ঢাকা ০২:৫০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
সন্তানদের নতুন জামা পরিয়ে রাতে ঘর থেকে বের হয়ে আর ফিরলেন না বাবা প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স নীতির ফলে দেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মুল হয়েছেঃ সিলেটে আইজিপি বড় পরিসরে আর. কে. মিশন রোডে ব্র্যাক ব্যাংকের শাখা উদ্বোধন সৌদিতে প্রথমবারের মতো সুইমস্যুট পরে র‌্যাম্পে হাঁটলেন মডেলরা ‘আয়রনম্যান’ চরিত্রে ফিরতে ‘আপত্তি নেই’ রবার্ট ডাউনি জুনিয়রের বাংলাদেশের গণতন্ত্র ধ্বংসের জন্য ভারত সরকার দায়ী : কর্নেল অলি বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সিরিজ নিয়ে শঙ্কা কাঠালিয়ায় ডাকাতের গুলিতে আহত ২ বিএনপি একটা জালিয়ত রাজনৈতিক দল : পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেয়র তাপস মনগড়া ও অসত্য বক্তব্য দিচ্ছেন : সাঈদ খোকন
সেই মাহেন্দ্রক্ষণে আমরাঃ স্বপ্ন বাস্তবায়নের দিন

ক্র্যাব প্রতিষ্ঠার চার দশক

আবদুল গাফফার মাহমুদ 
  • Update Time : ১২:৪১:১৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ জুলাই ২০২৩
  • / ২০২ Time View

আজ সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। স্বপ্ন বাস্তবায়নের দিন। আজ খুশির দিন। আনন্দে উদ্বেলিত হওয়ার দিন। বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন (ক্র্যাব)’র চার দশক। অবশেষে সত্য উন্মোচিত হল, উদ্ভাসিত হলো। সত্যকে কখনো চাপা দেয়া যায় না। সত্য একদিন নিজেই দোরগোড়ায় এসে জানান দেয়। বলে আমি এসেছি, তোমরা আমাকে গ্রহণ করছো না কেন?

অভিনন্দন, শুভেচ্ছা, কৃতজ্ঞতা মীর্জা মেহেদী তমাল ও মামুনুর রশিদের নেতৃত্বাধীন ক্র্যাব কমিটিকে। তারা ৪০ বছর পর হলেও সত্যকে সামনে নিয়ে এসেছে। সাহসী উদ্যোগ নিয়েছে ক্র্যাবের ৪০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠান পালনের। তাদেরকে ধন্যবাদ।

আজ ধন্যবাদ দেয়ার সময় এসেছে আমিনুর রহমান তাজের নেতৃত্বাধীন উপ-কমিটিকে। কয়েক বছর আগে এক সাধারণ সভায় একজন সদস্য ক্র্যাবের প্রতিষ্ঠা বার্ষকী কবে জানতে চান। সভাপতি কোন সিদ্ধান্ত না দিয়ে আমিনুর তাজকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করে দেন। কমিটির সদস্য সচিব করা হয় আকতারুজ্জামান লাবুলকে। পরে লাবলুর মৃত্যুর পর আবুল হোসেনকে সদস্য সচিব করা হয়। যুগ্ম আহবায়ক ছিলেন আইয়ুব আনসারী। দু’জন সদস্য আতিকুর রহমান ও প্যাট্রিক ডি, কষ্টা।

এই কমিটি দীর্ঘ অনুসন্ধান, প্রতিষ্ঠাকালীন জীবিত সদস্যদের সাক্ষাৎকারণ গ্রহণ করেন। এরপর প্রাপ্ত তথ্য চুলচেরা বিশ্লেষণ করে একটি রিপোর্ট প্রস্তুত করে ক্র্যাবের কেন্দ্রিয় কমিটিকে হস্তান্তর করেন।

দীর্ঘদিন এই রিপোর্ট পড়েছিল। কেউ বা কোন কমিটি এটি পরবর্তী সাধারণ সভায় উপস্থাপন করেননি। অবশেষে বর্তমান কমিটি এই রিপোর্ট আমলে নিয়ে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেন। তাই আজ ক্র্যাবের ৪০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত হচ্ছে।

