ঢাকা ০২:১৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষীদাতা সিরু বাঙালির ফাঁসির দাবি উন্নয়ন বৈষম্যের গ্যাঁড়াকলে রংপুর: একনেক থেকে বাদ পড়লো উন্নয়ন প্রকল্প আ’লীগ নেতা তুষার কান্তির ৭দিনের রিমান্ড মঞ্জুর সিলেট ওসমানী মেডিকেলের হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা বাংলাদেশকে দুই বিলিয়ন ডলার দেবে বিশ্বব্যাংক মানহানি মামলায় খালাস পেলেন তারেক রহমান ফের ৫ দিনের রিমান্ডে আনিসুল হক ও সালমান বসুন্ধরা আইডিয়াল স্কুলের প্রধান শিক্ষককে পুনর্বহালে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ চায় শিক্ষার্থীরা এক দফা দাবীতে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট টিভি হাসপাতালের নার্স ও মিডওয়াইফারিরা মেয়াদবিহীন ইন্টারনেট প্যাকেজ চালু করতে বললেন নাহিদ
অপরাধ বিশেষজ্ঞদের অভিমত

স্বয়ং শেখ হাসিনার আঁকা ছকেই একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলা

আবদুল গাফফার মাহমুদ ও শাহ মনওয়ার জাহান
  • Update Time : ০৫:৪৪:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ২৪ Time View

অত্যন্ত সুদূর প্রসারী প্ররিকল্পনার অংশ হিসাবে বিএনপিকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্য নিয়ে স্বয়ং শেখ হাসিনা তার নিজের জনসভায় গ্রেনেড হামলার ছক আঁকেন। উদ্দেশ্য একটাই বেগম খালেদা জিয়া পরবর্তী বিএনপি’র কান্ডারী তারেক রহমান প্রভাবশালী ও নেতৃবৃন্দকে আসামী বানিয়ে মনগড়া রায়ের মাধ্যমে সাজা প্রদান করা। একই সঙ্গে বিএনপি’র সমর্থক হিসাবে পরিচিত উর্ধতন পুলিশ ও সামরিক কর্মকর্তাদেরও আসামী করে এই দুই বাহিনীর মনোবল ভেঙ্গে দেয়া।

অপরাধ বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ ও অভিমত হচ্ছে, আসামীদের নামের তালিকা দেখলেই ঘটনার উদ্দেশ্য সম্পর্কে অনেকটাই আঁচ করা যায়। আসামীর তালিকায় যাদের নাম আছে তারা হচ্ছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক স্বারষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিস চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মুজাহিদ, হানিফ পরিবহনের মালিক মো: হানিফ। পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে তিনজন আইজিপি শহিদুল হক, আশরাফুল হুদা, খোদা বক্স চৌধুরী, ডিআইজি খান সাঈদ হাসান, পুলিশের ডিসি ওবায়দুর রহমান। এনএসআই’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল রেজ্জাকুল হায়দার, ডিজিএফআই’র মহা পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুর রহিম। অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, মামলার তদন্ত বার বার পরিবর্তন করা হলো কেন? শেষে সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফজলুল কবির তদন্ত করে ২২ জনের নামে চার্জশীট দিলেন। বিচারকার্যও শুরু হলো, তা আবার থামিয়ে দিয়ে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাহহার আকন্দকে দিয়ে দ্বিতীয় দফা তদন্ত করানো হলো। তিনি তারেক রহমানসহ ৫২ জনের নামে চার্জশীট দিলেন। এতে যে কোন অপরাধ বিশেষজ্ঞ বলবেন, ‘গ্রেনেড হামলা একটি সাজানো নাটক।’ আর তার দুই দফা প্রতিবেদন সম্পূর্ণ মনগড়া ও ফরমায়েশী। দুই তদন্ত কর্মকর্তা ফজলুল কবির ও কাহহার আকন্দকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই প্রকৃত তথ্য বেরিয়ে আসবে।

