ঢাকা ০৫:২৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই : মির্জা ফখরুল

নওরোজ রাজনীতি ডেস্ক
  • Update Time : ০৩:৫৪:৫৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
  • / ৩৬ Time View

সারা দেশে ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, সারা দেশে এমন একটা পরিবেশ-পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে মানুষ সব সময় একটা ভয়ে থাকে, ত্রাসে থাকে। ভয় ও ভয় প্রবণতা তৈরি করা হয়েছে। কখন, কাকে, কীভাবে ধরে নিয়ে যায়, কোনো নিশ্চয়তা নেই।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ঈদ উপহার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে গুম, খুন ও পঙ্গুত্বের শিকার পরিবারের মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দেওয়া ঈদ উপহার বিতরণ উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ‘আমরা বিএনপির পরিবার’।

এ সময় তিনি আরও বলেন, একটা কথা কবে বলেছে, সেটার জন্য ১০ বছর পরেও মামলা হয়। মোবাইল এখন ব্যবহার করেন সবাই, ফেসবুকে মনের কথা লিখলে; যদি তাদের বিরুদ্ধে কেউ কোনো কিছু দেয়, সে যেখানে থাকুক, তাকে তুলে নিয়ে আসে।

নিজের বক্তব্যে কারাবাসের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, একটি ছেলের সিরাজগঞ্জে বাড়ি, ফেসবুকের একটি পোস্টে লাইক দেওয়ার কারণে র‌্যাব তাকে তুলে নিয়ে এসে প্রায় ১৪ দিন নির্যাতন করে আরেকটি মিথ্যা মামলায় জেলে পাঠিয়েছে। সে এখনো জামিন পাচ্ছে না। এটা নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিএনপি নেতাকর্মীদের পরিবারের সদস্যদেরও রেহাই দেওয়া হয়নি মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন,ছাত্রদল-যুবদলের ছেলেদের নির্মম নির্যাতন করা হয়েছে। কারও পায়ের নখ তুলে নেওয়া হয়েছে, কারও পা মুচড়ে ভেঙে ফেলা হয়েছে, কারও হাত ভেঙে দিয়েছে এবং অবিশ্বাস্যভাবে সত্য যে, তারা কোনো চিকিৎসা পায়নি। তাদের সেইভাবেই জেলে ফেলে দিয়ে গেছে, সেখানেও তাদের কোনো চিকিৎসা হয়নি।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন সময় গুম-খুন হওয়া নেতাকর্মীদের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন,এদেরকে পরাজিত করতে না পারলে আমরা তো মুক্তি পাচ্ছি না। এই নির্যাতন বন্ধ হচ্ছে না। এদের থেকে মুক্তি পেতে হলে পুরো জাতিকে সমন্বিত করতে হবে। তারপর বিদ্রোহ, প্রতিরোধ সৃষ্টি করে এদেরকে পরাজিত করতে হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, এটা ভয়াবহ, একটা জাতি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এর থেকে মুক্তি পাওয়ার পথ কি? সেই মুক্তি পাওয়ার জন্য আমরা সংগ্রাম করছি। একটি গণতান্ত্রিক দলের পক্ষে যতটুকু লড়াই সংগ্রাম করা যায়, তার থেকেও বেশি সংগ্রাম আমরা করছি। সুতরাং এখন যেটা প্রয়োজন, জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করা।

এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মুক্তি পাওয়ার জন্য আমরা সংগ্রাম করছি। একটি গণতান্ত্রিক দলের পক্ষে যতটুকু সম্ভব নয় তার চেয়েও বেশি আমরা সংগ্রাম করছি, লড়াই করছি। সব সময় মনে রাখতে হবে যে, এ আন্দোলন গণতান্ত্রিক আন্দোলন, ভোটের আন্দোলন, নিজের খাওয়া-পরার আন্দোলন, এটি ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন এবং সেই আন্দোলনে আমরা বিজয়ী হবো।

