দেশে প্রথমবার ব্রেন ডেড রোগী থেকে কিডনি প্রতিস্থাপন
- Update Time : ০২:৫০:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৩
- / ১২৯ Time View
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) দেশে প্রথম সফল ক্যাডাভেরিক বা ব্রেন ডেড রোগীর অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
২০ বছর বয়সী ব্রেন ডেড রোগী সাহারা ইসলামের দেহ থেকে দুটি কিডনি দুজন কিডনি-বিকল রোগীর দেহে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়। একই সঙ্গে সাহারা ইসলাম দুটি কর্ণিয়াও দান করে গেছেন।
বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) বিএসএমএমইউয়ের জনসংযোগ শাখা থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এ নিয়ে বিকেল ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মিল্টন হলে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বুধবার রাত সাড়ে ১১টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেবিন ব্লকের কিডনি অপারেশন থিয়েটারে অপারেশন করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান দুলালের নেতৃত্বে দুটি চিকিৎসক দল।
এ দুটি কিডনির একটি মিরপুরের বাসিন্দা ৩৪ বছর বয়সী শামীমা আক্তারের দেহে এবং অন্যটি কিডনি ফাউন্ডেশনে অন্য এক রোগীর দেহে প্রতিস্থাপন করা হয়।
অঙ্গদাতা সাহারা ইসলাম ১০ মাস বয়সে দুরারোগ্য টিউমার স্কেলেলিস রোগে আক্রান্ত হন। এ রোগ নিয়ে দীর্ঘদিন লড়াই করেন। এ নিয়েই তিনি এসএসসি, এইচএসসি পাস করেন। এরপর ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট আল্টার্নেটিভে (ইউডা) ফাইন আর্টসে ভর্তি হন। সাহারা ইসলাম ফাইন আর্টসের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
অপারেশনে সহযোগিতা করেন ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. সাইফুল হোসেন দিপু, সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফারুক হোসেন, সহকারী অধ্যাপক ডা. কার্তিক চন্দ্র ঘোষ, অ্যানেসথেসিয়া অ্যানালজেসিয়া অ্যান্ড ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. দেবাশিস বণিক, অধ্যাপক ডা. দেব্রত বণিক, সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল হান্নান, ডা. কামরুল হাসান, ডা. মো. আশরাফুজ্জামান সজিব, ডা. দিলীপ, ডা. মোমিনুল হক।
জানা গেছে, ক্লিনিক্যালি ডেড বা ব্রেইন ডেড রোগীদের থেকে সাধারণত কিডনি প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়ে থাকে। ১৯৫৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে, এরপর যুক্তরাজ্য থেকে শুরু করে পাশের দেশ ভারত ও শ্রীলঙ্কায় ব্রেইন ডেথ রোগীদের থেকে কিডনি নিয়ে প্রতিস্থাপন করা হলেও বাংলাদেশে আগে কখনো তা করা হয়নি। নতুন এই প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশে অনেক কিডনি রোগীর জীবন বাঁচানো সম্ভব বলে মনে করেন চিকিৎসকরা।
এ বিষয়ে অধ্যাপক হাবিবুর রহমান বলেন, বিএসএমএমইউয়ে ২০ বছর বযসী সারা নামের এক জেনেটিক ডিজিজে আক্রান্ত রোগীর একটি সার্জারি হয়। কিন্তু তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকলে তাকে আইসিইউতে রাখা হয়। আমরা যখন বুঝতে পারি সে ব্রেন ডেথের দিকে যাচ্ছে তখন তার মাকে আমরা কাউন্সিলিং করি। তার স্কুল শিক্ষক মা ব্রেন ডেড সারার দুটি কিডনি ও দুটি কর্ণিয়া ট্রান্সপ্লান্টের অনুমতি দেন। আমরা কিডনি দুটি ট্রান্সপ্ল্যান্ট করলেও কর্ণিয়া দুটি এখনো সংরক্ষিত আছে।
এর আগে ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্ট প্রসঙ্গে বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, একজন ব্রেইন ডেড রোগী থেকে আট জনের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব। ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্ট অন্যান্য ট্রান্সপ্লান্ট থেকে সহজ। একজন ব্রেইন ডেড রোগীর দুটি কিডনি দুই জনকে, একটি লিভার একজনকে, দুটি ফুসফুস দুই জনকে, হৃদযন্ত্র একজনকে, অন্ত্র একজনকে, অগ্ন্যাশয় একজনকে দান করে মোট আট জনের জীবন বাঁচানো যায়।
উপাচার্য বলেন, ক্যাডাভেরিক একটি মহৎ কার্যক্রম। এ কার্যক্রমকে সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করতে হবে। এ কার্যক্রম সফল করতে রোগীর পরিবারের সদস্যদের যেমন সহায়তা প্রয়োজন, তেমনি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দানের উৎসাহ দেওয়ার ক্ষেত্রে ধর্মীয় নেতাদেরও এগিয়ে আসতে হবে।
ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্টের কাজে সবার সহযোগিতা কামনা করি। বিশেষ করে গণমাধ্যমের ভূমিকা এখানে অনেক বেশি। গণমাধ্যম যদি ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্টের গুরুত্ব প্রচার করে তাহলে আমাদের কাজ সহজ হবে। জনগণও এতে উপকৃত হবে। আমরা গণমাধ্যমের কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করতে চাই।
তিনি আরও বলেন, ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্ট আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। আমরা প্রতি মাসে এক এক ইনস্টিটিউটে আলাদা করে ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্ট নিয়ে আলোচনা সভা করার আহ্বান করছি। এর ফলে আমরা কেন ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্ট করব, কাদের কাছে করব, ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্টের গুরুত্ব সবাইকে বোঝাতে পারব।
এদিকে সকাল ৮টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে প্রয়াত সাহারা ইসলামের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।