অভিজ্ঞমহলের মতে, শেখ হাসিনা অত্যন্ত বর্বর, নিষ্ঠুর ও ভয়ংকর স্বভাবের নারী। নারী স্বভাব স্বাভাবিকভাবেই কোমল হবার কথা। কিন্তু কোমলতার কোনো ছাপ তার মধ্যে নেই । নিজ স্বার্থে তিনি যে কোনো ভয়ংকর কাজ করতে বা করাতে পারেন । এজন্য দলের নেতা-কর্মীদের জীবন নিতেও পিছপা হননা। এমনই ঘটনা দুই হাজার চার সালের একুশে আগস্টের নিষ্ঠুরতম গ্রেনেড হামলা। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বর্বর, ভয়াবহ, হিংস্র ও নিষ্ঠুরতম এই হামলা। এই ঘটনায় প্রাণ নিভে যায় দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাবেক প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ বাইশজনের। আহত হন অনেকে। একুশে আগস্ট ঢাকায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলীয় সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী কে? কার নির্দেশে মুক্তাঞ্চল থেকে সমাবেশস্থল হুট করে দলীয় কার্যালয়ের সামনে স্থানান্তর করা হলো, এই দুই প্রশ্নের স্পষ্ট কোনো জবাব পুলিশ তদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করেনি। তবে কি অজানাই থেকে যাবে মামলা তদন্তের প্রধান দুটি বিষয়। এজন্য কোর্টে দাখিলকৃত পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা। তারা একমত হন, ‘শেখ হাসিনার পরিকল্পনা মাফিকই একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটানো হয়। হামলাকারীদের সুবিধার জন্যই মুক্তাঙ্গন থেকে সমাবেশস্থল স্থানান্তর করা হয়েছিল ।

সমাবেশে গ্রেনেড হামলার কথা কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা জানতেন। সমাবেশ মুক্তাঙ্গনে করার জন্য আওয়ামী লীগ পুলিশ ও সিটি কর্পোরেশনের অনুমতি নেয় । অথচ মুক্তাঙ্গনের সমাবেশ দলীয় কার্যালয়ের সামনে স্থানান্তরের জন্য সিটি কর্পোরেশন এবং পুলিশের কোনো অনুমতি নেয়া হয়নি । মৌখিকভাবেও জানানো হয়নি। তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী এবং সমাবেশস্থলের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ মুক্তাঙ্গনে অবস্থান নিয়েছিল । দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ শুরু হওয়ার পরই পুলিশ জানতে পারে । এরপর মুক্তাঙ্গন থেকে পুলিশ দল আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের আশেপাশে অবস্থান নেয়। কিন্তু সময়ের অভাবে তেমন কোনই ব্যবস্থা নিতে পারেনি পুলিশ ।

গ্রেনেড হামলার আগে আঠারো ও উনিশ আগস্ট হামলাকারীরা আওয়ামী লীগ অফিসের সামনের ও পাশের ভবন রেকি করে বলে পুলিশ তদন্ত রিপোর্টেই উল্লেখ করেছে। হামলাকারীদের কয়েকজন যে আওয়ামী লীগের অফিসেও গিয়েছে সে কথা উল্লেখ করা হয়নি। জানা যায়, শেখ হাসিনার নির্দেশে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি মোঃ হানিফ, এডভোকেট কামরুল ইসলাম, মোফাজ্জেল হোসেন চৌধুরী মায়া, হাজি সেলিম এবং যুবলীগ ও সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি দলীয় কার্যালয়ের সামনে ট্রাকে মঞ্চ তৈরী করেন। দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা কর্মীদেরও দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমবেত হতে নির্দেশ দেন। দলের কয়েকজন নেতা জানিয়েছিলেন মুক্তাঙ্গনে সমাবেশ হলে হামলাকারীরা কোনোই সুবিধা পেতোনা। এলাকায় পুলিশ ব্যাপক নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছিল। কিন্তু কেন হুট করেই সমাবেশস্থল পরিবর্তন করা হলো এই প্রশ্নের জবাব তারা তখন দিতে পারেনি, দলের অনেক নেতার অভিমত, দলের হাইকমান্ড এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার ভয়াবহ পরিণতি একুশ আগস্টের গ্রেনেড হামলা । নিহত হলেন আইভি রহমানসহ অনেকে। আহত হন অনেকেই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা জানান, সমাবেশে গ্রেনেড হামলা হবে এমন কথা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা জানতেন। যাদের মধ্যে ঢাকা মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি মোহাম্মদ হানিফ শেখ হাসিনাকে সতর্ক করেছিলেন। ঘটনার দু তিনদিন আগে সতর্ক বার্তা জানালেও শেখ হাসিনা কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্তি করেননি। হানিফ পুত্র ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন দলের এক সমাবেশে এই তথ্য ফাঁস করেন। এরপর থেকে শেখ হাসিনা হানিফ পরিবারের প্রতি রুষ্ট হন। আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে এই পরিবারটি কোনঠাসা হয়ে পড়ে। গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কয়েক বার বদল করা হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের পর তদন্ত পায় সিআইডি। সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফজলুল কবির তদন্ত শেষে বাইশ জনকে অভিযুক্ত করে দুই হাজার আট সালের জুন মাসে চার্জশিট দাখিল করেন।

