ঢাকা ০৭:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

“ডায়মন্ড” এবং “দে ধাক্কা” কিশোরগ্যাং চক্রের অন্যতম হোতাসহ ৫ জন গ্রেফতার

শরিফুল হক পাভেল
  • Update Time : ০৪:০৫:৪২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • / ৪০ Time View

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে কিশোরগ্যাং সদস্যরা দীর্ঘদিন যাবৎ মাদক ক্রয়-বিক্রয়, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, সাধারণ মানুষকে হয়রানি এবং বিভিন্ন রকম সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছিলো।

এসকল সুনির্দিষ্ট অভিযোগে ৯ ফেব্রুয়ারী ঢাকার আদাবর মোহাম্মদিয়া হাউজিং সোসাইটি এলাকায় অভিযান চালিয়ে কিশোর গ্যাং চক্রের অন্যতম হোতা ১। মোঃ জুলফিকার আলী (৩৭), ২। মোঃ হারুন অর রশিদ (৩৮), ৩। মোঃ শামছুদ্দিন বেপারী (৪৮), ৪। কৃষ্ণ চন্দ্র দাস (২৮), ৫। মোঃ সুরুজ মিয়া (৩৯)কে ১ টি বিদেশী পিস্তল, ১ টি ম্যাগাজিন, ২ টি চাপাতি ও ৭ টি ছুরিসহ গ্রেফতার করে র‍্যাব-৩।

শনিবার সকালে টিকাটুলি র‍্যাব-৩ এর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় বেশকিছু কিশোরগ্যাং সক্রিয় রয়েছে। এরমধ্যে জুলফিকারের নেতৃত্বে এবং অপর আসামিদের সহযোগিতায় “ডায়মন্ড” এবং “দে ধাক্কা” নামে দুটি কিশোরগ্যাং পরিচালনা করত। এলাকার বেশকিছু বেপরোয়া ও মাদকসেবী কিশোরদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে কিশোরগ্যাং পরিচালনার মাধ্যমে এলাকায় অস্ত্র, মাদক ব্যবসা, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, অপহরণ, ডাকাতি ও ভুমি দখল সহ বিভিন্ন অপকর্ম করে থাকে। জুলফিকারের কিশোরগ্যাং পরিচালনা করার জন্য হারুন, শামছুদ্দিন বেপারী, কৃষ্ণ চন্দ্র দাস এবং সুরুজ মিয়া সার্বিক সহযোগিতা করে থাকে। জুলফিকার মূলত “ডায়মন্ড” এবং “দে ধাক্কা” গ্রুপের কিশোরগ্যাংদের নিকট দেশী-বিদেশী পিস্তল ও বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র সরবরাহ করে থাকে।

এছাড়া আসামীদের নির্দেশে “ডায়মন্ড” এবং “দে ধাক্কা” দুটি কিশোরগ্যাং গ্রুপের সদস্যরা মোটরসাইকেল ব্যবহার করে রিক্সা, ভ্যান, সিএনজি ও বাস যাত্রীদেরকে টার্গেট করে যাত্রীদের ব্যাগ, মোবাইল ইত্যাদি ছিনতাই করে থাকে।

গ্রেফতারকৃত আসামিদের তথ্যের ভিত্তিতে র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক আরও জানান, রাজধানীর মোহাম্মদপুর জুড়ে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্রসহ দেশীয় বিভিন্ন ধারালো অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে এলাকায় ত্রাসের সৃষ্টি করত। এসব ঘটনায় তারা হরহামেশাই যে কাউকে গুলিবিদ্ধ, কুপিয়ে জখম, ছিনতাই ও ডাকাতির মতো ভয়ংকর ঘটনা ঘটাতেও দ্বিধাবোধ করে না।

মোহাম্মদপুর তিন রাস্তার মোড়, চাঁদ উদ্যান, লাউতলা, নবীনগর হাউজিং, বসিলা চল্লিশ ফিট, কাঁটাসুর, তুরাগ হাউজিং, আক্কাস নগর, ঢাকা উদ্যান নদীর পাড়, চন্দ্রিমা হাউজিং, নবীনগর হাউজিং, বসিলা হাক্কার পাড় এলাকাজুড়ে আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রসহ কিশোরগ্যাং এর মহড়া পরিচালনা করতো।

এছাড়াও আসামিদের নির্দেশে কিশোরগ্যাং এর সদস্যরা নিজেদেরকে প্রশাসনের লোক পরিচয় দিয়ে সাধারণ পথচারীদের মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করতো।

আসামি জুলফিকার ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। পরবর্তীতে সে পড়াশোনা বাদ দিয়ে এলাকায় একটি ওয়ার্কশপে কাজ করতে শুরু করে। কিছুদিন ওয়ার্কশপে কাজ করার পর সে নারায়ণগঞ্জে এসে পিকআপে হেলপারি শুরু করে। হেলপারী করা অবস্থায় একটি স্বনামধন্য কোম্পানীর মালামাল আত্মসাৎ করার দায়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার রুপগঞ্জ থানায় তার বিরুদ্ধে ১ টি মামলা হয়। মামলাটি রুজু হওয়ার পরে সে পালিয়ে সৌদি চলে যায়। ২০২১ সালে দেশে আসার পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে ধরা পড়ে ২ মাস জেল খেটে জামিনে মুক্ত হয়। জেলে থাকা অবস্থায় অপর আসামি হারুনের সাথে পরিচয় হয়। জুলফিকার জামিনে মুক্ত হয়ে হারুনের সাথে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে চলে আসে এবং প্রথমে এই এলাকায় টিউবওয়েল এর মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতে শুরু করে। উক্ত সময়ে মোহাম্মদপুর এলাকায় মাদক সেবনের আড্ডার মাধ্যমে কৃষ্ণ, শামছুদ্দিন ও সুরুজসহ বেশকিছু মাদক সেবনকারী যুবকের সাথে তার ঘনিষ্টতা তৈরী হয়। তাদের সাথে পরামর্শ করে ধৃত জুলফিকার তাদেরকে নেতৃত্ব দেয়ার পরিকল্পনা করে এবং তাদের নিয়ে ২০২২ সালে সে “ডায়মন্ড” নামের কিশোরগ্যাংটি তৈরী করে। পরবর্তীতে সে আরও একটি কিশোরগ্যাং বাহিনী তৈরী করে সেটার নাম দেয় “দে ধাক্কা” কিশোরগ্যাং বাহিনী। বাহিনী দুটিকে দিকনির্দেশনা প্রদান করে মোহাম্মদপুর এলাকায় সে বিভিন্ন অপকর্ম করতে থাকে।

আসামি হারুণ ২০২১ সালে আদাবর থানার একটি চাঁদাবাজি মামলায় গ্রেফতার হয়ে ১ মাস জেল খাটে। জামিনে মুক্ত হয়ে সে জুলফিকার এর সাথে কিশোরগ্যাং পরিচালনা করতে শুরু করে। এছাড়াও শামছুদ্দিন বেপারী পেশায় একজন রাজমিস্ত্রী, কৃষ্ণ চন্দ্র দাস পেশায় চা-বিক্রেতা এবং সুরুজ মিয়া একজন প্রাইভেট কার চালক। তারা সকলেই মোহাম্মদিয়া হাউজিং সোসাইটি এলাকায় বসবাস করে। জুলফিকার তাদের কিশোরগ্যাং পরিচালনা চক্রটির অন্যতম হোতা। আসামিদের দ্বারা পরিচালিত কিশোরগ্যাং সদস্যদের গ্রেফতারে র‌্যাবের গোয়েন্দা তৎপরতা চলমান রয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

“ডায়মন্ড” এবং “দে ধাক্কা” কিশোরগ্যাং চক্রের অন্যতম হোতাসহ ৫ জন গ্রেফতার

Update Time : ০৪:০৫:৪২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে কিশোরগ্যাং সদস্যরা দীর্ঘদিন যাবৎ মাদক ক্রয়-বিক্রয়, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, সাধারণ মানুষকে হয়রানি এবং বিভিন্ন রকম সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছিলো।

এসকল সুনির্দিষ্ট অভিযোগে ৯ ফেব্রুয়ারী ঢাকার আদাবর মোহাম্মদিয়া হাউজিং সোসাইটি এলাকায় অভিযান চালিয়ে কিশোর গ্যাং চক্রের অন্যতম হোতা ১। মোঃ জুলফিকার আলী (৩৭), ২। মোঃ হারুন অর রশিদ (৩৮), ৩। মোঃ শামছুদ্দিন বেপারী (৪৮), ৪। কৃষ্ণ চন্দ্র দাস (২৮), ৫। মোঃ সুরুজ মিয়া (৩৯)কে ১ টি বিদেশী পিস্তল, ১ টি ম্যাগাজিন, ২ টি চাপাতি ও ৭ টি ছুরিসহ গ্রেফতার করে র‍্যাব-৩।

শনিবার সকালে টিকাটুলি র‍্যাব-৩ এর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় বেশকিছু কিশোরগ্যাং সক্রিয় রয়েছে। এরমধ্যে জুলফিকারের নেতৃত্বে এবং অপর আসামিদের সহযোগিতায় “ডায়মন্ড” এবং “দে ধাক্কা” নামে দুটি কিশোরগ্যাং পরিচালনা করত। এলাকার বেশকিছু বেপরোয়া ও মাদকসেবী কিশোরদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে কিশোরগ্যাং পরিচালনার মাধ্যমে এলাকায় অস্ত্র, মাদক ব্যবসা, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, অপহরণ, ডাকাতি ও ভুমি দখল সহ বিভিন্ন অপকর্ম করে থাকে। জুলফিকারের কিশোরগ্যাং পরিচালনা করার জন্য হারুন, শামছুদ্দিন বেপারী, কৃষ্ণ চন্দ্র দাস এবং সুরুজ মিয়া সার্বিক সহযোগিতা করে থাকে। জুলফিকার মূলত “ডায়মন্ড” এবং “দে ধাক্কা” গ্রুপের কিশোরগ্যাংদের নিকট দেশী-বিদেশী পিস্তল ও বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র সরবরাহ করে থাকে।

