সাবেক সেনা সদস্য-দম্পতির বিরুদ্ধে গৃহকর্মী নির্যাতনের অভিযোগ; রাতেই ‘অদৃশ্য শক্তি’তে মুক্তি

- Update Time : ০৪:৪৯:০১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ জুলাই ২০২৫
- / ১২৭ Time View
টঙ্গী পশ্চিম থানাধীন এলাকায় ডিআইটি টাওয়ারে ১৫ বছরের গৃহকর্মী রানীকে ছয় বছর ধরে নির্যাতনের অভিযোগে সাবেক সেনা সার্জেন্ট সর্দার জহিরুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী রেশমাকে গতকাল রোববার (৬ জুলাই) বিকাল তিনটার দিকে টঙ্গী পশ্চিম থানা পুলিশ আটক করলেও রাতেই তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাদকাসক্ত বাবার কাছে থেকে রানীকে কাজের মেয়ে হিসেবে নিয়োগ দেন জহিরুল-দম্পতি। রানী অভিযোগ করেছে, সব সময় সামান্য ভুল-ত্রুটি কিংবা তুচ্ছ ঘটনায় তাঁকে শারীরিক নির্যাতন চালানো হতো। ৬ জুলাই বিকেলে নির্যাতনের মাত্রা চরমে পৌঁছালে সে পাশের ফ্ল্যাটে গিয়ে আশ্রয় নিয়ে বিষয়টি খোলাসা করে। পরে তা’মীরুল মিল্লাত ট্রাস্টের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নেয়ামতুল্লাহ শাকের গণমাধ্যম ও পুলিশকে বিষয়টি জানান। পুলিশ এসে জহিরুল ও তাঁর স্ত্রীকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় এবং রানীকে শহীদ আহসানউল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা করায়।
তবে একাধিক গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর রাতেই ‘উর্ধ্বতন চাপ’ বা ‘অদৃশ্য শক্তি’র জেরে জহিরুলকে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। তাঁর স্ত্রী রেশমাকেও সোমবার (৭ জুলাই) সকালে মুক্তি দেওয়া হয়।
আইনের কাছে তুলে দিলাম, বিচার পেলাম না আক্ষেপ করে নেয়ামতুল্লাহ শাকের বলেন, ‘আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে অপরাধীকে পুলিশের হাতে তুলে দিলেও কোনো আইনি পদক্ষেপ না নিয়ে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এতে আমরা হতাশ। দেশের আইনের ভেতরে কেন এত বৈষম্য? কেন একজন অসহায় গৃহকর্মীকে নির্যাতনের বিচার হয়নি? একাধিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর কেন মানবাধিকার কর্মীরা চুপ? আইন নির্যাতিত গৃহকর্মীকে চিকিৎসা দিতে পারলো অথচ বিচার করতে পারেননি। স্থানীয় বাসিন্দা আনিসুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ‘এভাবে ছেড়ে দিলে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা হবে কীভাবে?’
টঙ্গী পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইস্কান্দার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘গৃহকর্মীর পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ না পাওয়ায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি।’ তবে কেন আটক করা দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষ না করে মুক্তি দেওয়া হল, সে বিষয়ে তিনি বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেননি।
গাজীপুর জেলা জজকোর্টের শাহিন মোল্লা বলেন, ‘যদি থানার এরিয়াতে এমন ঘটনা ঘটে যেখানে ভিকটিম নাবালিকা হন এবং শারীরিক নির্যাতনের তথ্য-প্রমাণ থাকে, তবে পুলিশ স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলা রেকর্ড করতে পারে। কিংবা এলাকার অন্য কেউ স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলা করতে পারেন। অভিযোগ না থাকা সত্ত্বেও বিষয়টি ফৌজদারি অপরাধ হওয়ায় ব্যবস্থা না নেওয়া দায়িত্বহীনতা।
এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জবাবদিহি ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী। নিহত না হলেও নয়, এমন নির্যাতনের ঘটনার দ্রুত বিচার না হলে গৃহকর্মীদের নিরাপত্তা ও আইনের শাসন প্রশ্নবিদ্ধ হবে বলে মনে করছেন তারা।
সস্ত্রীক সাবেক সেনা সদস্যের বিরুদ্ধে গৃহকর্মীকে অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগ
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়