দৈনিক আজাদ-এ তখন ক্রাইম রির্পোটিংয়ে কাজ করতেন সোহরাব সিদ্দিকী নামে একজন। তিনি একদিন রমনা থানা এলাকায় সংঘটিত অপরাধকর্ম নিয়ে দৈনিক আজাদ পত্রিকায় একটি রিপোর্ট করেন। তখন পুলিশের মধ্যে জবাবদিহিতা ছিল। অনেক সময় উর্ধতনদের ভৎর্সনা এমনকি বিভাগীয় শাস্তির সম্মূখীন হতে হতো।

দৈনিক আজাদ-এর প্রতিবেদনের কারণে তৎকালীন রমনা থানার ওসি ক্ষেপে গিয়ে সোহরাব সিদ্দিককে হেনস্তা করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি গুলিস্তান পুলিশ ফাঁড়িকে নির্দেশ দেন। তারা যেন রাতে বাড়ী ফেরার সময় সোহরাব সিদ্দিককে ধরে হেনস্তা করেন। সে সময় অনেক রাতে সাংবাদিকদেরকে বাড়ী ফিরতে হতো। সোহরাব সিদ্দিক তার গোলাপবাগের বাসায় ফিরতে গেলে ওৎপেতে থাকা পুলিশ সদস্যরা তাকে গুলিস্তান পুলিশ ফঁড়িতে নিয়ে যান। তারপর আগে থেকে এনে রাখা বাংলা মদ সোহরাব সিদ্দিকীকে খাওয়ানোর চেষ্টা করেন।

মজার ব্যাপার হলো সোহরাব সিদ্দিকী জীবনে কখনো মদ খাওয়া তো দূরের কথা, একফোঁটা মদ স্পর্শও করেননি। অবশ্য কয়েকজন পুলিশ সদস্য তাকে চেপে ধরে মুখে বাংলা মদ ঢেলে দেন। এরপর ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে স্টমাক ওয়াশ-এর একটি সার্টিফিকেট যোগাড় করেন। তখন তো মোবাইল ফোন কিংবা যোগাযোগের এত সহজলভ্যতা ছিল না।পরদিন রমনা থানা থেকে পুলিশ সোহরাব সিদ্দিকীকে কোর্টে চালান দেয়।

খবর পেয়ে বিভিন্ন পত্রিকার ক্রাইম বিটের সদস্যরা আদালতে হাজির হয়ে যথারীতি সোহরাব সিদ্দিকীর জামিন নেন।

দিনটি ছিলো ১৯৮৩ সালের ২২ জুলাই। তাৎক্ষনিক সিদ্ধান্ত হয় পরদিন ২৩ জুলাই ক্রাইম রিপোর্টাররা মিটিং করবেন। উদ্দেশ্য রমনা পুলিশের এই অশালীন আচরণের জবাব দেয়া। কিন্তু মিটিং করব কোথায়? প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষ সেখানে মিটিং করতে দেবে না। তখন ঐক্যবদ্ধ বিএফইউজে, ডিইউজেও ক্রাইম রিপোর্টারদের আলাদা কোন মিটিং মানতে রাজী না।

অগত্যা অগ্রজ মোজাফফর হোসেন মানিক তার ভায়রা মাঈন উদ্দিন চৌধুরী, শামসুল হক দুররানী, নূরউদ্দিন ভূইয়া, রহুল আমিন গাজী, এএফএম ফয়েজ উল্লাহ, জাকারিয়া মিলন প্রমুখ সিদ্ধান্ত নিলেন রমনা বটমূলে মিটিং করার। মিটিংয়ে শামসুল হক দুররানী, আবদুল গাফফার মাহমুদ, আবুল মনসুর সেলিম, শংকর কুমার দে, আব্দুস সামাদ, আমিনুল হক ভুঁইয়া সহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা শেষে একটি সংগঠন করার সিদ্ধান্ত হয়। নামকরণ করা হয় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন (ক্র্যাব)। কমিটি ওইদিনই ঢাকার তৎকালীন পুলিশ কমিশনারের সাথে সাক্ষাৎ করে কঠোর প্রতিবাদ জানান।

কমিশনার ঘটনা শুনে তদন্ত করে তিনদিনের মধ্যে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন। পরে অবশ্য রমনা থানার ওসিকে প্রত্যাহার করা হয়।

সেদিন গঠিত কমিটির আহবায়ক নিযুক্ত হন মোজাফফর হোসেন মানিক। যুগ্ম আহবায়ক জাকারিয়া মিলন, সদস্য সচিব শামসুল হক দুররানী। বাকিরা সবাই সদস্য।

এই কমিটির কার্যক্রম কিছুটা ঝিমিয়ে পড়ে। ক্র্যাবের নামে অগ্রণী ব্যাংক জাতীয় প্রেসক্লাব শাখায় একটি একাউন্ট খোলা হয়েছিল যা আজো বিদ্যমান আছে। তখন হাতেগোনা কয়েকটি পত্রিকা ছিল। প্রত্যেক পত্রিকায় ‘সিটি রাউন্ড আপ’ নামে একজন রিপোর্টার ক্রাইম নিউজ কভার করতেন। পরে জাকারিয়া মিলনকে প্রেসিডেন্ট ও শামসুল হক দুররানীকে সাধারণ সম্পাদক করে ২০ সদস্যের একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়।

ইতিমধ্যে ঢাকাসহ সারাদেশে অপরাধ কর্মকান্ড বেড়ে যায়। ঢাকাসহ সারাদেশে অনেক দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকা বের হয়। এ ছাড়া প্রত্যেক পত্রিকায় ২/৩ জন করে ক্রাইম রিপোর্টার নিয়ে একটি আলাদা বিট হয়ে যায়। তখন খন্ড খন্ড গ্রুপে কয়েকটি আলাদা ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন গঠিত হয়। তারা একেকজন নিজেদেরকে ক্র্যাবের প্রতিষ্ঠাতা দাবী করতে থাকে।

ক্র্যাব গঠিত হয় ১৯৮৩ সালে। অনেক পরে প্রফেশনে এসে কেউ যদি প্রতিষ্ঠাতা দাবী করে তা হাস্যকর ছাড়া আর কিছুই নয়। এমনও সদস্যকে আমার সামনে বসে বলতে শুনেছি, ‘আমিই এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক।’ আবার কেউ কেউ বলেন, ১৯৮৩ সালে ক্র্যাব হলে তো আমরা জানতাম। আচ্ছা বলুন তো কিভাবে জানবেন? আপনারা তখন কোথায় ছিলেন? হয়তো স্কুলে কিংবা কলেজে পড়তেন। কিংবা সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ভর্তি হয়েছেন। তাই ক্রাইম রিপোর্টারদের সংগঠন প্রসঙ্গে কেমনে জানবেন? কি জানবেন? সেই যাই হোক, এসব অবান্তর কথা বলে কোন লাভ নেই। তবে যারা ক্র্যাব নিয়ে দৌঁড়-ঝাঁপ করেছেন। আলাদা হলেও কমিটি গঠন করেছেন। পরে একত্রিত হয়েছেন তাদের প্রত্যেকের অবদান আছে ক্র্যাবের জন্য। তাদেরকেও ধন্যবাদ জানাই।

ক্র্যাবের বর্তমান কমিটি মহৎ উদ্যোগ নিয়েছে। তারা ‘প্রতিষ্ঠার চার দশক, সঠিক তথ্য সুন্দর সমাজ’ নামে কর্মসূচী নিয়েছে। আজ ২৩ জুলাই দুটি পর্বে এই কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম পর্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি। অনুষ্ঠানসূচীতে রয়েছে সকাল ১১টা অতিথিবৃন্দের আগমন, ১১.১০ জাতীয় পতাকা উত্তোলন, বেলুন ও পায়রা উড়ানো, ১১,২০ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর কেক কাটা, ১১.৩০ আনন্দ শোভাযাত্রা উদ্বোধন, ডিআরইউ চত্বর, ঢাকা।

দ্বিতীয় অধিবেশন : প্রধান অতিথি ডঃ হাছান মাহমুদ এমপি, মাননীয় তথ্যমন্ত্রী। বিশেষ অতিথি একেএম এনামুল হক শামীম, এমপি, মাননীয় উপমন্ত্রী, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। সভাপতি মির্জা মেহেদি তমাল, ক্র্যাব। স্থান ইন্সটিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ।

অনুষ্ঠানসূচী : সন্ধ্যা ৬টা প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের সম্মাননা, ৬.২০ সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সম্মাননা, ৬.৪০ বিগত কমিটির সদস্যদের সম্মাননা ও নতুন কমিটিকে ক্রেষ্ট প্রদান, ৬.৫০ মাগরিবের নামাজের বিরতী, ৭.১৫ অতিথিদের আসন গ্রহণ, ৭.২০ প্রধান অতিথির বক্তব্য, ৭.৪০ বিশেষ অতিথির বক্তব্য, ৮.০০ সভাপতির বক্তব্য, ৮.১০ এশার নামাজ, ৮.৩০ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ৯.৩০ অপ্যায়ন।

Please Share This Post in Your Social Media

সেই মাহেন্দ্রক্ষণে আমরাঃ স্বপ্ন বাস্তবায়নের দিন

ক্র্যাব প্রতিষ্ঠার চার দশক

Update Time : ১২:৪১:১৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ জুলাই ২০২৩

আজ সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। স্বপ্ন বাস্তবায়নের দিন। আজ খুশির দিন। আনন্দে উদ্বেলিত হওয়ার দিন। বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন (ক্র্যাব)’র চার দশক। অবশেষে সত্য উন্মোচিত হল, উদ্ভাসিত হলো। সত্যকে কখনো চাপা দেয়া যায় না। সত্য একদিন নিজেই দোরগোড়ায় এসে জানান দেয়। বলে আমি এসেছি, তোমরা আমাকে গ্রহণ করছো না কেন?

অভিনন্দন, শুভেচ্ছা, কৃতজ্ঞতা মীর্জা মেহেদী তমাল ও মামুনুর রশিদের নেতৃত্বাধীন ক্র্যাব কমিটিকে। তারা ৪০ বছর পর হলেও সত্যকে সামনে নিয়ে এসেছে। সাহসী উদ্যোগ নিয়েছে ক্র্যাবের ৪০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠান পালনের। তাদেরকে ধন্যবাদ।

আজ ধন্যবাদ দেয়ার সময় এসেছে আমিনুর রহমান তাজের নেতৃত্বাধীন উপ-কমিটিকে। কয়েক বছর আগে এক সাধারণ সভায় একজন সদস্য ক্র্যাবের প্রতিষ্ঠা বার্ষকী কবে জানতে চান। সভাপতি কোন সিদ্ধান্ত না দিয়ে আমিনুর তাজকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করে দেন। কমিটির সদস্য সচিব করা হয় আকতারুজ্জামান লাবুলকে। পরে লাবলুর মৃত্যুর পর আবুল হোসেনকে সদস্য সচিব করা হয়। যুগ্ম আহবায়ক ছিলেন আইয়ুব আনসারী। দু’জন সদস্য আতিকুর রহমান ও প্যাট্রিক ডি, কষ্টা।

এই কমিটি দীর্ঘ অনুসন্ধান, প্রতিষ্ঠাকালীন জীবিত সদস্যদের সাক্ষাৎকারণ গ্রহণ করেন। এরপর প্রাপ্ত তথ্য চুলচেরা বিশ্লেষণ করে একটি রিপোর্ট প্রস্তুত করে ক্র্যাবের কেন্দ্রিয় কমিটিকে হস্তান্তর করেন।

দীর্ঘদিন এই রিপোর্ট পড়েছিল। কেউ বা কোন কমিটি এটি পরবর্তী সাধারণ সভায় উপস্থাপন করেননি। অবশেষে বর্তমান কমিটি এই রিপোর্ট আমলে নিয়ে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেন। তাই আজ ক্র্যাবের ৪০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত হচ্ছে।

দৈনিক আজাদ-এ তখন ক্রাইম রির্পোটিংয়ে কাজ করতেন সোহরাব সিদ্দিকী নামে একজন। তিনি একদিন রমনা থানা এলাকায় সংঘটিত অপরাধকর্ম নিয়ে দৈনিক আজাদ পত্রিকায় একটি রিপোর্ট করেন। তখন পুলিশের মধ্যে জবাবদিহিতা ছিল। অনেক সময় উর্ধতনদের ভৎর্সনা এমনকি বিভাগীয় শাস্তির সম্মূখীন হতে হতো।

দৈনিক আজাদ-এর প্রতিবেদনের কারণে তৎকালীন রমনা থানার ওসি ক্ষেপে গিয়ে সোহরাব সিদ্দিককে হেনস্তা করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি গুলিস্তান পুলিশ ফাঁড়িকে নির্দেশ দেন। তারা যেন রাতে বাড়ী ফেরার সময় সোহরাব সিদ্দিককে ধরে হেনস্তা করেন। সে সময় অনেক রাতে সাংবাদিকদেরকে বাড়ী ফিরতে হতো। সোহরাব সিদ্দিক তার গোলাপবাগের বাসায় ফিরতে গেলে ওৎপেতে থাকা পুলিশ সদস্যরা তাকে গুলিস্তান পুলিশ ফঁড়িতে নিয়ে যান। তারপর আগে থেকে এনে রাখা বাংলা মদ সোহরাব সিদ্দিকীকে খাওয়ানোর চেষ্টা করেন।

মজার ব্যাপার হলো সোহরাব সিদ্দিকী জীবনে কখনো মদ খাওয়া তো দূরের কথা, একফোঁটা মদ স্পর্শও করেননি। অবশ্য কয়েকজন পুলিশ সদস্য তাকে চেপে ধরে মুখে বাংলা মদ ঢেলে দেন। এরপর ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে স্টমাক ওয়াশ-এর একটি সার্টিফিকেট যোগাড় করেন। তখন তো মোবাইল ফোন কিংবা যোগাযোগের এত সহজলভ্যতা ছিল না।পরদিন রমনা থানা থেকে পুলিশ সোহরাব সিদ্দিকীকে কোর্টে চালান দেয়।

খবর পেয়ে বিভিন্ন পত্রিকার ক্রাইম বিটের সদস্যরা আদালতে হাজির হয়ে যথারীতি সোহরাব সিদ্দিকীর জামিন নেন।

দিনটি ছিলো ১৯৮৩ সালের ২২ জুলাই। তাৎক্ষনিক সিদ্ধান্ত হয় পরদিন ২৩ জুলাই ক্রাইম রিপোর্টাররা মিটিং করবেন। উদ্দেশ্য রমনা পুলিশের এই অশালীন আচরণের জবাব দেয়া। কিন্তু মিটিং করব কোথায়? প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষ সেখানে মিটিং করতে দেবে না। তখন ঐক্যবদ্ধ বিএফইউজে, ডিইউজেও ক্রাইম রিপোর্টারদের আলাদা কোন মিটিং মানতে রাজী না।

অগত্যা অগ্রজ মোজাফফর হোসেন মানিক তার ভায়রা মাঈন উদ্দিন চৌধুরী, শামসুল হক দুররানী, নূরউদ্দিন ভূইয়া, রহুল আমিন গাজী, এএফএম ফয়েজ উল্লাহ, জাকারিয়া মিলন প্রমুখ সিদ্ধান্ত নিলেন রমনা বটমূলে মিটিং করার। মিটিংয়ে শামসুল হক দুররানী, আবদুল গাফফার মাহমুদ, আবুল মনসুর সেলিম, শংকর কুমার দে, আব্দুস সামাদ, আমিনুল হক ভুঁইয়া সহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা শেষে একটি সংগঠন করার সিদ্ধান্ত হয়। নামকরণ করা হয় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন (ক্র্যাব)। কমিটি ওইদিনই ঢাকার তৎকালীন পুলিশ কমিশনারের সাথে সাক্ষাৎ করে কঠোর প্রতিবাদ জানান।

কমিশনার ঘটনা শুনে তদন্ত করে তিনদিনের মধ্যে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন। পরে অবশ্য রমনা থানার ওসিকে প্রত্যাহার করা হয়।

সেদিন গঠিত কমিটির আহবায়ক নিযুক্ত হন মোজাফফর হোসেন মানিক। যুগ্ম আহবায়ক জাকারিয়া মিলন, সদস্য সচিব শামসুল হক দুররানী। বাকিরা সবাই সদস্য।

