ঢাকা ১১:১৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ

দিনাজপুরে কার্প-গলদা চিংড়ি মাছ মিশ্রচাষে ভাগ্য ফিরেছে অনেক মৎস্য চাষির

শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর
  • Update Time : ০৬:২৬:২০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • / ৭৭ Time View

দিনাজপুরে কার্প-গলদা চিংড়ি মাছের মিশ্রচাষ করে ভাগ্য ফিরেছে অনেক মৎস্য চাষির। ছোট পরিসরে শুরু করে এখন বড় পরিসরে রুই,কাতল,মৃর্গেল,সিলভারকাপ,চিতলসহ বিভিন্ন্ প্রজাতির কাপ মাছের্র সাথে গলদা চিংড়ি মাছের মিশ্রচাষ করে অনেকে পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে এনে স্বাবলম্বী হয়েছেন। অনেকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।

বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষের কারণে আশানুরূপ বড় হচ্ছে চিংড়িগুলো। অল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ার সফলতা দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে কার্প-গলদা চিংড়ি মাছের মিশ্রচাষে উৎসাহিত হচ্ছে অনেকে।

সরজমিনে দেখা গেছে,দিনাজপুর সদর উপজেলার উথরাইল দামপুকুর গ্রামে ১০শতাংশ জমিতে কার্প-গলদা চিংড়ি মাছের মিশ্রচাষ করে সফলতা পেয়েছেন,গৃহিনী মোছা.মিনারা খাতুন।
তিনি জানান, ‘অন্যান্য কার্প মাছের সাথে প্রথমে ৪০০ চিংড়ি পোনা ছেড়ে প্রায় ৩০০ গলদা চিংড়ি মাছ পেয়েছি। গলদা চিংড়িগুলো আকার এবং ওজনে হয়েছে বেশ বড়। ১২/১৫টি চিংড়ি মাছ এককেজি ওজন হয়েছে। তবে,তীব্র শীতে কিছু মাছের ক্ষতি হয়েছে। দূর্বল হয়ে গেছে। তাই, অধিকাংশ চিংড়ি তুলে নিয়েছি। ভাবছি,এগুলো সব তুলে নেয়ার পর আবারো পোনা ছাড়বো।’

শুধু মিনারা নয়,অল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ার সফলতা দেখে অনেকে কার্প-গলদা চিংড়ি মাছের মিশ্রচাষ করছেন। মাছের ওজন অনুযায়ী ফিড খাবার দেয়ার পাশপাশি অক্সিজেনের স্বল্পতা দেখা দিলে অ্যারেটর ব্যবহার করে অক্সিজেনের জোগান দিতে দিচ্ছেন মাছ চাষিরা। গলদা চিংড়িতে তেমন কোনও রোগবালাই নেই বলে জানিয়েছেন,মাছ চাষি বাবু মিয়া।

দিনাজপুর সদরের আস্করপুর ইউপির খানপুর এলাকার বাবু জানালেন,’আমি আগে কম বেশি সব মাছের চাষ করেছি।তবে,কার্প-গলদা চিংড়ি মাছের মিশ্রচাষ লাভ বেশি। আগামিতে এই পদ্ধতিতে গলদা চিংড়ি আরো বেশি চাষ করবো। এজন্য মহিলা বহুমুখী স্যারদের কাছে আরো পোনা চেয়েছি।’
কার্প-গলদা চিংড়ি মাছের মিশ্রচাষে সহায়তা করে আসছে, মৎস্য বিভাগের পাশাপাশি কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন-পিকেএসএফ’র এবং মহিলা বহুমুখী শিক্ষা কেন্দ্র-এমবিএসকে।চিংড়ি পোনা সরবরাহ পাশাপাশি উন্নত ব্যবস্থাপনায় কার্প-গলদা চিংড়ি মাছের মিশ্রচাষে প্রদর্শনীতে মাঠ দিবসের আয়োজনও করছেন,প্রতিষ্ঠানগুলো। মহিলা বহুমুখী শিক্ষা কেন্দ্র-এমবিএসকে’র মৎস্য কর্মকর্তা মো.রায়হান আলী জানালেন, ‘কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন-পিকেএসএফ’র সহায়তায় আমরা ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে সমন্বিত কৃষি ইউনিটের আওতায় আমরা কার্প-গলদা চিংড়ি মাছের মিশ্রচাষ করে আসছি। আমার আওতাধীন সদস্যদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষের কারণে আশানুরূপ বড় হচ্ছে চিংড়িগুলো। অল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ার সফলতা দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে কার্প-গলদা চিংড়ি মাছের মিশ্রচাষে উৎসাহিত হচ্ছে অনেকেই। আগামিতে এই গলদা চিংড়ি চাষের পরিধি আরো বাড়বে আশা করছি।’

দিনাজপুর মৎস্য অধিদপ্তের জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো.আশরাফুজ্জামান জানান, ভৌগলি দিকদিয়ে দিনাজপুরের আবহাওয়া ও পানির গুণগতমান গলদা চিংড়ি চাষের জন্য খুবই উপযোগি। এ জেলার পুকুরে কার্প-গলদা চিংড়ি মাছের মিশ্রচাষে পুষ্টি চাহিদা পূরণ,কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি,কৃষি,আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও অর্থনীতিতে ব্যাপক সাফল্য বয়ে এনেছে। দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে,এজেলায় কার্প-গলদা চিংড়ি মাছের মিশ্রচাষ। এতে লাভবান হচ্ছেন,মাছ চাষিরা।
তিনি বলেন, ‘দিনাজপুরের মতো দেশের অন্যান্য জেলায় গলদা চিংড়ির চাষ বৃদ্ধি পেলে যেমন কর্মসংস্থান ও আমিষের যোগান বাড়বে, তেমনি বৈদেশিক মুদ্রার আয়ও অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে।

Please Share This Post in Your Social Media

দিনাজপুরে কার্প-গলদা চিংড়ি মাছ মিশ্রচাষে ভাগ্য ফিরেছে অনেক মৎস্য চাষির

Update Time : ০৬:২৬:২০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

দিনাজপুরে কার্প-গলদা চিংড়ি মাছের মিশ্রচাষ করে ভাগ্য ফিরেছে অনেক মৎস্য চাষির। ছোট পরিসরে শুরু করে এখন বড় পরিসরে রুই,কাতল,মৃর্গেল,সিলভারকাপ,চিতলসহ বিভিন্ন্ প্রজাতির কাপ মাছের্র সাথে গলদা চিংড়ি মাছের মিশ্রচাষ করে অনেকে পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে এনে স্বাবলম্বী হয়েছেন। অনেকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।

বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষের কারণে আশানুরূপ বড় হচ্ছে চিংড়িগুলো। অল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ার সফলতা দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে কার্প-গলদা চিংড়ি মাছের মিশ্রচাষে উৎসাহিত হচ্ছে অনেকে।

সরজমিনে দেখা গেছে,দিনাজপুর সদর উপজেলার উথরাইল দামপুকুর গ্রামে ১০শতাংশ জমিতে কার্প-গলদা চিংড়ি মাছের মিশ্রচাষ করে সফলতা পেয়েছেন,গৃহিনী মোছা.মিনারা খাতুন।
তিনি জানান, ‘অন্যান্য কার্প মাছের সাথে প্রথমে ৪০০ চিংড়ি পোনা ছেড়ে প্রায় ৩০০ গলদা চিংড়ি মাছ পেয়েছি। গলদা চিংড়িগুলো আকার এবং ওজনে হয়েছে বেশ বড়। ১২/১৫টি চিংড়ি মাছ এককেজি ওজন হয়েছে। তবে,তীব্র শীতে কিছু মাছের ক্ষতি হয়েছে। দূর্বল হয়ে গেছে। তাই, অধিকাংশ চিংড়ি তুলে নিয়েছি। ভাবছি,এগুলো সব তুলে নেয়ার পর আবারো পোনা ছাড়বো।’

শুধু মিনারা নয়,অল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ার সফলতা দেখে অনেকে কার্প-গলদা চিংড়ি মাছের মিশ্রচাষ করছেন। মাছের ওজন অনুযায়ী ফিড খাবার দেয়ার পাশপাশি অক্সিজেনের স্বল্পতা দেখা দিলে অ্যারেটর ব্যবহার করে অক্সিজেনের জোগান দিতে দিচ্ছেন মাছ চাষিরা। গলদা চিংড়িতে তেমন কোনও রোগবালাই নেই বলে জানিয়েছেন,মাছ চাষি বাবু মিয়া।

দিনাজপুর সদরের আস্করপুর ইউপির খানপুর এলাকার বাবু জানালেন,’আমি আগে কম বেশি সব মাছের চাষ করেছি।তবে,কার্প-গলদা চিংড়ি মাছের মিশ্রচাষ লাভ বেশি। আগামিতে এই পদ্ধতিতে গলদা চিংড়ি আরো বেশি চাষ করবো। এজন্য মহিলা বহুমুখী স্যারদের কাছে আরো পোনা চেয়েছি।’
কার্প-গলদা চিংড়ি মাছের মিশ্রচাষে সহায়তা করে আসছে, মৎস্য বিভাগের পাশাপাশি কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন-পিকেএসএফ’র এবং মহিলা বহুমুখী শিক্ষা কেন্দ্র-এমবিএসকে।চিংড়ি পোনা সরবরাহ পাশাপাশি উন্নত ব্যবস্থাপনায় কার্প-গলদা চিংড়ি মাছের মিশ্রচাষে প্রদর্শনীতে মাঠ দিবসের আয়োজনও করছেন,প্রতিষ্ঠানগুলো। মহিলা বহুমুখী শিক্ষা কেন্দ্র-এমবিএসকে’র মৎস্য কর্মকর্তা মো.রায়হান আলী জানালেন, ‘কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন-পিকেএসএফ’র সহায়তায় আমরা ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে সমন্বিত কৃষি ইউনিটের আওতায় আমরা কার্প-গলদা চিংড়ি মাছের মিশ্রচাষ করে আসছি। আমার আওতাধীন সদস্যদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষের কারণে আশানুরূপ বড় হচ্ছে চিংড়িগুলো। অল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ার সফলতা দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে কার্প-গলদা চিংড়ি মাছের মিশ্রচাষে উৎসাহিত হচ্ছে অনেকেই। আগামিতে এই গলদা চিংড়ি চাষের পরিধি আরো বাড়বে আশা করছি।’

দিনাজপুর মৎস্য অধিদপ্তের জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো.আশরাফুজ্জামান জানান, ভৌগলি দিকদিয়ে দিনাজপুরের আবহাওয়া ও পানির গুণগতমান গলদা চিংড়ি চাষের জন্য খুবই উপযোগি। এ জেলার পুকুরে কার্প-গলদা চিংড়ি মাছের মিশ্রচাষে পুষ্টি চাহিদা পূরণ,কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি,কৃষি,আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও অর্থনীতিতে ব্যাপক সাফল্য বয়ে এনেছে। দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে,এজেলায় কার্প-গলদা চিংড়ি মাছের মিশ্রচাষ। এতে লাভবান হচ্ছেন,মাছ চাষিরা।
তিনি বলেন, ‘দিনাজপুরের মতো দেশের অন্যান্য জেলায় গলদা চিংড়ির চাষ বৃদ্ধি পেলে যেমন কর্মসংস্থান ও আমিষের যোগান বাড়বে, তেমনি বৈদেশিক মুদ্রার আয়ও অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে।