৭ বছর পর চাঞ্চল্যকর সুবর্ণা গণধর্ষণ ও হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটন

- Update Time : ০৫:৩৪:০৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২২ এপ্রিল ২০২৪
- / ১৮৭ Time View
দীর্ঘ ৭ বছর পর বহুল আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর সুবর্ণা (০৮) গণধর্ষণসহ হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করল পিবিআই।
সোমবার (২২ এপ্রিল) দুপুরে সিরাজগঞ্জ পিবিআই কার্যালয়ে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সিরাজগঞ্জ পিবিআই পুলিশ সুপার রেজাউল করিম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
আটজন যুবক ও কিশোর মিলে পালাক্রমে ধর্ষণের পর গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করা হয় শিশুকে। পিবিআই এর তদন্তে এটি উদঘাটন হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতাররা হলেন- উপজেলার দত্তকান্দি গ্রামের আব্দুল হকের ছেলে সাব্বির হোসেন (২০), আরফান মেম্বারের ছেলে শাকিব খান (২১) ও বছির মেম্বারের ছেলে মিলন পাশা (২৭)। এদের মধ্যে সাব্বির ও সাকিব আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
জানা যায়, গত ইং-২৬/০৩/২০১৭ তারিখ বিকাল অনুমান ০৫:৩০ ঘটিকার সময় ভিকটিম সূবর্ণা (০৮), পিতা-মোঃ শুকুর আলী, সাং- দত্তকান্দি, থানা-চৌহালী, জেলা-সিরাজগঞ্জ মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিতব্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখার জন্য ভিকটিমের ফুফুর বাড়ীর পাশে দত্তকান্দি হাই স্কুলে যায়। অনুষ্ঠান দেখে ভিকটিম বাড়ীতে না আসলে ভিকটিমের মা অর্থাৎ বাদীর স্ত্রী ধারনা করেন ভিকটিম স্কুলের পাশে তার ফুফুর বাড়ীতে আছে। তাই তারা ভিকটিমকে খোঁজাখুজি করেন নাই। পরের দিন ২৭/০৩/২০১৭ তারিখ সকাল অনুমান ০৮.৩০ ঘটিকার সময় বাদীর স্ত্রী সংবাদ পায় যে, মধ্যশিমুলিয়া চরের মাঠের মধ্যে জনৈক মোঃ বুলবুল এর ফসলী জমিতে ভিকটিম সুবর্ণা মৃত অবস্থায় পড়ে আছে। তৎক্ষনিক বাদীর স্ত্রী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ভিকটিমের মৃতদেহ সনাক্ত করেন। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন চৌহালী থানায় সংবাদ দিলে খানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মৃতদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে মৃতদেহের ময়না তদন্তের ব্যবস্থা করেন।
এ সংক্রান্তে ভিকটিমের পিতা মোঃ শুকুর আলী বাদী হয়ে চৌহালী খানায় নিয়মিত মামলা দায়ের করেন। যাহা চৌহালী থানার মামলা নং-০৪ তাং-২৭/০৩/২০১৭ইং, ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড। জিআর-১০/২০১৭ (চৌহালী)।
চৌহালী খানা কর্তৃক মামলাটির চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করলে বাদী বিজ্ঞ আদালতে নারাজি আবেদন করেন। বাদীর নারাজি আবেদনের প্রেক্ষিতে বিজ্ঞ আদালত মামলাটি পিবিআই, সিরাজগঞ্জ জেলাকে তদন্তের আদেশ দেন। বিজ্ঞ আদালতের আদেশ প্রাপ্ত হয়ে গত ইং-০৪/১২/২০২০ তারিখ এসআই (নিঃ) মোঃ আশিকুর রহমানকে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। মামলাটির তদন্তভার প্রাপ্ত হয়ে এসআই (নিঃ) মোঃ আশিকুর রহমান তদন্ত শুরু করেন।
ভিকটিমের সুরতহাল প্রতিবেদন ও ময়না তদন্ত রিপোর্ট পর্যালোচানায় দেখা যায় ভিকটিম সূবর্ণাকে শ্বাস রোধ করে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়াও ভিকটিমের যৌনাঙ্গ হতে কালো রক্ত বের হয়েছে। আলামতের ডিএনএ পরীক্ষায় ভিকটিমের পড়নের পোষাকে বীর্যের উপস্থিতি পাওয়া যায়।
মামলাটি তদন্তকালে পিবিআই, সিরাজগঞ্জ টিম সোর্স নিয়োগ করাসহ তথ্য প্রযুক্তি এবং গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে গত ইং-১৯/০৪/২০২৪ তারিখ সন্দিগ্ধভাবে ভিকটিমের ফুফাতো ভাই আসামী ১। মোঃ ছাব্বির হোসেন (২০), পিতা-মোঃ আঃ হক, মাতা-ফুলমালা, সাং-দত্তকান্দি, থানা-চৌহালী, জেলা-সিরাজগঞ্জকে ঢাকাস্থ শ্যামলী হতে গ্রেফতারপূর্বক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামীর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে একই তারিখ আসামী ২। মোঃ শাকিব খান (২১), পিতা-মোঃ আরফান মেম্বার, মাতা-মোছাঃ সীমা খাতুন, সাং-দত্তকান্দি, থানা-চৌহালী, জেলা-সিরাজগঞ্জকে দত্তকান্দি গ্রামস্থ সোলের বাজার হতে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে, তাদের প্রদত্ত ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারার জবানবন্দি পর্যালোচনায় এবং সার্বিক তদন্তে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয় এবং আরো ০৬ (ছয়) জনসহ সর্বমোট ০৮ (আট) জন আসামীরা গত ইং- ২৬/০৩/২০১৭ তারিখ মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে দত্তকান্দি হাই স্কুল মাঠে অনুষ্ঠিতব্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখতে যায়। সেখানে দত্তকান্দি গ্রামের বশির মেম্বারের ছেলে মোঃ মিলন পাশা সহ অন্যান্য আসামীরা গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ ছাব্বির হোসেন ও ভিকটিম সূবর্ণা (০৮) কে খেলতে দেখে। তখন আসামীরা ভিকটিমকে ধর্ষণ করার পরিকল্পনা করে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী সকল আসামীরা ছাব্বিরকে তার মামাতো বোন অর্থাৎ ভিকটিম সূবর্ণাকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যেতে বলে। গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ ছাব্বির হোসেন ও মোঃ শাকিব খান মিলে ভিকটিমকে এশার নামাজের পরে সুকৌশলে ঘটনাস্থলে অর্থাৎ মধ্যশিমুলিয়া চরের মধ্যে জনৈক মোঃ বুলবুল এর ফসলী জমিতে নিয়ে যায়। ঘটনাস্থলে পূর্ব হতে অপর ০৬ (ছয়) জন আসামীরা অবস্থান করছিল। ভিকটিমকে ঘটনাস্থলে নিয়ে যাওয়ার পরে সকল আসামীগণ ভিকটিমকে ধর্ষণ করতে চায় কিন্তু ভিকটিম রাজি না হলে কয়েকজন মিলে ভিকটিম সূবর্ণার হাত ও পা ধরে থাকে এবং ভিকটিমের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক পালাক্রমে ধর্ষণ করতে থাকে। ধর্ষণের ফলে ভিকটিম নিস্তেজ হয়ে যায় এবং ভিকটিমের যৌনাঙ্গ দিয়ে রক্তক্ষরণ হতে থাকে। তখন ভিকটিম কাঁদতে কাঁদতে বারবার বলতে থাকে সবাইকে ঘটনার কথা বলে দিবে। তখন সকল আসামীরা চিন্তা করে ভিকটিম যদি ঘটনার কথা সবাইকে বলে দেয় তাহলে তারা বিপদে পড়বে। তাই আসামীরা ভিকটিমকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মোতাবেক সকল আসামীরা ভিকটিমের পড়নের ওড়না দিয়ে ভিকটিমের গলায় প্যাঁচ দিয়ে শ্বাস রোধ করে ভিকটিম সূবর্ণাকে হত্যা করে এবং ভিকটিমের শরীরে মাটি ছিটিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়