এর ভিত্তিতে বিচার কার্য শুরু হয়। দুই হাজার নয় সালে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতাসীন হলে গ্রেনেড হামলার মামলার বিচারকার্য বন্ধ করে বর্ধিত তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়। তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় কয়েক বছর আগে অবসরে যাওয়া সিআইডির বিশেষ সুপার আব্দুল কাহহার আকন্দকে। তিনি বর্ধিত তদন্তের নামে রাজনৈতিক ও ফরমায়েশি তদন্ত শুরু করেন। শেখ হাসিনা যেভাবে চেয়েছেন ঠিক সেভাবেই তদন্ত প্রতিবেদন লেখা হয় ।

বর্ধিত তদন্তকালে আব্দুল কাহার আকন্দ বায়ান্নজনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন । অভিযুক্ত করা হয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যন তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু, তিনজন আইজিপি শহিদুল হক , আশরাফুল হুদা, খোদাবক্স চৌধুরী, এনএসআইর মহাপরিচালক রেজ্জাকুল হায়দার, ডিজিএফআইর মহাপরিচালক আব্দুর রহিম , জামায়েতে ইসলামের সেক্রেটারী জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ , তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব হারিস চৌধুরীকে। মামলাটি উচ্চ আদালতে বিচারাধীন । এই মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা কাহহার আকন্দকে কয়েক দফা পদোন্নতি দিয়ে ডিআইজি করা হয়েছিল । সর্বশেষ গত নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল তাকে কিশোরগঞ্জের একটি আসন থেকে।

Please Share This Post in Your Social Media

অপরাধ বিশেষজ্ঞদের অভিমত

স্বয়ং শেখ হাসিনার আঁকা ছকেই একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলা

আবদুল গাফফার মাহমুদ ও শাহ মনওয়ার জাহান
Update Time : ০৫:৪৪:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

অত্যন্ত সুদূর প্রসারী প্ররিকল্পনার অংশ হিসাবে বিএনপিকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্য নিয়ে স্বয়ং শেখ হাসিনা তার নিজের জনসভায় গ্রেনেড হামলার ছক আঁকেন। উদ্দেশ্য একটাই বেগম খালেদা জিয়া পরবর্তী বিএনপি’র কান্ডারী তারেক রহমান প্রভাবশালী ও নেতৃবৃন্দকে আসামী বানিয়ে মনগড়া রায়ের মাধ্যমে সাজা প্রদান করা। একই সঙ্গে বিএনপি’র সমর্থক হিসাবে পরিচিত উর্ধতন পুলিশ ও সামরিক কর্মকর্তাদেরও আসামী করে এই দুই বাহিনীর মনোবল ভেঙ্গে দেয়া।

