সিলেটের কিনব্রিজ ঘিরে নতুন পরিকল্পনায় সিলেটবাসীর ক্ষোভঃস্বপ্নের ঝুলন্ত সেতু প্রকল্প বাতিল

- Update Time : ০৪:১৮:৫৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫
- / ১২৭ Time View
সিলেটের ঐতিহ্যবাহী কিনব্রিজের পাশে একটি ঝুলন্ত সেতু নির্মাণের দাবি সিলেটবাসীর দীর্ঘদিনের। সাবেক স্পিকার হুমায়ূন রশিদ চৌধুরী সিলেটবাসীকে দেখিয়েছিলেন এই সেতুর স্বপ্ন। স্বপ্নের সেই সেতু বাস্তবায়নে এগিয়ে এসেছিল বিদেশি সংস্থা ‘নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এনডিবি)’। প্রকল্পে ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছিল ব্যাংকটি। কিন্তু অবশেষে স্বপ্নের সেই সেতু প্রকল্পটি বাতিল হয়ে গেছে। এপ্রোচ সড়ক নির্মাণের জায়গা নেই এমন অজুহাতে ঝুলন্ত সেতুর প্রকল্প বাদ দিয়ে কিনব্রিজের সক্ষমতা বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে সড়ক ও জনপথ (সওজ)।
সিলেট নগরীকে দুই ভাগ করেছে সুরমা নদী। আর সুরমার দুইপাড়কে যুক্ত করেছে ঐতিহ্যের কিনব্রিজ। লোহার তৈরি লালব্রিজটি এখন বয়সের ভার ন্যুব্জ। হারিয়েছে ভারি যান চলাচলের সক্ষমতা।তবে সচেতনমহলের দাবি সেতুটি নির্মিত হলে সিলেটের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি পর্যটন সম্ভাবনাও বাড়তো।
সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, ২০২৪ সালে এনডিবি বাংলাদেশের পাঁচটি প্রকল্পে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখায়। ঋণদানকারী ব্যাংকটি প্রতিটি প্রকল্পে ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগে সম্মত হয়। এই প্রকল্পগুলোর একটি ছিল সিলেট নগরীতে সুরমা নদীর উপর কিনব্রিজের পাশে নতুন একটি ঝুলন্ত সেতু নির্মাণ। প্রকল্পগুলো নিয়ে ২০২৪ সালের ২২ জানুয়ারি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের কনফারেন্স রুমে এনডিবি কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকের পর বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের একটি প্রতিনিধি দল সরেজমিনে সেতুর সম্ভাব্য স্থান পরির্দশন করেন। তারা সুরমা নদীর নাব্যতা, বর্ষা ও শুষ্ক মৌসুমে পানির প্রবাহ এবং সেতুটি কত উচ্চতায় নির্মাণ করতে হবে সেই সম্ভাব্যতা যাচাই করেন। সওজের পক্ষ থেকেও ‘প্রি ডিটেলস প্রজেক্ট প্রফর্মা-পিডিপিপি’ও তৈরি করা হয়। এই পিডিপিপি মন্ত্রণালয় হয়ে এডিবির কাছে পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দেশে গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতার পালাবদল হওয়ায় প্রকল্পটির অগ্রগতি আটকে যায়।
সওজ সূত্র জানায়, পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ টোলব্রিজটি নির্মাণে এডিবি ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ও বাকি টাকা বাংলাদেশ সরকার অর্থায়ন করার কথা ছিল। প্রকল্পের ঋণ পরিশোধে সেতুর উপর দিয়ে যাতায়াতকারী যানবাহন থেকে টোল আদায় করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেতুটি নিয়ে যখন সিলেটের মানুষের স্বপ্ন যখন বিস্তৃত হচ্ছিল তখন প্রকল্প বাস্তবায়নে সরে এসেছে মন্ত্রণালয়। ঝুলন্ত সেতুর জন্য দীর্ঘ এপ্রোচ সড়ক লাগবে এমন অজুহাতে প্রকল্পটি বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। নতুন সেতুর পরিবর্তে কিনব্রিজকে শক্তিশালীকরার উপায় খুঁজছে সওজ। ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন অব সিলেট-টোয়াসের সাধারণ সম্পাদক শেখ রাফি জানান, ‘সিলেটের ঐতিহ্যবাহী কিনব্রিজের পাশে একটি ঝুলন্ত সেতুর দাবি দীর্ঘদিনের। এই সেতুটি নির্মিত হলে নগরসিলেটের সৌন্দর্য্য অনেক বাড়তো। লোহার তৈরি কিনব্রিজের পাশে ও সুন্দর্যমন্ডিত শৈলিক সার্কিট হাউজের অতি নিকটে ঝুলন্ত সেতু- এমন অপূর্ব দৃশ্য দেখতে অনেক পর্যটক সিলেট আসতেন। সেতুটির প্রকল্প বাতিল হওয়া খুবই দুঃখজনক।’
স্কুল ছাত্রী মায়মুনা রহমান জানান,সিলেটে ভালো কোন প্রকল্প পাশ হলে আমলাতান্ত্রিক হিংসায় তা বাতিল বা নষ্ট করা হয়। যা সিলেটের প্রতি অবিচার করা হয়।স্বাদীনতার পর থেকে এ হিংসার কারনে সিলেট উন্নযন বঞ্চিত রয়েছে।মাসুদ আহমদ নামের এক উন্নয়ন কর্মী জানান, সার্কিট হাউজ,আলী আমজদের ঘড়ি,চাদনীঘাটের সিড়ি,সারদা হল,ঐতিহাসিক ক্বীনব্রীজ,পৌরপাটাগার ও বনবিভাগের অফিস সমৃদ্ধ এ এাকায় ঝুলন্ত ব্রীজ নির্মান জরুরী।পর্যটন নগরী সিলেটের কথা চিন্তা করে এখানে ঝুলন্ত ব্রীজ নির্মান করুন।
সওজ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আমীর হোসেন জানান, ঝুলন্ত সেতুর জন্য অনেক লম্বা এপ্রোচ সড়কের প্রয়োজন। কিন্তু কিনব্রিজের পাশে সুরমার উভয় প্রান্তে প্রয়োজনীয় পরিমাণ জায়গা নেই। তাই এই সেতু নির্মাণ সম্ভব হচ্ছে না। এর পরিবর্তে কিনব্রিজের সক্ষমতা বৃদ্ধির পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এখন সেতুটি দিয়ে তিন টন পর্যন্ত ভারি যানবাহন চলাচলের সক্ষমতা আছে। এটি আরও কিভাবে বাড়ানো যায় সেটা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়