ঢাকা ০১:১৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫, ২৬ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সিদ্ধান্ত বদলে কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা শিক্ষকদের

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০৯:৫৩:১৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫
  • / ২৫ Time View

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচি

রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আন্দোলনরত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে গতকাল রোববার রাতে বৈঠকে বসে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে মন্ত্রণালয় দাবি মানার আশ্বাস দিলেও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি ও সারাদেশে শিক্ষকদের কর্মবিরতি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষক নেতারা। মন্ত্রণালয়ের আশ্বাসে সারাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কর্মবিরতি স্থগিত করে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিলেও পরে সব কর্মসূচি বহাল রাখা হয়। ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আবু তাহের মো. মাসুদ রানা।

বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির (শাহিন-লিপি) সাধারণ সম্পাদক খায়রুন নাহার লিপি সভা শেষে রাত সাড়ে ৯টায় বলেন, ‘আজ সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমাদের আরেকটি বৈঠক হবে। সে পর্যন্ত কর্মবিরতি স্থগিত থাকবে। তবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আমাদের লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি ও সমাবেশ চলবে।’ পরে কর্মবিরতি অব্যাহত রাখার ঘোষণাটি আসে।

অ্যাসিসটেন্ট টিচারর্স অব জিপিএস বিডি ফেসবুক পেজে রাতে একটি ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। খাইরুন নাহার লিপির বরাত দিয়ে ওই পোস্টে বলা হয়েছে, রাত ১১টায় সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয়েছে। অবস্থান কর্মসূচি ও ক্লাস বর্জন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

১০ম গ্রেডে বেতনসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলনরত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে গতকাল রোববার সকাল থেকে কর্মবিরতি চলছে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দ্বিতীয় দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষকরা। তারা পুলিশি হামলার প্রতিবাদে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দারের পদত্যাগ দাবি করেন। সকালে শহীদ মিনারে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন, তিন দফা দাবি বাস্তবায়ন করতে হবে। শাহবাগে শিক্ষকদের ওপর অতর্কিত হামলা, রাবার বুলেট, জলকামান, টিয়ার গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ ও লাঠিপেটা করার দায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টাকে নিতে হবে।

দশম গ্রেডে বেতন ছাড়াও শিক্ষকদের বাকি দুটি দাবি হলো– চাকরির ১০ ও ১৬ বছরে উচ্চতর গ্রেড পাওয়া নিয়ে জটিলতা নিরসন এবং শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির নিশ্চয়তা।

প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ নামে চারটি শিক্ষক সংগঠনের মোর্চার ব্যানারে এ কর্মসূচি চলছে। এ মোর্চায় আছে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (কাশেম-শাহিন), বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (শাহিন-লিপি), বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি এবং সহকারী শিক্ষক দশম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদ।

গত শনিবার সকাল থেকে এ তিন দাবিতে শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষকরা। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তারা ‘কলম বিরতি কর্মসূচি’ পালনে মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে এগোতে থাকলে শাহবাগ থানার সামনে আটকে দেয় পুলিশ। এ সময় পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান, লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাসে শিক্ষকদের কর্মসূচি পণ্ড হয়ে যায়। এ সময় দেড় শতাধিক শিক্ষক আহত হওয়ার পাশাপাশি পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি করেন শিক্ষক নেতারা। পরে গতকাল দুপুর ১টার দিকে আটক পাঁচ শিক্ষককে ছেড়ে দেয় শাহবাগ থানা পুলিশ। প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের সদস্য সায়েদুর রহমান আকন্দের জিম্মায় তাদের মুক্তি দেওয়া হয়।

মাদারীপুরের শিবচরের ১১৪ নম্বর ওমর ব্যাপারীকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মবিরতি পালিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্কুলটির শিক্ষক রেজাউল করিম। তিনি বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার ক্লাস বর্জন চলবে। বরিশালের হিজলার পশ্চিম চর বাউশিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মবিরতি চলেছে বলে জানিয়েছেন স্কুলটির শিক্ষক মোহাম্মদ হাসান মাহমুদ। এ ছাড়া ঝালকাঠির নলছিটির ৭২ নম্বর দক্ষিণ তিমিরকাঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একই উপজেলার বৈদারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা কর্মবিরতি পালন করছেন।

ঢাকার কেরানীগঞ্জের ২১ নম্বর চারিগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মবিরতি পালিত হয়নি বলে জানিয়েছেন স্কুলটি সহকারী শিক্ষক ও ঐক্য পরিষদের নেতা শাহিনুর আল আমিন। তিনি বলেন, শিক্ষকের ওপর ন্যক্কারজনক হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আহতদের সঙ্গে হাসপাতালে গিয়ে দেখা করেছি, কথা বলেছি। তবে আমরা কর্মবিরতি পালন করছি না।

Please Share This Post in Your Social Media

সিদ্ধান্ত বদলে কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা শিক্ষকদের

নিজস্ব প্রতিবেদক
Update Time : ০৯:৫৩:১৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫

রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আন্দোলনরত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে গতকাল রোববার রাতে বৈঠকে বসে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে মন্ত্রণালয় দাবি মানার আশ্বাস দিলেও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি ও সারাদেশে শিক্ষকদের কর্মবিরতি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষক নেতারা। মন্ত্রণালয়ের আশ্বাসে সারাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কর্মবিরতি স্থগিত করে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিলেও পরে সব কর্মসূচি বহাল রাখা হয়। ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আবু তাহের মো. মাসুদ রানা।

বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির (শাহিন-লিপি) সাধারণ সম্পাদক খায়রুন নাহার লিপি সভা শেষে রাত সাড়ে ৯টায় বলেন, ‘আজ সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমাদের আরেকটি বৈঠক হবে। সে পর্যন্ত কর্মবিরতি স্থগিত থাকবে। তবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আমাদের লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি ও সমাবেশ চলবে।’ পরে কর্মবিরতি অব্যাহত রাখার ঘোষণাটি আসে।

অ্যাসিসটেন্ট টিচারর্স অব জিপিএস বিডি ফেসবুক পেজে রাতে একটি ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। খাইরুন নাহার লিপির বরাত দিয়ে ওই পোস্টে বলা হয়েছে, রাত ১১টায় সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয়েছে। অবস্থান কর্মসূচি ও ক্লাস বর্জন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

১০ম গ্রেডে বেতনসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলনরত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে গতকাল রোববার সকাল থেকে কর্মবিরতি চলছে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দ্বিতীয় দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষকরা। তারা পুলিশি হামলার প্রতিবাদে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দারের পদত্যাগ দাবি করেন। সকালে শহীদ মিনারে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন, তিন দফা দাবি বাস্তবায়ন করতে হবে। শাহবাগে শিক্ষকদের ওপর অতর্কিত হামলা, রাবার বুলেট, জলকামান, টিয়ার গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ ও লাঠিপেটা করার দায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টাকে নিতে হবে।

দশম গ্রেডে বেতন ছাড়াও শিক্ষকদের বাকি দুটি দাবি হলো– চাকরির ১০ ও ১৬ বছরে উচ্চতর গ্রেড পাওয়া নিয়ে জটিলতা নিরসন এবং শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির নিশ্চয়তা।

প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ নামে চারটি শিক্ষক সংগঠনের মোর্চার ব্যানারে এ কর্মসূচি চলছে। এ মোর্চায় আছে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (কাশেম-শাহিন), বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (শাহিন-লিপি), বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি এবং সহকারী শিক্ষক দশম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদ।

গত শনিবার সকাল থেকে এ তিন দাবিতে শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষকরা। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তারা ‘কলম বিরতি কর্মসূচি’ পালনে মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে এগোতে থাকলে শাহবাগ থানার সামনে আটকে দেয় পুলিশ। এ সময় পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান, লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাসে শিক্ষকদের কর্মসূচি পণ্ড হয়ে যায়। এ সময় দেড় শতাধিক শিক্ষক আহত হওয়ার পাশাপাশি পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি করেন শিক্ষক নেতারা। পরে গতকাল দুপুর ১টার দিকে আটক পাঁচ শিক্ষককে ছেড়ে দেয় শাহবাগ থানা পুলিশ। প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের সদস্য সায়েদুর রহমান আকন্দের জিম্মায় তাদের মুক্তি দেওয়া হয়।

মাদারীপুরের শিবচরের ১১৪ নম্বর ওমর ব্যাপারীকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মবিরতি পালিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্কুলটির শিক্ষক রেজাউল করিম। তিনি বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার ক্লাস বর্জন চলবে। বরিশালের হিজলার পশ্চিম চর বাউশিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মবিরতি চলেছে বলে জানিয়েছেন স্কুলটির শিক্ষক মোহাম্মদ হাসান মাহমুদ। এ ছাড়া ঝালকাঠির নলছিটির ৭২ নম্বর দক্ষিণ তিমিরকাঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একই উপজেলার বৈদারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা কর্মবিরতি পালন করছেন।

ঢাকার কেরানীগঞ্জের ২১ নম্বর চারিগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মবিরতি পালিত হয়নি বলে জানিয়েছেন স্কুলটি সহকারী শিক্ষক ও ঐক্য পরিষদের নেতা শাহিনুর আল আমিন। তিনি বলেন, শিক্ষকের ওপর ন্যক্কারজনক হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আহতদের সঙ্গে হাসপাতালে গিয়ে দেখা করেছি, কথা বলেছি। তবে আমরা কর্মবিরতি পালন করছি না।