ঢাকা ০২:৩৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
রাখিব নিরাপদ, দেখাবো আলোর পথ; নরক যন্ত্রনার প্রহসনের আলামত মাত্র

কারাবন্দির ডায়রীঃ মুক্তিযোদ্ধা মনিরুজ্জামান

স্টাফ রিপোর্টার
  • Update Time : ০৫:৫৪:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ মার্চ ২০২৪
  • / ৪৩ Time View

সাজানো মামলায় গ্রেপ্তার, আটক, নির্যাতন, থানা পুলিশের টর্চার সেল হয়ে হাজতখানা অতঃপর আদালতে চালান, গারদে অবস্থান, বিচারকের এজলাসে হাজিরা। জামিন রিমান্ড নিয়ে মুখোমুখি বিতর্ক। অতঃপর কারাগারে নিক্ষেপ। নির্যাতনের সূচনা সেখান থেকেই জেলখানা আদতেই বন্দীশালা, থাকে বাংলাদেশের ভুক্তভোগী রাজবন্দীরা দোজখের কাল্পনিক প্রতিকৃতি ভাবতেও দ্বিধা করেন না। পদে পদে অপমান, গলাধাক্কা, অর্ধবন্দ্রদান, হাতাহাতি, কাড়াকাড়ি, মারামারি মোবাইল, মানিব্যাগ টাকা পয়সা ছিনতাই, মা বোনের নামে গালাগাল করা ইত্যাদি সাধারণ ব্যাপারমাত্র। এখানে, প্রতিবাদের কোন চান্স নাই। মানবাধিকার এখানে ভূলুন্ঠিত।

কারাগারে আমদানী, রপ্তানী, চালান, ফাইল, সুপার ফাইল, কম্বল চেক, রুম চেক, জামিন চেক, কেইস টেবিল, কেইস কার্ড, পিসি কার্ড। ফিংগার প্রিন্ট, চুল কাটা, ছবি তোলা, কোর্ট হাজিরা ইত্যাদি শব্দ যেন এক একটি আতঙ্ক। অত্যাচারের স্টীম রোলার, নেই স্বাস্থ্যকর পরিবেশ, নেই মেডিকেল সুবিধা, বাথরুম, টয়লেট, গোসলখানা যেন এক একটা নরক যন্ত্রনার অসহনীয় বার্তামাত্র। জেলখানায় নগদ অর্থ লেনদেন নিষেধ, অথচ নগদ টাকাছাড়া মানবজীবন অচল। টাকাই যেন সব। কোন কোন কারারক্ষী দৈনিক ২/৩ হাজার টাকাও আয় করে। কারাগারের মোটা চাল, ডাল আর মুলা পাতাকপির খাবার খেতে না পারলে পিসি কার্ডে খাবার কেনা চলে। স্পেশাল নাম দিয়ে ১২০, ১৫০, ২০০ টাকা দিলেই মাছ/মাংসের তরকারী মিলে। শুধুই টাকার খেলামাত্র। বিছানাপত্র, রুম ভাড়াও দৈনিক ৪/৫ শত টাকা করে দিতে হয় সেবকদের মাধ্যমে যা কারারক্ষী ও সুবেদার জমাদারদের পকেটে চলে যায়। আসলে প্রিজন গাড়ী ভ্যান থেকে জেল খানার দরজায় যখন পুলিশ পাঠিয়ে দেয় তখন থেকেই কারারক্ষীদের হেফাজতে থাকতে হয়। নির্যাতনের দ্বিতীয় ধাপ সেটা। জেলগেটে একতরফা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আবার শুরু হয় বডিচেক, ব্যাগচেক, টাকা পয়সা থাকলেতো কথাই নাই। হয় সব কিছু কেড়ে নিবে অথবা হাজারে ১০০ টাকা দিয়ে হালাল করতে হয়। এরপরে একাধিকবার একাধিকপয়েন্টে চেক করে আগমনী পার হয়ে আমদানীতে ঢুকানো হয়। খাবার নামে মাত্র লালগমের রুটি, ডাল, শাক, হালুয়া।

