ঢাকা ১১:৫৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ২ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

১৮ ঘণ্টা পর নিজে নিজেই নিভলো পোশাক কারখানার আগুন

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
  • Update Time : ০৮:০৪:১৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫
  • / ৯৯ Time View

চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড)-এর একটি পোশাক ও মেডিকেল ইকুইপমেন্ট তৈরির কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুরো ভবনটি ভস্মীভূত হয়েছে। টানা ১৮ ঘণ্টা জ্বলার পর শুক্রবার সকালে আগুন নিজে নিজেই নিভে যায়। ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি ইউনিটসহ সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর বিশেষায়িত টিমের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি।

বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) দুপুরে চট্টগ্রাম ইপিজেডের ৫ নম্বর সড়কে অবস্থিত ‘অ্যাডামস ক্যাপ অ্যান্ড টেক্সটাইল লিমিটেড’ নামের একটি টাওয়েল ও মেডিকেল ইকুইপমেন্ট তৈরির কারখানার অষ্টম তলার গুদাম থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। কয়েক মিনিটের মধ্যেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে পুরো ভবনে।

দীর্ঘ ১৮ ঘণ্টা জ্বলতে থাকা আগুনে ভবনের অষ্টম তলার ছাদ ধসে পড়ে এবং পাঁচ তলার ওপরে বেশ কয়েকটি ফ্লোরের দেয়াল ফেটে যায়। আগুন নেভার পর ভবনটিকে সম্পূর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।

ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশনস) লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল ইসলাম বলেন, ‘ভবনে থাকা ডাক্তারদের এপ্রোন, ক্যাপ, মেডিকেল গাউনসহ নানা ধরনের কেমিকেলই আগুনের ভয়াবহতা বাড়িয়ে দেয়। আগুনের রং নীলচে হওয়ায় তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আমরা আগুনকে এক ভবনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে পেরেছি, এটিই বড় সাফল্য।’

তবে ঘটনাটি ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা অভিযোগ করেছেন— আধুনিক সরঞ্জাম থাকা সত্ত্বেও এত দীর্ঘ সময় আগুন জ্বলতে থাকা ফায়ার সার্ভিসের প্রস্তুতির ঘাটতিকে স্পষ্ট করেছে।

ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘অনেকে জানতে চেয়েছেন কেন কেমিকেল বা ফোম ব্যবহার করা হয়নি। কিন্তু মিশ্র দাহ্য পদার্থ থাকায় এতে আগুন আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। হেলিকপ্টার ব্যবহারের বিষয়েও ঝুঁকি ছিল, কারণ বাতাসের চাপ আগুন ছড়িয়ে দিতে পারত।’

অন্যদিকে, ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক মো. আব্দুস সোবহান বলেন, ‘বেপজার সব প্রতিষ্ঠানই নিয়ম মেনে পরিচালিত হয়। তবুও কোনও গাফিলতি বা ত্রুটি ছিল কিনা তা যাচাইয়ে তদন্ত চলছে।’

বিজিএমইএর পরিচালক এম. ডি. এম. মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘ইপিজেডের মতো একটি সুরক্ষিত এলাকায় এমন অগ্নিকাণ্ড আন্তর্জাতিক বাজারে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করবে। যদিও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি, তবুও বিদেশি ক্রেতাদের মনে আতঙ্ক তৈরি হবে।’

নগরবিদ স্থপতি আশিক ইমরান বলেন, ‘১৮ ঘণ্টা ধরে একটি ভবন জ্বলে ভস্মীভূত হওয়া রাষ্ট্রীয় প্রস্তুতির সীমাবদ্ধতাকেই প্রকাশ করে। সরকারকে দ্রুত ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক সিভিল ডিফেন্স অর্গানাইজেশনের সহযোগিতা নেওয়া জরুরি।’

ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিস ও বেপজার পক্ষ থেকে দু’টি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বেপজার পাঁচ সদস্যের কমিটি সাত দিনের মধ্যে এবং ফায়ার সার্ভিসের কমিটি ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে।

