সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সব অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়া হচ্ছে

- Update Time : ০৩:৫৮:০৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫
- / ৪৫ Time View
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অভিযান চালিয়ে সব অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে এই অভিযান শুরু হয়েছে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে শাহবাগ থানা পুলিশের সহযোগিতায় এই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুর বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতরের সব অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এছাড়া অভিযোগ রয়েছে এসব অবৈধ স্থাপনায় মাদক কেনাবেচা হয় এবং মাদক সেবন হয়। তাই রাজউক থেকে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে এনে তার নেতৃত্বে এই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হচ্ছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। অভিযান শুরুর সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে এস্টেট ম্যানেজার (ভারপ্রাপ্ত) ফাতেমা বিনতে মুস্তাফা উপস্থিত ছিলেন।
গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য নিহত হন। এ ঘটনার পর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের নিরাপত্তা নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। সমালোচনার মুখে উদ্যানের নিরাপত্তা জোরদারে বেশ কয়েকটি উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে আজ সকাল থেকে উদ্যানে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।
আজ সরেজমিন দেখা যায়, উদ্যানে থাকা অবৈধ ভ্রাম্যমাণ দোকানপাটসহ স্থাপনা চারটি বুলডোজার দিয়ে ভাঙা হচ্ছে। পুলিশের বিপুলসংখ্যক সদস্য উচ্ছেদ অভিযানে সহযোগিতা করছেন।
উচ্ছেদ অভিযান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ভ্রাম্যমাণ দোকানিরা। রনি মিয়া নামের এক দোকানি প্রথম আলোকে বলেন, ‘উদ্যানে অপরাধ করেছে বাইরের লোকজন। কিন্তু আমাদের ক্ষতি হচ্ছে। আমাদের তো কোনো অপরাধ নেই। এই দোকান দিয়েই আমাদের সংসার চলে।’
উচ্ছেদ অভিযানের বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আমিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নেতৃত্বে গণপূর্ত অধিদপ্তর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ থানার পুলিশ ও আনসার সদস্যরা সম্মিলিতভাবে অভিযান পরিচালনা করছি। এটি একটি জাতীয় উদ্যান। নারী-পুরুষনির্বিশেষে অসংখ্য মানুষ এখানে ঘুরতে আসেন। সবাই যাতে নির্বিঘ্নে, নিরাপদে চলাফেরা করতে পারেন, সেই উদ্দেশ্যেই আমাদের এই অভিযান। এখানে যেসব অবৈধ স্থাপনা আছে, আমরা উচ্ছেদ করে দিয়েছি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট ম্যানেজার ফাতেমা বিনতে মুস্তাফা বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন অংশীজনের সহায়তায় এই অভিযান পরিচালনা করছি। আমরা উদ্যানের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে চাই। তবে এ ক্ষেত্রে সবার সহযোগিতা দরকার হবে। আশা করছি, সবাই সেটি করবেন।’
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার (১৩ মে) রাত ১২টার দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য (২৫) নিহত হন। এই ঘটনার পর উদ্যানের নিরাপত্তা নিয়ে দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী ছিলেন শাহরিয়ার আলম সাম্য। তিনি গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে উদ্যানের মুক্তমঞ্চের পাশে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত হন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। এ ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলে ছাত্রদলসহ বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন। তারা অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে পদক্ষেপ নিতে অন্তর্বর্তী সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানায়।
এই প্রেক্ষাপটে গতকাল বুধবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মধ্যে একটি সভা হয়। সভায় রাত আটটার পর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধসহ সাতটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া গতকাল তাঁর ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে এ তথ্য জানান।
সিদ্ধান্তগুলো হলো—১. টিএসসি-সংলগ্ন উদ্যানের ফটকটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করা হবে। ২. সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অবৈধ দোকান উচ্ছেদ, মাদক ব্যবসা বন্ধ ও পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিতে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশন, ডিএমপি (ঢাকা মহানগর পুলিশ) ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সমন্বয়ে যৌথ অভিযান পরিচালিত হবে। ৩. নিয়মিত নজরদারি ও অভিযানের জন্য সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করবে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। ৪. উদ্যানে পর্যাপ্ত আলো ও ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা (সিসিটিভি) স্থাপন এবং সেগুলোর নিয়মিত মনিটরিং (পর্যবেক্ষণ) করা হবে। ৫. সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একটি ডেডিকেটেড (নিবেদিত) পুলিশ বক্স স্থাপন করা হবে। ৬. উদ্যানে রমনা পার্কের মতো সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা চালু করা হবে। এবং ৭. রাত আটটার পর উদ্যানে জনসাধারণের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হবে।