বিশেষ করে রাতের খাবার খুবই কষ্টকর হয়। কেননা, বেলা ৩টায় যে ভাত ওয়ার্ডে/সেলে যায় তা রাত ৮টায় কিভাবে খাওয়া হবে বন্দীরা তা’জানেনা। শীতকালে তা আরো করুন। ডাল-ভাত সামান্য গরম করেও খাবার ব্যবস্থা নাই। অন্যদিকে সকালে (ফজর) একবার সেলের বন্দীদের গননা (ফাইল) হয়। এরপর সেলের দরজা খোলা হলেও বিকাল ৫টার মধ্যে আবারো বন্দীদেরকে কক্ষে ঢোকানো হয়। এরপর আবারো গননা (ফাইল) করে কক্ষের দরজায় বড় তালা দিয়ে বন্দী রাখা হয়। বিকাল ৫টা তালাচাবি এনামুলরা তা করে। সেখানে কোন আপদ বিপদ হলে, অসুস্থ্য হলে, সমস্যা হলে দেখার কেউ নাই। মৃত্যুই যেন কারাবন্দীর নিয়তি। জুম্মার নামাজটাও পড়ার সুযোগ নাই। জেলখানার মেডিকেল এ পর্যাপ্ত ডাক্তার নাই। ৩০ হাজার বন্দীর জন্য ৩/৪ জন ডাক্তার মাত্র। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নাই, নার্স নাই, ওটি, আইসিইউ, সিসিইউ এসবের বালাই নাই। কখনো কখনো ডাক্তারের অনুপস্থিতিতে কারারক্ষী/প্যারামেডিকেলের দায়িত্বে চিকিৎসা চলে, যা অত্যন্ত ভয়ংকর।

রাখিব নিরাপদ দেখাবো আলোর পথ এই স্লোগানটির মর্যাদা কারাগারে উপেক্ষিত হচ্ছে বার বার। কারাগারের কারারক্ষী, জমাদার, সুবেদার, জেলার, ডেপুটি জেলার থেকে শুরু করে অত্যাচারের ব্যারোমিটার চালায় পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, জলসিড়ি, রূপসা, মধুমতি সহ বিচিত্র নামের ভবনের সেলে কর্মরত সেবক, রাইটার, ইনচার্জ নামক নিপীড়নকারী মেকানিজম।

কারাগারের বন্দিরা ১৫ দিনে ১০/২০ মিনিটের জন্য একবার তাদের আইনজীবী কিংবা পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করতে পারেন যা খুবই অপ্রতুল। ৭ দিনে একদিন ১০ মিনিটের জন্য ১০ টাকার বিনিময়ে মোবাইল ফোনে কথা বলতে পারেন। টিভি রেডিওর বালাই নাই। মোবাইল ফোন বেআইনী। এছাড়া, আছে ৫০/১০০ টাকার টাওয়ার কল, সিসি কল এর নামে প্রতারনার আরেকটি ব্যবস্থাপনা আছে। ১০০/২০০/৫০ টাকার বিনিময়ে মেঘনা, পদ্মা, মধুমতির গেইট থেকে বের হবার সুযোগ থাকে। টাকা ছাড়া জেলখানায় কোন কাজই হয় না। ৫০ টাকায় এক কাপ কফি, সব জিনিস ডবল দাম যুবসমাজ ধ্বংস হচ্ছে কারাগারে এসে। ৩০/৪০ হাজার কারাবন্দি যেখানে থাকে সেখানে মাঝে মধ্যে বন্দিদের নিজেদের মধ্যেও টুকটাক ঝগড়াঝাটি লেগে থাকে, ভুল বুঝাবুঝি হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু, এসবের মিমাংসাও অদ্ভুত উপায়ে করা হয়। কারারক্ষী, জমাদার, সুবেদাররা কেইস টেবিলে ডেকে এনে নীল ডাউন করে বসায়। তারপর অবাক বিচার। বাদী বিবাদী উভয়কে বেত্রাগাতসহ ৩০০০/৫০০০/১০০০০ টাকা জরিমানা দিতে হয়। কেরানীগঞ্জ থেকে কাশিমপুর কারাগারে বদলী ঠেকাতে জনপ্রতি ৬০০০/- টাকা ঘুষ লাগে। কারাবন্দিদের সাক্ষাতে এলে যিনি বন্দীর কাছে বার্তাদেন তার ফি ১০০/২০০ টাকা। কোর্টের তারিখ আগের রাতে জানালে তাকেও ১০০ টাকা বখশিস দিতে হয়। বখশিস না দিলে তাকে চালানের বন্দীদের সাথে রাত কাটাতে হয়। ওকালতনামা, পিসির খাবার দাবার ইত্যাদির জন্যও বিডিআর হাজতীরা বখশিস চান। দৈনিক পত্রিকা ৫০/- টাকা, মাসিক চার্জ ৫০০/- টাকা তাও অনেক নিউজ কেটে রাখা হয়।

কারাগারে অসুস্থ বন্দীদের জন্য চরম অমানবিক আচরন চলে। কোন বন্দীর দুটো হাতই নাই অথচ বোমা হামলায় আটক। প্রস্রাব করতে পারেনা, ক্যাথেডার পরে মূত্রনালী আটকে থাকা ইউরোলজীর রোগীরা নিদারুন কষ্টে থাকে। আমদানী কক্ষ থেকে ৪০/৫০ জনকে ডান্ডাবেরী, হাতকরা দিয়েও ফিংগার প্রিন্টের জন্য আনা নেওয়া চলে।

মোটের উপর বাংলাদেশের কারাগারগুলো যেন এক একটা হাবিয়া দোজখের বিকল্প মাত্র। সরকারের বড় বড় কর্তারা ভিজিট করলেও সারা দিন বন্দিদেরকে সেলে আটকে রাখা হয়। রাতের বেলা কারাগারের ওয়ার্ডে তালা ঝুলে থাকে। এসময় কোনরূপ দুর্ঘটনা/জীবন হানি ঘটলেও জেল প্রশাসন তা’ কৌশলে চেপে যায়। ঢাকা মেডিকেলে নিবার আগেই কারাবন্দীর জীবন প্রদীপ নিভে গেলেও ডেথ সার্টিফিকেট মিলেনা। অনাদর, অবহেলা, অত্যাচার, নির্যাতন বাংলাদেশের রাজবন্দিদের নিত্য সঙ্গী। মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে পদে পদে।

তাই, রাখিব নিরাপদ, দেখাবো আলোর পথ কারাগারের দরজায় এধরনের শুভ বার্তা লেখা থাকলেও বাস্তবে তার কোনই প্রতিফলন নাই। অত্যাচারী গণবিরোধী, ভোট ডাকাত, ডামী সরকারের পক্ষে এ ধরনের কারাগারই স্বাভাবিক। কারা সংস্কার ছাড়া বাংলাদেশের কারাবন্দিরা নিরাপদ হবে না। ভবিষ্যতে দেশ প্রেমিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে বাংলাদেশের কারাগারগুলোতে অবশ্যই রাখিব নিরাপদ দেখাবো আলোর পথ এই কথাটি সত্য প্রমানিত হবে। নতুবা সবই প্রতারনা মাত্র।

লেখক: মুক্তিযোদ্ধা মনিরুজ্জামান ॥ কারাবন্দি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার অভিজ্ঞতার কথা কেরানীগঞ্জ কারাগার থেকে ডায়েরীভুক্ত করে এই লেখাটি দেশবাসীর জ্ঞাতার্থে উৎসর্গ করেছেন।