এই কমিটির কার্যক্রম কিছুটা ঝিমিয়ে পড়ে। ক্র্যাবের নামে অগ্রণী ব্যাংক জাতীয় প্রেসক্লাব শাখায় একটি একাউন্ট খোলা হয়েছিল যা আজো বিদ্যমান আছে। তখন হাতেগোনা কয়েকটি পত্রিকা ছিল। প্রত্যেক পত্রিকায় ‘সিটি রাউন্ড আপ’ নামে একজন রিপোর্টার ক্রাইম নিউজ কভার করতেন। পরে জাকারিয়া মিলনকে প্রেসিডেন্ট ও শামসুল হক দুররানীকে সাধারণ সম্পাদক করে ২০ সদস্যের একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়।

ইতিমধ্যে ঢাকাসহ সারাদেশে অপরাধ কর্মকান্ড বেড়ে যায়। ঢাকাসহ সারাদেশে অনেক দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকা বের হয়। এ ছাড়া প্রত্যেক পত্রিকায় ২/৩ জন করে ক্রাইম রিপোর্টার নিয়ে একটি আলাদা বিট হয়ে যায়। তখন খন্ড খন্ড গ্রুপে কয়েকটি আলাদা ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন গঠিত হয়। তারা একেকজন নিজেদেরকে ক্র্যাবের প্রতিষ্ঠাতা দাবী করতে থাকে।

ক্র্যাব গঠিত হয় ১৯৮৩ সালে। অনেক পরে প্রফেশনে এসে কেউ যদি প্রতিষ্ঠাতা দাবী করে তা হাস্যকর ছাড়া আর কিছুই নয়। এমনও সদস্যকে আমার সামনে বসে বলতে শুনেছি, ‘আমিই এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক।’ আবার কেউ কেউ বলেন, ১৯৮৩ সালে ক্র্যাব হলে তো আমরা জানতাম। আচ্ছা বলুন তো কিভাবে জানবেন? আপনারা তখন কোথায় ছিলেন? হয়তো স্কুলে কিংবা কলেজে পড়তেন। কিংবা সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ভর্তি হয়েছেন। তাই ক্রাইম রিপোর্টারদের সংগঠন প্রসঙ্গে কেমনে জানবেন? কি জানবেন? সেই যাই হোক, এসব অবান্তর কথা বলে কোন লাভ নেই। তবে যারা ক্র্যাব নিয়ে দৌঁড়-ঝাঁপ করেছেন। আলাদা হলেও কমিটি গঠন করেছেন। পরে একত্রিত হয়েছেন তাদের প্রত্যেকের অবদান আছে ক্র্যাবের জন্য। তাদেরকেও ধন্যবাদ জানাই।

ক্র্যাবের বর্তমান কমিটি মহৎ উদ্যোগ নিয়েছে। তারা ‘প্রতিষ্ঠার চার দশক, সঠিক তথ্য সুন্দর সমাজ’ নামে কর্মসূচী নিয়েছে। আজ ২৩ জুলাই দুটি পর্বে এই কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম পর্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি। অনুষ্ঠানসূচীতে রয়েছে সকাল ১১টা অতিথিবৃন্দের আগমন, ১১.১০ জাতীয় পতাকা উত্তোলন, বেলুন ও পায়রা উড়ানো, ১১,২০ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর কেক কাটা, ১১.৩০ আনন্দ শোভাযাত্রা উদ্বোধন, ডিআরইউ চত্বর, ঢাকা।

দ্বিতীয় অধিবেশন : প্রধান অতিথি ডঃ হাছান মাহমুদ এমপি, মাননীয় তথ্যমন্ত্রী। বিশেষ অতিথি একেএম এনামুল হক শামীম, এমপি, মাননীয় উপমন্ত্রী, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। সভাপতি মির্জা মেহেদি তমাল, ক্র্যাব। স্থান ইন্সটিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ।

অনুষ্ঠানসূচী : সন্ধ্যা ৬টা প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের সম্মাননা, ৬.২০ সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সম্মাননা, ৬.৪০ বিগত কমিটির সদস্যদের সম্মাননা ও নতুন কমিটিকে ক্রেষ্ট প্রদান, ৬.৫০ মাগরিবের নামাজের বিরতী, ৭.১৫ অতিথিদের আসন গ্রহণ, ৭.২০ প্রধান অতিথির বক্তব্য, ৭.৪০ বিশেষ অতিথির বক্তব্য, ৮.০০ সভাপতির বক্তব্য, ৮.১০ এশার নামাজ, ৮.৩০ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ৯.৩০ অপ্যায়ন।