তিনি বলেন, জনগণ চায়, এটা কোনো দল-মত-বর্ণ নয়, বাংলাদেশের মানুষের, সেই ‘৭১ সালের যুদ্ধের সময় যেমন ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল, ‘৬৯ এবং ‘৯০ সালে যেভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল, ঠিক একইভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। প্রতিরোধ সৃষ্টি করতে হবে। কারণ এদের থেকে মুক্তি পাওয়ার একটাই পথ, এদেরকে পরাজিত করতে হবে।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, গতকাল (বুধবার) খালেদা জিয়া খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। ডাক্তাররা উপস্থিত ছিলেন। মনে হয়েছিল হয়তো আর সময় পাওয়া যাবে না। আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া। সেই অবস্থা ফিরে আনতে সক্ষম হয়েছে।

ফখরুল ইসলাম বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে আটক করে বিভিন্ন মামলা দিয়ে নির্যাতন করা হয়। এখনও তিনি নির্বাসিত জীবন যাপন করছেন।

এসময় মায়ের ডাক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতাকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

গুম, খুন ও নিপীড়ন নির্যাতনের স্বীকার হওয়া পরিবারের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এ অবস্থা সারাদেশের, শুধু বিএনপির নয়। পুরো বাংলাদশের মানুষের একই অবস্থা। পুরো দেশের মানুষ ভয়ে আতঙ্কে থাকে কখন কাকে কীভাবে তুলে নিয়ে যায়। কোনো নিশ্চয়তা নেই।

সামনে উপস্থিত শিশু -তরুণদের উদ্দেশ্য করে বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘তোমরা আশা হারাবে না। কখনো ভাববে না সব কিছু শেষ হয়ে গেছে। কোন হতাশা যেন কাজ না করে। মনে রাখতে হবে গণতন্ত্রের আন্দোলন ন্যায় সঙ্গত আন্দোলন। সেই আন্দোলনে আমরা বিজয়ী হবো।’

আমরা বিএনপি পরিবার সেলের আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুম্মনের সভাপতিত্বে এসময় বক্তব্য দেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর হেলাল, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্না, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির প্রমুখ।

Please Share This Post in Your Social Media

কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই : মির্জা ফখরুল

Update Time : ০৩:৫৪:৫৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

সারা দেশে ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, সারা দেশে এমন একটা পরিবেশ-পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে মানুষ সব সময় একটা ভয়ে থাকে, ত্রাসে থাকে। ভয় ও ভয় প্রবণতা তৈরি করা হয়েছে। কখন, কাকে, কীভাবে ধরে নিয়ে যায়, কোনো নিশ্চয়তা নেই।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ঈদ উপহার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে গুম, খুন ও পঙ্গুত্বের শিকার পরিবারের মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দেওয়া ঈদ উপহার বিতরণ উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ‘আমরা বিএনপির পরিবার’।

এ সময় তিনি আরও বলেন, একটা কথা কবে বলেছে, সেটার জন্য ১০ বছর পরেও মামলা হয়। মোবাইল এখন ব্যবহার করেন সবাই, ফেসবুকে মনের কথা লিখলে; যদি তাদের বিরুদ্ধে কেউ কোনো কিছু দেয়, সে যেখানে থাকুক, তাকে তুলে নিয়ে আসে।

নিজের বক্তব্যে কারাবাসের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, একটি ছেলের সিরাজগঞ্জে বাড়ি, ফেসবুকের একটি পোস্টে লাইক দেওয়ার কারণে র‌্যাব তাকে তুলে নিয়ে এসে প্রায় ১৪ দিন নির্যাতন করে আরেকটি মিথ্যা মামলায় জেলে পাঠিয়েছে। সে এখনো জামিন পাচ্ছে না। এটা নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিএনপি নেতাকর্মীদের পরিবারের সদস্যদেরও রেহাই দেওয়া হয়নি মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন,ছাত্রদল-যুবদলের ছেলেদের নির্মম নির্যাতন করা হয়েছে। কারও পায়ের নখ তুলে নেওয়া হয়েছে, কারও পা মুচড়ে ভেঙে ফেলা হয়েছে, কারও হাত ভেঙে দিয়েছে এবং অবিশ্বাস্যভাবে সত্য যে, তারা কোনো চিকিৎসা পায়নি। তাদের সেইভাবেই জেলে ফেলে দিয়ে গেছে, সেখানেও তাদের কোনো চিকিৎসা হয়নি।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন সময় গুম-খুন হওয়া নেতাকর্মীদের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন,এদেরকে পরাজিত করতে না পারলে আমরা তো মুক্তি পাচ্ছি না। এই নির্যাতন বন্ধ হচ্ছে না। এদের থেকে মুক্তি পেতে হলে পুরো জাতিকে সমন্বিত করতে হবে। তারপর বিদ্রোহ, প্রতিরোধ সৃষ্টি করে এদেরকে পরাজিত করতে হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, এটা ভয়াবহ, একটা জাতি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এর থেকে মুক্তি পাওয়ার পথ কি? সেই মুক্তি পাওয়ার জন্য আমরা সংগ্রাম করছি। একটি গণতান্ত্রিক দলের পক্ষে যতটুকু লড়াই সংগ্রাম করা যায়, তার থেকেও বেশি সংগ্রাম আমরা করছি। সুতরাং এখন যেটা প্রয়োজন, জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করা।

এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মুক্তি পাওয়ার জন্য আমরা সংগ্রাম করছি। একটি গণতান্ত্রিক দলের পক্ষে যতটুকু সম্ভব নয় তার চেয়েও বেশি আমরা সংগ্রাম করছি, লড়াই করছি। সব সময় মনে রাখতে হবে যে, এ আন্দোলন গণতান্ত্রিক আন্দোলন, ভোটের আন্দোলন, নিজের খাওয়া-পরার আন্দোলন, এটি ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন এবং সেই আন্দোলনে আমরা বিজয়ী হবো।

তিনি বলেন, জনগণ চায়, এটা কোনো দল-মত-বর্ণ নয়, বাংলাদেশের মানুষের, সেই ‘৭১ সালের যুদ্ধের সময় যেমন ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল, ‘৬৯ এবং ‘৯০ সালে যেভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল, ঠিক একইভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। প্রতিরোধ সৃষ্টি করতে হবে। কারণ এদের থেকে মুক্তি পাওয়ার একটাই পথ, এদেরকে পরাজিত করতে হবে।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, গতকাল (বুধবার) খালেদা জিয়া খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। ডাক্তাররা উপস্থিত ছিলেন। মনে হয়েছিল হয়তো আর সময় পাওয়া যাবে না। আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া। সেই অবস্থা ফিরে আনতে সক্ষম হয়েছে।

ফখরুল ইসলাম বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে আটক করে বিভিন্ন মামলা দিয়ে নির্যাতন করা হয়। এখনও তিনি নির্বাসিত জীবন যাপন করছেন।

এসময় মায়ের ডাক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতাকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

গুম, খুন ও নিপীড়ন নির্যাতনের স্বীকার হওয়া পরিবারের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এ অবস্থা সারাদেশের, শুধু বিএনপির নয়। পুরো বাংলাদশের মানুষের একই অবস্থা। পুরো দেশের মানুষ ভয়ে আতঙ্কে থাকে কখন কাকে কীভাবে তুলে নিয়ে যায়। কোনো নিশ্চয়তা নেই।

সামনে উপস্থিত শিশু -তরুণদের উদ্দেশ্য করে বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘তোমরা আশা হারাবে না। কখনো ভাববে না সব কিছু শেষ হয়ে গেছে। কোন হতাশা যেন কাজ না করে। মনে রাখতে হবে গণতন্ত্রের আন্দোলন ন্যায় সঙ্গত আন্দোলন। সেই আন্দোলনে আমরা বিজয়ী হবো।’

আমরা বিএনপি পরিবার সেলের আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুম্মনের সভাপতিত্বে এসময় বক্তব্য দেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর হেলাল, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্না, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির প্রমুখ।