Please Share This Post in Your Social Media

রাখিব নিরাপদ, দেখাবো আলোর পথ; নরক যন্ত্রনার প্রহসনের আলামত মাত্র

কারাবন্দির ডায়রীঃ মুক্তিযোদ্ধা মনিরুজ্জামান

Update Time : ০৫:৫৪:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ মার্চ ২০২৪

সাজানো মামলায় গ্রেপ্তার, আটক, নির্যাতন, থানা পুলিশের টর্চার সেল হয়ে হাজতখানা অতঃপর আদালতে চালান, গারদে অবস্থান, বিচারকের এজলাসে হাজিরা। জামিন রিমান্ড নিয়ে মুখোমুখি বিতর্ক। অতঃপর কারাগারে নিক্ষেপ। নির্যাতনের সূচনা সেখান থেকেই জেলখানা আদতেই বন্দীশালা, থাকে বাংলাদেশের ভুক্তভোগী রাজবন্দীরা দোজখের কাল্পনিক প্রতিকৃতি ভাবতেও দ্বিধা করেন না। পদে পদে অপমান, গলাধাক্কা, অর্ধবন্দ্রদান, হাতাহাতি, কাড়াকাড়ি, মারামারি মোবাইল, মানিব্যাগ টাকা পয়সা ছিনতাই, মা বোনের নামে গালাগাল করা ইত্যাদি সাধারণ ব্যাপারমাত্র। এখানে, প্রতিবাদের কোন চান্স নাই। মানবাধিকার এখানে ভূলুন্ঠিত।

কারাগারে আমদানী, রপ্তানী, চালান, ফাইল, সুপার ফাইল, কম্বল চেক, রুম চেক, জামিন চেক, কেইস টেবিল, কেইস কার্ড, পিসি কার্ড। ফিংগার প্রিন্ট, চুল কাটা, ছবি তোলা, কোর্ট হাজিরা ইত্যাদি শব্দ যেন এক একটি আতঙ্ক। অত্যাচারের স্টীম রোলার, নেই স্বাস্থ্যকর পরিবেশ, নেই মেডিকেল সুবিধা, বাথরুম, টয়লেট, গোসলখানা যেন এক একটা নরক যন্ত্রনার অসহনীয় বার্তামাত্র। জেলখানায় নগদ অর্থ লেনদেন নিষেধ, অথচ নগদ টাকাছাড়া মানবজীবন অচল। টাকাই যেন সব। কোন কোন কারারক্ষী দৈনিক ২/৩ হাজার টাকাও আয় করে। কারাগারের মোটা চাল, ডাল আর মুলা পাতাকপির খাবার খেতে না পারলে পিসি কার্ডে খাবার কেনা চলে। স্পেশাল নাম দিয়ে ১২০, ১৫০, ২০০ টাকা দিলেই মাছ/মাংসের তরকারী মিলে। শুধুই টাকার খেলামাত্র। বিছানাপত্র, রুম ভাড়াও দৈনিক ৪/৫ শত টাকা করে দিতে হয় সেবকদের মাধ্যমে যা কারারক্ষী ও সুবেদার জমাদারদের পকেটে চলে যায়। আসলে প্রিজন গাড়ী ভ্যান থেকে জেল খানার দরজায় যখন পুলিশ পাঠিয়ে দেয় তখন থেকেই কারারক্ষীদের হেফাজতে থাকতে হয়। নির্যাতনের দ্বিতীয় ধাপ সেটা। জেলগেটে একতরফা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আবার শুরু হয় বডিচেক, ব্যাগচেক, টাকা পয়সা থাকলেতো কথাই নাই। হয় সব কিছু কেড়ে নিবে অথবা হাজারে ১০০ টাকা দিয়ে হালাল করতে হয়। এরপরে একাধিকবার একাধিকপয়েন্টে চেক করে আগমনী পার হয়ে আমদানীতে ঢুকানো হয়। খাবার নামে মাত্র লালগমের রুটি, ডাল, শাক, হালুয়া।

