সালমান শাহর মৃত্যু: ২৯ বছর পর স্ত্রীসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা

- Update Time : ০৯:০৯:১১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫
- / ১৬৪ Time View
চিত্রনায়ক সালমান শাহর মৃত্যুর ঘটনায় ২৯ বছর পর স্ত্রী সামিরা হকসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে।
সোমবার আদালতের আদেশের পর সেদিন মধ্যরাতে সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরীর পক্ষে তার ভাই মোহাম্মদ আলমগীর কুমকুম রমনা মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
মঙ্গলবার মামলার এজাহার গ্রহণ করে ঢাকার মহানগর হাকিম মো. সাইফুজ্জামান আগামী ৭ ডিসেম্বরের মধ্যে থানার ইন্সপেক্টর আতিকুল ইসলাম খন্দকারকে প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দিয়েছেন।
প্রসিকিউশন বিভাগের এসআই জিন্নাত আলী এ তথ্য দেন।
মামলার অপর আসামিরা হলেন- সামিরা হকের মা লতিফা হক লুসি, ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই, খলনায়ক ডন, ডেডিড, জাভেদ, ফারুক, রুবী, আব্দুস ছাত্তার, সাজু, রিজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদ।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, এজাহারনামীয় আসামিসহ অজ্ঞাতনামা পলাতক আসামিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে সালমান শাহকে ‘হত্যা’ করেছে।
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর চিত্রনায়ক সালমান শাহ (চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইমন) ঢাকার ইস্কাটনের ফ্ল্যাটে মারা যান। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে সে সময় তার জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে।
ছেলের মৃত্যুর পর প্রথমে একটি অপমৃত্যু মামলা করেন সালমান শাহর বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী। কিন্তু পরে ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে- এমন অভিযোগে ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই অভিযোগটিকে হত্যা মামলায় রূপান্তর করার আবেদন জানান তিনি।
তখন অপমৃত্যু মামলার সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ তদন্ত করতে সিআইডিকে নির্দেশ দেয় আদালত। ১৯৯৭ সালের ৩ নভেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে সিআইডি জানায়, সালমান শাহ ‘আত্মহত্যা’ করেন।
সিআইডির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে কমরউদ্দিন চৌধুরী রিভিশন মামলা দায়ের করেন। পরে ২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠায় আদালত।
দীর্ঘ ১১ বছর পর ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট সেই প্রতিবেদন দাখিল করেন মহানগর হাকিম ইমদাদুল হক। তাতেও হত্যার অভিযোগ নাকচ করা হয়।
সালমান শাহের বাবার মৃত্যুর পর তার মা নীলা চৌধুরী মামলটি চালিয়ে যান। ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি নীলা চৌধুরী বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনে ‘নারাজি’ দেন। তিনি ১১ জনের নাম উল্লেখ করে দাবি করেন, এরা তার ছেলেকে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে।
এরপর মামলাটি তদন্ত করে র্যাব। তখন রাষ্ট্রপক্ষ আপত্তি তুললে ২০১৬ সালের ২১ অগাস্ট ঢাকার বিশেষ জজ ৬-এর বিচারক ইমরুল কায়েশ র্যাবকে মামলাটি আর তদন্ত না করার আদেশ দেন।
তখন তদন্তের দায়িত্বে আসে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। চার বছর তদন্তের পর ২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তারা চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়।
সেখানেও বলা হয়, ঘটনার সময় উপস্থিত ও ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ৫৪ জন সাক্ষীর জবানবন্দি বিশ্লেষণ করে, জব্দ করা আলামত পর্যালোচনা করে হত্যার অভিযোগের কোনো ‘প্রমাণ মেলেনি’।
পিবিআই তাদের তদন্ত প্রতিবেদনে বলে, “চিত্রনায়িকা শাবনূরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে পারিবারিক কলহ আর স্ত্রী সামিরা হকের কারণে মা নিলুফা চৌধুরী ওরফে নীলা চৌধুরীকে ছেড়ে থাকার মানসিক যন্ত্রণায় ভুগেই অভিমানী সালমান শাহ আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন।”
ওই প্রতিবেদনেও সন্তুষ্ট নন সালমানের মা নীলা চৌধুরী। ছেলের মৃত্যু কীভাবে হয়েছিল, তা জানতে তিনি আরও তদন্ত চান।
ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশীদ ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর পিবিআইয়ের প্রতিবেদন আমলে নিয়ে আসামিদের অব্যাহতির আদেশ দেন।
এরপর আবার সালমান শাহর পরিবারের পক্ষ থেকে কয়েকটি বিষয় নিয়ে মহানগর দায়রা জজ আদালতে রিভিশন দায়েরের আবেদন করা হয়।
২০২২ সালের ১২ জুন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে রিভিশন আবেদন গ্রহণ করেন। তবে বিভিন্ন কারণে মাঝের কয়েক বছর রিভিশন শুনানি হয়নি।
সম্প্রতি রিভিশন আবেদনের শুনানি শুরু হয়, যা শেষ হয় গত ১৩ অক্টোবর। সেদিন আদেশের জন্য ২০ অক্টোবর (সোমবার) দিন ঠিক করেন ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা মো. জান্নাতুল ফেরদৌস ইবনে হক।
সোমবার আদালত হত্যা মামলা দায়েরের আদেশ দেয়। এছাড়া সালমান শাহর মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলায় তার মায়ের রিভিশন আবেদন মঞ্জুর করে আদালত।
এ বিষয়ে সালমান শাহর বাবা কমরউদ্দিনের অভিযোগ এবং ঘটনায় জড়িত রিজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদের জবানবন্দি সংযুক্ত করে হত্যা মামলা দায়েরের নির্দেশ দিয়ে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে রমনা মডেল থানা পুলিশকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়