ঢাকা ০১:০১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
সন্তানদের নতুন জামা পরিয়ে রাতে ঘর থেকে বের হয়ে আর ফিরলেন না বাবা প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স নীতির ফলে দেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মুল হয়েছেঃ সিলেটে আইজিপি বড় পরিসরে আর. কে. মিশন রোডে ব্র্যাক ব্যাংকের শাখা উদ্বোধন সৌদিতে প্রথমবারের মতো সুইমস্যুট পরে র‌্যাম্পে হাঁটলেন মডেলরা ‘আয়রনম্যান’ চরিত্রে ফিরতে ‘আপত্তি নেই’ রবার্ট ডাউনি জুনিয়রের বাংলাদেশের গণতন্ত্র ধ্বংসের জন্য ভারত সরকার দায়ী : কর্নেল অলি বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সিরিজ নিয়ে শঙ্কা কাঠালিয়ায় ডাকাতের গুলিতে আহত ২ বিএনপি একটা জালিয়ত রাজনৈতিক দল : পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেয়র তাপস মনগড়া ও অসত্য বক্তব্য দিচ্ছেন : সাঈদ খোকন

টাঙ্গাইল শাড়িকে নিজেদের পণ্য বলে দাবি করল ভারত

ডেস্ক রিপোর্ট
  • Update Time : ১২:৪৪:২৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • / ৬৩ Time View

টাঙ্গাইল শাড়ির উৎপত্তি বাংলাদেশে নয়, বরং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বলে দাবি করেছে দেশটির সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। গত ২ জানুয়ারি নিজেদের জিওগ্র্যাফিক্যাল ইন্ডিকেশন বা জিআই পণ্য হিসেবেও এ শাড়িকে স্বীকৃতি দিয়েছে ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে জিআই পণ্য। তাই কোনো একটি পণ্যকে এর তালিকাভুক্ত করতে মুখিয়ে থাকে দেশগুলো। কিন্তু জটিলতা বাঁধে যখন একই পণ্যকে একাধিক দেশ নিজেদের বলে দাবি করে। এমনটাই ঘটেছে টাঙ্গাইল শাড়ি নিয়ে।

টাঙ্গাইল শাড়ির উৎপত্তি পশ্চিমবঙ্গ দাবি করে ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ফেসবুক পোস্টে প্রকাশিত স্ট্যাটিক

ভারতের সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে গত বৃহস্পতিবার করা এক পোস্টে বলা হয়েছে, ‘‌টাঙ্গাইল শাড়ি পশ্চিমবঙ্গ থেকে উদ্ভূত। এটি ঐতিহ্যবাহী হাতে বোনা মাস্টারপিস। এর মিহি গঠন, বৈচিত্র্যময় রঙ এবং সূক্ষ্ম জামদানি মোটিফের জন্য বিখ্যাত। এটি এ অঞ্চলের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক। টাঙ্গাইলের প্রতিটি শাড়ি ঐতিহ্য ও সমৃদ্ধ সৌন্দর্যের মেলবন্ধনে দক্ষ কারুকার্যের নিদর্শন।’

গবেষকদের মতে, টাঙ্গাইল শাড়ির উৎপত্তি বাংলাদেশে। এর নামের মধ্য দিয়েই তা উঠে এসেছে। ইতিহাসও টাঙ্গাইল শাড়িকে বাংলাদেশের বলে সাক্ষী দেয়। সে বিষয়ে যুক্তি তুলে ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. আশফাক হোসেন বলেন, ‘যেকোনো স্থানের ভৌগোলিক অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে সেখানকার সাংস্কৃতিক ইতিহাস গড়ে ওঠে। টাঙ্গাইল শাড়ির ইতিহাসটিও তাই। বাংলাদেশের জলবায়ু নাতিশীতোষ্ণ হওয়ায় টাঙ্গাইলের ছেলেরা পরিধেয় বস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে লুঙ্গি-গামছা। এ অঞ্চলের মেয়েরা পরিধান করে শাড়ি, যা টাঙ্গাইল শাড়ি হিসেবে পরিচিত হয়েছে। টাঙ্গাইল অঞ্চলটি যখন থেকে গড়ে ওঠে তখন থেকেই এ শাড়ি তৈরি শুরু হয়। এ শাড়ির নাম থেকেই এর উৎপত্তি বোঝা যায়।

বাংলাদেশের বেশকিছু পণ্যের জনপ্রিয়তা দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে জায়গা করে নিয়েছে বিদেশের মাটিতে। বিশেষ করে অবস্থানের কারণে পেয়েছে জিআই স্বীকৃতি। এ স্বীকৃতি থাকা পণ্যটি দেশের পাশাপাশি বিদেশের বাজারেও আধিপত্য করে বেড়ায়। অন্যদিকে, সফট পাওয়ার (প্রভাব বিস্তারক) হিসেবে বাংলাদেশকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরে। বাণিজ্যিক সুবিধা পাওয়া তখন সহজ হয়।

দেশে ২০১৩ সালে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন হয়। ২০১৫ সালে আইনের বিধিমালা তৈরির পর জিআই পণ্যের নিবন্ধন নিতে আহ্বান জানায় পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেড মার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি)। ডব্লিউআইপিও নিয়ম মেনে পণ্যের স্বীকৃতি ও সনদ দিয়ে থাকে সরকারের এ বিভাগটি।

এ বিষয়ে ডিপিডিটির সহকারী পরিচালক মো. বেলাল হোসেন বলেন, ‘‌আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় জিআই পণ্য এগিয়ে থাকে। এর দাম ২০ শতাংশ কখনোবা এরও বেশি হয়। জিআই স্বীকৃতি পাওয়ার পর পণ্যগুলো আগের চেয়ে অধিক পরিমাণে রফতানি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

টাঙ্গাইল শাড়িকে ভারত জিআই স্বীকৃতি দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‌এটিকে এখনো জিআই পণ্য হিসেবে আমাদের দেশে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তবে টাঙ্গাইল শাড়িকে জিআই পণ্য হিসেবে কেন ভারত তালিকাভুক্ত করেছে সেটি প্রথমে বুঝতে হবে। ভারতের কোথাও টাঙ্গাইল নামে কোনো জায়গা আছে কিনা অথবা যদি অন্য কোনো কারণ থেকে থাকে সেটি জানতে হবে।

দেশে প্রথম পর্যায়ে জিআই স্বীকৃতি পেয়েছে জামদানি। তারপর একে একে আসে ইলিশ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ক্ষীরশাপাতি আম, মসলিন, বাগদা চিংড়ি, কালিজিরা চাল, বিজয়পুরের সাদা মাটি, রাজশাহী সিল্ক, রংপুরের শতরঞ্জি, দিনাজপুরের কাটারিভোগ চাল, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলি আম। গত আট বছরে মোট ২১ পণ্য জিআইয়ের স্বীকৃতি পেয়েছে।

ইন্টারন্যাশনাল প্রপার্টি রাইটস অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউআইপিও) সংজ্ঞা অনুসারে, জিআই বলতে কোনো পণ্যের নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অবস্থান, নাম বা চিহ্নকে বোঝায়। ভৌগোলিক কারণে সে পণ্যের আলাদা গুণ ও খ্যাতি থাকতে হয়। যেহেতু এর গুণাগুণ ভৌগোলিক অবস্থানের ওপর নির্ভর করে, কাজেই পণ্য ও এর উৎপত্তিস্থলের মধ্যে সুস্পষ্ট সম্পর্ক থাকে।

যেসব পণ্য বাংলাদেশে জিআই স্বীকৃতি পেয়েছে একই ধরনের কিছু পণ্য ভারতও স্বীকৃতি দিয়েছে। এর মধ্যে নকশিকাঁথা, জামদানি ও ফজলি আম উল্লেখযোগ্য। এ নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি বলে জানান ডিপিডিটির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

একই পণ্যকে দুই দেশ স্বীকৃতি দেয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে ভারত তাদের প্রিমিয়াম পণ্য হিসেবে রেজিস্ট্রেশন পেলে পণ্যের মূল্য ও মূল্যায়ন দুইয়েই ব্যবধান তৈরি হয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি আইনের বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, জিআই প্রিমিয়াম হলে পণ্যের মূল্য ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বেড়ে যায়। এ ধরনের পণ্যের প্রতি আন্তর্জাতিক বাজারের ক্রেতাদের আগ্রহ থাকে সর্বাধিক। এ কারণেই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বাসমতী চালের জিআই স্বত্ব নিয়ে আইনি লড়াই চলছে।

অতীতে বাংলাদেশ ও ভারত একই ভূখণ্ডে থাকায় এ সমস্যাগুলো তৈরি হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি বিষয়ক পিএইচডি গবেষক মো. আতাউল করিম। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারত ভৌগোলিকভাবে দীর্ঘদিন একই সঙ্গে অবস্থান করায় দুদেশের মধ্যে সংস্কৃতি বিনিময় হয়েছে। এতে করে কিছু বিষয়ের উৎপত্তি নিয়ে ঘোলাটে অবস্থা তৈরি হয়। সেক্ষেত্রে ইতিহাস পাঠ করে সেগুলোর মীমাংসা করতে হয়। জিআই পণ্যের স্বীকৃতির বেলায়ও এর ব্যতিক্রম নয়। এসব পণ্যকে বলা হয় হোমোনেমাস জিআই। এ ধরনের পণ্যে দুদেশই জিআই স্বত্ব নিতে পারে। তবে কোনো একটি পণ্যের দাবি করা নিয়ে যদি বাজারে মিসলিডিং বা কনজিউমার কনফিউশন তৈরি হয় সেক্ষেত্রে একাধিক দেশ দাবি করতে পারবে না।

টাঙ্গাইল শাড়ি ভৌগোলিক নির্দেশক ও গুণগত মান উভয় দিক থেকেই বাংলাদেশের পক্ষে যায়, তাই বাংলাদেশই এর জিআই স্বত্বে অগ্রাধিকার পাবে বলে মনে করেন গবেষক আতাউল করিম। এ বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আইনগতভাবে ভারতের দাবি বৈধ হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তবে দেশটি যদি তাদের ওখানে টাঙ্গাইল নামক স্থান আছে বলে দাবিও করে, সেক্ষেত্রে বাজারে মিসলিডিং বা কনজিউমার কনফিউশন তৈরির বিষয় থেকেও বাংলাদেশ প্রাধান্য পাবে।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, বসাক সম্প্রদায় হচ্ছে টাঙ্গাইলের আদি তাঁতি। দেশ ভাগের আগে টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ির বাজার বসত কলকাতায়। দেশ ভাগের পর তা বসে টাঙ্গাইলের বাজিতপুরে।

টাঙ্গাইল শাড়ির ইতিহাস

তবে টাঙ্গাইল শাড়ির রয়েছে একটি সুদীর্ঘ ঐতিহ্য ও ইতিহাস রয়েছে। এটি বাংলাদেশের অন্যতম পুরনো একটি কুটির শিল্প। ব্রিটিশ আমল থেকেই এই শাড়ি বুননের ইতিহাস। তবে উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে এর ব্যাপক প্রসার হয়।

বাংলাদেশের অনেক তাঁতি সম্প্রদায় টাঙ্গাইল শাড়ির বুননকর্মে জড়িত। এর মধ্যে সবচেয়ে পুরনো তাঁতি সম্প্রদায় হলো টাঙ্গাইলের পাথরাইলের বসাক সম্প্রদায়। বাংলাদেশের আরেক ঐতিহ্যবাহী শিল্প মসলিন। এই মসলিন তাঁতিদের বংশধররাই মূলত টাঙ্গাইলের পুরনো তাঁতি বা কারিগর।

এছাড়া নাম থেকেই স্পষ্ট টাঙ্গাইল শাড়ির উৎপত্তি কোথায়। তবে এ কথা সত্য যে, ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে কিছু তাঁতি বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে গিয়েছিলেন। তারাই সেখানে টাঙ্গাইল শাড়ি তৈরি শুরু করেন। কিন্তু শাড়ির নাম সেই টাঙ্গাইলই রয়ে গেছে। শাড়ির এই ইতিহাস তুলে ধরেছে খোদ ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা।

টাঙ্গাইল শাড়ির স্বত্ব কতদিন

ভারতীয় নিবন্ধকের তথ্য বলছে, কলকাতা-ভিত্তিক পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য হ্যান্ডলুম উইভারস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের একটি আবেদনের জবাবে বাংলার টাঙ্গাইল শাড়ি ২০২৪ সালের ২ জানুয়ারি ইন্ডিয়ান জিওগ্রাফিক ইন্ডিকেশন ওয়েবসাইটে নিবন্ধিত হয়।

২০২০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর করা ওই আবেদন পরবর্তীতে নিবন্ধিত করে দেয়া হয়। বলা হয়, এই দাবি ৭ সেপ্টেম্বর, ২০৩০ পর্যন্ত বৈধ থাকবে।

এদিকে, বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসন কীভাবে টাঙ্গাইল শাড়ি, আনারস, এবং সন্দেশের (দুধ ও চিনি দিয়ে তৈরি এক ধরনের মিষ্টি) জিআই মর্যাদা সুরক্ষিত করা যায়, সে বিষয়ে আলোচনার জন্য গত ৩০ জানুয়ারি একটি সভা করে।
জেলা প্রশাসক কায়সারুল ইসলাম বলেন, টাঙ্গাইলের তিনটি আইকনিক পণ্যের জন্য জিআই মর্যাদার আবেদন করেছি, আশা করি শিগগিরই স্বীকৃতি পাবো।

‘মিথ্যা দাবি’ ঘিরে বিতর্ক

ফেসবুকে ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পোস্টের পর ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়েছে। অনেকেই এর সমালোচনা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে পোস্টটি প্রকাশ করার পর এতে এখন পর্যন্ত চার হাজারের বেশি কমেন্ট পড়েছে। এর প্রায় সবই ভারতীয় দাবির প্রতিবাদ ও সমালোচনা করে।

বেশিরভাগ মন্তব্যে বলা হয়েছে, শাড়টির নাম টাঙ্গাইল। আর সেই টাঙ্গাইলের অবস্থান বাংলাদেশে। এখানেই টাঙ্গাইল শাড়ির জন্মস্থান, পশ্চিমবঙ্গে নয়। এছাড়া আরও অনেকেই এই দাবিকে ‘অদ্ভূত ও হাস্যকর’ বলে অভিহিত করেছেন।

এক পোস্টে বলা হয়েছে, টাঙ্গাইল শাড়ি আমাদের ঐতিহ্য। এটাকে আপনাদের (ভারতের) নিজেদের নামে ব্যাবহার করে অন্যায় করছেন। আশা করি আপনারা এই ভুল সিদ্ধান্ত থেকে অতি শিগগিরই সরে আসবেন।

অপর একজন লিখেছেন, এটা সত্যিই হতাশাজনক যে তারা এমনটা দাবি করছে। তিনি আরও বলেন, ১৯০৬ সালে মহাত্মা গান্ধীর স্বদেশী আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল ইংল্যান্ডের ল্যাঞ্চাশায়ারের তৈরি কাপড় বর্জন। সেই ডাকে আপামর জনসাধারণের সাড়া দেওয়ায় সেই সময়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) তাঁত শিল্প প্রসার লাভ করে। তার মানে এই নয় যে, টাঙ্গাইল শাড়ি পশ্চিমবঙ্গের।

তিনি আরও বলেন, ‘টাঙ্গাইল শাড়ির ইতিহাস প্রাচীন। এই তাঁতিরা ঐতিহ্যবাহী ঢাকাই মসলিন তাঁতশিল্পীদের বংশধর। তাদের আদি নিবাস ছিল ঢাকা জেলার ধামরাই ও চৌহাট্টায়। তৎকালীন সময়ে দেলদুয়ার, সন্তোষ ও ঘ্রিন্দা এলাকার জমিদারদের আমন্ত্রণে তাঁতিরা টাঙ্গাইল যান এবং পরবর্তীতে সেখানে বসবাস শুরু করেন। অবিভক্ত ময়মনসিংহের মহকুমা টাঙ্গাইলের নামানুসারে এই শাড়ি টাঙ্গাইল শাড়ি পরিচিতি লাভ করে। টাঙ্গাইল শাড়ি কোনোভাবেই পশ্চিমবঙ্গের নয়।’

Please Share This Post in Your Social Media

টাঙ্গাইল শাড়িকে নিজেদের পণ্য বলে দাবি করল ভারত

Update Time : ১২:৪৪:২৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

টাঙ্গাইল শাড়ির উৎপত্তি বাংলাদেশে নয়, বরং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বলে দাবি করেছে দেশটির সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। গত ২ জানুয়ারি নিজেদের জিওগ্র্যাফিক্যাল ইন্ডিকেশন বা জিআই পণ্য হিসেবেও এ শাড়িকে স্বীকৃতি দিয়েছে ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে জিআই পণ্য। তাই কোনো একটি পণ্যকে এর তালিকাভুক্ত করতে মুখিয়ে থাকে দেশগুলো। কিন্তু জটিলতা বাঁধে যখন একই পণ্যকে একাধিক দেশ নিজেদের বলে দাবি করে। এমনটাই ঘটেছে টাঙ্গাইল শাড়ি নিয়ে।

টাঙ্গাইল শাড়ির উৎপত্তি পশ্চিমবঙ্গ দাবি করে ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ফেসবুক পোস্টে প্রকাশিত স্ট্যাটিক

ভারতের সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে গত বৃহস্পতিবার করা এক পোস্টে বলা হয়েছে, ‘‌টাঙ্গাইল শাড়ি পশ্চিমবঙ্গ থেকে উদ্ভূত। এটি ঐতিহ্যবাহী হাতে বোনা মাস্টারপিস। এর মিহি গঠন, বৈচিত্র্যময় রঙ এবং সূক্ষ্ম জামদানি মোটিফের জন্য বিখ্যাত। এটি এ অঞ্চলের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক। টাঙ্গাইলের প্রতিটি শাড়ি ঐতিহ্য ও সমৃদ্ধ সৌন্দর্যের মেলবন্ধনে দক্ষ কারুকার্যের নিদর্শন।’

গবেষকদের মতে, টাঙ্গাইল শাড়ির উৎপত্তি বাংলাদেশে। এর নামের মধ্য দিয়েই তা উঠে এসেছে। ইতিহাসও টাঙ্গাইল শাড়িকে বাংলাদেশের বলে সাক্ষী দেয়। সে বিষয়ে যুক্তি তুলে ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. আশফাক হোসেন বলেন, ‘যেকোনো স্থানের ভৌগোলিক অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে সেখানকার সাংস্কৃতিক ইতিহাস গড়ে ওঠে। টাঙ্গাইল শাড়ির ইতিহাসটিও তাই। বাংলাদেশের জলবায়ু নাতিশীতোষ্ণ হওয়ায় টাঙ্গাইলের ছেলেরা পরিধেয় বস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে লুঙ্গি-গামছা। এ অঞ্চলের মেয়েরা পরিধান করে শাড়ি, যা টাঙ্গাইল শাড়ি হিসেবে পরিচিত হয়েছে। টাঙ্গাইল অঞ্চলটি যখন থেকে গড়ে ওঠে তখন থেকেই এ শাড়ি তৈরি শুরু হয়। এ শাড়ির নাম থেকেই এর উৎপত্তি বোঝা যায়।

বাংলাদেশের বেশকিছু পণ্যের জনপ্রিয়তা দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে জায়গা করে নিয়েছে বিদেশের মাটিতে। বিশেষ করে অবস্থানের কারণে পেয়েছে জিআই স্বীকৃতি। এ স্বীকৃতি থাকা পণ্যটি দেশের পাশাপাশি বিদেশের বাজারেও আধিপত্য করে বেড়ায়। অন্যদিকে, সফট পাওয়ার (প্রভাব বিস্তারক) হিসেবে বাংলাদেশকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরে। বাণিজ্যিক সুবিধা পাওয়া তখন সহজ হয়।

দেশে ২০১৩ সালে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন হয়। ২০১৫ সালে আইনের বিধিমালা তৈরির পর জিআই পণ্যের নিবন্ধন নিতে আহ্বান জানায় পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেড মার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি)। ডব্লিউআইপিও নিয়ম মেনে পণ্যের স্বীকৃতি ও সনদ দিয়ে থাকে সরকারের এ বিভাগটি।

এ বিষয়ে ডিপিডিটির সহকারী পরিচালক মো. বেলাল হোসেন বলেন, ‘‌আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় জিআই পণ্য এগিয়ে থাকে। এর দাম ২০ শতাংশ কখনোবা এরও বেশি হয়। জিআই স্বীকৃতি পাওয়ার পর পণ্যগুলো আগের চেয়ে অধিক পরিমাণে রফতানি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

টাঙ্গাইল শাড়িকে ভারত জিআই স্বীকৃতি দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‌এটিকে এখনো জিআই পণ্য হিসেবে আমাদের দেশে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তবে টাঙ্গাইল শাড়িকে জিআই পণ্য হিসেবে কেন ভারত তালিকাভুক্ত করেছে সেটি প্রথমে বুঝতে হবে। ভারতের কোথাও টাঙ্গাইল নামে কোনো জায়গা আছে কিনা অথবা যদি অন্য কোনো কারণ থেকে থাকে সেটি জানতে হবে।

দেশে প্রথম পর্যায়ে জিআই স্বীকৃতি পেয়েছে জামদানি। তারপর একে একে আসে ইলিশ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ক্ষীরশাপাতি আম, মসলিন, বাগদা চিংড়ি, কালিজিরা চাল, বিজয়পুরের সাদা মাটি, রাজশাহী সিল্ক, রংপুরের শতরঞ্জি, দিনাজপুরের কাটারিভোগ চাল, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলি আম। গত আট বছরে মোট ২১ পণ্য জিআইয়ের স্বীকৃতি পেয়েছে।

ইন্টারন্যাশনাল প্রপার্টি রাইটস অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউআইপিও) সংজ্ঞা অনুসারে, জিআই বলতে কোনো পণ্যের নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অবস্থান, নাম বা চিহ্নকে বোঝায়। ভৌগোলিক কারণে সে পণ্যের আলাদা গুণ ও খ্যাতি থাকতে হয়। যেহেতু এর গুণাগুণ ভৌগোলিক অবস্থানের ওপর নির্ভর করে, কাজেই পণ্য ও এর উৎপত্তিস্থলের মধ্যে সুস্পষ্ট সম্পর্ক থাকে।

যেসব পণ্য বাংলাদেশে জিআই স্বীকৃতি পেয়েছে একই ধরনের কিছু পণ্য ভারতও স্বীকৃতি দিয়েছে। এর মধ্যে নকশিকাঁথা, জামদানি ও ফজলি আম উল্লেখযোগ্য। এ নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি বলে জানান ডিপিডিটির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

একই পণ্যকে দুই দেশ স্বীকৃতি দেয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে ভারত তাদের প্রিমিয়াম পণ্য হিসেবে রেজিস্ট্রেশন পেলে পণ্যের মূল্য ও মূল্যায়ন দুইয়েই ব্যবধান তৈরি হয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি আইনের বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, জিআই প্রিমিয়াম হলে পণ্যের মূল্য ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বেড়ে যায়। এ ধরনের পণ্যের প্রতি আন্তর্জাতিক বাজারের ক্রেতাদের আগ্রহ থাকে সর্বাধিক। এ কারণেই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বাসমতী চালের জিআই স্বত্ব নিয়ে আইনি লড়াই চলছে।

অতীতে বাংলাদেশ ও ভারত একই ভূখণ্ডে থাকায় এ সমস্যাগুলো তৈরি হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি বিষয়ক পিএইচডি গবেষক মো. আতাউল করিম। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারত ভৌগোলিকভাবে দীর্ঘদিন একই সঙ্গে অবস্থান করায় দুদেশের মধ্যে সংস্কৃতি বিনিময় হয়েছে। এতে করে কিছু বিষয়ের উৎপত্তি নিয়ে ঘোলাটে অবস্থা তৈরি হয়। সেক্ষেত্রে ইতিহাস পাঠ করে সেগুলোর মীমাংসা করতে হয়। জিআই পণ্যের স্বীকৃতির বেলায়ও এর ব্যতিক্রম নয়। এসব পণ্যকে বলা হয় হোমোনেমাস জিআই। এ ধরনের পণ্যে দুদেশই জিআই স্বত্ব নিতে পারে। তবে কোনো একটি পণ্যের দাবি করা নিয়ে যদি বাজারে মিসলিডিং বা কনজিউমার কনফিউশন তৈরি হয় সেক্ষেত্রে একাধিক দেশ দাবি করতে পারবে না।

টাঙ্গাইল শাড়ি ভৌগোলিক নির্দেশক ও গুণগত মান উভয় দিক থেকেই বাংলাদেশের পক্ষে যায়, তাই বাংলাদেশই এর জিআই স্বত্বে অগ্রাধিকার পাবে বলে মনে করেন গবেষক আতাউল করিম। এ বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আইনগতভাবে ভারতের দাবি বৈধ হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তবে দেশটি যদি তাদের ওখানে টাঙ্গাইল নামক স্থান আছে বলে দাবিও করে, সেক্ষেত্রে বাজারে মিসলিডিং বা কনজিউমার কনফিউশন তৈরির বিষয় থেকেও বাংলাদেশ প্রাধান্য পাবে।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, বসাক সম্প্রদায় হচ্ছে টাঙ্গাইলের আদি তাঁতি। দেশ ভাগের আগে টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ির বাজার বসত কলকাতায়। দেশ ভাগের পর তা বসে টাঙ্গাইলের বাজিতপুরে।

টাঙ্গাইল শাড়ির ইতিহাস

তবে টাঙ্গাইল শাড়ির রয়েছে একটি সুদীর্ঘ ঐতিহ্য ও ইতিহাস রয়েছে। এটি বাংলাদেশের অন্যতম পুরনো একটি কুটির শিল্প। ব্রিটিশ আমল থেকেই এই শাড়ি বুননের ইতিহাস। তবে উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে এর ব্যাপক প্রসার হয়।

বাংলাদেশের অনেক তাঁতি সম্প্রদায় টাঙ্গাইল শাড়ির বুননকর্মে জড়িত। এর মধ্যে সবচেয়ে পুরনো তাঁতি সম্প্রদায় হলো টাঙ্গাইলের পাথরাইলের বসাক সম্প্রদায়। বাংলাদেশের আরেক ঐতিহ্যবাহী শিল্প মসলিন। এই মসলিন তাঁতিদের বংশধররাই মূলত টাঙ্গাইলের পুরনো তাঁতি বা কারিগর।

এছাড়া নাম থেকেই স্পষ্ট টাঙ্গাইল শাড়ির উৎপত্তি কোথায়। তবে এ কথা সত্য যে, ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে কিছু তাঁতি বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে গিয়েছিলেন। তারাই সেখানে টাঙ্গাইল শাড়ি তৈরি শুরু করেন। কিন্তু শাড়ির নাম সেই টাঙ্গাইলই রয়ে গেছে। শাড়ির এই ইতিহাস তুলে ধরেছে খোদ ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা।

টাঙ্গাইল শাড়ির স্বত্ব কতদিন

ভারতীয় নিবন্ধকের তথ্য বলছে, কলকাতা-ভিত্তিক পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য হ্যান্ডলুম উইভারস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের একটি আবেদনের জবাবে বাংলার টাঙ্গাইল শাড়ি ২০২৪ সালের ২ জানুয়ারি ইন্ডিয়ান জিওগ্রাফিক ইন্ডিকেশন ওয়েবসাইটে নিবন্ধিত হয়।

২০২০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর করা ওই আবেদন পরবর্তীতে নিবন্ধিত করে দেয়া হয়। বলা হয়, এই দাবি ৭ সেপ্টেম্বর, ২০৩০ পর্যন্ত বৈধ থাকবে।

এদিকে, বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসন কীভাবে টাঙ্গাইল শাড়ি, আনারস, এবং সন্দেশের (দুধ ও চিনি দিয়ে তৈরি এক ধরনের মিষ্টি) জিআই মর্যাদা সুরক্ষিত করা যায়, সে বিষয়ে আলোচনার জন্য গত ৩০ জানুয়ারি একটি সভা করে।
জেলা প্রশাসক কায়সারুল ইসলাম বলেন, টাঙ্গাইলের তিনটি আইকনিক পণ্যের জন্য জিআই মর্যাদার আবেদন করেছি, আশা করি শিগগিরই স্বীকৃতি পাবো।

‘মিথ্যা দাবি’ ঘিরে বিতর্ক

ফেসবুকে ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পোস্টের পর ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়েছে। অনেকেই এর সমালোচনা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে পোস্টটি প্রকাশ করার পর এতে এখন পর্যন্ত চার হাজারের বেশি কমেন্ট পড়েছে। এর প্রায় সবই ভারতীয় দাবির প্রতিবাদ ও সমালোচনা করে।

বেশিরভাগ মন্তব্যে বলা হয়েছে, শাড়টির নাম টাঙ্গাইল। আর সেই টাঙ্গাইলের অবস্থান বাংলাদেশে। এখানেই টাঙ্গাইল শাড়ির জন্মস্থান, পশ্চিমবঙ্গে নয়। এছাড়া আরও অনেকেই এই দাবিকে ‘অদ্ভূত ও হাস্যকর’ বলে অভিহিত করেছেন।

এক পোস্টে বলা হয়েছে, টাঙ্গাইল শাড়ি আমাদের ঐতিহ্য। এটাকে আপনাদের (ভারতের) নিজেদের নামে ব্যাবহার করে অন্যায় করছেন। আশা করি আপনারা এই ভুল সিদ্ধান্ত থেকে অতি শিগগিরই সরে আসবেন।

অপর একজন লিখেছেন, এটা সত্যিই হতাশাজনক যে তারা এমনটা দাবি করছে। তিনি আরও বলেন, ১৯০৬ সালে মহাত্মা গান্ধীর স্বদেশী আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল ইংল্যান্ডের ল্যাঞ্চাশায়ারের তৈরি কাপড় বর্জন। সেই ডাকে আপামর জনসাধারণের সাড়া দেওয়ায় সেই সময়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) তাঁত শিল্প প্রসার লাভ করে। তার মানে এই নয় যে, টাঙ্গাইল শাড়ি পশ্চিমবঙ্গের।

তিনি আরও বলেন, ‘টাঙ্গাইল শাড়ির ইতিহাস প্রাচীন। এই তাঁতিরা ঐতিহ্যবাহী ঢাকাই মসলিন তাঁতশিল্পীদের বংশধর। তাদের আদি নিবাস ছিল ঢাকা জেলার ধামরাই ও চৌহাট্টায়। তৎকালীন সময়ে দেলদুয়ার, সন্তোষ ও ঘ্রিন্দা এলাকার জমিদারদের আমন্ত্রণে তাঁতিরা টাঙ্গাইল যান এবং পরবর্তীতে সেখানে বসবাস শুরু করেন। অবিভক্ত ময়মনসিংহের মহকুমা টাঙ্গাইলের নামানুসারে এই শাড়ি টাঙ্গাইল শাড়ি পরিচিতি লাভ করে। টাঙ্গাইল শাড়ি কোনোভাবেই পশ্চিমবঙ্গের নয়।’