বিশেষ করে রাতের খাবার খুবই কষ্টকর হয়। কেননা, বেলা ৩টায় যে ভাত ওয়ার্ডে/সেলে যায় তা রাত ৮টায় কিভাবে খাওয়া হবে বন্দীরা তা’জানেনা। শীতকালে তা আরো করুন। ডাল-ভাত সামান্য গরম করেও খাবার ব্যবস্থা নাই। অন্যদিকে সকালে (ফজর) একবার সেলের বন্দীদের গননা (ফাইল) হয়। এরপর সেলের দরজা খোলা হলেও বিকাল ৫টার মধ্যে আবারো বন্দীদেরকে কক্ষে ঢোকানো হয়। এরপর আবারো গননা (ফাইল) করে কক্ষের দরজায় বড় তালা দিয়ে বন্দী রাখা হয়। বিকাল ৫টা তালাচাবি এনামুলরা তা করে। সেখানে কোন আপদ বিপদ হলে, অসুস্থ্য হলে, সমস্যা হলে দেখার কেউ নাই। মৃত্যুই যেন কারাবন্দীর নিয়তি। জুম্মার নামাজটাও পড়ার সুযোগ নাই। জেলখানার মেডিকেল এ পর্যাপ্ত ডাক্তার নাই। ৩০ হাজার বন্দীর জন্য ৩/৪ জন ডাক্তার মাত্র। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নাই, নার্স নাই, ওটি, আইসিইউ, সিসিইউ এসবের বালাই নাই। কখনো কখনো ডাক্তারের অনুপস্থিতিতে কারারক্ষী/প্যারামেডিকেলের দায়িত্বে চিকিৎসা চলে, যা অত্যন্ত ভয়ংকর।

রাখিব নিরাপদ দেখাবো আলোর পথ এই স্লোগানটির মর্যাদা কারাগারে উপেক্ষিত হচ্ছে বার বার। কারাগারের কারারক্ষী, জমাদার, সুবেদার, জেলার, ডেপুটি জেলার থেকে শুরু করে অত্যাচারের ব্যারোমিটার চালায় পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, জলসিড়ি, রূপসা, মধুমতি সহ বিচিত্র নামের ভবনের সেলে কর্মরত সেবক, রাইটার, ইনচার্জ নামক নিপীড়নকারী মেকানিজম।

কারাগারের বন্দিরা ১৫ দিনে ১০/২০ মিনিটের জন্য একবার তাদের আইনজীবী কিংবা পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করতে পারেন যা খুবই অপ্রতুল। ৭ দিনে একদিন ১০ মিনিটের জন্য ১০ টাকার বিনিময়ে মোবাইল ফোনে কথা বলতে পারেন। টিভি রেডিওর বালাই নাই। মোবাইল ফোন বেআইনী। এছাড়া, আছে ৫০/১০০ টাকার টাওয়ার কল, সিসি কল এর নামে প্রতারনার আরেকটি ব্যবস্থাপনা আছে। ১০০/২০০/৫০ টাকার বিনিময়ে মেঘনা, পদ্মা, মধুমতির গেইট থেকে বের হবার সুযোগ থাকে। টাকা ছাড়া জেলখানায় কোন কাজই হয় না। ৫০ টাকায় এক কাপ কফি, সব জিনিস ডবল দাম যুবসমাজ ধ্বংস হচ্ছে কারাগারে এসে। ৩০/৪০ হাজার কারাবন্দি যেখানে থাকে সেখানে মাঝে মধ্যে বন্দিদের নিজেদের মধ্যেও টুকটাক ঝগড়াঝাটি লেগে থাকে, ভুল বুঝাবুঝি হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু, এসবের মিমাংসাও অদ্ভুত উপায়ে করা হয়। কারারক্ষী, জমাদার, সুবেদাররা কেইস টেবিলে ডেকে এনে নীল ডাউন করে বসায়। তারপর অবাক বিচার। বাদী বিবাদী উভয়কে বেত্রাগাতসহ ৩০০০/৫০০০/১০০০০ টাকা জরিমানা দিতে হয়। কেরানীগঞ্জ থেকে কাশিমপুর কারাগারে বদলী ঠেকাতে জনপ্রতি ৬০০০/- টাকা ঘুষ লাগে। কারাবন্দিদের সাক্ষাতে এলে যিনি বন্দীর কাছে বার্তাদেন তার ফি ১০০/২০০ টাকা। কোর্টের তারিখ আগের রাতে জানালে তাকেও ১০০ টাকা বখশিস দিতে হয়। বখশিস না দিলে তাকে চালানের বন্দীদের সাথে রাত কাটাতে হয়। ওকালতনামা, পিসির খাবার দাবার ইত্যাদির জন্যও বিডিআর হাজতীরা বখশিস চান। দৈনিক পত্রিকা ৫০/- টাকা, মাসিক চার্জ ৫০০/- টাকা তাও অনেক নিউজ কেটে রাখা হয়।

কারাগারে অসুস্থ বন্দীদের জন্য চরম অমানবিক আচরন চলে। কোন বন্দীর দুটো হাতই নাই অথচ বোমা হামলায় আটক। প্রস্রাব করতে পারেনা, ক্যাথেডার পরে মূত্রনালী আটকে থাকা ইউরোলজীর রোগীরা নিদারুন কষ্টে থাকে। আমদানী কক্ষ থেকে ৪০/৫০ জনকে ডান্ডাবেরী, হাতকরা দিয়েও ফিংগার প্রিন্টের জন্য আনা নেওয়া চলে।

মোটের উপর বাংলাদেশের কারাগারগুলো যেন এক একটা হাবিয়া দোজখের বিকল্প মাত্র। সরকারের বড় বড় কর্তারা ভিজিট করলেও সারা দিন বন্দিদেরকে সেলে আটকে রাখা হয়। রাতের বেলা কারাগারের ওয়ার্ডে তালা ঝুলে থাকে। এসময় কোনরূপ দুর্ঘটনা/জীবন হানি ঘটলেও জেল প্রশাসন তা’ কৌশলে চেপে যায়। ঢাকা মেডিকেলে নিবার আগেই কারাবন্দীর জীবন প্রদীপ নিভে গেলেও ডেথ সার্টিফিকেট মিলেনা। অনাদর, অবহেলা, অত্যাচার, নির্যাতন বাংলাদেশের রাজবন্দিদের নিত্য সঙ্গী। মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে পদে পদে।

তাই, রাখিব নিরাপদ, দেখাবো আলোর পথ কারাগারের দরজায় এধরনের শুভ বার্তা লেখা থাকলেও বাস্তবে তার কোনই প্রতিফলন নাই। অত্যাচারী গণবিরোধী, ভোট ডাকাত, ডামী সরকারের পক্ষে এ ধরনের কারাগারই স্বাভাবিক। কারা সংস্কার ছাড়া বাংলাদেশের কারাবন্দিরা নিরাপদ হবে না। ভবিষ্যতে দেশ প্রেমিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে বাংলাদেশের কারাগারগুলোতে অবশ্যই রাখিব নিরাপদ দেখাবো আলোর পথ এই কথাটি সত্য প্রমানিত হবে। নতুবা সবই প্রতারনা মাত্র।

লেখক: মুক্তিযোদ্ধা মনিরুজ্জামান ॥ কারাবন্দি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার অভিজ্ঞতার কথা কেরানীগঞ্জ কারাগার থেকে ডায়েরীভুক্ত করে এই লেখাটি দেশবাসীর জ্ঞাতার্থে উৎসর্গ করেছেন।