অপরাধ বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ ও অভিমত হচ্ছে, আসামীদের নামের তালিকা দেখলেই ঘটনার উদ্দেশ্য সম্পর্কে অনেকটাই আঁচ করা যায়। আসামীর তালিকায় যাদের নাম আছে তারা হচ্ছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক স্বারষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিস চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মুজাহিদ, হানিফ পরিবহনের মালিক মো: হানিফ। পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে তিনজন আইজিপি শহিদুল হক, আশরাফুল হুদা, খোদা বক্স চৌধুরী, ডিআইজি খান সাঈদ হাসান, পুলিশের ডিসি ওবায়দুর রহমান। এনএসআই’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল রেজ্জাকুল হায়দার, ডিজিএফআই’র মহা পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুর রহিম। অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, মামলার তদন্ত বার বার পরিবর্তন করা হলো কেন? শেষে সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফজলুল কবির তদন্ত করে ২২ জনের নামে চার্জশীট দিলেন। বিচারকার্যও শুরু হলো, তা আবার থামিয়ে দিয়ে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাহহার আকন্দকে দিয়ে দ্বিতীয় দফা তদন্ত করানো হলো। তিনি তারেক রহমানসহ ৫২ জনের নামে চার্জশীট দিলেন। এতে যে কোন অপরাধ বিশেষজ্ঞ বলবেন, ‘গ্রেনেড হামলা একটি সাজানো নাটক।’ আর তার দুই দফা প্রতিবেদন সম্পূর্ণ মনগড়া ও ফরমায়েশী। দুই তদন্ত কর্মকর্তা ফজলুল কবির ও কাহহার আকন্দকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই প্রকৃত তথ্য বেরিয়ে আসবে।

অভিজ্ঞমহলের মতে, শেখ হাসিনা অত্যন্ত বর্বর, নিষ্ঠুর ও ভয়ংকর স্বভাবের নারী। নারী স্বভাব স্বাভাবিকভাবেই কোমল হবার কথা। কিন্তু কোমলতার কোনো ছাপ তার মধ্যে নেই । নিজ স্বার্থে তিনি যে কোনো ভয়ংকর কাজ করতে বা করাতে পারেন । এজন্য দলের নেতা-কর্মীদের জীবন নিতেও পিছপা হননা। এমনই ঘটনা দুই হাজার চার সালের একুশে আগস্টের নিষ্ঠুরতম গ্রেনেড হামলা। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বর্বর, ভয়াবহ, হিংস্র ও নিষ্ঠুরতম এই হামলা। এই ঘটনায় প্রাণ নিভে যায় দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাবেক প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ বাইশজনের। আহত হন অনেকে। একুশে আগস্ট ঢাকায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলীয় সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী কে? কার নির্দেশে মুক্তাঞ্চল থেকে সমাবেশস্থল হুট করে দলীয় কার্যালয়ের সামনে স্থানান্তর করা হলো, এই দুই প্রশ্নের স্পষ্ট কোনো জবাব পুলিশ তদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করেনি। তবে কি অজানাই থেকে যাবে মামলা তদন্তের প্রধান দুটি বিষয়। এজন্য কোর্টে দাখিলকৃত পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা। তারা একমত হন, ‘শেখ হাসিনার পরিকল্পনা মাফিকই একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটানো হয়। হামলাকারীদের সুবিধার জন্যই মুক্তাঙ্গন থেকে সমাবেশস্থল স্থানান্তর করা হয়েছিল ।

সমাবেশে গ্রেনেড হামলার কথা কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা জানতেন। সমাবেশ মুক্তাঙ্গনে করার জন্য আওয়ামী লীগ পুলিশ ও সিটি কর্পোরেশনের অনুমতি নেয় । অথচ মুক্তাঙ্গনের সমাবেশ দলীয় কার্যালয়ের সামনে স্থানান্তরের জন্য সিটি কর্পোরেশন এবং পুলিশের কোনো অনুমতি নেয়া হয়নি । মৌখিকভাবেও জানানো হয়নি। তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী এবং সমাবেশস্থলের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ মুক্তাঙ্গনে অবস্থান নিয়েছিল । দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ শুরু হওয়ার পরই পুলিশ জানতে পারে । এরপর মুক্তাঙ্গন থেকে পুলিশ দল আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের আশেপাশে অবস্থান নেয়। কিন্তু সময়ের অভাবে তেমন কোনই ব্যবস্থা নিতে পারেনি পুলিশ ।

গ্রেনেড হামলার আগে আঠারো ও উনিশ আগস্ট হামলাকারীরা আওয়ামী লীগ অফিসের সামনের ও পাশের ভবন রেকি করে বলে পুলিশ তদন্ত রিপোর্টেই উল্লেখ করেছে। হামলাকারীদের কয়েকজন যে আওয়ামী লীগের অফিসেও গিয়েছে সে কথা উল্লেখ করা হয়নি। জানা যায়, শেখ হাসিনার নির্দেশে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি মোঃ হানিফ, এডভোকেট কামরুল ইসলাম, মোফাজ্জেল হোসেন চৌধুরী মায়া, হাজি সেলিম এবং যুবলীগ ও সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি দলীয় কার্যালয়ের সামনে ট্রাকে মঞ্চ তৈরী করেন। দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা কর্মীদেরও দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমবেত হতে নির্দেশ দেন। দলের কয়েকজন নেতা জানিয়েছিলেন মুক্তাঙ্গনে সমাবেশ হলে হামলাকারীরা কোনোই সুবিধা পেতোনা। এলাকায় পুলিশ ব্যাপক নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছিল। কিন্তু কেন হুট করেই সমাবেশস্থল পরিবর্তন করা হলো এই প্রশ্নের জবাব তারা তখন দিতে পারেনি, দলের অনেক নেতার অভিমত, দলের হাইকমান্ড এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার ভয়াবহ পরিণতি একুশ আগস্টের গ্রেনেড হামলা । নিহত হলেন আইভি রহমানসহ অনেকে। আহত হন অনেকেই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা জানান, সমাবেশে গ্রেনেড হামলা হবে এমন কথা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা জানতেন। যাদের মধ্যে ঢাকা মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি মোহাম্মদ হানিফ শেখ হাসিনাকে সতর্ক করেছিলেন। ঘটনার দু তিনদিন আগে সতর্ক বার্তা জানালেও শেখ হাসিনা কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্তি করেননি। হানিফ পুত্র ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন দলের এক সমাবেশে এই তথ্য ফাঁস করেন। এরপর থেকে শেখ হাসিনা হানিফ পরিবারের প্রতি রুষ্ট হন। আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে এই পরিবারটি কোনঠাসা হয়ে পড়ে। গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কয়েক বার বদল করা হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের পর তদন্ত পায় সিআইডি। সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফজলুল কবির তদন্ত শেষে বাইশ জনকে অভিযুক্ত করে দুই হাজার আট সালের জুন মাসে চার্জশিট দাখিল করেন।

এর ভিত্তিতে বিচার কার্য শুরু হয়। দুই হাজার নয় সালে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতাসীন হলে গ্রেনেড হামলার মামলার বিচারকার্য বন্ধ করে বর্ধিত তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়। তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় কয়েক বছর আগে অবসরে যাওয়া সিআইডির বিশেষ সুপার আব্দুল কাহহার আকন্দকে। তিনি বর্ধিত তদন্তের নামে রাজনৈতিক ও ফরমায়েশি তদন্ত শুরু করেন। শেখ হাসিনা যেভাবে চেয়েছেন ঠিক সেভাবেই তদন্ত প্রতিবেদন লেখা হয় ।

বর্ধিত তদন্তকালে আব্দুল কাহার আকন্দ বায়ান্নজনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন । অভিযুক্ত করা হয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যন তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু, তিনজন আইজিপি শহিদুল হক , আশরাফুল হুদা, খোদাবক্স চৌধুরী, এনএসআইর মহাপরিচালক রেজ্জাকুল হায়দার, ডিজিএফআইর মহাপরিচালক আব্দুর রহিম , জামায়েতে ইসলামের সেক্রেটারী জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ , তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব হারিস চৌধুরীকে। মামলাটি উচ্চ আদালতে বিচারাধীন । এই মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা কাহহার আকন্দকে কয়েক দফা পদোন্নতি দিয়ে ডিআইজি করা হয়েছিল । সর্বশেষ গত নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল তাকে কিশোরগঞ্জের একটি আসন থেকে।