এছাড়া আসামীদের নির্দেশে “ডায়মন্ড” এবং “দে ধাক্কা” দুটি কিশোরগ্যাং গ্রুপের সদস্যরা মোটরসাইকেল ব্যবহার করে রিক্সা, ভ্যান, সিএনজি ও বাস যাত্রীদেরকে টার্গেট করে যাত্রীদের ব্যাগ, মোবাইল ইত্যাদি ছিনতাই করে থাকে।

গ্রেফতারকৃত আসামিদের তথ্যের ভিত্তিতে র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক আরও জানান, রাজধানীর মোহাম্মদপুর জুড়ে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্রসহ দেশীয় বিভিন্ন ধারালো অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে এলাকায় ত্রাসের সৃষ্টি করত। এসব ঘটনায় তারা হরহামেশাই যে কাউকে গুলিবিদ্ধ, কুপিয়ে জখম, ছিনতাই ও ডাকাতির মতো ভয়ংকর ঘটনা ঘটাতেও দ্বিধাবোধ করে না।

মোহাম্মদপুর তিন রাস্তার মোড়, চাঁদ উদ্যান, লাউতলা, নবীনগর হাউজিং, বসিলা চল্লিশ ফিট, কাঁটাসুর, তুরাগ হাউজিং, আক্কাস নগর, ঢাকা উদ্যান নদীর পাড়, চন্দ্রিমা হাউজিং, নবীনগর হাউজিং, বসিলা হাক্কার পাড় এলাকাজুড়ে আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রসহ কিশোরগ্যাং এর মহড়া পরিচালনা করতো।

এছাড়াও আসামিদের নির্দেশে কিশোরগ্যাং এর সদস্যরা নিজেদেরকে প্রশাসনের লোক পরিচয় দিয়ে সাধারণ পথচারীদের মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করতো।

আসামি জুলফিকার ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। পরবর্তীতে সে পড়াশোনা বাদ দিয়ে এলাকায় একটি ওয়ার্কশপে কাজ করতে শুরু করে। কিছুদিন ওয়ার্কশপে কাজ করার পর সে নারায়ণগঞ্জে এসে পিকআপে হেলপারি শুরু করে। হেলপারী করা অবস্থায় একটি স্বনামধন্য কোম্পানীর মালামাল আত্মসাৎ করার দায়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার রুপগঞ্জ থানায় তার বিরুদ্ধে ১ টি মামলা হয়। মামলাটি রুজু হওয়ার পরে সে পালিয়ে সৌদি চলে যায়। ২০২১ সালে দেশে আসার পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে ধরা পড়ে ২ মাস জেল খেটে জামিনে মুক্ত হয়। জেলে থাকা অবস্থায় অপর আসামি হারুনের সাথে পরিচয় হয়। জুলফিকার জামিনে মুক্ত হয়ে হারুনের সাথে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে চলে আসে এবং প্রথমে এই এলাকায় টিউবওয়েল এর মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতে শুরু করে। উক্ত সময়ে মোহাম্মদপুর এলাকায় মাদক সেবনের আড্ডার মাধ্যমে কৃষ্ণ, শামছুদ্দিন ও সুরুজসহ বেশকিছু মাদক সেবনকারী যুবকের সাথে তার ঘনিষ্টতা তৈরী হয়। তাদের সাথে পরামর্শ করে ধৃত জুলফিকার তাদেরকে নেতৃত্ব দেয়ার পরিকল্পনা করে এবং তাদের নিয়ে ২০২২ সালে সে “ডায়মন্ড” নামের কিশোরগ্যাংটি তৈরী করে। পরবর্তীতে সে আরও একটি কিশোরগ্যাং বাহিনী তৈরী করে সেটার নাম দেয় “দে ধাক্কা” কিশোরগ্যাং বাহিনী। বাহিনী দুটিকে দিকনির্দেশনা প্রদান করে মোহাম্মদপুর এলাকায় সে বিভিন্ন অপকর্ম করতে থাকে।

আসামি হারুণ ২০২১ সালে আদাবর থানার একটি চাঁদাবাজি মামলায় গ্রেফতার হয়ে ১ মাস জেল খাটে। জামিনে মুক্ত হয়ে সে জুলফিকার এর সাথে কিশোরগ্যাং পরিচালনা করতে শুরু করে। এছাড়াও শামছুদ্দিন বেপারী পেশায় একজন রাজমিস্ত্রী, কৃষ্ণ চন্দ্র দাস পেশায় চা-বিক্রেতা এবং সুরুজ মিয়া একজন প্রাইভেট কার চালক। তারা সকলেই মোহাম্মদিয়া হাউজিং সোসাইটি এলাকায় বসবাস করে। জুলফিকার তাদের কিশোরগ্যাং পরিচালনা চক্রটির অন্যতম হোতা। আসামিদের দ্বারা পরিচালিত কিশোরগ্যাং সদস্যদের গ্রেফতারে র‌্যাবের গোয়েন্দা তৎপরতা চলমান রয়েছে।