Please Share This Post in Your Social Media

১৮ ঘণ্টা পর নিজে নিজেই নিভলো পোশাক কারখানার আগুন

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
Update Time : ০৮:০৪:১৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫

চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড)-এর একটি পোশাক ও মেডিকেল ইকুইপমেন্ট তৈরির কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুরো ভবনটি ভস্মীভূত হয়েছে। টানা ১৮ ঘণ্টা জ্বলার পর শুক্রবার সকালে আগুন নিজে নিজেই নিভে যায়। ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি ইউনিটসহ সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর বিশেষায়িত টিমের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি।

বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) দুপুরে চট্টগ্রাম ইপিজেডের ৫ নম্বর সড়কে অবস্থিত ‘অ্যাডামস ক্যাপ অ্যান্ড টেক্সটাইল লিমিটেড’ নামের একটি টাওয়েল ও মেডিকেল ইকুইপমেন্ট তৈরির কারখানার অষ্টম তলার গুদাম থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। কয়েক মিনিটের মধ্যেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে পুরো ভবনে।

দীর্ঘ ১৮ ঘণ্টা জ্বলতে থাকা আগুনে ভবনের অষ্টম তলার ছাদ ধসে পড়ে এবং পাঁচ তলার ওপরে বেশ কয়েকটি ফ্লোরের দেয়াল ফেটে যায়। আগুন নেভার পর ভবনটিকে সম্পূর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।

ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশনস) লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল ইসলাম বলেন, ‘ভবনে থাকা ডাক্তারদের এপ্রোন, ক্যাপ, মেডিকেল গাউনসহ নানা ধরনের কেমিকেলই আগুনের ভয়াবহতা বাড়িয়ে দেয়। আগুনের রং নীলচে হওয়ায় তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আমরা আগুনকে এক ভবনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে পেরেছি, এটিই বড় সাফল্য।’

তবে ঘটনাটি ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা অভিযোগ করেছেন— আধুনিক সরঞ্জাম থাকা সত্ত্বেও এত দীর্ঘ সময় আগুন জ্বলতে থাকা ফায়ার সার্ভিসের প্রস্তুতির ঘাটতিকে স্পষ্ট করেছে।

ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘অনেকে জানতে চেয়েছেন কেন কেমিকেল বা ফোম ব্যবহার করা হয়নি। কিন্তু মিশ্র দাহ্য পদার্থ থাকায় এতে আগুন আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। হেলিকপ্টার ব্যবহারের বিষয়েও ঝুঁকি ছিল, কারণ বাতাসের চাপ আগুন ছড়িয়ে দিতে পারত।’

অন্যদিকে, ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক মো. আব্দুস সোবহান বলেন, ‘বেপজার সব প্রতিষ্ঠানই নিয়ম মেনে পরিচালিত হয়। তবুও কোনও গাফিলতি বা ত্রুটি ছিল কিনা তা যাচাইয়ে তদন্ত চলছে।’

বিজিএমইএর পরিচালক এম. ডি. এম. মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘ইপিজেডের মতো একটি সুরক্ষিত এলাকায় এমন অগ্নিকাণ্ড আন্তর্জাতিক বাজারে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করবে। যদিও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি, তবুও বিদেশি ক্রেতাদের মনে আতঙ্ক তৈরি হবে।’

নগরবিদ স্থপতি আশিক ইমরান বলেন, ‘১৮ ঘণ্টা ধরে একটি ভবন জ্বলে ভস্মীভূত হওয়া রাষ্ট্রীয় প্রস্তুতির সীমাবদ্ধতাকেই প্রকাশ করে। সরকারকে দ্রুত ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক সিভিল ডিফেন্স অর্গানাইজেশনের সহযোগিতা নেওয়া জরুরি।’

ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিস ও বেপজার পক্ষ থেকে দু’টি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বেপজার পাঁচ সদস্যের কমিটি সাত দিনের মধ্যে এবং ফায়ার সার্ভিসের কমিটি ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে।