্যর্থ হয়ে অস্ত্রোপচার করেন। ১১ জুন নবজাতকের মৃত্যু হয়।

অন্যদিকে, মাহবুবার শারীরিক অবস্থাও খারাপের দিকে যায়। তার আইসিইউ দরকার ছিল। কিন্তু সেন্ট্রাল হাসপাতালে তা ছিল না। তাকে পার্শ্ববর্তী ল্যাবএইড হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে রোববার (১৮ জুন) তার মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় আঁখির স্বামী ইয়াকুব আলী ধানমন্ডি থানায় ‘অবহেলাজনিত’ মৃত্যুর একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানা, ডা. মুনা সাহা, ডা. মিলি, তার সহকারী জমির, এহসান ও হাসপাতালের ম্যানেজার পারভেজকে আসামি করা হয়। এছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় আরও কয়েকজনকেও আসামি করা হয়েছে।

এছাড়া সেন্ট্রাল হসপিটাল কর্তৃপক্ষ ও স্বাস্থ্য অধিদফতর আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করে। দুই তদন্ত কমিটি ডা. সংযুক্তা সাহাকে দায়ী করে প্রতিবেদন জমা দেয়।

মৃত আঁখির চিকিৎসায় নিয়োজিত সবার বক্তব্যের ভিত্তিতে তৈরি করা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ডিউটি ডাক্তার রোগীর অবস্থা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ হওয়ায় এবং রোগী ও তার পরিবারের সিজারিয়ান ডেলিভারির পরিবর্তে নরমাল ডেলিভারির জন্য চাপ দেওয়া মূলত নবজাতক ও তার মায়ের মৃত্যুর কারণ। এ ক্ষেত্রে সেন্ট্রাল হসপিটাল কর্তৃপক্ষেরও কিছু দায় থাকতে পারে।

তদন্ত কমিটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ৪টি অসঙ্গতি চিহ্নিত করেছে। ডা. সংযুক্তা সাহা ও ডা. মুনা সাহার লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও তাদের মাধ্যমে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া, ডা. সংযুক্তা সাহা উপস্থিত না থাকার তথ্য গোপন রাখা, অন্যান্য ডাক্তারদের আঁখির চিকিৎসা করতে দেওয়া এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ডা. সংযুক্তা সাহার ‘বেআইনি’ প্রচারণার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া।

তদন্ত কমিটি ২ আগস্ট স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ৩ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে এ প্রতিবেদন জমা দেয়।

এর আগে ১৬ জুন স্বাস্থ্য অধিদফতরের তদন্ত কমিটি হাসপাতালটি পরিদর্শন করে ৬ দফা নির্দেশনা দেয়। তাতে ডা. সংযুক্তা সাহাকে চিকিৎসায় যুক্ত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে সব ধরনের অপারেশন বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। ৫৬ দিন বন্ধ থাকার পর সাত শর্তে সেন্ট্রাল হসপিটালের অপারেশন থিয়েটারসহ অন্যান্য কার্যক্রম চালু করার অনুমতি দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর।